২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহানে শুরু হয় একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি কোভিড-১৯। ধীরে ধীরে এই মহামারি বৈশ্বিক আকার ধারণ করে, যা এখন পর্যন্ত (১২ ডিসেম্বর, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) সারাবিশ্বে প্রায় ৭১ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এই ভাইরাসের আতঙ্কে থেমে গেছে আমাদের সাধারণ জীবনযাত্রা। তবে থেমে নেই বিজ্ঞানের পথচলা। বৈশ্বিক মহামারিকে বধ করতে বছরের শুরু থেকে সারাবিশ্বের বহু দেশের মেধাবী বিজ্ঞানীগণ নতুন টিকা তৈরির নেশায় কঠোর গবেষণা শুরু করেন। তাদের সাধনায় তৈরি হয় একাধিক সম্ভাব্য টিকা।
একাধিক ধাপের পরীক্ষানিরীক্ষার পর গত ৯ ডিসেম্বর প্রথম টিকা হিসেবে গণহারে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পায় ফাইজার-বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরিকৃত কোভিড টিকা। করোনাভাইরাসকে বধ করে নতুন বিশ্ব রচনার সম্ভাবনায় যখন মানবজাতি স্বপ্ন দেখা শুরু করে, তখন মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাশিয়ার আবিষ্কৃত বহুল আলোচিত কোভিড টিকা ‘স্পুটনিক-৫’ এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। সেই সাথে রাশিয়ায় গণহারে সাধারণ জনতার মাঝে টিকা প্রয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেন তিনি।
এই ঘোষণার পর থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসে এই টিকা। ‘নতুন করে’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করার কারণ আবিষ্কারের পর থেকেই নানা বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে এটি।
দৃশ্যপটে স্পুটনিক-৫
রাশিয়ার কোভিড-১৯ টিকার তৈরি করা হয়েছে মস্কোর গামালেয়া জাতীয় মহামারি এবং অণুজীববিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে। সরকার পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটির টিকা তৈরির সমস্ত খরচ বহন করেছে ‘রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ নামক একটি তহবিল। ২০২০ সালের ১১ আগস্ট সর্বপ্রথম জনসম্মুখে প্রচারিত হয় রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনের তথ্য। Gam-COVID-Vac নামক এই ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক নামকরণ করা হয় ‘স্পুটনিক-৫’। এটি প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশজয়ী কৃত্রিম উপগ্রহ সিরিজ ‘স্পুটনিক’ এর আদলে রাখা হয়েছে। স্পুটনিক-১ উপগ্রহের বৈপ্লবিক অধ্যায় যেন এই টিকার অনুপ্রেরণা।
তবে শুরুতেই রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে স্পুটনিক-৫ কে পৃথিবীর প্রথম কোভিড টিকা হিসেবে গণহারে ব্যবহারের অনুমোদন প্রদান করা হয়। কিন্তু তখনও টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সম্পন্ন হয়নি। টিকা পরীক্ষার ধাপ শেষ করার পূর্বে অনুমোদন পাওয়ার কারণে এই টিকা শুরু থেকেই নানা বিতর্কের সৃষ্টি করে আলোচনার ঝড় তুলে দেয়।
যেভাবে কাজ করবে
এটি মূলত অ্যাডেনোভাইরাস-বাহক নির্ভর টিকা। অণুজীববিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘ভেক্টর’ বা বাহক অনেকটা যানবাহনের মতো ভূমিকা পালন করে। স্পুটনিক-৫ এ শ্বাসতন্ত্রে রোগ সৃষ্টিকারী অ্যাডেনোভাইরাসকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বাহকের দেহের সমস্ত জিনগত পদার্থ অপসারণ করা হয় বলে এটি রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সোজা কথায়, বাহক হচ্ছে অন্তঃসারশূন্য ভাইরাস খোলসমাত্র। স্পুটনিক-৫ এর জন্য এই ভাইরাসের দুটি বাহক তৈরি করা হয়।
Sars-Cov-2 বা করোনাভাইরাসের দেহে তীক্ষ্ণ অগ্রভাগ রয়েছে যা স্পাইক হিসেবে পরিচিত। এই স্পাইকের ‘এস প্রোটিন’ সৃষ্টির জন্য দায়ী জিন আলাদা করে বিজ্ঞানীরা বাহক অ্যাডেনোভাইরাসের খোলসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। এস প্রোটিন সৃষ্টিকারী জিন সম্বলিত বাহকটি মানবদেহে কোনো রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। কিন্তু এর সংস্পর্শে মানবদেহের প্রতিরোধ কোষগুলো বিক্রিয়া করে এবং অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে। এই অ্যান্টিবডির কারণে দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে উঠে। মূলত, এটিই রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ টিকার মূল কার্যক্রম প্রক্রিয়া।
প্রথম ডোজ প্রদান করার পর বাহক ভাইরাসটি দেহে এস প্রোটিন উৎপন্ন করে। যার সাথে বিক্রিয়া করে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হবে। প্রথম ডোজের ২১ দিন পর দ্বিতীয় ডোজের মাধ্যমে মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। দুটি ডোজে ভিন্ন দুই ধরনের অ্যাডেনোভাইরাস (rAd26 এবং rAd5) ব্যবহার করা হবে।
পরীক্ষাপর্ব
