![](https://assets.roar.media/assets/F62tskwhdEmoW8mi_images.jpeg?w=1200)
পৃথিবী জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো দ্বীপ কিংবা সমুদ্রে জেগে ওঠা চর। একটু ছুটি বা অবসর সময় পেলেই মানুষজন ছুটে যায় এই মনোরম সৌন্দর্যে ঘেরা দ্বীপগুলোতে। তবে প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরূপ এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু অদ্ভুত ও কিম্ভুতকিমাকার দ্বীপ রয়েছে পৃথিবী জুড়ে। আজ আমরা জানবো সেগুলো সম্পর্কেই।
মরিশাস আইল্যান্ড
মরিশাস উষ্ণপ্রধান এলাকার জন্য স্বর্গীয় স্থান হলেও এটি বিখ্যাত আরো একটি কারণে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আপনাআপনিই এখানে একটি মরীচিকা তৈরী হয়েছে। বালির স্রোত এবং পানির ঢেউ মিলে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করেছে, যার জন্য উপর থেকে তাকালে মনে হবে পানির নিচে কোনো জলপ্রপাত বয়ে যাচ্ছে। আর তাতেই দ্বীপটির সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ।
![](https://assets.roar.media/assets/WCgxfh5Fcan4reI8_8069960-shutterstock_740093419-1543581537-728-4f64aac406-1543992815.jpg)
স্নেক আইল্যান্ড
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলে দেখা মিলবে এই অদ্ভুত দ্বীপটির। গোল্ডেন ল্যাঞ্চহ্যাড নামের অন্যতম বিষধর সাপটিতে পরিপূর্ণ এই দ্বীপ। এক পরিসংখ্যানে পাওয়া গিয়েছে যে প্রায় ৪০০০ এর মতো সোনালী রঙের ল্যাঞ্চহ্যাড সাপের অবস্থান এখানে। যার ফলে প্রায় প্রতি বর্গমিটার এলাকাতেই গড়ে একটি সাপের দেখা মিলবে। জায়গাটি এতই বিপদজনক যে ব্রাজিল সরকার দ্বীপটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
![](https://assets.roar.media/assets/nCATiiVx3hcbGPTp_8069910-21872560-1115248-2-0-1543582093-1543582129-1500-1-1543582129-728-c85d7df2d9-1543992815.jpg)
গোকুই আইল্যান্ড
মূলত চীনে অবস্থিত এই দ্বীপটি ছিলো মৎস্য শিকারীদের আস্তানা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগেই এই দ্বীপ ত্যাগ করে জেলেরা শহরে ফিরে গেছে। কিন্তু দ্বীপে নির্মিত তাদের বাড়ি কিংবা ছোট ছোট দালানগুলো রয়ে গিয়েছিলো। অনেকদিন ধরে অব্যবহৃত থাকার কারণে তা পুরোপুরি ছেয়ে গেছে সবুজে। পুরো দ্বীপটিই যেন এখন সবুজের আস্তরণ। বাড়িগুলোর ছাদ কিংবা দেয়াল, সব চাপা পড়েছে সবুজের নিচে। প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়ে নিজে সাজিয়েছে এই গোকুই আইল্যান্ডটি। পুরো দ্বীপটি যেন একটি নরম সবুজ চাদরে জড়ানো।
![](https://assets.roar.media/assets/t36nUbne2fAWsKH1_8070010-EN_01176532_0023-1543577560-728-3c080973ca-1543992815.jpg)
বৌভেট আইল্যান্ড
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরিবিলি এবং নিস্তব্ধ দ্বীপ হিসেবে পরিচিত এই বৌভেট। এর অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের সর্ব দক্ষিণে। এই দ্বীপে যেতে হলে আপনাকে সমুদ্রপথে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ২৬০০ মাইল। তাছাড়া পুরো দ্বীপটি বরফাচ্ছাদিত। পুরো দ্বীপ জুড়ে মাত্র ৭% এলাকা (৪৯ বর্গ কি.মি) বাদে বাকিটা বরফের নিচে। এমনকি দ্বীপের মাঝখানের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখও বরফ দ্বারা জমাটবদ্ধ। তাই পারতপক্ষে কেউই এই দ্বীপমুখী হয় না।
