পশ্চিমা দেশগুলোতে সী ফুডের জনপ্রিয়তা বহুকাল আগে থেকেই রয়েছে। এই জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কিছু খাবারের স্বাদ যেমন অতুলনীয়, দামটাও ঠিক তেমনি পিলে চমকানোর মতো। টাকা চিবোবেন না ভূরিভোজ করবেন, সিদ্ধান্তটা আপনার। বিশ্বের সবচেয়ে দামি দশটি সী ফুড নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
ব্লু ফিন টুনা
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: জাপানের টোকিও শহর
মূল্য: ৩,৬০৩ ডলার (পাউন্ড প্রতি)
এই মাছটিকে খুব চমৎকারভাবে রান্না করা হয় জাপানের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। জাপানের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক কিয়োশী কিমুরা তার রেস্টুরেন্টের জন্য ২০১৩ সালে প্রায় ৪৮৯ পাউন্ড ওজনের (যার দাম ছিল ১.৭৬ মিলিয়ন ডলার) একটি ব্লু ফিন টুনা কিনে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। কারণ এটি ছিল এযাবৎকালের ধরা পড়া সবচেয়ে বড় টুনা। টুনার বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ব্লু ফিন টুনা সর্বাপেক্ষা বড় এবং দামটাও বেশ চড়া। ব্লু ফিন টুনা দিয়ে তৈরি খাবারগুলোর প্রচুর দাম হওয়া সত্ত্বেও, তা জাপানিজদের আহারজীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সরবরাহকৃত ব্লু ফিন টুনার প্রায় অর্ধেকটাই যায় জাপানীজদের এই প্রিয় খাবারটি তৈরিতে।
দ্য বুদ্ধ জাম্পস ওভার দ্য ওয়াল-ফিশ স্যুপ
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: লন্ডনের কে মেফেয়ার শহর
মূল্য- ১৬৯.৮৬ ডলার
এই খাবারটির নাম যেমন অদ্ভুত, ঠিক তেমনি অদ্ভুত এটি তৈরির উপকরণও। এই স্যুপটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত রেসিপির খাবার উপাধিটি দিলে বোধহয় খুব একটা অনুপযুক্ত হবে না। মনে হয় যেন সমুদ্রের সব প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ফিশ স্যুপটি। কী নেই এতে- ঝিনুক, সামুদ্রিক কর্কন্ধু, জাপানিজ মাশরুম, শুকনো শামুক থেকে শুরু করে হাঙরের পাখা এসবেরই উপস্থিতি রয়েছে স্যুপটিতে। আর এই স্যুপটি শীত অথবা বৃষ্টির দিনে লন্ডনবাসীর কাছে খুবই প্রিয় একটি খাবার। স্যুপটি রান্নার পদ্ধতি কিছুটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। শীত অথবা বৃষ্টির দিনে রেস্টুরেন্টে বসে এক বাটি স্যুপের স্বাদ নেয়ার জন্য আপনাকে অন্ততপক্ষে পাঁচদিন আগে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে হবে।
এবার জেনে নেয়া যাক, স্যুপটির এমন নামকরণের পেছনের গল্প। প্রচলিত আছে, কোনো একসময় লন্ডনের এক বৌদ্ধমঠের খুব কাছেই এক ব্যক্তি আপনমনে এই স্যুপটি রান্না করছিলেন। সে সময় মঠের সকল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধ্যানমগ্ন ছিলেন। এখানে বলে রাখা ভালো, মাংস ভক্ষণ করা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। স্যুপটি রান্নার সময় এতোটাই সুগন্ধ বেরিয়েছিল যে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে মঠের প্রাচীর থেকে লাফ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে শুধুমাত্র স্যুপটি একটু খেয়ে দেখার জন্য। আর এমন ঘটনার পর থেকেই স্যুপটির এই নাম দেয়া হয়েছে।
আলমাস ক্যাভিয়ার
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: লন্ডনের ক্যাভিয়ার হাউজ এন্ড প্রুনিয়ার রেস্টুরেন্ট
মূল্য: ২৫,১৬২.৮৮ ডলার
দাম দেখেই চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মতো একটি খাবার এই আলমাস ক্যাভিয়ার! ‘ক্যাভিয়ার’ অর্থাৎ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের ডিম। ইরানি বেলুগা মাছ থেকে আলমাস ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করা হয়। এটি একটি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ এবং কাসপিয়ান সাগরের বিশুদ্ধ পানিতেই শুধুমাত্র এটি পাওয়া যায়। মাছটির দুর্লভতার কারণে খাবারটির দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সুস্বাদু এই মাছের ডিমের পরিবেশনটাও অনেক জাঁকজমকপূর্ণ। ২৪ ক্যারেটের তৈরি স্বর্ণের পাত্রে এই খাবারটি পরিবেশন করা হয় ভোজনরসিকদের সামনে এবং স্মারক হিসেবে হিসেবে খাবার গ্রহণকারীদেরকে পাত্রটি দিয়ে দেয়া হয়। পুরো পৃথিবীতে শুধুমাত্র ক্যাভিয়ার হাউজ এন্ড প্রুনিয়ার রেস্টুরেন্টই এই খাবারটি পরিবেশন করে থাকে।
