দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম সীমান্ত। সমগ্র সীমান্ত জুড়ে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুদীর্ঘ আন্দিজ পর্বতমালা।প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল এবং দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই আন্দিজে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি, যা একে করেছে অনন্য এবং অসাধারণ। এছাড়া এ অঞ্চল জুড়ে জীববৈচিত্র্য এবং উদ্ভিদজগতের এক অপূর্ব সমাহারের দেখা মেলে। এই আন্দিজেই গড়ে উঠেছিল ইনকা সভ্যতা। এখানে আছে বিভিন্ন শহর এবং দর্শনীয় স্থানও। আজকের লেখায় প্রকৃতির এই অপরূপ বিস্ময় সম্পর্কে জানব।
আন্দিজ পর্বতমালার পরিচয়
দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা হলো ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম মহাদেশীয় পর্বতমালা। এটি প্রায় ৭,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং স্থানভেদে ২০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার প্রশস্ত। এর গড় উচ্চতা প্রায় ৪,০০০ মিটার। ‘আন্দিজ’ নামটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।অধিকাংশের মতে, এটি কিউচুয়া শব্দ ‘অ্যান্টি’ (Anti) থেকে আগত, যার অর্থ ‘পূর্ব’ (East) ।এই মহাদেশীয় পর্বতমালাটি দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশগুলো হলো: ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা।[1]
আন্দিজ পর্বতমালা তিনটি অংশে বিভক্ত।
১) উত্তর আন্দিজ: এই অংশ ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর এই তিনটি দেশে পড়েছে।
২) মধ্য আন্দিজ: পেরু এবং বলিভিয়ায় এই অংশটি পড়েছে।
৩) দক্ষিণ আন্দিজ: আর্জেন্টিনা এবং চিলিতে এই অংশ আছে।
এশিয়া মহাদেশের বাইরে, অর্থাৎ হিমালয় পর্বতমালা ছাড়া আন্দিজ পর্বতমালাই হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতমালা। আর এখানে রয়েছে এশিয়ার বাইরে অবস্থিত সর্বোচ্চ পর্বত আকোনকাগুয়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৬,৯৬১ মিটার। এই চূড়াটি আর্জেন্টিনার ম্যান্ডোজাতে অবস্থিত। পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরিগুলোও এখানে অবস্থিত। চিলি ও আর্জেন্টিনা সীমানায় অবস্থিত পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরি ওজোস দেল সালাদো; যার উচ্চতা ৬,৮৯৩ মিটার। আন্দিজেই আছে পৃথিবীর উচ্চতম হ্রদ লেক টিটিকাকা, যা পেরু ও বলিভিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এর পানি স্বচ্ছ এবং এখানে মানব বসতি আছে। বিভিন্ন প্রকার নৌ চলাচলও হয় এখানে। এর মধ্যে নলখাগড়ার তৈরী একপ্রকার নৌকা এখানে স্থানীয়ভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া এখানে রয়েছে কিছু সুউচ্চ মালভূমি। তিব্বতের পামির মালভূমির পর আন্দিজের আল্টিপ্লানো মালভূমি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মালভূমি। এসব মালভূমিতে অবস্থিত কিছু প্রধান শহরের নাম হলো কিটো, বগোটা, কালি, আরেকুইপা, মেডেলিন, বুকারামাঙ্গা, সুকার, ম্যারিডা, লা পাজ। পৃথিবীর উচ্চতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কোটোপেক্সি আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত। তবে ইকুয়াটোরিয়াল স্ফীতির কারণে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী চূড়া হলো ইকুয়েডরে অবস্থিত চিম্বোরাজো আগ্নেয়গিরির চূড়া।এছাড়া অনেক সক্রিয় আগ্নেয়গিরিও এখানে আছে।[3]