একটি টিকা গণহারে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর কি না, তা নিশ্চিত হতে প্রায় ৫ ধাপের পরীক্ষাপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই পর্বগুলো যথাক্রমে পর্ব-০ থেকে পর্ব-৪ পর্যন্ত নামকরণ করা হয়। মানবদেহে প্রয়োগের পূর্বে প্রাণীদেহে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তারপর পর্ব-০ তে একজন ব্যক্তির দেহে টিকা প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এরপর প্রতিটি ধাপে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাথে সাথে পরীক্ষার ক্ষেত্রও বাড়তে থাকে। পর্ব-২ এবং পর্ব-৩ হচ্ছে টিকা পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই দুইধাপে গ্রহীতার সংখ্যা থাকে সর্বোচ্চ। টিকার কার্যকারিতা, স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সমসাময়িক টিকার সাথে তথ্য তুলনার মাধ্যমে এই পরীক্ষাপর্ব শেষ হয়। মূলত পর্ব-৩ এর পর একটি টিকা গণহারে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ, পর্ব-৪ সম্পন্ন হয় টিকা বাজারজাত করার পর। গণহারে ব্যবহারের পর কোনো জটিলতা বা ব্যর্থতা নিরীক্ষা করাই শেষধাপের কাজ। সারাবিশ্বে এই মডেল হুবহু অথবা কিছুটা পরিমার্জন করে অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
টিকা আবিষ্কার ঘোষণার পর স্পুটনিক-৫ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানানো হয় ইতোমধ্যে এর পর্ব-১ এবং পর্ব-২ পর্যন্ত পরীক্ষা সফলতার সাথে সমাপ্ত হয়েছে। তবে পরীক্ষার বিস্তারিত ফলাফল কোথাও প্রকাশ না করায় সারাবিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই বিষয়টিকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাল হিসেবে বিবেচনা করেছেন। বহু আলোচনার পর সেপ্টেম্বর মাসে ‘দ্য লেনসেট’ জার্নালে পর্ব-১ এবং ২ এর ফলাফল প্রকাশ করেন রুশ গবেষকগণ। মোট ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরিচালিত এই পরীক্ষায় কাউকে প্ল্যাসিবো (Placebo) দেওয়া হয়নি। প্ল্যাসিবো হচ্ছে এমন কোনো পদার্থ যার মাঝে কোনো ঔষধি গুণ নেই। পরীক্ষার সময় কিছু সংখ্যক রোগীদের তাদের অজান্তে প্ল্যাসিবো প্রদান করা হয়। এর ফলে টিকার কার্যকারিতা তুলনা করা সম্ভব হয়। প্রতিবেদন মতে, স্পুটনিক-৫ টিকা প্রয়োগের পর গ্রহীতাদের দেহে কার্যকর অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয়েছে। মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত কোনো জটিলতা না দেখা যাওয়ায় টিকাকে নিরাপদ এবং কার্যকর দাবি করেছেন রুশ বিজ্ঞানীরা।
গত ২৪ নভেম্বর পর্ব-৩ এর ফলাফল বিশ্লেষণ করে রুশ বিজ্ঞানীরা স্পুটনিক-৫ টিকাকে ৯১.৪% কার্যকর দাবি করে বক্তব্য প্রদান করেন। অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, রাশিয়া এবং বেলারুশের প্রায় ৪০ হাজার নাগরিকের উপর পর্ব-৩ এর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনেজুয়েলা, মিশর এবং ব্রাজিলের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে ৩৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর তথ্য পর্যালোচনার পর এর কার্যকারিতা পরিমাপ করেছেন তারা।
আবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের একাংশের মতে, টিকার কার্যকারিতা প্রায় ৯৫% এর মতো। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, এই তথ্য অনেকটাই অনুমাননির্ভর। পর্ব-৩ এর প্রতিবেদন অনেকটাই অসম্পূর্ণ বলে দাবি করেছে তারা। প্রস্তুতকারকদের মতে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৫% গ্রহীতার দেহে মৃদু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়া আর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ তারা পাননি।
ভুল তথ্য প্রচারে বিতর্কিত টিকা
আবিষ্কার ঘোষণার একদম শুরু থেকেই মিথ্যাচার করছে রাশিয়া, এমন অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হয়, ‘স্পুটনিক-৫’ টিকাটি ‘সারাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ টিকা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিজ্ঞানীরা জানান, গত দশকে পশ্চিম আফ্রিকায় ঘটে যাওয়া ইবোলা মহামারিতেও রুশ টিকার শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু পরবর্তীতে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে প্রতিটি বৈশ্বিক ইস্যুতে রাশিয়ার ভুল তথ্য প্রচার একটি সাধারণ নকশা অনুসরণ করে। কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে সর্বপ্রথম আকর্ষণীয় সব দাবি জানিয়ে সারাবিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয় রাশিয়া। কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসরণ না করে রুশদের টিকার কার্যকারিতার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন অনেকেই। অনেকের দাবি পর্ব-১ এবং পর্ব-২ এর কোনো পরীক্ষা করেনি রাশিয়া।
অবশ্য পরীক্ষা পর্ব সম্পন্ন না করার দায়ে রুশরা একা দোষী নন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা প্রাণীদেহে পরীক্ষা না করেই সরাসরি মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করেছে। এমনকি পর্ব-১ এর ফলাফল প্রকাশ এবং পর্ব-২ শেষ না করেই পর্ব-৩ শুরু করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