এই দ্বীপটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন ফরাসি নাবিক জিন বাপ্তিস্তে চার্লস বৌভেট। তিনি ১৭৩৯ সালে দ্বীপটি খুঁজে পেলেও তার বর্ণনায় কিংবা অবস্থান নিয়ে সবকিছু পুরোপুরি উল্লেখ না থাকার কারণে ১৮০৮ সালের আগ পর্যন্ত এটি কেউ খুঁজে পায়নি। সেবার দ্বীপটি আবিষ্কার করেন জেমস লিন্ডহে নামক এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক। তিনি আইল্যান্ডটির নাম দেন লিন্ডহে আইল্যান্ড। ১৭ বছর পর আরেকজন নাবিক সেটি খুঁজে পেয়ে নাম দেন লিভারপুল আইল্যান্ড অবশেষে অনেক পরে দ্বীপের নামকরণ করা হয় এর প্রথম আবিষ্কারকের নামে।
![](https://assets.roar.media/assets/XG4J4dE72aEQBgsC_8069860-Bouvet_island-1543482701-728-37a808b943-1543992815.jpg)
ক্লিপারটন আইল্যান্ড
ক্লিপারটন আইল্যান্ড একটি কোরাল দ্বীপ, এর অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরাল দ্বীপ হিসেবেও এটি পরিচিত। আয়তনে এটি মাত্র ৬ বর্গ কিলোমিটার। তবে এই দ্বীপটি বিখ্যাত হয়েছে মর্মান্তিক এক ঘটনার জের ধরে।
১৯০০ সালের শুরুর দিকে দ্বীপটিতে খনি থেকে গুয়ানো উত্তোলন করা হতো। ১৯১০ সালে এই ছোট দ্বীপে বাতিঘর বানানো হয়। তখন সেখানে প্রায় ১০০ জন মানুষ বসবাস করতো। তাদের মধ্যে পরিবার এবং ছোট ছেলেমেয়েরাও ছিলো। প্রতি দু’মাস পর পর জাহাজে এসে খাবার দেওয়া হতো এলাকার লোকজনদের। কিন্তু ১৯১৪ সালে হঠাৎ করে মেক্সিকান যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়াতে জাহাজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বীপটির মানুষজনের কথাও ভুলে যায় সবাই। ছোট একটি শস্যবিহীন দ্বীপে কোনো খাবার ছাড়া মানুষগুলোও টিকে থাকতে পারেনি। ১৯১৭ সালে আমেরিকান একটি জাহাজ সেই দ্বীপ থেকে সর্বশেষ ৩ নারী ও ৮ জন শিশুকে উদ্ধার করে। তারাই ছিলো দ্বীপের অবশিষ্ট বাসিন্দা।
![](https://assets.roar.media/assets/rMiF35lQlozAhTul_8069560-1280px-Clippertonisland-1543570224-728-b6b0dc39fc-1543992815.jpg)
আর্ন্সট থালমান আইল্যান্ড
আর্ন্সট থালমান দ্বীপটি কিউবায় অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। ১৯৭২ সালে কিউবান কিংবদন্তি ফিদেল কাস্ট্রো তৎকালীন পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হনেকারকে নিয়ে এই দ্বীপটিতে আসেন এবং তার সম্মানার্থে আইল্যান্ডটির নামকরণ করেন আর্ন্সট থালমান।
মজার ব্যাপার যে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হওয়ার পর দ্বীপটি নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তাই বলা যায়, বার্লিন দেয়াল ওঠার পরেও পূর্ব জার্মানির একটি অংশ এখনো টিকে আছে।
![](https://assets.roar.media/assets/zSJw9GvcPObLFI3a_8069810-21865660-1115248-0-1543581614-1543581634-728-1-1543581634-728-70bd34e69c-1543992815.jpg)
পালমাইরা আইল্যান্ড
সম্পূর্ণ প্রবাল দিয়ে তৈরী এই দ্বীপটি পৃথিবীর অন্যতম একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। পুরো দ্বীপটি রেইনফরেস্টে ঘেরা। কিন্তু তারপরও এত সুন্দর দ্বীপটি সবাই উপভোগ করতে পারে না। এটিকে ঘিরে বেশ কিছু কুসংস্কার রয়েছে। এ দ্বীপের আশেপাশে থেকে বেশ কিছু জাহাজ উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরকম রহস্যজনক সব ঘটনার জন্যই দ্বীপটিকে অনেকে ‘ভৌতিক’ বলে আখ্যায়িত করে। তাই এখানে আসতে হলে কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। একসাথে অনেকজন মিলে এখানে ঘুরতে আসাও নিষিদ্ধ।
![](https://assets.roar.media/assets/kVUcFAtr30WI8X4w_8069760-EN_01059904_0015-1543577638-728-de5b2e6190-1543992815.jpg)
ভালকান আইল্যান্ড