আন্দিজের পশ্চিমে আছে আটাকামা মরুভূমি, যা অত্যন্ত শুষ্ক, বৃষ্টিহীন কিন্তু শীতল। এটি চিলির উত্তরে অবস্থিত এবং পেরুর দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্কতম স্থান হিসেবেও বিবেচিত। এর গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ১৫ মিলিমিটার।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী আমাজন। এটি পেরুর আন্দিজ পর্বতের নেভাদো মিসমি চূড়া থেকেই উৎপন্ন হয়েছে।এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি প্রধান নদী ওরিনাকো আন্দিজ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
আন্দিজ কোনো একক পর্বত নয়। এটি অনেক পর্বতশ্রেণি নিয়ে গঠিত। তাই একে পর্বতমালা বলা হয়। ট্রায়াসিক-জুরাসিক পিরিয়ডে আদি বৃহত্তম মহাদেশ প্যানজিয়া ভাঙ্গনের সময়ে এটি গঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। পৃথিবীর টেক্টনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে আজকের আন্দিজ গড়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয়, প্রায় পাঁচ কোটি বছর পূর্বে এটি গঠিত হয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের টেক্টনিক প্লেট, যা নাজকা প্লেট ও এন্টার্কটিক প্লেট নামে পরিচিত, এই দুটোর সংঘর্ষের ফলে আন্দিজ গঠিত হয়েছিল।তবে এই প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান আছে। আন্দিজ সম্পর্কে আরো একটি তথ্য হলো, এটি আমেরিকান কর্ডিলেরা পর্বতশৃঙ্খলেরও অংশ। এ অংশে আছে বহু পর্বতমালার সারি। আর আন্দিজ এই শৃঙ্খলের, অর্থাৎ উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যারিবিয়ান দ্বীপ, যেমন আরুবা, বোনেয়ার, কুরাকাও আন্দিজ পর্বতেরই নিমজ্জিত চূড়া।[2][3][6][7][8][9][10]
খনিজ সম্পদ
আন্দিজ পর্বতে রয়েছে আকরিক এবং লবণের বিশাল মজুদ। এছাড়া আছে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য হাইড্রোকার্বনের মজুদ।আটাকামা মরুভূমির অগ্রভাগে আছে তামার মজুদ, যা চিলি এবং পেরুকে যথাক্রমে প্রথম আর দ্বিতীয় তামা রপ্তানিকারক দেশ হওয়ার সুবিধা এনে দিয়েছে।
এছাড়া রয়েছে স্বর্ণের বিশাল ভাণ্ডার। পেরুতে আছে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম স্বর্ণের খনি। পেরুর ইয়ানাকোচা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সোনার খনি।
পুরো বিশ্বের প্রায় ৪৫ শতাংশ তামা, ৩০ শতাংশ রূপা এই আন্দিজের খনি থেকে আসে। এছাড়া সীসা ও দস্তা পাওয়া যায়। বলিভিয়ায় আছে সালার দে ইউনি, যা পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত সমতল ভূমি। তাই এটিকে দেখতে বিশাল আয়নার মতো লাগে।[2][3][6][9][10]
জলবায়ু
পুরো দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে বিস্তৃত হওয়ার কারণে এর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। মহাদেশীয় জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে আন্দিজ পর্বতমালাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। গ্রীষ্মপ্রধান বা ক্রান্তীয় আন্দিজ, শুষ্ক আন্দিজ এবং আর্দ্র আন্দিজ।
দক্ষিণ আন্দিজের জলবায়ু ঠাণ্ডা এবং বৃষ্টিবহুল। আবার মধ্য আন্দিজের জলবায়ু শুষ্ক। উত্তর আন্দিজের জলবায়ু বৃষ্টিবহুল এবং উষ্ণ।এছাড়া আন্দিজের দক্ষিণে অর্থাৎ চিলি ও আর্জেন্টিনা সীমান্তে আছে ক্রান্তীয় হিমবাহ অঞ্চল, যা বিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্রান্তীয় হিমবাহের মজুদ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এই হিমবাহের বরফ এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে।