স্পুটনিক-৫ এর প্রচারণার মাধ্যমে রাশিয়া মূলত আফ্রিকান দেশগুলোকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় এই টিকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যে, গত ২ ডিসেম্বরের মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ১ লাখ রোগী স্পুটনিক-৫ গ্রহণ করেছেন। তবে সেই রোগীদের তথ্য প্রকাশ করেনি রাশিয়া।
তবে রুশ টিকা সফল হবে না, এমন মন্তব্য করেননি বিজ্ঞানীরা। রুশ টিকা বাস্তবেই ‘শ্রেষ্ঠ’ টিকা হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে, কিন্তু বিতর্কের মূলে রয়েছে রাশিয়ার তথ্য গোপন করা এবং অতিরঞ্জিত তথ্যপ্রকাশের প্রবণতা।
বিশ্ব প্রতিক্রিয়া
স্পুটনিক-৫ নিয়ে বিশ্ব প্রতিক্রিয়া অনেকটাই নেতিবাচক। বিদেশি বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি বহু রুশ বিজ্ঞানীও টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পরীক্ষাপর্ব সঠিক এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ না করে এই টিকা গণহারে প্রয়োগ করা নিরাপদ হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ পিটার দ্রোবাক মন্তব্য করেছেন,
“টিকার নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যে তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, তা সত্য কিনা আমরা জানি না। ভূরাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দেশ এই ঘটনাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে নিরাপত্তার বিষয় মাথায় না রেখে টিকা অনুমোদন দিতে পারে, যা সকলের জন্য হবে বিপদের কারণ।”
রুশ সংবাদমাধ্যম দ্য মস্কো টাইমস ১২ জন চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এদের সকলে স্পুটনিক-৫ নিতে কিছুটা দ্বিধা বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন টিকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের চাকরি চলে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। কোভিড হাসপাতালে কর্মরত ২৩ বছর বয়সী রুশ ডাক্তার পলিনা জানিয়েছেন তাদের টিকা নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। মস্কোর ৫০ নং ক্লিনিক্যাল হাসপাতালের সার্জন রোমান স্ত্রোগানো জানিয়েছেন,
“আমি বলছি না স্পুটনিক-৫ অকার্যকর বা মন্দ টিকা। কিন্তু যেভাবে সীমিত তথ্য প্রকাশের পর আমাদের ঘাড়ে টিকা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা মোটেও সন্তোষজনক নয়।”
স্পুটনিক-৫ এর সফলতার সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর তথ্য পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
টিকা নেবেন না পুতিন নিজেই
গত ৮ ডিসেম্বর ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ায় স্পুটনিক-৫ টিকা এখন গ্রহণ করবেন না। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সারাবিশ্বে আলোচনার ঝড় উঠে। যেহেতু ইতোমধ্যে পুতিন সংবাদ সম্মেলনের বহুবার স্পুটনিক-৫ এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, তাই সবার মনে হাজারো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। এমনকি টিকার কার্যকারিতার তথ্য ‘ভুয়া’ এমন সন্দেহ জোরদার হতে থাকে। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ক্রেমলিন জানায়,
“এখনও গণহারে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হয়নি। তাই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনের এখন টিকা নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি।”
এছাড়া ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন অনুমোদনের পূর্বে স্পুটনিক-৫ গ্রহণ করবেন না। এদিকে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে টিকা প্রদান কর্মসূচি চালু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা টিকা গ্রহীতাকে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পানে নিরুৎসাহিত করছেন এমন তথ্যও প্রচারিত হয়েছে রাশিয়ায়। বিশেষ করে, টিকা গ্রহণের আগের ও পরের ৩ দিন অ্যালকোহল পান না করার নির্দেশ দিয়েছেন স্পুটনিক-৫ এর প্রস্তুতকারক ড. আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ।
সকল আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যেই এগিয়ে চলছে স্পুটনিক-৫ এর যাত্রা। ইতোমধ্যে রাশিয়ায় এর ২০ লাখ ডোজ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই প্রবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ রুশ নাগরিক এই টিকা গ্রহণ করেছেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বহির্বিশ্বে মাত্র ১০ ডলারের বিনিময়ে এর এক ডোজ পাওয়া যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রুশ বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য যে, ফাইজার-বায়োএনটেক এর টিকার প্রাথমিক মূল্য ধার্য করা হয়েছে ডোজপ্রতি ১৯.৫০ ডলার। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দেশ স্পুটনিক-৫ ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়াকে টিকা সরবরাহ করতে সহায়তা করবে ভারত, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ। শেষ পর্যন্ত স্পুটনিক-৫ সফল হবে কি না, তা সময়ই জানিয়ে দেবে।