ঠাণ্ডায় গলা ব্যথা, কাশি ও খুসখুসে ভাব? প্রাকৃতিক নিরাময়ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এসব গারগল করার পদ্ধতি।
লবণ ও পানি
গলায় খুসখুস বা ব্যথার উপশম হিসেবে নানি-দাদিদের এই চিরাচরিত জনপ্রিয় কৌশলটি ব্যবহার করেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে! এই পদ্ধতিতে চাই এক কাপ গরম পানিতে ১/৪ চা চামচ লবণ। যতটা গরম পানি মুখে নিয়ে সহ্য করতে পারেন আগে দেখে নেবেন অবশ্যই। তবে যতটা সম্ভব গরম পানি নেয়ার চেষ্টা করুন, কারণ ঠাণ্ডা পানিতে গারগল তেমন একটা কার্যকরী হয় না। এর সাথে চাইলে ১ টেবিল চামচ মাউথওয়াশ মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে করে জীবাণুও ধ্বংস হয়ে যাবে।
লোনা পানির এই সমাধানটি জ্বালাপোড়া ভাব কমিয়ে গলাকে পরিষ্কার ও গলার এসিডকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। মনে রাখা ভালো যে, প্রতিবার গারগল করার সময় নতুন করে পানি ও লবণের মিশ্রণটি তৈরি করে নেয়া ভালো। নয়তো এই মিশ্রণটি রেখে দিলে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই মিশ্রণটি নিয়ে ২০-৩৫ সেকেন্ড অবশ্যই গারগল করে পানিটি কুলি করে ফেলে দিন এবং পেটে যেন না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কার্যকরী ফল পেতে দিনে কয়েকবার ব্যবহার করুন।
লেবু ও পানি
এক কাপ কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ লেবুর রস প্রয়োজন এই পদ্ধতিতে। কষাটে ধরনের এই পানিটি গলার ফুলে যাওয়া ভাব কমিয়ে আনবে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল (এসিড) জাতীয় আভা আনবে। ফলে খুব দ্রুতই সেরে যাবে গলার ফোলাভাব, খুসখুস ও ব্যথা। এছাড়া লেবুতে আছে সাইট্রিক এসিড ও ভিটামিন সি যা কফ, গলার ব্যাথা ও অস্বস্তিকর ভাবকে কমিয়ে আপনার যন্ত্রণাদায়ক গলার ক্ষারীয় ভাব দূর করে এনে দিবে আর্দ্রতা। আর জমাট বাঁধা কফকে পাতলা করে দেবে, যার কারণে খুব সহজেই কফ বেরিয়ে আসবে। এই মিশ্রণটি দিয়ে ঘন ঘন গারগল করলে শীঘ্রই সমস্যাটি সেরে যাবে।
আদা, মধু, লেবু ও পানি
এই উপায়ে গারগল করতে চাই ১ চা চামচ আদা গুঁড়া ও মধু, ১/২ কাপ কুসুম গরম পানি, একটি আস্ত লেবুর অর্ধেকটা চিপে নিয়ে তার রস। প্রথমে একটি গ্লাসে আদা গুঁড়া দিয়ে তাতে লেবুর রস ও মধু দিয়ে একসাথে গুলে ভালো করে গারগল করে নিন। কাশতে কাশতে আপনার গলার ভেতরে যে বারোটা বেজেছে, সেখানে মধু আচ্ছাদন বা প্রলেপ দেয়ার কাজ করবে। এছাড়াও মধুতে রয়েছে জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্য, যা ঠাণ্ডার কারণে হওয়া গলার ব্যথাকে খুব দ্রুত সারিয়ে তুলবে।
হলুদ গুঁড়া ও পানি বা হলুদ গুঁড়া ও চা
এই মসলাটি বেশ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও হলুদ গুঁড়া জ্বালাপোড়া ভাব কমায় এবং ক্যান্সার ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন রকম সমস্যা প্রতিরোধ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ গুঁড়া নানা ধরনের অসুখের জীবাণুর সাথে লড়তে সাহায্য করে। গলা ব্যথা বা খুসখুসের নিরাময়ের জন্য এক কাপ কুসুম গরম পানিতে ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১/২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে গারগল করে নিন। আর চা বানানোর সময় একেবারে এক চিমটে হলুদ গুঁড়া দিয়ে নিন।
দারুচিনি চা
১-৩ চা চামচ থেঁতো বা গুঁড়া করা দারুচিনি পানির সাথে মিশিয়ে তা দিয়ে গারগল করে নিন। দারুচিনি জীবাণুকে ধ্বংস এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করে গলায় ভিন্ন মাত্রার এক প্রশান্তি এনে দেবে।
গ্রিন টি
