টাকার জোরে হয়তো দুনিয়া ঘোরে না, তবে মানুষের জীবনের চাকাটা গতি পায় টাকার বদৌলতেই। আর হলিউডকে বরাবরই বলা হয় টাকা বানানোর মেশিন। প্রতি বছর এই কথাটিরই সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যান হলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। প্রত্যেক বছরের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ বছরের ১ জুন থেকে অন্য বছরের ১ জুন পর্যন্ত এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে তারকাদের উপার্জন নিয়ে একটি বিশেষ তালিকা প্রকাশ করে থাকে বিখ্যাত বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস।
তালিকাটি মূলত তৈরি করা হয় নিলসেন হোল্ডিং কোম্পানি, কমস্কোর, বক্স অফিস মোজো, আইএমডিবি এবং ইন্টার্ভিউ আর ইন্ডাস্ট্রি ইন্সাইডার্সের বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে। সেখানে উঠে আসে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিকের হিসেব। আর গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করা অভিনেতাদের সেই তালিকা নিয়ে আজ হাজির হয়েছি আমাদের রোর বাংলার পাঠকদের সামনে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেয়া যাক, অভিনয় করে কার পকেট কত গরম?
১০. সালমান খান
প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ডলারের আয়ের অংক নিয়ে গত বছরের তালিকার ৯ নম্বরে ছিলেন বলিউড সুপারস্টার সালমান। সেই হিসেবে এই বছর প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছেন তিনি। কিন্তু তারপরও নতুন তালিকায় তার ঠাঁই হয়েছে দশের ঘরে।
‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ সিনেমা দিয়ে বছরটি ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন এই বলিউড খান, তবে ‘রেস ৩’ এর কারণে তাকে পড়তে হয়েছিল সমালোচকদের তোপের মুখে। ফোর্বসের দেয়া তথ্য অনুসারে, বলিউডের ‘ভাইজান’ সুজুকি মোটরসাইকেল ও ক্লোরমিন্ট ব্র্যান্ডের এন্ডর্সমেন্ট ভ্যালু মিলিয়ে সাকুল্যে ৩৮.৫ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেন। কে জানতো, শুধু চুইংগাম চিবিয়ে এত টাকা আয় করা যায়?
৯. অ্যাডাম স্যান্ডলার
গত বছরের সাথে তুলনা করলে এ বছরটা তেমন একটা কারিশমা দেখাতে পারেননি অ্যাডাম স্যান্ডলার। ‘হোটেল ট্রান্সিলভ্যানিয়া ৩’ বাদে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সিনেমাও মুক্তি পায়নি তার এ বছর।
তবে নেটফ্লিক্সের সাথে আকর্ষণীয় ডিল আর তার লাইভ কমেডি শো দিয়ে ভালোই আয় করে নিয়েছেন তিনি। এবছরে তার আয়ের মোট পরিমাণ ছিল ৩৯.৫ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ মিলিয়ন কম, তাই গতবারের তালিকায় ৪ নম্বরে থাকার পর এবারে একদম ৯-এ নেমে এসেছেন তিনি।
৮. অক্ষয় কুমার
এই বছর ভালোই কেটেছে বলিউডের সব্যসাচী অভিনেতার অক্ষয় কুমারের। দিন দিন তার দারুণ অগ্রগতি হচ্ছে বলা চলে, কেননা ২০১৬ সালের তালিকায় ১২ নম্বরে থাকার পর গত বছর উঠে আসেন টপ টেনে। এবার তো ঠাঁই পেয়েছেন আরো দুই ধাপ উপরে।
বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমার পাশাপাশি অক্ষয়কে প্রায়ই অসাধারণ কিছু সিনেমার মাধ্যমে দর্শক-সমালোচকদের কাছে সমাদৃত হতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম হয়নি এ বছরও, তবে বলিউডের শীর্ষস্থানীয় এই অভিনেতা এবার বেশ ভালোভাবেই সমাজ সচেতনতাভিত্তিক চরিত্রের দিকে ঝুঁকেছেন। ‘টয়লেট’ মুভিতে রম্যবোধের মাধ্যমে শৌচব্যবস্থা উন্নয়নের আন্দোলনে বিশেষ গতি এনে দিয়েছেন। এছাড়া ‘প্যাডম্যান’ মুভিতে এমন একজন ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি স্বল্পমূল্যে মফস্বল এলাকাতে স্যানিটারি প্যাড বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করেছেন। তিনি এখনও অন্তত ২০টি ব্র্যান্ডের এন্ডর্সমেন্ট ভ্যালু এবং সিনেমার লাভের অঙ্ক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে চলেছেন। আর এ বছর সেই উপার্জনের ঝুলিতে ছিল ৪০.৫ মিলিয়ন ডলার।
