আমরা প্রত্যেকেই জন্ম নিয়েছি আমাদের মায়ের কাছ থেকে। একজন নারী মা হওয়ার ক্ষমতা লাভ করেন শারীরিক যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা হলো রজঃচক্র। ইংরেজিতে যাকে বলে Menstruation। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া যার কারণে একজন নারী মাতৃত্বের স্বাদ লাভ করতে সক্ষম হয়। মানবজাতির টিকে থাকা যেটার উপর নির্ভরশীল, সেটাই সমাজের অনেকের কাছে লজ্জা ও ঘৃণার বিষয়। ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও সত্য।
সাধারণত বারো-তেরো বছর বয়স হতে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত একজন নারীর জীবনে রজঃচক্র ঘটে থাকে। রজঃচক্রের সময় নারীর যোনি দিয়ে রক্ত ও মিউকাস বের হয়। এটি ২৮ দিনের একটি চক্র। প্রায় ২৮ দিন পর পর এটি হয়ে থাকে এবং প্রতিবার সাধারণত এটি দুই থেকে পাঁচদিন স্থায়ী হয়। এখন প্রশ্ন হলো নারীদের রজঃচক্র কেন ঘটে? প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর শরীরে প্রতিমাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিণত হয়। এ সময় একজন নারী গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়। তাই জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে একটা আস্তরণ তৈরি হয়। জরায়ুর এই আস্তরণ সন্তানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু এই সময় যদি কোনো নারী গর্ভধারণ না করে তখন জরায়ুর ভেতর যে আস্তরণটি অনাগত সন্তানের জন্য তৈরি হচ্ছিলো তা ভেঙ্গে যায় এবং যোনির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এভাবেই প্রতি মাসে একজন নারীর শরীর মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
এত স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়াকে আমাদের সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয়। ভাবা হয় এটা খারাপ। সমাজের চোখে তখন নারীরা অপবিত্র হয়ে যায়। তাদের সবার চোখের আড়ালে থাকতে হয়। নানা বিধি নিষেধের মধ্যে যেতে হয়। অনেক সময় মেয়েদের রান্নাঘরে যেতে দেয়া হয় না। এটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা তা নয়। প্রায় সব দেশেই এমন কিছু না কিছু কুসংস্কার রয়েছে। জাপানে মেয়েদের রজঃচক্র চললে তাদেরকে শুশি বানাতে দেয়া হয় না। শুশি জাপানের একটি বিখ্যাত খাবার। এত স্বাভাবিক বিষয়টা সবার চোখে এক চরম নিষিদ্ধ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এমন এক বিষয় যা নিয়ে একজন নারী তার মা,বাবা,ভাই,প্রেমিক কিংবা স্বামী- কারও সাথেই কথা বলতে পারে না। ফলে নারীর জীবনে যে এমন একটি ব্যাপার রয়েছে তা কেউই মনে রাখে না। এর মধ্যে সবচেয়ে যে বিষয়টি উপেক্ষিত হয় তা হলো স্বাস্থ্যকর উপায়ে রজঃচক্রকালীন সময়টাকে পার করা।