প্রাকৃতিকভাবে যেকোনো সংক্রমণের প্রতিরোধক হিসেবে গ্রিন টি বেশ পরিচিত। এরপর থেকে ঠাণ্ডার সমস্যার কারণে গলায় ব্যথা হলেই গ্রিন টি পান করার সাথে সাথে কিছুটা রেখে দিন গারগল করার জন্য। এতে করে গলায় আশ্রয় নেয়া ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজেই মরে যাবে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও লবণ
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও ১ চা চামচ লবণ গুলিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিয়ে দিনে কয়েকবার গারগল করে নিন। আরও ভালো ফল পেতে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১/৪ কাপ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও ১/৪ কাপ মধু মিশিয়ে তা দিয়ে প্রতি চার ঘণ্টায় গারগল করে নিন। অ্যাপল সিডার ভিনেগার আপনার গলায় এসিড বা ক্ষার জাতীয় যে প্রলেপটি দেবে, তাতে করে জীবাণুগুলো আপনার গলায় আর টিকতে পারবে না। এছাড়াও এই ভিনেগারটি কফের প্রাকৃতিক প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং এটি কফের জমাট বাঁধা কমিয়ে ঢোক গেলা বা শ্বাস নেয়া সহজ করে দেয়।
কাঁচা আদা, আদা গুঁড়া, মধু ও গোলমরিচ
চুলায় এক কাপ পানি দিয়ে তার সাথে ১ টেবিল চামচ আদা কুচি বা আদা গুঁড়া অল্প আঁচে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে সেই পানির মধ্যে ১ চা চামচ মধু ও এক চিমটি গোলমরিচ ছিটিয়ে নাড়ুন। গলায় কিছুটা স্বস্তিবোধ না করা পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিটে এই মিশ্রণটি দিয়ে গারগল করুন।
আদা ও মধু
আদা ও মধু, এই দুটোই জীবাণু ধ্বংস ও জ্বালাপোড়া কমাতে অতুলনীয়। তাই এই দুটো ব্যবহারের ফলে শুধু যে সংক্রমণ প্রতিরোধ হবে তা-ই নয়, বরং খুব জলদি ভাঙা গলায় জুড়িয়ে আসবে শান্তি। চুলায় এক কাপ পানিতে ১ টেবিল চামচ আদা কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ মৃদু আঁচে ফুটতে দিন। এরপর পানিটি নামিয়ে কুসুম গরম হয়ে আসলে তাতে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে কয়েক মিনিট ধরে গারগল করুন। আদার ঝাঁঝ আর মধুর মোলায়েম প্রলেপে আপনার কাশি ও গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
কিছু পরামর্শ ও সতর্কতা
১। এই উপকরণগুলো ছাড়াও আপনি গারগল করার জন্য কুসুম গরম পানিতে ব্যবহার করতে পারেন টমেটোর রস, বেকিং সোডা, যষ্টিমধু গুঁড়া ও গন্ধরস।
২। এছাড়াও বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের হারবাল চা সহজেই পাওয়া যায়। পান করার সাথে সাথে সেগুলো দিয়ে গারগল করে নিলেও বেশ উপকারিতা পাওয়া যাবে।
৩। আর কফ,গলাব্যথা ও খুসখুসে কাশি থেকে মুক্তি পেতে সবসময় পানি, হারবাল চা ও গরম গরম স্যুপ খেয়ে হাইড্রেটেড থাকুন।
৪। যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিন যেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও সহজেই কোনো রোগ বাসা না বাঁধতে পারে।
৫। প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে তাজা ফলমূল ও শাক-সবজি রাখতে অবশ্যই ভুলবেন না।
৬। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন। কারণ এতে করে গলা ব্যথা বা খুসখুসে ভাব থাকলে তা সহজেই সারবে না।
৭। এসব ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার পরও বা গলাব্যথা, কাশি, কফ, যন্ত্রণা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ অন্য যেকোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে এটি।
৮। যতটুকু সম্ভব গরম পানি দিয়ে গারগল করার চেষ্টা করুন। পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে একটু মুখে নিয়ে দেখুন কতটুকু সহ্য করতে পারবেন।
ফিচার ইমেজ: Eko kutak – Zivotinje.rs