৭. স্কারলেট জোহানসন
গত বছর টপ টেনে নাম লেখাতে না পারলেও এ বছর বাজিমাত করেছেন মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ‘ব্ল্যাক উইডো’খ্যাত স্কারলেট জোহানসন। বছরের শুরুতেই ‘রাব এন্ড টাগ’ সিনেমায় বিতর্কিত একটি ট্রান্সজেন্ডার চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। তবে শুধুমাত্র এক ‘ব্ল্যাক উইডো’ চরিত্রের উপর ভর করেই আগেরবারের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি আয় করেছেন স্কারলেট। অর্থাৎ এ বছর তার আয়ের পরিমাণ ছিল ৪০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মাত্র নয় মাসেই ২ বিলিয়ন ডলার আয় করা ইনফিনিটি ওয়ারের প্রথম সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল এপ্রিলের ২৭ তারিখে। দ্বিতীয় সিনেমার শুটিংয়ের কাজও শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মে মাসের ৩ তারিখ পর্দা উঠবে অরিজিনাল অ্যাভেঞ্জারসদের শেষ সিনেমার।
৬. উইল স্মিথ
নব্বইয়ের দশকের সেই ‘দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অফ বেল এয়ার’-এর কথা মনে আছে? টিভি সিরিজের প্রতি আকর্ষণ থেকে থাকলে হয়তো আপনি একবার হলেও সিরিজটির কথা শুনে থাকবেন। এই সিরিজের মাধ্যমেই আলোচনায় এসেছিলেন চির তরুণ উইল স্মিথ। তবে টিভি সিরিজটি প্রচারিত হওয়ার আগে ‘ফ্রেশ প্রিন্স’ নামে একজন র্যাপার হিসেবে সেই ১৯৮৬ সালে ভালোই সুনাম এবং অর্থ কামিয়েছিলেন উইল। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই স্থান করে নিয়েছিলেন বিলবোর্ডের শীর্ষ ২০০-তে এবং বনে যান মিলিয়নিয়ার।
বেল এয়ারের সেই প্রিন্স আগের মতো ‘ফ্রেশ’ নেই বটে, তবে উইল স্মিথের ব্যাঙ্ক একাউন্ট এখনো আগের মতোই ফ্রেশ। এই তো কিছুদিন আগেই নেটফ্লিক্সের ‘ব্রাইট’ সিনেমায় অভিনয় করে আয় করে নেন ২০ মিলিয়ন ডলার এবং শীঘ্রই ডিজনি’র লাইভ-অ্যাকশন আলাদীন সিনেমায় তাকে দেখা যাবে চেরাগের দৈত্যের চরিত্রে। এছাড়া বহুদিন পর আবারও মিউজিকে ফিরেছেন তিনি, এবারের ওয়ার্ল্ডকাপের থিম সং ‘লিভ ইট আপ’-এ দেখা মিলেছিল তার। সর্বসাকুল্যে এ বছর তার আয়ের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর তাই, গত বছর টপ টেনের ধারেকাছে না থাকলেও এবার একদম উঠে এসেছেন ছয়ে।
৫. জ্যাকি চান
জ্যাকি চ্যান আসলে পরম ভাগ্যবান একজন মানুষ। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনেই নয়, তার পরিচিতি আছে সারা দুনিয়া ব্যাপী। বরাবরের মতো এবারো তিনি চীনের শীর্ষ চলচ্চিত্র তারকার স্থানটি দখল করে আছেন। সেই সাথে এই তালিকাটির ৫ম স্থানটিও নিজেরই রেখেছেন।
গত বছর ‘দ্য ফরেইনার’ সিনেমা দিয়ে হলিউডের ফেরার পর তার মোট ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ব্লেডিং স্টিল’। এছাড়া বেশ কিছু ব্র্যান্ডের এন্ডর্সমেন্ট ভ্যালু, সিনেমার প্রযোজনাসহ তার নিজের কিছু সিনেমার হলের আয় নিয়ে এ বছর তার উপার্জনের ঝুলিতে জমা হয়েছে প্রায় ৪৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৪. ক্রিস হেমসওয়ার্থ
