Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইমাজিনারি ফ্রেন্ড ডিজঅর্ডার বা কাল্পনিক বন্ধু: আপনার আছে কোন কাল্পনিক বন্ধু?

গল্পটা রিকি কোলে নামক এক তরুণের। একের পর এক মানুষকে খুন এবং আহত করে যাচ্ছিলেন কোল। ২০১৩ সালে জ্যাসন কোটের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। একটা সময় ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোল। আদালতে কোটের বিরুদ্ধে কথা উঠলে তার আইনজীবী এক অদ্ভুত কথা শোনান। আর সেটি ছিল কোল এবং তার অদৃশ্য বন্ধু ভার্নের কথোপকথনের কথা। পাশ থেকে সেসব কথা শুনে নিজের প্রাণ বাঁচাতে একটা সময় কোট আঘাত করেন কোলকে। আদালত ৪৫ বছরের যাবজ্জীবন প্রদান করেন কোটকে। তবে চায়ের টেবিলে সেসময়কার গল্পগুলো তৈরি হয় ভার্নকে নিয়ে। কে ছিল এই ভার্ন? কেনই বা কোল তাকে বন্ধু বানিয়েছিলেন? আপনার মনেও কি এই প্রশ্ন জাগেনি? জানতে ইচ্ছে করছে না যে, কোলের এই অদৃশ্য বন্ধু ভার্ন আসলে কে? তা জানতে হলে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ইমাজিনারি ফ্রেন্ড ডিজঅর্ডার বা কাল্পনিক বন্ধুসংক্রান্ত মানসিক সমস্যা সম্পর্কে।

কাল্পনিক বন্ধু; Source: GoodTherapy.org

আপনার বাসায় কোনো ছোট শিশু আছে? তাকে লক্ষ্য করুন। দেখবেন, মাঝে মাঝেই সে এমন একটা ভাব করছে যেন তার সামনে কেউ একজন বসে আছে আর তার সাথে কথা বলছে। অথচ সেখানে কেউ নেই। কেবল এই শিশুটিই নয়, জেনে অবাক হবেন যে, হয়তো আপনিও ছোটবেলায় এমনই অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলতেন, নিজের গল্পগুলো বিনিময় করতেন আর খেলতেন। অনেকটাই যেন হরর কোনো মুভির ঘটনা। তবে না, এটি কোনো ভূত-প্রেত সংক্রান্ত কিছু নয়। অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলা বা তাকে সত্য মনে করার এই মানসিক সমস্যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ইমাজিনারি ফ্রেন্ড ডিজঅর্ডার’। এমনিতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও এই সমস্যায় আক্রান্তরা নিজেদের অদৃশ্য বন্ধু তৈরি করে ফেলেন মনে মনে। চিন্তার ব্যাপারটি হচ্ছে এই যে, কেবল ছোট শিশুই নয়, এই সমস্যায় ভোগেন অনেক বয়স্ক মানুষও। সবকিছু বোঝার পরেও অদৃশ্য এক বন্ধুর সাথে সখ্য গড়ে তোলেন তারা। যেমনটা ভুগেছিলেন কোল। এখন প্রশ্ন ওঠে যে, কেন এমন কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করে মানুষ? কী কারণ থাকতে পারে এই মানসিক সমস্যার পেছনে?

কাল্পনিক বন্ধু তৈরির পেছনের কারণ

মানুষ যখন তার চারপাশের এত মানুষকে পাশ কাটিয়ে যখন কোনো কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করে, তখন তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ থাকে। তবে এটি বয়সভেদে ভিন্ন হয়। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক- দুই বয়সী মানুষই সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু কারণে নিজেদের মধ্যে ইমাজিনারি ফ্রেন্ড ডিজঅর্ডার তৈরি করে। চলুন জেনে আসি কারণগুলো।

শিশুদের জন্য

অনেকে ভেবে থাকেন, সেসব শিশুর মধ্যে এই প্রবণতা বেশি থাকে, যারা মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে ভালোবাসে, একাকীত্বে ভোগে এবং আত্মমগ্ন থাকে। বাস্তবে কিন্তু একেবারেই তা নয়। বিশেষ করে দেখতে পাওয়া যায় যে, যেসব শিশুদের কাল্পনিক বন্ধু থাকে তারা অন্যদের চাইতে বেশি হাসিখুশি, সামাজিক এবং মানুষ পরিবেষ্টিত হয়ে থাকে।

শিশু ও তার কাল্পনিক বন্ধু; Source: Psych2Go

তবে পরিবারের বড়, একলা এবং টেলিভিশন ও বিনোদনের মাধ্যম থেকে দূরে থাকা শিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। কারণ কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করতে শিশুদের যথেষ্ট অসংলগ্ন সময়ের দরকার পড়ে। আর তাই অনেক বেশি একাকী সময় কাটালেই নিজস্ব এক বন্ধু মানসিকভাবে গড়ে নেয় তারা।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য

প্রাপ্তবয়স্করা বেশ কিছু কারণে কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করে ফেলে নিজেদের জন্য। তাদের মধ্যে একটি হলো অতিরিক্ত মাদকাসক্তি। শুরুতে কোলের কাল্পনিক বন্ধুর কথা বলেছি। চিকিৎসকদের মতে, এমনটা হচ্ছিলো কারণ কোলের অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস ছিল। এটি তাকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করছিল কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করে নিতে। এছাড়াও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, একাকিত্ব ও অবসাদের কারণেও তৈরি হতে পারে কাল্পনিক বন্ধু। আর অনেক ক্ষেত্রে, শিশুরা ছোটবেলায় কোনো কাল্পনিক বন্ধু মনের মধ্যে তৈরি করে নিলে তা থেকে যায় বড় হওয়ার পর পর্যন্ত।