রজঃস্রাবের সময় মেয়েরা নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর উপায় অবলম্বন করে থাকে। তারা অনেক সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করে। অসচ্ছল নারীরা অনেকে শুকনো পাতা, ছাই, মাটি ব্যবহার করে। যারা কাপড় ব্যবহার করে তারা এক কাপড় অনেকদিন ধরে ব্যবহার করে এবং ধোয়ার পরে সে কাপড় রোদে শুকাতে দেয় না। লোকলজ্জার ভয়ে তারা এ কাপড়গুলোকে ঘরের ভেতরে এমন জায়গায় শুকায় যেখানে কাপড়গুলো ভালোভাবে শুকায় না। এ ভেজা কাপড়গুলো ব্যবহারের ফলে নারীদের চুলকানি, ইনফেকশনসহ মূত্রনালির নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। নারীদের রজঃচক্রকালীন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নারীরা নিজেরাই সচেতন নন। সমাজের নানা কুসঙ্কার ও বিকৃত চিন্তার ফলে নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এক গবেষণায় দেখা গেছে ভারতের মাত্র পাঁচ শতাংশ নারী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। এর একটি কারণ হলো স্যানিটারি প্যাডের অতিরিক্ত দাম, আবার অনেকে এমনিতেই কোনো কারণ ছাড়াই রজঃচক্রের সময় অস্বাস্থ্যকর উপায় অবলম্বন করেন।
নারীরা এভাবেই দিনযাপন করছেন। আর পুরুষদের তো এই সমস্যা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সেখানে তামিলনাডুর একজন লোক এই সমস্যা সমাধানের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। সেই মানুষটির নাম অরুনাচালাম মুরুগানান্থাম। তিনি চেষ্টা করেন কীভাবে সস্তায় স্যানিটারি প্যাড বানানো যায়, যার শেষ দাঁড়ায় ভারতের সম্মানজনক পদ্মশ্রী পুরস্কারে।
অরুনাচালাম মুরুগানান্থামের জন্ম ১৯৬২ সালে,ভারতের তামিলনাডুর কোয়েমবোটরে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন তাঁতি। বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে চৌদ্দ বছর বয়সে মুরগানাথামের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন। সংসার সামলানোর জন্য তাঁর মা ক্ষেতে খামারে কাজ করতে থাকেন। তিনি মাকে সাহায্য করার জন্য কাজ করা শুরু করেন। দিনমজুরের কাজ করেন। ঝালাইয়ের কাজ শিখেন। একটি ছোটোখাট ঝালাইয়ের দোকানের মালিকও হন। অবশেষে বিয়ে করেন শান্তিকে। স্ত্রীকে খুব দামী কিছু দিতে পারতেন না টাকার অভাবে। কিন্তু তাই বলে ভালোবাসার অভাব হয় নি। পাঁচ রুপী কিংবা দশ রুপী দামের চুলের ব্যান্ড কিংবা চুড়ি কিনে দিতেন। দেওয়ার আগে বলতেন, ‘শান্তি চোখ বন্ধ কর। বামে তাকাও, ডানে তাকাও।” তারপর দিতেন তার উপহার। উদ্দেশ্য একটাই, নতুন স্ত্রীর মন জয় করা।
একদিন মুরুগানান্থাম দেখলেন তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু স্ত্রী বললেন, এটা তোমার জানার দরকার নেই। মুরুগানান্থাম মনে করলেন, স্ত্রী হয়তো তার সাথে লুকোচুরি খেলছেন। তাই স্ত্রীর পিছুপিছু ছুটলেন। দেখলেন স্ত্রীর হাতে একটি নোংরা কাপড়, যাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। তিনি বুঝলেন, শান্তি রজঃচক্রকালীন সময়ের জন্য এই অস্বাস্থ্যকর নোংরা কাপড় ব্যবহার করছেন। মুরুগানান্থাম বলেন, কাপড়টি এত নোংরা ছিলো যে তাকে দেয়া হলে তিনি এটা দিয়ে তাঁর বাইসাইকেলও মুছতেন না। তারপর তিনি শান্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কেন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করছে না। শান্তি বললেন, তিনি স্যানিটারি প্যাডের কথা জানেন। কিন্তু পরিবারের সকল মেয়ে যদি প্যাড ব্যবহার করা শুরু করে তাহলে তাদের প্রতি মাসের দুধ কেনার টাকা থাকবে না। টাকার অভাবে তাই শান্তি প্যাড ব্যবহার করছেন না।
