আত্মজীবনী তো আজকাল প্রচুর লেখা হয়। আমাদের বাংলাদেশে এটির প্রচলন হয়তো এখনো সেভাবে হয়নি, তবে বাইরের দেশে, এমনকি ভারতেও, আত্মজীবনী লেখার প্রবণতা প্রচণ্ড রকমের বেড়ে গেছে। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, গণমানুষের প্রিয় মুখ বা তারকা হওয়া মানেই শেষ জীবনে একটি আত্মজীবনী লিখতে হবে, নিজের জীবনের অব্যক্ত অধ্যায়গুলো সব তুলে ধরতে হবে, কিছু বিতর্কিত কথাবার্তাও অকপটে বলে দিতে হবে বইয়ের কাটতি বাড়ানোর জন্য।
কিন্তু সবার আত্মজীবনী কি আর তেমন জনপ্রিয়তা পায়? পায় না। তার কারণ প্রধানত দুটো। প্রথম কারণ, একজন তারকা তার ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে যতই আলোচিত হোক না কেন, শেষ বয়সেও তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের সমান আগ্রহ থাকবে, এমন কোনো কথা নেই। ফলে জীবন সায়াহ্নে এসে সে আত্মজীবনী লিখলেও তা যে খুব বিকোবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। আর দ্বিতীয় কারণ, যদি এমন হয় যে শেষ বয়সে এসেও তারকাখ্যাতি সমানরূপে বিদ্যমান, তখন আবার ওই তারকাকে কথার মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আর যা-ই হোক, মৃত্যুর আগে যেচে পড়ে নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়ে তো কোনো লাভ নেই!
উপর্যুক্ত এই দুই কারণে দেখা যায়, অধিকাংশ আত্মজীবনীই যত গর্জে তত বর্ষে না। অনেকেই আত্মজীবনী লিখে ফেলে, ধুমধাম করে সেগুলো প্রকাশিতও হয়, কিন্তু সাধারণ পাঠক সেগুলো পড়ে খুব একটা আরাম পায় না। অবশ্য ব্যতিক্রমও যে একেবারেই নেই, সে কথাও বলা যাবে না। যেমন বলিউড তারকাদের মধ্যে অনেকেই আজকাল আত্মজীবনী লিখছেন, সেগুলো কমবেশি সাড়াও জাগাচ্ছে। কেননা বলিউড তারকাদের প্রতি গণমানুষের আগ্রহ কখনোই একেবারে শূন্য হয়ে যায় না। তবে যদি প্রশ্ন করা হয়, সমসাময়িক বলিউডের সবচেয়ে সাহসী আত্মজীবনী কোনটি, তবে একটি নামই আমাদের মাথায় আসবে। ভারতীয় প্রখ্যাত সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যের ভাষ্যে,
“ঋষি কাপুরের ‘খুল্লাম খুল্লা’। যেখানে চুনোপুঁটিদের ধরে টানাটানি তো কোনও ব্যাপার নয়। নিজের বাবা রাজ কাপুরের সমালোচনা। এমনকি অমিতাভ বচ্চনকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি ঋষি।”
বাস্তবিকই তা-ই। ২০১৭ সালে মীনা আইয়ারের সহায়তায় ঋষি কাপুর প্রকাশ করেন তার বিস্ফোরক আত্মজীবনী ‘খুল্লাম খুল্লা: ঋষি কাপুর আনসেন্সর্ড’, যা বলিউড অনুসারীদের মনে ব্যাপক ধাক্কা দেয়। জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে, নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে, এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় ঋষি যে চরম দুঃসাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছিলেন, তা নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে চিরকাল।
আত্মজীবনীর আসলে কোনো তথাকথিত পাঠ প্রতিক্রিয়া সম্ভব না। কেননা প্রিয় তারকারা আত্মজীবনীতে তাদের সারাজীবনের যে অভিজ্ঞতা কিংবা তাদের উত্থান-পতনের বিবরণ দেন, তার প্রকৃত নির্যাস পেতে চাইলে আত্মজীবনীটি নিজে পড়ে ফেলাই একমাত্র উপায়। তারপরও, অনেকেরই হয়তো আগ্রহ জাগছে জানার, কী লিখেছিলেন ঋষি ওই বইটিতে। তাই চলুন, জেনে নিই ‘খুল্লাম খুল্লা’-য় ঋষি কাপুরের সবচেয়ে বিতর্কিত স্মৃতিচারণাগুলো সম্পর্কে।
বাবা রাজ কাপুরের পরকীয়ার ব্যাপারে সরল স্বীকারোক্তি
