ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা- এই শব্দগুলো এখন সারাবিশ্বে আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর হবেই না কেন? গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে পুরো পৃথিবীকে অচল করে দেওয়া এক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের জন্য আমাদের সর্বাধুনিক রসদ হিসেবে যুক্ত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ টিকা। এই ৩ প্রতিষ্ঠানের বাইরে রাশিয়ার গামালেয়া, ভারত বায়োটেক, চীনের সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের জনসন এন্ড জনসনসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন তাদের নিজস্ব কোভিড টিকার পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে এবং জরুরি ভিত্তিতে গণহারে প্রয়োগের অনুমোদনের জন্য আবেদন করছে। অনুমোদন সাপেক্ষে ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে শুরু হয়েছে টিকাপ্রদান কর্মসূচি।
সম্প্রতি এশিয়ার রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয়েছে গণহারে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান কর্মসূচি। টিকা প্রদানের প্রারম্ভেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং পত্রিকার শিরোনামে চলে এসেছে দেশটির নাম। কারণ, দেশটির প্রথম টিকাগ্রহীতা ছিলেন রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো। ইতোমধ্যে বহু বিশ্বনেতা কোভিড টিকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু জোকো উইদোদো বিশেষভাবে শিরোনাম হয়েছেন তার নেওয়া টিকাটির কারণে। সেটি ছিল চীনের ঔষধ প্রস্তুতকারক সিনোভ্যাক এর কোভিড-১৯ টিকা ‘করোনাভ্যাক’ (CoronaVac)।
SARS-CoV-2 ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন থেকে আবিষ্কৃত মোট ৪টি টিকার একটি হচ্ছে এই সিনোভ্যাক-এর টিকা। আবিষ্কারের শুরু থেকে পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং বিজ্ঞানীদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এই টিকা। কার্যকারিতা, পরীক্ষাপর্ব এবং নিরাপত্তা ছাপিয়ে অনেকক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে উঠেছে টিকার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলসহ বহু রাজনৈতিক ইস্যু। এই টিকার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড একটি বেইজিংভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি এবং জীবাণু নিয়ে গবেষণা করা এবং এদের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা প্রস্তুত করার লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সিনোভ্যাক থেকে হেপাটাইটিস-এ এবং বি, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা, বার্ড-ফ্লু, সোয়াইন-ফ্লু এবং মাম্পস এর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
চলমান করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে সিনোভ্যাক-এর আবিষ্কৃত টিকার যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল। সেদিন চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিনোভ্যাককে তাদের কোভিড টিকার মানবদেহে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাপর্ব পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। মানবদেহে টিকার কার্যকারিতা, ডোজের পরিমাণ এবং নিরাপত্তা যাচাইয়ে পরীক্ষাপর্বের কোনো বিকল্প নেই। চীনের অভ্যন্তরে শুরু হয় এর প্রাথমিক পরীক্ষাপর্ব। সিনোভ্যাক টিকার পরীক্ষাপর্বের ফলাফল নিয়ে আলোচনার আগে চলুন দেখে নেওয়া যাক এই টিকা ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস বধ করে।
সিনোভ্যাক-এর করোনাভ্যাক টিকা প্রস্তুত করা হয়েছে নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাস ব্যবহার করে। নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণে সেই ভাইরাস মানবদেহে কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারে না। উল্টো সেই মৃত ভাইরাস কণা মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অ্যান্টিবডি উৎপাদনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শিক্ষা দেয়। সেই অ্যান্টিবডিগুলো মূলত সক্রিয় করোনাভাইরাসের দেহে বিদ্যমান স্পাইক প্রোটিনকে আক্রমণ করে একে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সহজ কথায় এটিই করোনাভ্যাক-এর কার্যক্রম প্রক্রিয়া। এই টিকা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে সিনোভ্যাক-এর প্রতিনিধিরা চীন, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি এবং সুইজারল্যান্ড থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বানরের বৃক্কে (কিডনি) বিপুল পরিমাণে করোনাভাইরাস উৎপাদন করেছেন গবেষকরা। এরপর রাসায়নিক উপায়ে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় ভাইরাস মানবদেহে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে না পারলেও এর বিভিন্ন প্রোটিন অক্ষত ছিল।