মুরুগানান্থাম চিন্তা করলেন, নতুন স্ত্রীকে স্যানিটারি প্যাড উপহার দিলে কেমন হয়! তিনি ১৪ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে স্যানিটারি প্যাড কিনলেন। বাসায় এসে জীবনে প্রথমবারের মতো স্যানিটারি প্যাড দেখলেন। দেখলেন আট ইঞ্চি লম্বা প্যাডটিতে দশ গ্রামের মতো তুলা আছে। সে সময় দশ গ্রাম তুলার দাম ছিল ভারতীয় দশ পয়সা। কিন্তু তিনি প্রতিটি প্যাড কিনেছিলেন ছয় রুপী করে। তিনি ভাবলেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো কত লাভ করছে! তিনি তাঁর স্ত্রী শান্তির জন্য সস্তায় প্যাড বানানোর কথা চিন্তা করলেন। কোম্পানি থেকে তুলা কিনে দুই দিনের মধ্যে প্যাড তৈরি করে ফেললেন এবং এক শুক্রবারে শান্তিকে প্যাড উপহার দিলেন। মুরুগানান্থাম তাঁর স্ত্রীকে প্যাড দিয়ে বলেন জিনিসটা কেমন বলার জন্য। তাঁর স্ত্রী বলেন এটা এখন বলা যাবে না তাঁর জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। শুক্রবারে প্যাড দেয়ার কারণ হলো মুরুগানান্থাম মনে করেছিলেন নারীদের প্রতি শুক্রবার ঋতুস্রাব হয়। মুরুগানান্থামের শহরে একটি মন্দির আছে। সেখানে সবাই শুক্রবার মন্দিরে যান। যেসব মহিলাদের রজঃচক্র চলছে তারা মন্দিরের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকেন আর বাকিরা মন্দিরের ভেতরে যান। তা থেকে মুরুগানান্থাম ধারণা করলেন, নারীদের রজঃস্রাব প্রতি শুক্রবার হয়। ঐদিন মুরুগানান্থাম প্রথমবারের মতো জানলেন নারীদের প্রতি মাসে রজঃস্রাব হয়। ব্যাপারটা হাস্যকর শোনালেও অনেক পুরুষই জানে না তাদের সঙ্গীর দেহে কী ঘটছে। মুরুগানান্থাম বলেন,
“একজন পুরুষ ভাই হয়, স্বামী হয়, বাবা হয়, দাদা হয়, অবশেষে মারা যায়। কিন্তু সে জানেই না তার সঙ্গীর শরীরে কী হচ্ছে!”
কিছুদিন পরে শান্তি বললেন যে, তাঁর বানানো প্যাডটি মোটেই ভালো না। মুরুগানান্থাম প্যাড উন্নত করার চেষ্টা করতে থাকলেন। কিন্তু প্যাড পরীক্ষা করার জন্য শান্তির অপেক্ষা করতে গেলে তো একমাস অপেক্ষা করতে হয়। তাই তিনি তাঁর বোনদের দ্বারস্থ হলেন। কিন্তু তাঁর বোনরাও তাকে সাহায্য করলেন না। তারপর তিনি সাহায্য চাইলেন মেডিকেল কলেজের মেয়েদের। কিন্তু কলেজের মেয়েরাও তাকে খুব একটা সাহায্য করলো না। তিনি প্যাডের ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য একটি ফিডব্যাক ফর্ম তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তিনি একদিন দেখলেন, তিনজন মেয়ে হোস্টেলের নিচে সবগুলো মেয়ের ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছে। ফলে দেখা গেলো মেডিকেল কলেজের মেয়েদের উপর আর ভরসা করা যাচ্ছে না। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সামনে চা পান করতে করতে মুরুগানান্থাম এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি নিজেই প্যাড পরে পরীক্ষা করবেন!
অবশেষে মুরুগানান্থাম সত্যি সত্যিই নিজে প্যাড পরলেন। কিন্তু জরায়ু আর রক্ত কোথায় পাওয়া যাবে! ফুটবল ব্লাডারে রক্ত নিয়ে তা থেকে একটা পাইপ নিয়ে তিনি প্যাডে সংযোগ করলেন। যখনই তিনি সাইকেল চালান কিংবা হাঁটাচলা করেন তখনই ব্লাডারে হালকা চাপ দেন আর রক্ত প্যাডে এসে পড়ে। এভাবে সময় কাটতে থাকে। তিনি তখন বুঝতে পারেন নি, কিন্তু এই গবেষণার ফলে তাঁর শরীরের চারপাশে বাজে গন্ধ সৃষ্টি হতো। মানুষজন তাঁকে ঘৃণা করতে শুরু করে। সবাই মনে করে তাঁর কোনো যৌন রোগ হয়েছে। অনেকে মনে করতে থাকে তাঁর উপর কোনো খারাপ আত্মা ভর করেছে, রাতের বেলায় তিনি মেয়েদের রক্ত পান করেন।
স্ত্রী তাঁর এই কাজ মেনে নিতে পারেন নি। শান্তি তাঁকে ছেড়ে চলে যান এবং ডিভোর্স নোটিশ দেন। কিন্তু তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। যদিও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছিলো না। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিরাও তুলা ব্যবহার করছে, তিনিও তুলা ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাঁর প্যাড কাজ করছে না। তখন তিনি খুবই বিপদজনক একটি বিষয় চিন্তা করলেন। তিনি ভাবলেন, মেয়েদের ব্যবহৃত প্যাড পরীক্ষা করবেন। অবশেষে পেয়েও গেলেন। এক রবিবার তিনি রুমের মধ্যে অনেকগুলো ব্যবহৃত প্যাড ছড়িয়ে পরীক্ষা করছিলেন। মা মনে করছিলেন, তাঁর ছেলে রান্নার জন্য মুরগী পরিষ্কার করছেন। তাঁর মা এ অবস্থা দেখে অনেক কান্নাকাটি করলেন, ভাবলেন তাঁর ছেলে পাগল হয়ে গেছে। মা-ও তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন।
আড়াই বছর পরে তিনি সঠিক উপাদান নির্ণয়ে সমর্থ হন। কোম্পানিতে তৈরি প্যাডে যে তুলা ব্যবহার করা হয়েছিলো তা ছিলো গাছের বাকল থেকে তৈরি, যাকে ‘উড পাল্প’ বলা হয়। উপাদান বের করার পরেও যে সমস্যা দাঁড়ালো তা হলো যে প্ল্যান্ট ব্যবহার করে প্যাড তৈরি করা হয় তা খুব দামী। প্রায় সাড়ে তিন কোটি রুপী। এত দামী মেশিন ব্যবহার করলে তো সস্তায় প্যাড বানানো সম্ভব নয়। তা-ও তিনি দমে যান নি। তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। প্রায় সাড়ে চার বছর গবেষণার পর তিনি মেশিন তৈরিতে সক্ষম হন। তাঁর মেশিনের মূল্য ৬৫ হাজার রুপী। মেশিনটি পরীক্ষার জন্য তিনি আইআইটিতে পাঠান। তখন মাদ্রাজে ‘বেস্ট ইনোভেশন ফর বেটারমেন্ট অফ সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিযোগিতা চলছিলো। আইআইটি তাঁকে না বলে সেই প্রজেক্টটি প্রতিযোগিতায় দিয়ে দেয়। ৯৪৩টি প্রজেক্টের মধ্যে এটি প্রথম হয় এবং মুরুগানান্থাম হঠাৎ করে সবার নজরে চলে আসেন।
মুরুগানান্থাম তাঁর আবিষ্কারের পেটেন্ট করিয়ে নেন। কিন্তু তিনি অন্যদের মতো স্বত্ত্বাধিকার ব্যবহার করে বিশাল ধনকুবের হতে চান নি। তিনি এই আবিষ্কার জনস্বার্থে লাগিয়েছেন। আর এখানেই তিনি সবার থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। তিনি তাঁর তৈরি মেশিন গ্রামের সাধারণ মহিলা এবং স্কুলের ছাত্রীদের দিয়েছেন। তারা মেশিন ব্যবহার করে প্যাড প্রস্তুত করছে। এতে তাদের আয় হচ্ছে এবং সব শ্রেণীর মহিলারা স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। ভারতের ২৩টি রাজ্যে মুরুগানান্থামের তৈরি মেশিন লাগানো হয়েছে। ৮৪৬টি লোকাল ব্র্যান্ডের মাধ্যমে তিনি তাঁর পণ্য তৈরি করছেন। তিনি এটি বিশ্বের ১০৬টি দেশে নিয়ে যেতে চান, যাতে করে পৃথিবীর সকল নারী স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি প্যাড পান।
