Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করছে প্রযুক্তি

বর্তমান সময়ে মানুষকে শারীরিক সমস্যার চেয়েও যে জিনিসটি বেশি ভোগাচ্ছে, তা হলো মানসিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। অপরদিকে আরো ২৬০ মিলিয়ন মানুষ শিকার এংজাইটি ডিজঅর্ডার বা অতিরিক্ত উদ্বেগের সমস্যায়।

তিন দশক ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও গবেষক বা বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেননি, যা দিয়ে মানসিক সমস্যার পরিপূর্ণ উপশম সম্ভব। এদিকে থেরাপিস্ট কিংবা কাউন্সেলররাও যে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুরোপুরি সারিয়ে দিতে পারবেন, তেমন কোনো নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। তাই প্রতি মুহূর্তেই বিকল্প কোনো ব্যবস্থার অনুসন্ধান জারি রয়েছে। এবং এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে আধুনিক প্রযুক্তি।

প্রযুক্তির কল্যাণে রাতারাতি মানসিক সমস্যা দূরীকরণের রাস্তা খুঁজে পাওয়া গেছে, এমনটা হয়তো নয়। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রযুক্তি এখন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব প্রযুক্তির তেমনই কিছু উপাদান সম্পর্কে, যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে যে কেউ মানসিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপগুলো খুবই জনপ্রিয়

পিটিএসডি থেকে শুরু করে আসক্তি- অ্যাপ রয়েছে সবকিছুর জন্যই

অনেকেই দাবি করে থাকেন, দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো বিষয়ের উপরই নাকি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এ কথা আরো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপগুলোর মাধ্যমে। গুগল প্লে কিংবা অ্যাপ স্টোরে গেলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক হাজার হাজার অ্যাপের দেখা মিলবে। কিছু কিছু অ্যাপ রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক, যেমন: উদ্বেগ, স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বিষণ্নতা প্রভৃতি। এসব অ্যাপের মাধ্যমে উল্লিখিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও তা দূর করার বিভিন্ন পদ্ধতি অনুশীলন করা যায়। আবার কিছু এমন অ্যাপ আছে যেগুলোর কাজ হলো ব্যবহারকারীর স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করা, তাকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মানসিক শক্তি জোগানো, চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। মেডিটেশনের মাধ্যমে এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীর মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এখানেই শেষ নয়। এমনকি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি), ইটিং ডিজঅর্ডার কিংবা আসক্তির মতো মানসিক সমস্যাগুলোর উপরও রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ।

মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এসব অ্যাপের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। যেমন: এগুলো যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়, দাম খুবই কম কিংবা একদম বিনামূল্যেও ব্যবহার করা যায়, এবং নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেও এই অ্যাপগুলোতে কাজ করা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দেন যে, কেউ যেন পেশাদার মনোবিদের বিকল্প হিসেবে এই অ্যাপগুলোকে ব্যবহার করতে শুরু না করে। প্রাথমিক পর্যায়ের মানসিক সমস্যায় এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা যেতেই পারে, কিন্তু কারো অবস্থা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাহলে তাকে অ্যাপের উপর নির্ভর করে থাকার বদলে অবশ্যই নিবন্ধিত মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অনলাইন কাউন্সেলিংয়ে উপকৃত হচ্ছেন অনেকে; Image Source: Online Counselling

ভিডিও ও টেক্সটের মাধ্যমে ওয়ান-অন-ওয়ান থেরাপি

বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে সবসময়ই যে ধারে-কাছে মনোচিকিৎসক পাওয়া যাবে, এমনটা আশা করা হাস্যকর। এমনকি শহরাঞ্চলেও প্রয়োজনের তুলনায় মনোচিকিৎসকের সংখ্যা একদমই অপ্রতুল, সেখানে মফস্বল কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামের কী অবস্থা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সমস্যার সমাধানে বহির্বিশ্বের অনুকরণে আমাদের দেশেও অনলাইনভিত্তিক কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে, যেখানে কর্মরত নিবন্ধিত থেরাপিস্টরা ফোনে কথা বলে, ভিডিও চ্যাট করে, কিংবা মেসেজিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিক সমর্থন দিতে পারবেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে এমন কিছু সেবা চালু হয়েছে। তবে এখনো এক্ষেত্রে অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভাবনী অথচ সমাজের জন্য কল্যাণকর কিছু করতে চান যেসব উদ্যোক্তা, তারা চাইলে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।

একটি বিহেভিয়ার ট্র্যাকিং অ্যাপ; Image Source: Hero K12

বিহেভিয়ার ট্র্যাকারের মাধ্যমে সম্ভাব্য মানসিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ

বর্তমানে যেসব মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপ রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে মেজাজ ভালো করা, উদ্বেগ কমানো, মনোযোগ বৃদ্ধির মতো প্রাথমিক কিছু অনুশীলন করা যায়। এর বাইরে গবেষকরা চেষ্টা চালাচ্ছেন এমন একটি মোবাইল প্রযুক্তি গড়ে তোলার, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী আচরণিক বৈশিষ্ট্যকে মোবাইল দিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে আগেভাগেই জেনে নিতে পারবে যে তার বা তার কোনো কাছের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা, পাগলামি প্রভৃতির সম্ভাবনা রয়েছে কি না।

এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি কীভাবে তার হাতের মোবাইলটি ব্যবহার করছে, সেই ধরনটি বিশ্লেষণ করেও তার মানসিক অবস্থা অনুমান করা যাবে। যেমন: একজন ব্যবহারকারী যদি পূর্বাপেক্ষা দ্রুতগতিতে টাইপ করতে শুরু করে, তার শব্দ ও বাক্যবিন্যাস অগোছালো হয়ে যায়, কিংবা সে যদি কোনো অনলাইন শপে ঢুকে মাত্রাতিরিক্ত কেনাকাটা করতে থাকে, তাহলে ওই মোবাইলই ধরে ফেলবে যে ওই ব্যক্তির মধ্যে মানসিক অস্বাভাবিকতা দেখা দিয়েছে, এবং তখন সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ব-নির্ধারিত কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেবে।

ইতিমধ্যেই এই ধারণার কিছু প্রাথমিক সংস্করণের অ্যাপ রয়েছে অনলাইনে।

মেডিকেল রেকর্ডের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করছে স্মার্ট সফটওয়্যার; Image Source: Machine Design

স্মার্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা রোগীর মেডিকেল রেকর্ড খুঁজে বের করা

আজকাল যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু উন্নত দেশের কয়েকটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ক্লাউড নির্ভর সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঝুঁকির মুখে থাকা রোগীদের ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড খুঁজে বের করছে, পর্যালোচনা করছে, এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সফটওয়্যারগুলো একজন ব্যক্তির অতীত মেডিকেল রেকর্ড ও সাম্প্রতিক আচরণিক বৈশিষ্ট্য খতিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে যে, ওই ব্যক্তির মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বা অস্বাভাবিকতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, আর যদি থেকে থাকে, তখন তারা নিশ্চিত করছে যেন ওই ব্যক্তি পেশাদার কোনো মনোচিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা; Image Source: Tech World

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি চিকিৎসা

ওষুধ, থেরাপি ও অনুশীলনের মাধ্যমে পিটিএসডির চিকিৎসা ছাড়াও, আজকাল কিছু চিকিৎসক এক্সপোজার থেরাপি নামক একটি নতুন কৌশল ব্যবহার করছেন, যার কাজ হলো একজন আক্রান্ত রোগীকে নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ পরিবেশে, চিকিৎসকের চেম্বারে বসে ট্রমা সংক্রান্ত স্মৃতিচারণ করতে সাহায্য করা। এর ফলে রোগী যখন তার কোনো দুঃসহ স্মৃতির কথা স্মরণ করেন, তখন তিনি আবার নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন না, কিংবা কোনো পাগলামি করতেও শুরু করেন না।

এছাড়া এক বিশেষ ধরনের হেডসেট ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ছবি ও শব্দের সমন্বয়ে রোগীকে অতীত সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। হেডসেট পরিহিত অবস্থায় অতীত কোনো সময়ের ছবি দেখতে দেখতে এবং সেই সময়কার শব্দ শুনতে শুনতে রোগী স্মৃতিচারণ করতে থাকেন। এভাবে একপর্যায়ে তার কাছে মনে হয় তিনি যেন বাস্তবিকই অতীতে ফিরে গেছেন।

বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (বিপিডি) আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক প্রত্যাখ্যানের অনুভূতি অনুধাবনের জন্যও চিকিৎসকরা বিশেষ কিছু কম্পিউটার এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করেন।

ডিপ্রেশন স্ক্রিনিং; Image Source: LiveScience

গুগল স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বিষণ্নতা চিহ্নিতকরণ

বছর দুয়েক আগে গুগল জুটি বাঁধে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যালায়ান্স অন মেন্টাল ইলনেসের সাথে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী যারা তাদের মোবাইল থেকে ‘ডিপ্রেশন’ লিখে সার্চ দেন, তাদের জন্য একটি প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়। সার্চ রেজাল্টের শুরুতেই ‘নলেজ প্যানেল’ নামক একটি বক্স দেয়া হয়, যার মধ্যে থাকে বিষণ্ণতা বিষয়ক যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ এটি কী, কেন হয়, কী কী লক্ষণ দেখা যায়, এর চিকিৎসা কী হতে পারে প্রভৃতি। এছাড়া এই ফিচারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশটি হলো ব্যবহারকারীর ডিপ্রেশন স্ক্রিনিং। “Check if you’re clinically depressed” শীর্ষক একটি অপশন রাখা হয়, যেটিতে ক্লিক করলে নিজের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে থাকে, এবং সেসব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে গুগল নির্ধারণ করে ওই ব্যক্তি বিষণ্ণতায় ভুগছেন কি না।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about how technology is helping mental health. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Vancouver Coastal Health Research Institute

Related Articles