এই আইল্যান্ডটি প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় অদ্ভুত সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে। ফিলিপাইন উত্তরে তাল নামক একটি হ্রদ রয়েছে। সেই হ্রদের মাঝখানে রয়েছে তাল ভালকানো নামক একটি দ্বীপ। ভালকানোর মাঝখানেই রয়েছে আরো একটি হ্রদ। মূলত এই হ্রদটি তৈরী হয়েছে ভলকানো থেকে। সেই দ্বীপের মাঝখানে রয়েছে আরো একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপটিই ভালকান আইল্যান্ড নামে পরিচিত, এক দ্বীপের মধ্যে আরেক দ্বীপ।
![](https://assets.roar.media/assets/znuRamZXze7IztD2_8069710-Depositphotos_155638624_xl-2015-1543577699-728-8236752486-1543992815.jpg)
ফোর্ট ক্যারল আইল্যান্ড
আপনি কি কখনো একটি দ্বীপের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন? কম-বেশি সবাই মনের অজান্তে কখনো না কখনো হয়তো এই স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু সবার তো সে সাধ্য থাকে না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এমন কিছু দ্বীপ রয়েছে, যেগুলো আপনি পেতে পারেন একেবারেই স্বল্পমূল্যে। কিন্তু তারপরও কেউ কিনতে আগ্রহী নয় সেসব দ্বীপ।
এমনই একটি হচ্ছে ফোর্ট ক্যারল। এই দ্বীপটি মূলত বানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য। বর্তমানে এই দ্বীপটি একজনের মালিকানাধীন। প্রথমে দ্বীপটি বাল্টিমোর মেয়রের মালিকানাধীন থাকলেও ১৯৫৮ সালে তা বিক্রয় করা হয় বেঞ্জামিন আইজেনবার্গ নামে একজন লোকের কাছে। তার চিন্তা-ভাবনা ছিলো সেখানে ক্যাসিনো ও কিছু হোটেল গড়ে তোলার। কিন্তু পুরো দ্বীপটি ছিলো পাখিদের অভয়ারণ্য। কিছু গড়ে তুলতে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে ভেবে এই চিন্তা ভাবনা থেকে সরে আসেন আইজেনবার্গ। বর্তমানে এই দ্বীপটির মালিক আইজেনবার্গের নাতনি মেরিল্যান্ড। তিনি চাইছেন দ্বীপটি বিক্রয় করে দিতে। কিন্তু খরিদ্দারের অভাবে বিক্রয়ও করতে পারছেননা। তাই আপাতত খালিই পড়ে আছে সেটি। চাইলে আপনিও কিনতে পারেন!
![](https://assets.roar.media/assets/8m98Ftr8WKtE03hc_8070360-image-crop-1331x1232-1543577772-728-6f40f1d54d-1543992815.jpg)
সোকোত্রা আইল্যান্ড
এই দ্বীপটিকে দেখলে মনে হবে পৃথিবীর বাইরের কোনো দ্বীপ। কিছু মানুষ বিশ্বাসও করে যে এই দ্বীপটি আদতে ইডেনের গার্ডেন। দ্বীপটি বহু বছর বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানে এমন কিছু উদ্ভিদ জন্মেছে, যেগুলো পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায়নি। যেমন- ড্রাগন ব্লাড গাছ। এই গাছকে দেখলে মনে হবে প্রাকৃতিক কোনো ছাতা। তবে গাছটিকে কাটলে এর বাকল থেকে অনেকটা রক্তের মতো লাল রঙের তরল বের হয়ে আসে। সেই হেতু গাছটি পরিচিত পায় ড্রাগন ব্লাড গাছ হিসেবে।
![](https://assets.roar.media/assets/lbJGB22yqxb6W5me_8069610-EN_01103533_5659-1543577783-728-c7529e0718-1543992815.jpg)
ডায়াভিক ডায়ামন্ড আইল্যান্ড
এই পুরো দ্বীপটিই একটি বিশালাকার হীরক উত্তোলনের খনি। কানাডার উত্তরে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে খনিটি খোঁড়া হয়েছিলো ১৫ বছর আগে। গত ১৫ বছরে এই একটি খনি থেকেই উত্তোলন করা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ক্যারেটের হীরা, যা ওজন করলে হবে প্রায় ২০ টন।
এই দ্বীপটি ও হীরক উত্তোলনের প্রজেক্টটি এতটাই সফলতা অর্জন করেছে যে এই নিয়ে ইতোমধ্যেই ‘ডায়াভিক ফ্যাক্ট বুক: দ্য ডায়াভিক ডায়মন্ড মাইন’ নামে একটি বই লেখা হয়ে গেছে।
![](https://assets.roar.media/assets/lK38vMbwL4ME1lCZ_8069510-61370011-1543918677-728-adbe3f74cd-1543992815.jpg)