এর ফলে এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাস মানবদেহে কোনো রোগ বা ক্ষতিসাধন করতে পারে না। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোষগুলোর সংস্পর্শে এসে এসব ভাইরাস কণার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়, যা পরবর্তীতে সক্রিয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। ইতোপূর্বে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহার করে পোলিও, জলাতঙ্ক এবং হেপাটাইটিস-এ এর বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ জুন সিনোভ্যাক সংবাদমাধ্যমে করোনাভ্যাক-এর প্রথম এবং দ্বিতীয় পরীক্ষাপর্বের সফলতার দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে। বিবৃতি থেকে আমরা জানতে পারি, করোনাভ্যাক মানবদেহে প্রয়োগের ১৪ দিন পর অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হতে দেখা গেছে। তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৯ বছর) এবং বয়োজ্যেষ্ঠ (৬০ এর বেশি) স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে বিভিন্ন ডোজের টিকা প্রয়োগের পর এর ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। এতে টিকার অ্যান্টিবডি উৎপাদন কার্যকারিতা ৯০% এর বেশি দেখা যায় এবং কোনো স্বেচ্ছাসেবীর দেহে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ৩য় পরীক্ষাপর্ব শুরু করার জন্য আবেদন জানায় সিনোভ্যাক।
সিনোভ্যাক এর টিকার ৩য় পর্বের পরীক্ষার জন্য ব্রাজিল, চিলি, তুরস্ক, সৌদি আরব এবং ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা হয়। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশেও এর পরীক্ষাপর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া ব্রাজিলে ৩য় পর্বের পরীক্ষার সময়ে এক স্বেচ্ছাসেবীর দেহে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর ফলে তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষিত হয়েছিল। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবীর দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সাথে টিকার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরীক্ষা পুনরায় চালু করা হয়। গত বছর ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক প্রকাশনা মাধ্যম ‘দ্য লেন্সেট’-এ সিনোভ্যাক-এর করোনাভ্যাক এর পরীক্ষাপর্বের বিস্তারিত ফলাফল নিয়ে জার্নাল প্রকাশিত হয়। তবে সেই জার্নালে শুধু প্রথম দুই পর্বের ফলাফল সংকলিত করা হয়েছে।
১ম পরীক্ষাপর্বে ১৪৪ জন এবং ২য় পর্বে ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। দুই পর্বের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে টিকাটি জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে বলে দাবি জানান চীনা বিজ্ঞানীরা। প্রতিটি ব্যক্তিকে ১৪ দিনের অন্তরালে টিকার দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে। প্রতি ডোজে থাকবে আধা মিলিলিটার পরিমাণ টিকা। টিকার গণ উৎপাদনের জন্য বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডোজ উৎপাদন সক্ষম প্ল্যান্ট স্থাপন করার ঘোষণা দেয় সিনোভ্যাক।
নির্ধারিত দেশগুলোতে ততদিনে ৩য় পর্বের পরীক্ষার ফলাফল আসতে থাকে। প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কের ক্লিনিকগুলো থেকে প্রাপ্ত ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। টিকার কার্যকারিতা ইন্দোনেশিয়ায় ৬৫.৩% এবং তুরস্কে ৯১.২৫% পাওয়া যায়। ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় টিকার কার্যকারিতা প্রায় ৭৮%। ৩টি ভিন্ন স্থান থেকে টিকার কার্যকারিতার হার তারতম্য থাকায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া নভেম্বরের দিকে ব্রাজিলে এক স্বেচ্ছাসেবী টিকা গ্রহণের পর মারা যাওয়ায় এর পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যুর সাথে টিকার সম্পর্ক নেই জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয় এবং পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিলে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং টিকার কার্যকারিতা পূর্বের চেয়ে কমে ৫০.৪%-এ নেমে আসে। প্রতিটি পরীক্ষায় এমন ভিন্ন মাত্রার কার্যকারিতা দেখা যাওয়ায় এই টিকাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন জন্ম নেয়। এর নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে গণহারে এই টিকা প্রয়োগ করা নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