সামুন্দরি খাজানা কারি
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: লন্ডন
মূল্য: ৩,২০০ ডলার
লন্ডনের বিখ্যাত এই খাবারের রাঁধুনি হলেন একজন ভারতীয়। ২০০৯ সালে ভারতে স্লামডগ মিলিয়নারের ব্যাপক সাফল্য উপলক্ষে প্রহলাদ নামক এক শেফ এই নতুন খাবারটি রান্না করেন। লন্ডনের খুব জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে এটি একটি। এতে রয়েছে- কাঁকড়া, বেলুগার কেভিয়ার, লবস্টার সহ জিভে জল আনা নানা রকম উপকরণ।
কফিন বে কিং ওয়েষ্টার
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: কফিন বে, অস্ট্রেলিয়া
মূল্য: ওয়েষ্টার প্রতি ১০০ ডলার
সুস্বাদু ওয়েষ্টারের স্বাদ নিতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে সুদূর অস্ট্রেলিয়ার কফিন বে শহরে। ওয়েষ্টারগুলো নিজস্ব খামারে চাষ করা হয়ে থাকে। কফিন বের এই ওয়েষ্টারগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়েষ্টার। এরা লম্বায় প্রায় ১৮ সে.মি. এবং ওজনে একেকটা প্রায় ১ কেজি হয়ে থাকে। ওয়েষ্টারগুলো মাঝখান দিয়ে কেটে লেবুর টুকরো দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
বেবি ঈল
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: আমেরিকা
মূল্য: ২০০০ ডলার (পাউন্ড প্রতি)
বেবি ঈল বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় একটি প্রজাতি। আমেরিকার কোস্টাল এরিয়া বিশেষ করে মেইন এবং পোর্টল্যান্ডে বেবি ঈলের দেখা পাওয়া যায়। দিন দিন বেবি ঈলের সংখ্যালঘুতার কারণে এর তৈরি বিভিন্ন খাবারের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। অলিভ ওয়েল, রসুন ও গোলমরিচ দিয়ে পরিবেশন করা হয় খাবারটি।
লবস্টার ফ্রিট্টাটা
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: নিউইয়র্ক
মূল্য: ১০০০ ডলার
নিউইয়র্কের নর্মাস অ্যাট লা পার্কার মেরিডিয়ান হোটেলে বিশাল সাইজের লবস্টারের এই ডিশের দেখা মিলবে। এতে রয়েছে ছয়টি ডিম, লবস্টার ও লবস্টারের শুঁড়, ১০ আউন্স মাছের ডিম (সাভরুগা ক্যাভিয়ার) সহ নানা রকম উপকরণ।
ফরচু লবস্টার
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: নিউইয়র্ক
মূল্য: ২০ ডলার (পাউন্ড প্রতি)
নিউইয়র্কের ফরচু নামের একটি ছোট্ট গ্রামে অবস্থিত কেপ ব্রিটন দ্বীপে একধরণের বিশেষ লবস্টার পাওয়া যায়। এরা অনেকটা লম্বা হয় আর এজন্য গ্রামবাসীরা লবস্টারটিকে নাম দিয়েছে রোলস রয়েস অফ লবস্টার। এই লবস্টারগুলো আবার সারা বছর পাওয়া যায় না। বছরে শুধুমাত্র মে, জুন ও জুলাই মাসে সব মিলিয়ে ১০ সপ্তাহ পাওয়া যায়। এই সময়টা জিভে জল আনা এই খাবারটির চাহিদা থাকে শীর্ষে।
পোশ পাই
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: অস্ট্রেলিয়া
মূল্য: ৯,৪৮৪ ডলার
বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাইয়ের রেসিপির আবিষ্কারক হলেন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত শেফ পল মেডকাফ। মাংস, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান লবস্টার, ট্রাফল (এক ধরণের ছত্রাক) সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এই পাইটি। পাইটি তৈরি হয়ে গেলে ২৩ ক্যারেটের জার্মান গোল্ড লিফ দিয়ে পরিবেশন করা হয় এবং কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে দুই বোতল পানীয় দেয়া হয়।
পাফার ফিশ (ফুগু)
যে স্থানে বিশেষ জনপ্রিয়: জাপান
মূল্য: ২৮০ ডলার
পাফার ফিশের এই ডিশটি আপনাকে রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিবে। শেফের সামান্য একটি ভুল আপনাকে মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢেলে দিতে পারে। এই মাছের লিভার এতোটাই বিষাক্ত যে মাছ কাটার সময় সাবধানতার সাথে তা যদি অপসারণ না করা হয়, তাহলে এর থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত তরল মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ডিশটি তৈরির পূর্বে শেফদেরকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।