আন্দিজের জলবায়ু কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেও পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন: তুষার আবৃত চূড়া কোটোপেক্সির কয়েক কিলোমিটার পরেই রয়েছে সবুজে আবৃত রেইনফরেস্ট। জলবায়ুর এই বৈচিত্র্য আন্দিজকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।[2][3][8][9][10]
উদ্ভিদ
আন্দিজ পর্বতমালার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এবং বিভিন্নরকম বৃক্ষ ও ফুলের গাছ। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, এটি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে দক্ষিণের ঠাণ্ডা, ভেজা আর ঝড়ো হাওয়াযুক্ত অঞ্চল কেপ হর্ন পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে; যার মাঝে রয়েছে অত্যন্ত শুষ্ক অঞ্চল আটাকামা মরুভূমি।
এখানে রয়েছে ৩০,০০০ প্রজাতির ভাস্কুলার উদ্ভিদ (ফার্ন, কনিফার এবং বিভিন্ন ফুল গাছ) এবং এর অর্ধেকই এ অঞ্চলের স্থানীয়।এখানে সিনচোনা পাবসেন্স নামের একপ্রকার ছোট গাছ পাওয়া যায়, যা ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এখানে পাওয়া যায় তামাক আর আলু। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৫০০ মিটার উপর পাওয়া যায় পলিলিপিসের বন এবং কিছু অরণ্য, যেগুলো স্থানীয়ভাবে কুইয়া, ইয়াগুয়াল ইত্যাদি নামে পরিচিত। এসব বনের কাঠ সেই ইনকা সভ্যতার সময় থেকেই কাটা হচ্ছে আর এই কাজটি এখনো অব্যাহত আছে। বর্তমানে এখানের বন উজাড়ের কাজ আরো বেশি ত্বরান্বিত হয়েছে। এর ফলে অনেক উদ্ভিদ এখন বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত। ধারণা করা হয়, মূল বনাঞ্চলের মাত্র ১০ শতাংশই অবশিষ্ট আছে।
আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে কৃষিকাজ হয়ে আসছে প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে। ইনকারাও কৃষিকাজে যুক্ত ছিল। পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ির মতো ধাপ তৈরি করে সেচের মাধ্যমে ফসল চাষ করা হতো। প্রধান ফসল ছিল আলু। এছাড়া ভুট্টাও চাষ হতো। বর্তমানে টমেটো, তামাক, তুলা, কফি প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে চাষ হয়। এছাড়া কোকা চাষ হয়, যা থেকে কোকেন তৈরি হয়। পাহাড়ি উচ্চতাজনিত শারীরিক সমস্যা এবং ক্লান্তি দূর করতে এই কোকা পাতা চিবিয়ে খাওয়া হয়। এই পাতা ভেষজ চা হিসেবেও এসব অঞ্চলে জনপ্রিয়।[2][3][8][9][10]
প্রাণী
জীববৈচিত্র্যের কারণে এখানে উদ্ভিদের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার। প্রায় ১,০০০ প্রজাতির উভচর প্রাণীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই এখানকার স্থানীয়। আন্দিজ হলো পৃথিবীতে উভচর প্রাণীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। তাছাড়া এখানে রয়েছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, যার ১৩ শতাংশ স্থানীয়; রয়েছে ১৭০০-এর বেশি প্রজাতির পাখি, যার প্রায় ৩৩ শতাংশ স্থানীয়; রয়েছে ৬০০-এর বেশি প্রজাতির সরীসৃপ, যার ৩৩ শতাংশ স্থানীয় এবং প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ, যার ৩৩ শতাংশ স্থানীয়।
এখানে আছে উট পরিবারের বিশেষ কিছু প্রাণী, যেমন: ভিকুনা, গুয়ানাকো; যাদের আল্টিপ্লানো মালভূমিতে পাওয়া যায়। এছাড়া স্থানীয়রা মাংস আর উলের জন্য লামা আর আল্পাকা পালন করে।
ইঁদুর গোত্রের বিপন্ন প্রাণী চিনচিলাস এই আন্দিজের আল্পাইন অঞ্চলে বাস করে। এদেরকে ভোরবেলা এবং সন্ধ্যার সময় দেখা যায়।পশ্চিম গোলার্ধের সর্ববৃহৎ পাখি আন্দিয়ান কনডোরের বসবাস এই আন্দিজে। তবে এদের সংখ্যাও কমে আসছে।