টিকার ফলাফল বের হওয়ার বহু আগে থেকেই (জুলাই, ২০২০ সাল) চীনে জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়ে আছে এই টিকা। তাছাড়া বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের সাথে টিকা সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সিনোভ্যাক। চুক্তিবদ্ধ হওয়া রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চীনের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে, এমন রাষ্ট্রের নামও রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠে, “চীন কি কোভিড টিকাকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে?” দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সাথে মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনের দ্বৈরথের কথা অজানা নয়। এই দুই দেশেই টিকা সরবরাহ করবে চীন। গত আগস্টে চীন সরকার মেকং নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে টিকা সরবরাহকে তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঘোষণা দেয়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, চীন ইতোপূর্বে কয়েকশত বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলে খরা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ নিয়ে ইন্দোচীন অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর সাথে চীনের সম্পর্ক তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই টিকা সরবরাহ করে সেই সম্পর্কের ফাটল মেরামতের চেষ্টা চলছে এমনটি ভাবাই স্বাভাবিক। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং সম্প্রতি কোভিড-১৯ টিকাকে সারাবিশ্বের ‘জনতার সম্পদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে চীন নিজেদেরকে বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হিসেবে জাহির করতে চাচ্ছে, এমন আশঙ্কা করছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। কোভিড-১৯ টিকা এভাবে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর মাঝে পরোক্ষ স্নায়ুযুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্রাজিল, মরক্কো এবং ইন্দোনেশিয়ায় টিকা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারক কারখানার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সিনোভ্যাক। টিকা ক্রয়ের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলোকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে চীন তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশন (সিএফআর) এর কর্মকর্তা কার্ক ল্যাঙ্কেস্টার। তিনি চীনের এই পন্থাকে ‘হেলথ সিল্ক রোড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে অন্যান্য টিকা (মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এন্ড জনসন) এর সাথে পাল্লা দিয়ে চীন পিছিয়ে আছে তথ্যের স্বচ্ছতার দৌড়ে।
এখনও সিনোভ্যাক-এর টিকার ৩য় পর্বের চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয়নি। গত সপ্তাহে ব্রাজিলে প্রাপ্ত ফলাফলে এর কার্যকারিতা ৫০.৪% পাওয়ার পর ফিলিপাইনের সিনেটররা সিনোভ্যাক টিকা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইতোমধ্যে হাজার হাজার নাগরিক চীনের টিকা গ্রহণ করেছে, যা স্বাস্থ্য বিশারদদের কপালে ভাঁজ সৃষ্টি করেছে। চীনের টিকা কার্যকর কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তথ্যের স্বচ্ছতার বিকল্প নেই, যা চীন প্রদান করতে অপারগ।
বিতর্কের মধ্যেও শেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, তুরস্ক, চিলি এবং ফিলিপাইন ইতোমধ্যে সিনোভ্যাক থেকে টিকা ক্রয় করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির টিকা গ্রহণের মাধ্যমে জনমনে আস্থা সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদী সিনোভ্যাক। তিনি ছাড়াও তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টেলিভিশনে সরাসরি করোনাভ্যাক গ্রহণের ভিডিও সম্প্রচার করেছেন।
তবে সিনোভ্যাকই চীনের একমাত্র টিকা প্রস্তুতকারক নয়। সিনোফার্ম, কেনসিনো বায়োলজিক্স এবং আনহুই জিফেই লংকম- এই তিন প্রতিষ্ঠানও নিজ নিজ টিকা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। সিনোভ্যাক-এর ইন্দোনেশিয়ান সরবরাহকারী সংস্থা বায়োফার্মা থেকে জানা গেছে, প্রতি ডোজ টিকার দাম নির্ধারিত হয়েছে ২ লাখ রুপিয়া। যা ১৩.৬০ ডলার এবং ১০ পাউন্ডের সমমূল্য। অক্সফোর্ড টিকার প্রতি ডোজের দাম নির্ধারিত হয়েছিল ৪ ডলার। সেই তুলনায় চীনের টিকার দাম অনেক বেশি। তবে মডার্নার চেয়ে কয়েক গুণ কম (৩৩ ডলার/ডোজ)। চীনের টিকা কাজ করবে কি না, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে এই টিকা কাজ করলে তা হবে সারাবিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক।