বর্তমানে মানবজাতিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে এক ভয়ংকর ভাইরাসকে যা নভেল করোনাভাইরাস নামে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। প্রতিদিনই এই সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আমরা সবাই কম-বেশি জানতে পারছি। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে ২০ জন (২১ মার্চ ২০২০) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে, যাদের মাঝে আবার ১ জনের মৃত্যুও হয়েছে।
বহুল জনবসতিপূর্ণ এই দেশে করোনাভাইরাস সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা হবে মারাত্মক রকমের দুর্যোগ। আর এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাই হবে সবচেয়ে বড় কারণ। সুতরাং এ সময় আমাদের সকলের জানা উচিত মেডিক্যাল বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা উচিত।
মনে রাখা উচিত, এই মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হতে হবে ব্যক্তিপর্যায় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদন করে থাকে, যেমন: হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদিকে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে।
যেমন, এক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের উৎস পর্যায় থেকে নির্দিষ্ট পাত্রে পৃথকীকরণ করে সংগ্রহ করতে হবে। নির্দিষ্ট রঙের বিশেষায়িত পাত্রে বর্জ্য প্রাথমিক পর্যায়ে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে এমন কোনো অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপায়ে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত নির্দেশিকা মেনেও ব্যবস্থাপনা করতে পারে।
ব্যক্তিপর্যায়ে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সচেতনতা
যে সকল প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদন করে থাকে, যদি সেসমস্ত প্রতিষ্ঠানে কাউকে যেতে হয় তাহলে নিম্নলিখিত বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি:
১) প্রতিষ্ঠানের কোনো দরজার হাতলে খালি হাতে না ধরা। যেন অবশ্যই অন্তত একটা কাগজ, টিস্যু অথবা কাপড় দিয়ে ধরা হয়। প্রতিবার ব্যবহারের পরে তা নির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাত্রে ফেলতে হবে। কেউ যদি একবার ব্যবহার করা যায় এমন গ্লাভস ব্যাবহার করে তাহলে তা হবে উত্তম।
২) লিফটের বাটন এ খালি হাতে চাপ না দেয়া। অবশ্যই কোনো প্রতিরোধক বস্তু ব্যবহার করা।
৩) হাসপাতালে রোগী পরিদর্শনের সময়ে অহেতুক উপহার নিয়ে না যাওয়া। যেমন- কাঁচা ফুল বা কোনো কার্ড।
৪) রোগী পরিদর্শনের সময়ে চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কিছু ব্যবহার না করা।
৫) প্রয়োজন ব্যতিরেকে হাসপাতালের কোনো কিছু স্পর্শ না করা।
৬) রোগীর কোনো জিনিস ব্যবহার না করা।
৭) রোগী পরিদর্শনের সময়ে কোনো বর্জ্য উৎপাদিত হলে তা পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে ডেকে পরিষ্কার করিয়ে নেয়া।
৮) যে ধরনের বর্জ্য যে ধরনের বা রঙের পাত্রে সংরক্ষিত করতে বলা হয়েছে তা অবশ্যই মেনে চলা।
৯) হাসপাতাল বা রোগীর কোনো বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার না করা বা রিসাইকেল না করা। যেমন- গজ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন ব্যাগ, সিরিঞ্জ, নিডল ইত্যাদি।
১০) হাসপাতালে অবস্থানকালে কিছু করার পর বা ধরার পর পরই হাত ধুতে হবে। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেখানেই যাবেন, যেমন- বাসাতে ঢুকে প্রথমেই হাত ধুয়ে নিতে হবে।
ভালভাবে হাত ধোয়ার বিভিন্ন ধাপ
- পানি দিয়ে দুই হাত ভালো করে ভেজাতে হবে যেন প্রত্যেক আঙ্গুল এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ভিজে যায়। এভাবে অন্তত তিনবার পানি দিয়ে হাত ভেজাতে হবে।
- দুই হাতে যথেষ্ট পরিমাণ সাবান এবং জীবাণু প্রতিরোধক নিয়ে প্রত্যেক আঙুল এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত মাখাতে হবে।
- দুই হাতের তালু দিয়ে একসাথে সাবান মাখাতে হবে।
- ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের উপরে এবং আঙুলের ফাঁকে ভালো করে ঘষতে হবে। ঠিক এভাবে বাম হাত দিয়ে ডান হাত ঘষতে হবে।
- দুই হাতের তালু একসাথে করে এবং এক হাতের আঙুল আরেক হাতের আঙুলের ফাঁকে নিয়ে ঘষতে হবে।
- দুই হাতের আঙুল দুই দিক থেকে বিপরীতমুখী করে আটকাতে হবে এবং এভাবে ঘষতে হবে।
- বাম হাতের বুড়ো আঙুল ডান হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে ঘষতে হবে। আবার ঠিক এভাবে ডান হাতের বুড়ো আঙুল বাম হাত দিয়ে ধরে ঘষতে হবে।
- বাম হাতের তালুকে ডান হাতের সব আঙুল একসাথে করে ঘষতে হবে। ঠিক একইভাবে ডান হাতের তালুকেও বাম হাতের সব আঙ্গুল একসাথে করে সামনে-পেছনে ঘষতে হবে।
- এ পর্যায়ে পানি দিয়ে হাত ভালো করে ভেজাতে হবে এবং ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে দুই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
- পরিষ্কার শুকনা তোয়ালে দিয়ে দুই হাত মুছে ফেলতে হবে এবং হাত শুকাতে হবে।
- একটি শুকনা, পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পানির কল বন্ধ করতে হবে এবং একইসাথে পানির কলও ওই কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
- এই পর্যায়ে দেখতে হবে হাত পরিষ্কার হয়েছে কি না এবং ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি পর্যায়ে হাত ধোয়া শেষ হবে।