Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাটল অব মাছিওয়ারা: বৈরাম খানের কাছে আফগানদের শোচনীয় পরাজয়

১৫৪৫ সালের ২২ মে কালিঞ্জর দুর্গ অবরোধের সময় মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুমুখে পতিত হন হিন্দুস্তানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ, শক্তিশালী এবং দুর্ধর্ষ সম্রাট শের শাহ সুরি। তার মৃত্যুর পর সুরি সাম্রাজ্যের মসনদে বসেন তারই কনিষ্ঠ পুত্র ইসলাম শাহ সুরি। প্রায় ৯ বছর হিন্দুস্তান শাসন করার পর ১৫৫৩ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তী দুর্বল ও অযোগ্য শাসক মুহাম্মদ আদিল শাহের ব্যর্থতার কারণে বিশাল সুরি সাম্রাজ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে গৃহযুদ্ধ লেগে যায়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়ে শের শাহের গড়া সাম্রাজ্যটি রাতারাতি ভেঙে পাঁচটি টুকরায় ভাগ হয়ে যায়।

অবশ্য এ সময় হিন্দুস্তানের অন্যান্য অংশেও রাজনৈতিক অস্থিরতার বাতাস বইতে শুরু করেছিলো। গুজরাট, সিন্ধু, মেবারসহ গোটা হিন্দুস্তানই যেন রাজনীতির বৈরি হাওয়ায় টালমাটাল হয়ে যেতে থাকে। হিন্দুস্তানকে পুনরুদ্ধার করার জন্য কাবুলে অপেক্ষমান সম্রাট হুমায়ুন এর চেয়ে আর ভালো সময় কখনোই পাবেন না। কাজেই তিনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।

১৫৫৩ সালের শেষ থেকে শুরু করে ১৫৫৪ সালের পুরোটাই তিনি ব্যয় করলেন অভিযানের প্রস্তুতির জন্য। এই সময়ের মাঝে তিনি তার সেনাবাহিনীতে নতুন সৈন্য ভর্তি করলেন, তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিলেন, যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় রসদসামগ্রী সংগ্রহ করলেন। সম্রাটের হিন্দুস্তান অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন জাতি থেকে যোদ্ধারা এসে যোগ দিলো।

সম্রাট হুমায়ুন; Artist: Kailash Raj

এরই মাঝে ১৫৫৩ সালের শেষের দিকে একবার কাবুল থেকে কান্দাহার গেলেন তিনি। কান্দাহারের প্রশাসনে বৈরাম খানকে পুনর্বহাল করে পারস্যের শাহের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেন তিনি। কান্দাহারে কয়েকমাস অবস্থান করে বৈরাম খানকে নিয়েই ১৫৫৪ সালের অক্টোবর শেষের দিকে কিংবা নভেম্বরের শুরুর দিকে কাবুলে পৌঁছালেন। গুরুত্বপূর্ণ এই অভিযানে সম্রাট তার বিশ্বস্ত সেনাপতি বৈরাম খানকে পাশে রাখতে চান।

১৫৫৪ সালের ১২ নভেম্বর কাবুল থেকে আলাদা দুটি সেনাবাহিনী রওয়ানা হয়ে গেলো। সম্রাটের সাথে থাকা বাহিনীতে যোদ্ধা ছিলেন প্রায় ৩ হাজার। সেনাবাহিনীর বাকী অংশ বৈরাম খানের নেতৃত্বে রওয়ানা দিলো। এই বাহিনীতে যোদ্ধা ছিলেন প্রায় ৫,০০০ জন।

বালক আকবর; Image Source: Wikimedia Commons

অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রার পূর্বে সম্রাট হুমায়ুন তার পুত্র আবুল হাকিমের নিকট কাবুলের শাসনভার অর্পণ করলেন। সম্রাটের এই পুত্রের জন্ম হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে, ১৫৫৪ সালের ১৮ এপ্রিল। কাজেই এই শিশুর পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেন সম্রাটের বিশ্বস্ত আমির মুনিম খান। সম্রাটের এই অভিযানে শাহজাদা আকবর তার সঙ্গী হয়েছিলেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিলো ১২ বছর।

