Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শাই ব্লাডার সিনড্রোম: ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণ করুন সহজেই!

ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসেছেন মাত্র। কিন্তু মিনিট দুয়েকের মাথায়ই তলপেটে আবার চাপবোধ করছেন। কোনো দরকারি কাজে কিংবা প্রেজেন্টেশনের সময়, শীতের কনকনে ঠান্ডা রাতে কিংবা ঘরের বাইরে বেরোলে এমনিতেই এমন হুট করে মূত্রত্যাগের জন্য তলপেটে চাপ পড়তেই পারে। আর এটা কেবল আপনার একার নয়, বরং আরো অনেকের সমস্যা। ডাক্তারি ভাষায় যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শাই ব্লাডার সিনড্রোম’ বা ‘পারুরেসিস’। এটি মূলত কী? এর কি কোনো নির্দিষ্ট কারণ আছে? কীভাবে এই বিরক্তিকর সমস্যাটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে? চলুন, আজ জেনে আসি হরহামেশা আমাদের সাথে ঘটে থাকা এই ছোট্ট অথচ ঝামেলাপূর্ণ ব্যাপারটির সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য।

বারবার বাথরুমে যাওয়াটাও হতে পারে সমস্যাজনক; Source: Change.org

শাই ব্লাডার সিনড্রোম বা পারুরেসিস

এটি একধরনের মানসিক সমস্যা। অনেকে ভেবে থাকেন, শারীরিক কোনো ঝামেলার কারণে বারবার বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়ছে। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। অনেক সময় অনেক বেশি পরিমাণ মানুষের সাথে থাকলেও এই সমস্যাটি তৈরি হয়। সামাজিকভাবে তৈরি একধরনের উদ্বিগ্নতা এটি। এর শুরুটা ছোটবেলা কিংবা যেকোনো বয়স থেকেই হতে পারে। অনেক সময় ছোটবেলায় বিছানায় মূত্রত্যাগ করার মতো ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি এবং পরবর্তীতে জীবনে সহকর্মী বা বন্ধুদের এ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে ভুক্তভোগীকে। যার ফলে, চারপাশে মানুষ থাকলে কিংবা আশেপাশে ওয়াশরুম নেই এই তথ্যটি মাথায় প্রবেশ করলেই তলপেটে চাপ অনুভব করেন তারা। আর একবার এমন কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে, পরবর্তী সময়েও বারবার মনে হতে থাকে যে, হয়তো এবারেও এমন কিছু ঘটতে পারে। এই যেমন ধরুন, একদিন আপনি রাস্তায় বাসে থাকাকালীন সময়ে তলপেটে প্রচন্ড চাপ অনুভব করলেন। এরপর বাসে বসে থাকলেই ঐ চিন্তা এবং ব্যাপারটি আপনার বারবার মনে হবে।

শারীরিক নয়, মানসিক কারণেই বারবার তলপেটে চাপবোধ করেন শাই ব্লাডার সিনড্রোমের ভুক্তভোগীরা; Source: Reader’s Digest

এখন প্রশ্ন হল দিনে কতবার একজন সাধারণ ও স্বাভাবিক মানুষের মূত্রত্যাগ করা উচিৎ। প্রশ্নটা শুনতে হাস্যকর মনে হলেও সত্যি যে, ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত একজন মানুষ দিনে চার থেকে সাতবারের মতো মূত্রত্যাগ করলেও এ সম্পর্কে বাঁধাধরা কিছু বলা যায় না, আর বলাটা সম্ভবও নয়। কারণ, আমাদের খাদ্যাভ্যাসে যদি ক্যাফেইন বা এ্যালকোহল থাকে কিংবা খুব বেশি পরিমাণ পানি আমরা কোনোদিন পান করে ফেলি, তাহলে সেক্ষেত্রে এই হিসেব করাটা অযৌক্তিক হবে। অনেকে ভেবে থাকেন, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মূত্রথলীকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব কিনা। হ্যাঁ, সম্ভব। নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নীল গ্রাফস্টাইন জানান, এক্ষত্রে পুরো ব্যাপারটিই নির্ভর করবে আপনি মানসিকভাবে নিজেকে কতটা শক্ত অবস্থানে রাখতে পারেন তার উপর। এমন হতেই পারে যে, আপনি মাত্র বাথরুম ঘুরে এসেছেন, অথচ এখনই তলপেটে চাপ অনুভূত হচ্ছে। আপনি জানেন যে, এটা হওয়ার কথা নয়। তাই সেসময় নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত প্রমাণ করে অনেকটা সময় না যাওয়া পর্যন্ত, চাপ জোরালো না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তাহলে আপনার মূত্রথলী ব্যাপারটিতে একটা সময় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, আপনি অনেক এবশি সময়ের জন্য এবং অযথাই বাথরুমে যেতে দেরী করবেন। ব্লাডারকে নিয়ন্ত্রণ করুন, তবে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবেন না। এতে করে তলপেট ব্যথা হওয়া থেকে শুরু করে আরো নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আশেপাশে মানুষ থাকলে সমস্যায় ভোগেন শাই ব্লাডার সিনড্রোমে আক্রান্তরা; Source: Red Alert Politics

