জীবন আর পরিবর্তন অনেকাংশে সমার্থক দুটি শব্দ। জীবন আছে মানে সেখানে পরিবর্তন থাকবেই। সেই পরিবর্তন ইতিবাচক হতে পারে, নেতিবাচকও হতে পারে। আবার কোনো বাড়তি প্রভাব না রেখেই বদল আসতে পারে আপনার জীবনে। কোনো পরিবর্তন হয়তো আপনি নিজে এনেছেন, কিছু এনেছে আপনার চারপাশের মানুষ আর পরিবেশ। পরিবর্তন ভালো বা খারাপ- যেমনটাই হোক না কেন, পরিবর্তনের আগে মানুষের মধ্যে খানিকটা ভয়, আশা, উত্তেজনা কাজ করবেই। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই একটি পর্যায় আসে, যখন তাকে নিজের জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। কী করে বুঝবেন যে, আপনার জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন আনার সময় হয়ে গিয়েছে? জীবন নিজেই আপনাকে সময় বলে দেবে। কিন্তু সেজন্য দরকার একটু মনোযোগের। হয়তো আপনি বুঝতে পারছেন না, অথচ আপনার সামনে এমন অন্তত একটি লক্ষণ রয়েছে, যার জন্য আপনার জীবনটাকে একটু বদলে দেওয়া উচিৎ। কী সেই লক্ষণগুলো? কীভাবে বুঝবেন এটাই সঠিক সময়? চলুন না, জেনে নেওয়া যাক আজকে!
আপনি কোনোকিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছেন না
আপনি সকালে কেন বিছানা ছেড়ে ওঠেন? কেন অফিসে যান, পড়াশোনা করেন? এর কারণ, আপনি জানেন যে, আপনি নতুন একটা দিন শুরু করতে চান। সামনে এগিয়ে যেতে চান। কিন্তু কোনো একদিন সকালে উঠে যদি আপনার মনে হয়, নাহ! আর পারছি না। কোনো কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না! কী করবেন সেদিন? এমন দিন কি আপনার জীবনে প্রায়ই আসছে? তাহলে জীবনে কিছু পরিবর্তন আনার সময় হয়তো হয়েই গিয়েছে! আর যদি এমন হয় যে, আপনি আপনার কাজকে এখনো পছন্দ করছেন, তবুও ক্লান্তি চলে আসছে। তাহলে, নিজের কাজকে নতুন করে সাজান। নিজের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনুন, যাতে করে ভালোবাসার জিনিসটির প্রতি বিরক্তি না এসে যায়।
প্রতিদিন অন্তত একবার মন খারাপ হচ্ছে
মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণত, মন খারাপ হলে আমরা সেটাকে এড়িয়ে যাই। মন খারাপ সম্পর্ক, চাকরি বা অন্যান্য কারণেও হতে পারে। তবে, প্রতিদিন যদি আপনার মন খারাপ থাকে তাহলে সেটা চিন্তার কারণ হয়ে পড়ে। কেন আপনার মন খারাপ হচ্ছে? যদি এই প্রশ্নের উত্তর “ঠিক বুঝতে পারছি না” বা “এমনিতেই” হয়, তাহলে নিজের প্রতিদিনের কাজগুলোকে ভালোভাবে দেখুন। দিনে আপনি যে কাজগুলো করছেন, সেগুলোর কয়টি আপনি নিজের জন্য করছেন, আর কয়টি অন্যদের জন্য করছেন সেটা বাছাই করুন। জীবনে কিছুক্ষেত্রে নিজের ব্যাপারে একটু স্বার্থপর হওয়া প্রয়োজন। যদি এমন হয় যে অন্য কাজ করতে গিয়ে আপনি নিজেকেই একটু সময় দিতে পারছেন না, তাহলে নিজের জীবনে এই পরিবর্তনটুকু আনুন। নয়তো, একটা সময় পর আপনি প্রচন্ড হতাশ হয়ে পড়বেন। আর তখন আপনি সমস্ত দোষারোপ করার জন্য কেবল একজনকেই খুঁজে পাবেন। আর সেই একজনটি হলেন আপনি নিজে।
আপনার চারপাশের মানুষ বদলে যাচ্ছে
চারপাশের মানুষের সাথে অবশ্যই নিজেকে তুলনা করা উচিৎ নয়। একেকজন মানুষ একেকরকম। কে কার চাইতে বেশি ভালো আছে সেটা নিশ্চয়ই এককথায় বলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, তারপরেও আপনার চারপাশে মাঝেমধ্যে তাকানো ভালো। আপনার যে বন্ধুদের সাথে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতেন আপনি একসময়, তারা কি হুট করেই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কাজ আর বাসা নিয়ে? এই পরিবর্তন কিন্তু আপনার জন্যও নির্দেশনা হতে পারে যে, এবার হয়তো আপনারও জীবনকে আরেকটু গুছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
আপনি বিরক্ত হচ্ছেন
বিরক্ত হওয়া মানুষের আর সব স্বাভাবিক আবেগের মতোই একটি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনি সবসময় বিরক্ত থাকবেন। একদিন হুট করে কারো কোনো বিরক্তিকর আচরণ দেখে বিরক্ত হওয়া, আর প্রতিদিন খুব স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার দেখেও বিরক্ত হয়ে যাওয়া- এই দুটো বিরক্তি কিন্তু এক নয়। একটি স্বাভাবিক। আরেকটি চিন্তা করার মতো ব্যাপার। জীবন মানেই সবসময় মজা আর আনন্দ নয়। কিন্তু তাই বলে এই বাড়তি বিরক্তিকেও জীবনে টেনে আনার কোনো মানে হয় না। আপনার জীবন যদি ঠিক এমন হয়ে যায়, তাহলে একটু ভাবুন, আপনার জীবনেও কি পরিবর্তন দরকার?
মানসিক চাপে ভুগছেন
মানসিক চাপে মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কমবেশি ভুগে থাকে। জীবন খুব সহজে কাটিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। তাই জীবনের পদে পদে নানারকম সমস্যা, বাঁধা আসবেই। আর এই সমস্যা থেকে তৈরি হবে মানসিক চাপ। মানসিক চাপ ততক্ষণ ভালো যতক্ষণ এটি নিয়মিত না হয়ে যায়। নিয়মিত মানসিক চাপ আপনার স্বাভাবিক জীবনকে অনেক বেশি কঠিন করে ফেলবে। এক্ষেত্রে সবচাইতে বড় সমস্যার ব্যাপারটি হচ্ছে, মানুষ মানসিক চাপ ও উদ্বিগ্নতার মধ্যে থাকলে সেসময় নিজের জীবনে পরিবর্তন আনা তার জন্য আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। তবে হ্যাঁ, এই স্থায়ী মানসিক চাপের মধ্য থেকে বের হওয়ারও নানা উপায় আছে। এগুলোর মধ্যে ঠিক কোন উপায়টি আপনার জন্য কাজ করবে বলে মনে করেন আপনি? চেষ্টা করে দেখুন সবগুলো। নিজেকে সমস্যা থেকে বের করে এনে নতুন একটা জীবন উপহার দেওয়া হয়তো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
আপনি ভয় পাচ্ছেন
সবাই ভয় পাই। সবার জীবনেই ভয় অনেক রুপে আসে। অনেকে প্রিয়জনকে হারানোর ভয় পান। অনেকে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন ভেবে ভয় পান। ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। জীবন কাটানোর নানা ধাপে ভয় আমাদের জীবনে আসতে বাধ্য। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে, আপনি ভয় পাচ্ছেন এবং ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করছেন, নাকি ভয় আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নিয়মিতভাবে ভয়ের মধ্যে থাকা মোটেও ভালো কোনো লক্ষণ নয়। নির্দিষ্ট সেসব ব্যাপারকে চিহ্নিত করুন যেগুলো আপনাকে ভয় পেতে বাধ্য করছে। কেন আপনি ভয় পাচ্ছেন সেটা বুঝে সমাধান করার চেষ্টা করুন। যদি এতে করে কাজ না হয় তাহলে ভয় পাচ্ছেন যে ব্যাপারটিকে নিয়ে সেটাকে জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিন। আপনি এমনিতেই ভয় পাচ্ছেন।
একটা হঠাৎ পরিবর্তন আপনাকে আরো ভয়ের মুখোমুখি করতে পারে। সেক্ষেত্রে চিন্তা করুন এমন একটা সময়, যখন আপনাকে আর ভয় পেতে হবে না। দেখবেন, ঠিক আপনি নিজের জীবনকে পরিবর্তন করার এই ছোট্ট ধাপটি পার করে ফেলতে পারছেন।
উত্তেজনা অনুভব করছেন না
মানুষের জীবনে বেঁচে থাকতে দরকার পড়ে উত্তেজনার। আপনার মধ্যে কোনো আবেগ কাজ করছে না? উত্তেজনা অনুভব করছেন না? বুক একটু বেশি কাঁপছে না কোনো ঘটনাতেই? হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ছে না কোনোভাবেই? নিজের জীবন, চারপাশ, কাজ- সবকিছুতেই পরিবর্তন আর নতুনত্ব আনুন।
উপরের সাতটি লক্ষণ একটা ব্যাপারের নির্দেশক। আর সেটি হলো- আপনি আবেগ, মানুষ বা পরিস্থিতির কাছে নিজের জীবনকে হারিয়েছেন। মানুষ বেঁচে থাকে জীবনকে উপভোগ করার জন্যই। তাই, জীবনে পরিবর্তন আনুন আর আরো একটু বেশি বাঁচুন। পরিবর্তন আসুক বা না আসুক, আপনার ভালো থাকাটাই সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।