তিনি এখন সারা পৃথিবী ঘুরে বক্তব্য রাখেন। কেমব্রিজ, হার্ভার্ডেও তিনি লেকচার রেখেছেন, বিল গেটসের সাথে একই মঞ্চে কথা বলেছেন। ‘রুরাল মার্কেটিং’ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ইউনিলিভারের সিইওদের। ২০১৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন অরুনাচালাম মুরুগানান্থামকে পৃথিবীর প্রভাবশালী একশ মানুষের মধ্যে একজন ঘোষণা করে। ২০১৬ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। তাঁকে নিয়ে ‘প্যাড ম্যান’ নামে একটি মুভি বানানো হয়েছে। তাতে মুরুগানান্থাম চরিত্রে অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার।
এখন মুরুগানান্থামের স্বপ্ন হলো ভারতকে ১০০ ভাগ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারকারী দেশে পরিণত করা। নারীস্বাস্থ্যের জন্য যা হবে বিশাল বড় মাইলফলক। আমাদের দেশের নারীরাও যদি এভাবে সুস্থ উপায় অবলম্বন করে, তাহলে আমরা সুস্থ মা পাবো। আগামী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন আজকের সুস্থ মা। যদিও বর্তমান সময়ের অবস্থা খুবই শোচনীয়। কুসংস্কার, অশিক্ষা আর রোগে জর্জরিত নারীদের জীবন। ইউনেসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের নারীরা নানা কুসংস্কার ধারণ করে। চর ব্রহ্মগাছা বসবাসকারী ১৪ বছরের বালিকা স্বপ্না বলে,
“আমরা শিখানো হয়েছে আমরা রজঃচক্রকালীন সময়ে যদি কিছু ধরি, তাহলে ঐ জিনিস নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা তখন খাবার ধরতে পারি না, বাসনকোসন মাজতে পারি না কিংবা রান্নাঘরের বাগানেও যেতে পারি না।”
আরেকটি বিষয় হলো, অনেক মেয়ে তাদের প্রথম রজঃস্রাবের আগে এ সম্মন্ধে জানেই না। অনেক মেয়েই ভয় পেয়ে যায়। মনে করে, তাদের বড় কোনো রোগ হয়েছে। তারা মারা যাবে! আর অনেকে এ সময় অস্বাস্থ্যকর উপায় অবলম্বন করে। ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের মনিরা বলে,
“আমি সবসময় নোংরা কাপড়গুলো ফাঁকফোঁকরে রাখি। কাপড়গুলো সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকে।”
ফলে তাদের নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। অনেকে এ সময় স্কুলে না যেতে বাধ্য হয়। স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহারের ফলে অনেক সংক্রমণ থেকে নারীরা বাঁচতে পারে। কিন্তু স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা বাংলাদেশ বেশ কম। বাংলাদেশেও কম মূল্যে স্যানিটারি প্যাড প্রস্তুত করা উচিত। এতে গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান হবে। আর দেশের নারীরা থাকবে সুস্থ। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে অসুস্থ রেখে দেশ এগিয়ে যাবে সে কথা তো চিন্তাও করা যায় না!
ফিচার ইমেজ: Youtube.com