দারুণ সততার সাথে ঋষি তার বইয়ে স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে কৃষ্ণা রাজ কাপুরের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার পরও তার বাবা রাজ কাপুর পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন একাধিক নারীর সাথে।
যেমন তিনি প্রথমেই বলেন নার্গিসের সাথে রাজের সম্পর্কের কথা। ঋষি তখন খুবই ছোট। তবে তার এটুকু মনে পড়ে যে নার্গিসের সাথে রাজের সম্পর্ক তাদের পরিবারে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। এটি নিয়ে কখনো তেমন বড় কোনো বাকবিতণ্ডাও হয়নি।
তবে পরিস্থিতি একই রকম ছিল না, যখন রাজ সম্পর্কে জড়ান বৈজয়ন্তিমালার সঙ্গে। এতে ঋষির মা এতটাই রেগে যান যে, ঋষিকে সাথে নিয়ে তিনি গৃহত্যাগ করেন, মেরিন ড্রাইভের নটরাজ হোটেলে গিয়ে ওঠেন। সেবার কৃষ্ণা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেবার। তাই দুই মাস হোটেলে থাকার পর তিনি ঋষিকে নিয়ে ওঠেন চিত্রকূটের একটি অ্যাপার্টমেন্টে, যেটি রাজই কিনে দিয়েছিলেন তার স্ত্রী-সন্তানের জন্য। রাজ তখন প্রচুর চেষ্টা-চরিত্র করেন কৃষ্ণাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনার। তবে কৃষ্ণার ছিল একটাই কথা, আগে রাজকে বৈজয়ন্তিমালার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে, পেছনে ফেলতে হবে জীবনের ওই অধ্যায়।
প্রেমে পাগল হয়েছিলেন ঋষি, তবে সেটা নীতুর জন্য নয়
ঋষির সাথে তার স্ত্রী নীতু কাপুর অর্থাৎ রনবীর কাপুরের মায়ের উদ্দাম প্রেমের কথা কে না জানে! তবে আত্মজীবনীতে ঋষি স্বীকার করেন, তার জীবনের প্রথম ‘সিরিয়াস’ প্রেমটি নীতুর সাথে নয়, ছিল অন্য কারো সাথে। সেই প্রেমিকা ছিলেন এক পার্সিয়ান নারী, নাম ইয়াসমিন মেহতা।
১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করা ঋষির প্রথম ছবি, ‘ববি’। তারও আগে থেকেই ইয়াসমিনের সাথে সম্পর্ক চলছিল ঋষির। কিন্তু ‘ববি’ মুক্তির পর, তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘স্টারডাস্ট’-এ ডিম্পল কাপাডিয়ার সাথে ঋষির প্রেমের কাহিনী ছাপা হয়। ডিম্পল তখন ইতোমধ্যেই রাজেশ খান্নার বিবাহিতা স্ত্রী। তাই ওই সংবাদ তাকে খুব একটা প্রভাবিত করেনি। কিন্তু শেষ করে দিয়েছিল ইয়াসমিনের সাথে ঋষির সম্পর্ক। ঋষি অনেক চেষ্টা করেছিলেন ইয়াসমিনকে তার জীবনে ফিরে পেতে, কিন্তু ইয়াসমিন আর তার আহ্বানে সাড়া দেননি।
এক হাত নিয়েছেন অমিতাভকেও
এই বিশেষ অংশে ঋষি আরো একবার প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, বইয়ের নামের যথার্থতা বজায় রেখে তিনি আদতেই খুল্লাম খুল্লা কথা বলছেন, যে কারণে তিনি ছাড় দেননি তার সমসাময়িক অভিনেতা ও আত্মীয় অমিতাভ বচ্চনকেও। উল্লেখ্য, অমিতাভের মেয়ে শ্বেতার সাথে বিয়ে হয়েছে ঋষির ভাইপো, অর্থাৎ বোন ঋতুর ছেলে নিখিলের।
এ বই থেকে আমরা জানতে পারি, ঋষি-অমিতাভের সম্পর্কের সূচনা মোটেই ভালোভাবে হয়নি। ‘কাভি কাভি’ ছবির সেটে তারা না পারতে একে অন্যের সাথে কথা বলতেন না। ‘অমর আকবর অ্যান্থনী’ ছবির শুটিংয়ে গিয়েই প্রথম তাদের সম্পর্ক সহজ হয়।
তবে তারপরও, অমিতাভের চরিত্রের একটি দিক সবসময়ই কষ্ট দিত ঋষিকে। তার মনে হতো, অমিতাভ কখনোই তার সহকর্মীদের প্রাপ্য সম্মান দেন না ছবির ব্যবসায়িক সফলতার জন্য। এক্ষেত্রে তিনি নাম করেন শশী কাপুর (দিওয়ার), বিনোদ খান্না, শত্রুঘ্ন সিনহা, ধর্মেন্দ্র ও তার নিজের (অমর আকবর অ্যান্থনী ও কুলি) কথা।