এসব প্রাণী ছাড়াও এখানে দেখা যায় হিউমুল, কুগার, আন্দিয়ান শেয়াল, আন্দিয়ান পুমা, আন্দিয়ান আর্মাডিলো (হেয়ারি বা লোমশ আর্মাডিলো) বিভিন্ন পাখি যেমন: আন্দিয়ান হাঁস, জায়ান্ট কুট, ফ্ল্যামিংগো, ডারউইন বা ছোট রিয়া, আন্দিয়ান ফ্লিকার, ডায়াডেমড স্যান্ডপাইপার প্লোভার, মাইনার্স, সিয়েরা ফিঞ্চ এবং ডায়ুকা ফিঞ্চ।
এছাড়া রয়েছে টিটিকাকা হ্রদের কিছু স্থানীয় প্রাণী, যেমন: টিটিকাকা গ্রেব, যা উড়তে অক্ষম, টিটিকাকা ব্যাঙ, হামিংবার্ডের কিছু প্রজাতিও দেখা যায়, যেমন: হিলস্টার, যাদের প্রায় ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় দেখা যায়।
আর্দ্র আন্দিয়ান বনের পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পার্বত্য টোকান, কোয়েটজাল, আন্দিয়ান কক অভ দ্য রক। এটি পেরুর জাতীয় পাখি।
এছাড়া স্তন্যপায়ীদের মধ্যে আরো রয়েছে মাউন্টেন টাপির, আন্দিয়ান ভালুক, হলুদ লেজের উলি বানর। কিন্তু এরা এখন হুমকির মুখে।[2][3][4][5][8][9][10]
মানব বসতি ও কর্মকাণ্ড
আন্দিজ পর্বতমালার উত্তর থেকে দক্ষিণে গড়ে উঠেছে বিচিত্র সব সংস্কৃতি। ইনকা সভ্যতা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কৃতির উৎকর্ষ ও উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে। মধ্য আন্দিজে ইনকাদের তৈরী অনেক রাস্তা এখনো দেখা যায়। আন্দিজে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর কিছু পুরনো সভ্যতা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনকা সভ্যতা, যা আন্দিজের দক্ষিণে কোস্কো অঞ্চলে গড়ে উঠছিল। এই কোস্কো শহরের উত্তর-পশ্চিমে আন্দিজের একটি চূড়ায় আজও দাঁড়িয়ে আছে ইনকাদের তৈরী স্থাপনা মাচু পিচু পিরামিড।
এছাড়া পেরুর চাচাপোয়াস এবং নাজকা; পেরু, বলিভিয়া এবং চিলির টিওয়ানাকু; ইকুয়েডরের কানারি এসব সভ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।[5][8]
ইউরোপিয়ান বিভিন্ন দখলদার আর বণিকদের আগমনের ফলে এসব এলাকার মানুষদের মাঝে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে, যাতে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া গৃহযুদ্ধের কারণেও অনেকে মারা যায়।
বর্তমানে আন্দিয়ান অধিবাসীদের ভাষাগুলোর মধ্যে কিচুয়া আর আয়মারা ভাষা জীবিত আছে। আন্দিজের অবস্থিত বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য আছে বিভিন্ন রাস্তা, হাইওয়ে আর রেলপথ। আন্দিজে গড়ে উঠেছে বহু শহর। এর মধ্যে বৃহত্তম শহর হলো প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলবর্তী পেরুর রাজধানী লিমা। এছাড়া আছে কলম্বিয়ার বগোটা, যার জনসংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষ; রয়েছে সান্টিয়াগো, মেডেলিন, কালি। বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ হলো বিশ্বের উচ্চতম শহর, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ৩,৬৫০ মিটার। এছাড়া আর্জেন্টিনার সান জুয়ান, মেন্ডোজা, সাল্টা ও কাটামার্কা; চিলির কালামা ও রাংকাগুয়া; বলিভিয়ার অরুরো, পোটোসি ও সাকাবা; পেরুর হুয়ারস, কুজকো ও পুনো; ইকুয়েডরের আম্বাটো, কুইটো, লোজা; কলম্বিয়ার আর্মেনিয়া, বুকারামাঙ্গা, পালমিরা; ভেনিজুয়েলার মেরিডা ও লা গ্রিটা- এই শহরগুলো অন্যতম।
আন্দিজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। পাহাড়ে চড়া, হাইকিং, রাফটিং (ভেলায় চড়া), সাইক্লিং, স্কিইং (তুষারের উপর স্কি করা), স্টারগেজিং (তারা দেখা) এসব কিছু এখানকার অবসরযাপনের মধ্যে অন্যতম।[2][3][9][10]
পৃথিবীর বুকে এক অপার সৃষ্টি এই আন্দিজ পর্বতমালা। আন্দিজের সৌন্দর্য প্রকৃতিতে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। তাই এর রূপ আর বৈচিত্র্য নিঃসন্দেহে যে কাউকে মুগ্ধ করবে।