কাল্পনিক বন্ধু থাকা কোনো ভূতুড়ে ব্যাপার নয়; Source: Google Plus

তবে শিশু হোক কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক, মানুষের মধ্যে কাল্পনিক বন্ধু তৈরি ব্যাপারটি কেবল মানুষেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পশু-পাখি এবং অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী কাল্পনিক বন্ধুকেও তৈরি করে নেয় মানব মস্তিষ্ক। ছেলেদের ক্ষেত্রে যেখানে ছেলে বন্ধু তৈরি প্রবণতা বেশি দেখা যায়, মেয়েরা সেখানে ছেলে এবং মেয়ে- দু’রকমের কাল্পনিক বন্ধুই তৈরি করে নেয়।

এটি কি ক্ষতিকর?

আমরা যতটা ভাবি, কাল্পনিক বন্ধু আদতে ততটা ক্ষতিকর নয়; Source: XploraBox

প্রশ্নটির উত্তর ব্যক্তিভেদে আলাদা। এই যেমন- শিশুদের ক্ষেত্রে, এমন অনেক শিশুকে দেখা যায় যারা কাল্পনিক বন্ধু তৈরি মাধ্যমে নিজেদের ভয়ের জায়গাগুলো থেকে সরে আসতে সক্ষম হয়। কোনো সমস্যায় পড়লে ভয় না পেয়ে নতুন নতুন কৌশল তৈরি কয়ে কাল্পনিক বন্ধুর মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে এটি তার মানসিক দুর্বলতা নয়, বরং মানসিক শক্তির একটি দিক। তবে অনেক সময় কাল্পনিক বন্ধুকে বাস্তবের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণভাবে নিয়ে ফেললে ব্যাপারটি কঠিন হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কাল্পনিক বন্ধুর কারণে বাস্তবে সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে শিশুরা।

কেবল তা-ই নয়, কাল্পনিক বন্ধু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন, যখন শিশুমনে তৈরি কাল্পনিক বন্ধু বড় হওয়ার পরও থেকে যায়। সাধারণত, বিদ্যালয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগ পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা কম থাকে। এক গবেষণায় দেখা যায় যে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে শতকরা ২৮ জন শিক্ষার্থীর কাল্পনিক বন্ধু থাকলেও বিদ্যালয়ে পড়ার পর সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ জনে। কাল্পনিক বন্ধু থাকাটা সবসময় খারাপ বা নেতিবাচক কোনো ব্যাপার হিসেবেই ভেবে এসেছে সবাই। তবে এর কিন্তু কিছু ইতিবাচক দিকও আছে।

কাল্পনিক বন্ধু থাকলে মানুষ-

  • নিজের সৃষ্টিশীলতাকে বাড়ানোর সুযোগ পায়। আপনার শিশুটি কিংবা কোনো পরিচিত মানুষ কেবল চারপাশের মানুষগুলোকেই দেখছেন না, বরং আরো অনেক কাল্পনিক বন্ধুকে নিজের মনেই তৈরি করে নিচ্ছে, সেটা একদিক দিয়ে বেশ সৃষ্টিশীল মনের পরিচায়ক।
  • কাল্পনিক বন্ধুরা তা করতে পারে, যা বাস্তবের বন্ধুরা করতে পারে না। একজন মানুষের কাল্পনিক বন্ধু তাকে সবচাইতে বেশি জানে, কারণ সে নিজেই তাকে তৈরি করেছে। ফলে কোনো দ্বিধায় পড়লে বা ভয় পেলে সেক্ষেত্রে কাল্পনিক বন্ধুর সাহায্য নেওয়া আর খুব দ্রুত সমাধান বের করাটা তার পক্ষে সহজ হয়।
  • ছোট শিশুদের অনেকসময় অনেক কিছু শেখানো কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে, তার কাল্পনিক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে এই সমস্যা দূর করা সহজ হয়।

কাল্পনিক বন্ধু হওয়ার কোনো বয়স নেই; Source: Shutterstock

তবে খেয়াল রাখুন, কাল্পনিক বন্ধু আসলেই কাল্পনিক থাকছে কিনা। বেশিরভাগ মানুষই কাল্পনিক বন্ধু তৈরি করলেও মনে মনে জানে যে তারা সত্যিকারের কিছু না। প্রায় ৭৭ শতাংশ জিজ্ঞাসা করলেই জানিয়ে দেয় যে, এই বন্ধুরা বাস্তব না। আর বাকিরা খানিক বাদে স্বীকার করে নেয় যে, এই বন্ধু কেবল তাদের মনের তৈরি। তাই খেয়াল রাখুন, এ পর্যন্ত ব্যাপারটি ততটা চিন্তার বিষয় নয়। তবে হাতের নাগাল যেন না ছাড়িয়ে যায় এই কাল্পনিক বন্ধুপ্রীতি। অন্যথায়, কাল্পনিক ও বাস্তব মানুষকে আলাদা করতে না পারলে পুরো বিষয়টি ভয়ঙ্কর আকার নিয়ে নিতে পারে।

ফিচার ইমেজ: GoodTherapy.org

Related Articles