তবে ছবিগুলোর সফলতার পর যেসব নৈশভোজের আয়োজন করা হতো, সেখানে নাকি মিটে যেত এসব মন কষাকষি। তাছাড়া বইয়ের এক পর্যায়ে ঋষি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেছিলেন দুর্ঘটনার পর ‘কুলি’ ছবির সেটে ফেরার পর তার প্রতি অমিতাভের আন্তরিক ব্যবহারের কথা।
এছাড়া অমিতাভের ব্যাপারে আরেকটি অভিযোগ ছিল ঋষির, যদিও সেটির জন্য সরাসরি অমিতাভকে দায়ী করা যায় না। ঋষির মনে হতো, লেখক-পরিচালকরা সব ছবিতে অমিতাভের চরিত্রগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে সাজাতেন, যেন ছবিগুলোতে অমিতাভকে একক নায়ক মনে হয়, এবং ছবির সফলতার যাবতীয় কৃতিত্বও তার ঝুলিতেই জমা হয়।
অমিতাভকে ঠকাতে পুরস্কার কিনেছিলেন ঋষি
‘ববি’ ছবির শুটিংকালে অমিতাভের সাথে সম্পর্কে কেমন ছিল, তা তো ঋষি লিখেছিলেনই তার আত্মজীবনীতে। পাশাপাশি এটিও জানিয়েছিলেন, অমিতাভকে হারিয়ে দেয়ার জন্য তিনি নাকি একটি পুরস্কারও কিনেছিলেন, তা-ও আবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড!
‘ববি’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন ঋষি। আর এর মাধ্যমেই তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন অমিতাভকে, কেননা তিনি নিজেও বিশ্বাস করতেন, ‘জাঞ্জির’ ছবির জন্য পুরস্কারটি অমিতাভেরই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু অমিতাভের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে তিনি ত্রিশ হাজার রুপির বিনিময়ে পুরস্কারটি নিজের করে নিয়েছিলেন।
দুঃসময়ে নিজের ব্যর্থতার দায় চাপিয়েছিলেন নীতুর ঘাড়ে
সব অভিনেতাকেই জীবনের একটা সময়ে ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়। ঋষিও মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিন্ন অভিজ্ঞতার। এই বই থেকে আমরা জানতে পারি, ‘ববি’ সুপারহিট হওয়ার পর অন্যান্য ছবির ব্যাপারেও ঋষির প্রত্যাশা হয়ে উঠেছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু সেই ছবিগুলোর প্রায় সবই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
তখন কী করেছিলেন ঋষি? তিনি নিজের যাবতীয় ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন নীতুকে। কেননা ইতোমধ্যেই তিনি ছিলেন নীতুর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ, এবং তার মনে হতে শুরু করেছিল, নীতুর কারণেই তার ছবিগুলো আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছে না।
বিস্ময়কর ব্যাপার, যে সময়টায় ঋষি নীতুর উপর এমন অভিযোগের আঙ্গুল তুলছিলেন, তখন নীতু সন্তানসম্ভবা। কন্যা ঋদ্ধিমাকে গর্ভে নিয়েই নীতুকে সহ্য করতে হয়েছিল ঋষির দুর্ব্যবহার ও মানসিক ওঠা নামা। ফলে তাদের সম্পর্কে ব্যাপক টানাপোড়েনও শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সহকর্মী, পরিবার ও বন্ধুদের সহযোগিতায় একটি সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু নীতুর প্রতি যে অবিচার ঋষি করেছিলেন, সে-জন্য সারাজীবনই অপরাধবোধে ভুগতেন তিনি।
নীতুর প্রতি ঈর্ষায় একটি ছবিও ছাড়তে বসেছিলেন ঋষি
আমরা জানি ঋষির ‘কাভি কাভি’ ছবিটি কী পরিমাণ হিট হয়েছিল। কিন্তু আত্মজীবনীতে ঋষি লিখেছিলেন, এই ছবিটি নাকি তিনি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কারণ? এই ছবিতে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার স্ত্রী নীতুর চরিত্রটি!