অনেকের তলপেটে চাপ অনুভূত হয় রাতের বেলায়। বিশেষ করে এই ঠান্ডার দিনে রাতের বেলায় বিছানা থেকে উঠে বাথরুম ঘুরে আসতে অনেকেন চান না। মাত্র বাথরুম থেকে ঘুরে এসে গায়ে কম্বল চাপানোর পর ঘুম আসি আসি করছে, এমন সময় আবার বাথরুমে যাওয়ার তাড়না। ব্যাপারটি অনেকের সাথেই ঘটে থাকে। হয়তো আপনার সাথেও ঘটেছে। এই সমস্যার হাত থেকে দূরে থাকতে কয়েকটি রাত খেয়াল করুন। ব্যাপারটা কী একদিন বা দুইদিন ঘটছে, নাকি প্রায়ই এমন সমস্যা তৈরি হচ্ছে? প্রতিরাতেই যদি এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আপনাকে তাহলে নিজের খাবারের দিকে নজর দিন। ঠিক ঘুমোতে যাওয়ার আগেই অধিক পরিমাণ তরল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। এরপরেও যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন কিছুক্ষণ পর্যন্ত। অনেক সময় রাতের বেলা ঘুম ভেঙ্গে যায় অনেকের। বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়ে। ঘুম থেকে উঠেই বাথরুমে যাচ্ছেন তার মানে কিন্তু এই নয় যে, এই কারণেই ঘুম ভেঙ্গেছে আপনার। হতেই পারে যে, ঘুমের মধ্যে অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছিল। উদ্বিগ্নতা এবং শোয়ার ভুল অবস্থান অনেক সময় আমাদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। তাই সরাসরি শাই ব্লাডার সিনড্রোমকে দায়ী না করে বাকি ব্যাপারগুলোও খতিয়ে দেখুন। শাই ব্লাডার সিনড্রোমের ক্ষেত্রে কেবল ঘন ঘন মূত্রত্যাগের জন্য তলপেটে চাপই পড়ে না, বরং আরো কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-

১। আশেপাশে মানুষ বা মানুষের কন্ঠস্বর- এমন কোন একটি ব্যাপার থাকলেই মূত্রত্যাগে সমস্যাবোধ করা
২। মূত্রত্যাগের শব্দ বাইরে থেকে কেউ শুনে ফেলবে এই ভয় করা
৩। বাইরে কোনো মানুষ বাথরুমের ভেতর থেকে আসা কোনো গন্ধ পাবে এমন ভাবা
৪। মূত্রত্যাগের সময় নিজেকে বারবার মনে মনে বা হালকা স্বরে দোষারোপ করা
৫। বাড়িতে কোনো অতিথি থাকলে বা কেউ বাথরুমের দরজার পাশে অবস্থান করলে মূত্রত্যাগে সমস্যাবোধ করা
৬। বাথরুমে যাওয়ার কথা মনে হলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া
৭। ভ্রমণ, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা
৮। পানি পানের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দেওয়া

এমন বেশকিছু লক্ষণ দেখা যায় শাই ব্লাডার সিনড্রোমে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে। আপনার কি এর মধ্যে কোনো একটি আছে? মিলিয়ে নিন!

আপনিও কি শাই ব্লাডার আক্রান্তদের একজন? Source: Shy Bladder Syndrome

সমাধান কী?

প্রত্যেকটি সমস্যারই সমাধান আছে। শাই ব্লাডার সিনড্রোমও আলাদা কোনO সমস্যা নয়। তাই এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে-

১। নিজের মস্তিষ্ককে সেই পরিস্থিতিগুলোর সম্মুখীন করুন যেগুলোতে সে ভয় পায়। শাই ব্লাডার সিনড্রোমের লক্ষণগুলোতো বলেই দিয়েছি। সেখানে উল্লিখিত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাথরুম ব্যবহার করুন এবং নিজেকে বারবার বোঝান যে, এতে কোনো সমস্যা তৈরি হবে না। একবার মস্তিষ্ক নিজের এই ভয় পাওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে পুরো ব্যাপারটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে পড়বে।

২। উদ্বিগ্নতা এই সমস্যাটির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে। মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকলে তার প্রভাব গিয়ে তলপেটে পড়ে। তাই, উদ্বিগ্নতা কমানোর চেষ্টা করুন। নিজের মনকে শান্ত করুন।

চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিন; Source: Three Bakers

৩। পারুরেসিস সমস্যায় ভুগছেন এমনটা কেবল আপনি একাই নন। একটু খোঁজাখুঁজি করুন। এই সমস্যায় আক্রান্তদের কথা এবং এ সম্পর্কে নানারকম টিপস নিয়ে এগিয়ে দেখতে পারেন আপনিও। সাইকোথেরাপি, কগনেটিভ বিহেভিয়র থেরাপি নিয়ে দেখুন। হতে পারে, আপনার পরিবারের মানুষগুলোই এ ব্যাপারে কাজ করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

৪। একেবারেই কোনোকিছুতে কাজ না হলে চিকিৎসকের কাছে চলে যান। ব্লাডার নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলাম আগেই। সেই চেষ্টাও করে দেখতে পারেন। তবে তা-ই বলে তলপেটের উপরে অত্যাধিক চাপ না দেওয়ার চেষ্টা করুন।

ফিচার ইমেজ: Change.org

Related Articles