গতবছর মুক্তি পাওয়া ‘থর: র্যাগনারক’, আর এ বছরের ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ দিয়ে ভালোই বাজিমাত করেছেন মারভেল ইউনিভার্সের ‘বজ্রদেবতা’ ক্রিস হেমসওয়ার্থ। ২০১৭ সালের তালিকায় ১১ নম্বরে থাকা ক্রিসের এবার ৪ নম্বরে থাকাটা অনেককেই অবাক করতে পারে, তবে এতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তার অভিনীত ‘থর: র্যাগনারক’ ও ‘ইনফিনিটি ওয়ার’-এর ব্যাপক সাফল্যের ফলেই এ বছর তার উপার্জন ছিল আকাশছোঁয়া। এ কারণে গত বছর ৩১.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করা ক্রিস এবার আয় করেছেন প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ, অর্থাৎ ৬৪.৫ মিলিয়ন ডলার।
৩. রবার্ট ডাউনি জুনিয়র
হয়তো টনি স্টার্কের সমান বিলিয়নিয়ার নন তিনি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আয় করা অভিনেতাদের তালিকা তৈরি হবে, আর সেখানে তিনি থাকবেন না, সেটা কি হয়? তার আয়ের গতি যেভাবে বাড়ছে, হয়তো শীঘ্রই টনি স্টার্কের ধারেকাছে চলে যাবেন তিনি। গত বছর তালিকার ৬ নম্বরে থাকা রবার্ট এবার উঠে এসেছেন তিনে।
এ বছর মুক্তি পাওয়া ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ ছাড়াও ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘স্পাইডারম্যান হোমকামিং’য়ে মাত্র কিছুক্ষণ স্ক্রিনটাইমের জন্যই তাকে দেয়া হয়েছিল প্রায় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে মুক্তি পাচ্ছে ‘ইনফিনিটি ওয়ার’-এর দ্বিতীয় সিনেমা এবং ‘দ্য ভয়্যাজ অফ ড. ডুলিটিল’। সব মিলিয়ে এ বছর তার আয়ের পরিমাণ ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২. ডোয়েইন জনসন
শীর্ষ আয় করা অভিনেতাদের তালিকা হবে আর সেখানে ডোয়েইন জনসন থাকবেন না? সে কী করে হয়! এবছরের শুরুতেই তিনি বাজিমাত করেছেন ‘জুমানজি’ সিনেমা দিয়ে। দর্শক থেকে শুরু সমালোচক মহলেও ভালো প্রশংসা পেয়েছে সিনেমাটি। এছাড়া বক্স অফিস থেকে তুলে নিয়েছে প্রায় ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
তবে সেখানে থেমে নেই ডোয়েইন জনসনের যাত্রা। কয়েকমাস আগে মুক্তি পাওয়া ‘র্যাম্পেজ’ ও ‘স্কাইস্ক্র্যাপার’ সমালোচকদের কাছে সেভাবে সমাদৃত না হলেও ভালোই ব্যবসা করেছে সিনেমাহলগুলোতে। বক্স অফিসের হিসেব অনুযায়ী ডোয়েইন জনসন যে আসলেই একজন ব্লকবাস্টার মেশিন, সে কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এবছর তার আয়ের পরিমাণ ছিল ১২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ।
১. জর্জ ক্লুনি
তালিকার শীর্ষে বিরাজ করা অভিনেতাকে নিয়ে ভাবার আগে চলুন আগে একবার চিন্তা করি, তার এবছরের সর্বমোট আয় নিয়ে। নিঃসন্দেহে জর্জ ক্লুনি একজন অসাধারণ অভিনেতা এবং মেগাস্টার, কিন্তু তাই বলে ২৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার?
না অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি অভিনয় করে এত টাকা কামাননি। সত্যি কথা বলতে, গত দু বছরে ক্লুনির উল্লেখযোগ্য কোনো সিনেমাই মুক্তি পায়নি। এবছর ক্লুনির আয়ের পুরোটাই এসেছে ‘পানীয়’ থেকে। তিনি তার ক্যাসামিগোস নামের টাকিলা কোম্পানি ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করেছেন নামকরা ব্রিটিশ কোম্পানি ডিয়াজিওর কাছে। পার্টনার র্যান্ডে গারবার ও মাইক মেল্ডম্যানের সাথে শেয়ারের পর এবছর তার পকেটে ঢুকেছে ২৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
Featured Image © Michael Prince/the Forbes Collection