ঋষির এই ছবিটি করতে না চাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ ছিল এখানে অমিতাভের উপস্থিতি, যার ব্যাপারে তার পূর্ব ধারণা একেবারেই ভালো ছিল না। অবশ্য যদিও বা তিনি অমিতাভের ব্যাপারটি মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু নীতুর বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পাওয়াটা তার পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
একপর্যায়ে ঋষি নাকি যশ চোপড়াকে এও বলেছিলেন যে, “আপনি যদি এই ছবিটিতে আমাকে চান, তবে আমায় বরং নীতুর চরিত্রটি দিন।” শুনে খুবই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন যশ চোপড়া। পরে অবশ্য শশী কাপুরের মধ্যস্থতায় ছবিটি করতে রাজি হয়েছিলেন ঋষি।
‘মেল শভিনিজম’-এর স্বীকারোক্তি
স্ত্রী নীতু কাপুর বিয়ের আগে চলচ্চিত্রে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু ঋষিকে বিয়ের পর ধীরে ধীরে কাজ কমিয়ে দিতে থাকেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ঋষি তার আত্মজীবনীতে স্বীকার করেন, এর কারণ সম্ভবত এই যে তিনি তখন ‘মেল শভিনিস্ট’ ছিলেন, নিজের পুরুষতান্ত্রিক উগ্রতার কারণেই নীতু তার ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে চাইলে তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।
ঋষি কাপুর লিখেছিলেন, বিয়ের পর কাজ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তটি নীতুর নিজেরই ছিল। বিয়ের আগেই তারা ঠিক করে রেখেছিলেন, সন্তান হওয়ার পর তাদের মধ্যে একজন উপার্জন করবেন, অন্যজন সন্তানের দেখভাল করবেন। সে অনুযায়ী সন্তান জন্মের পর নীতু নিজে থেকেই তার ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। তবে ঋষির এ কথা স্বীকারে আপত্তি নেই যে, নীতুকে তিনি আটকানোরও কোনো চেষ্টা করেননি। কারণ তার মধ্যে একজন ‘মেল শভিনিস্ট’ ছিল, যে মনে মনে চাইত তার স্ত্রী যেন কাজ করতে বাইরে না যায়।
ডিম্পলের ব্যাপারে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন নীতু
আগে একবার ডিম্পলের সাথে সম্পর্কের গুঞ্জনে ঋষির একটি সম্পর্ক ভেঙেছিল। ১০ বছর পর ঋষির সাথে ‘সাগর’ ছবির মাধ্যমে যখন প্রত্যাবর্তন করেছিলেন ডিম্পল, তখন নীতুও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে আরম্ভ করেছিলেন।
ঋষির আত্মজীবনী থেকে আমরা জানতে পারি, নীতুর এই নিরাপত্তাহীনতার কথা নাকি সাথে সাথেই জানতে পারেননি তিনি। অনেকদিন পর নীতু তার কাছে এ সত্য স্বীকার করেছিলেন। অবশ্য ঋষির মতে, নীতুর চিন্তার কোনো কারণই ছিল না। ‘ববি’ ছবির সময়ে যদি ডিম্পল তার ‘একটু বেশি কিছু’ হয়েও থাকেন, পরবর্তীতে তিনি ছিলেন কেবলই ‘বন্ধু’। কিন্তু ‘সাগর’ ছবির সময়ে ঋষি ও ডিম্পল, দুজনেরই ছিল দুইটি করে সন্তান। ওই অবস্থায় তারা নতুন করে সম্পর্কে জড়ানোর কথা চিন্তাও করতে পারতেন না।
শাহরুখ খানের কাছে ধন্যবাদ পাওনা ঋষির
যশ চোপড়া নাকি চেয়েছিলেন ‘ডর’ ছবিতে অবসেসিভ প্রেমিকের ভূমিকায় ঋষিই অভিনয় করেন। কিন্তু ওই মুহূর্তে ঋষি একদমই আগ্রহী ছিলেন না পর্দায় নেতিবাচক বা ধোঁয়াটে চরিত্রে হাজির হতে, বিশেষত একই পরিচালকের সাথে সর্বশেষ ‘চাঁদনি’ ছবিতে কাজ করার পর।
এরপর নির্মাতা ওই চরিত্রটির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন সানি দেওলের কাছে। কিন্তু সানিও সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলেন, কেননা তার হয়তো আশঙ্কা ছিল ওই চরিত্রটি অপর প্রধান চরিত্রের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাবে। তখন ঋষিই যশ চোপড়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তিনি যেন চরিত্রটির জন্য শাহরুখ খানকে নেন। শাহরুখ এর আগে ঋষির সাথে ‘দিওয়ানা’ ছবিতে কাজ করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ঋষি যশ চোপড়াকে শাহরুখের ব্যাপারে বলেছিলেন, শাহরুখ খুবই ‘বুদ্ধিদীপ্ত’ ও ‘সক্ষম’।
তারপর বাকিটা তো ইতিহাস।
শেষ কথা
গত ৩০ এপ্রিল পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন বলিউডের চিরসবুজ রোমান্টিক হিরো ঋষি কাপুর। তার বয়স হয়েছিল ৬৭। প্রায় এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ফিরে এসেছিলেন ভারতে। অবশ্য মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্ট বা সংক্রমণজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এদিনও শ্বাসকষ্ট নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই নিভে গেছে তার জীবনপ্রদীপ।