২৫ ডিসেম্বর নাগাদ সম্রাট সুর খাব, লামাগানাত আর জালালাবাদ হয়ে পেশোয়ারে পৌঁছে গেলেন। এদিকে বৈরাম খানও তার সাথে থাকা ৫,০০০ সৈন্যের বাহিনী নিয়ে সিন্ধুর তীরে সম্রাটের সাথে মিলিত হলেন।

সিন্ধু নদীর একাংশ; Image Source: thoughtco.com

মাত্র ৮,০০০ সৈন্যের এই ক্ষুদ্র বাহিনীটি নিয়ে সম্রাট সিন্ধু পাড়ি দিয়ে পাঞ্জাবে পৌঁছালেন। এ সময় পাঞ্জাবের শাসক ছিলেন সিকান্দার শাহ সুরি। সুরি সাম্রাজ্য থেকে পাঞ্জাবকে আলাদা করে তিনি স্বাধীনভাবে শাসনকাজ চালাচ্ছিলেন

সম্রাট হুমায়ুন পাঞ্জাবে আসায় সিকান্দার শাহ সুরি বেশ বেকায়দায় পড়ে গেলেন। কারণ, পাঞ্জাব নিয়ে ইতোমধ্যেই তার ও আদিল শাহ সুরির মাঝে দ্বন্দ্ব লেগে ছিলো। পাঞ্জাবের দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে আদিল শাহ ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছিলেন। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ চালালেন সম্রাট হুমায়ুন। একইসাথে দুটি যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই অসম্ভব বিবেচনা করে সিকান্দার শাহ পাঞ্জাব থেকে পিছু হটে দিল্লির দিকে সরে গেলেন। আর পাঞ্জাব রক্ষার জন্য তাতার খানকে রোহতাস দুর্গে মোতায়েন করলেন তিনি। কিন্তু, সম্রাট হুমায়ুন যখন রোহতাস দুর্গ আক্রমণ করলেন, তাতার খান তখন দুর্গ রেখেই পালিয়ে গেলেন। বিনাযুদ্ধে শের শাহের বিখ্যাত রোহতাস দুর্গটি সম্রাট হুমায়ুনের আয়ত্বে চলে এলো।

সম্রাট এরপর তার সেনাবাহিনী নিয়ে ঝিলাম, চেনাব আর রাভি নদী পাড়ি দিয়ে কালানৌরে গিয়ে পৌঁছালেন। কালানৌরে বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করা হলো। একভাগ নিয়ে সম্রাট হুমায়ুন স্বয়ং কালানৌরে অবস্থান করতে লাগলেন, অন্য আরেকটি সেনাবাহিনীকে জলন্ধর হয়ে সম্ভব হলে সিরহিন্দ পর্যন্ত দখল করতে পাঠিয়ে দিলেন। তাছাড়া, এ সময় আফগান জেনারেল নসীব খান হরিয়ানায় ঘাটি গেড়ে বসে ছিলেন। নসীব খান অগ্রসর হয়ে হুমকি সৃষ্টি করলে এই বাহিনীটি তাকে প্রতিরোধ করবে। বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন বৈরাম খান, তরদী বেগ, সিকান্দার খান উজবেক, লাল বেগ প্রমুখ। মীর মুনশি শাহাব খান আর মেহতের সাখাই (ফরহাত খান)-এর নেতৃত্বে আরেকটি সেনাবাহিনী পাঠানো হলো লাহোরের দিকে।

শেষ বাহিনীটি প্রায় বিনা প্রতিরোধে লাহোর অধিকার করতে সক্ষম হলো। সংবাদ পেয়ে সম্রাট ছুটলেন লাহোরের দিকে। ১৫৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি লাহোরে প্রবেশ করলেন।

এদিকে সম্রাট হুমায়ুনকে বাঁধা দিতে দিপালপুরে এসে পৌঁছালেন আফগান জেনারেল শাহবাজ খান, সাথে ১২,০০০ সৈন্যের এক বাহিনী। সম্রাট হুমায়ুন এই বাহিনীকে মুকাবিলা করতে যে বাহিনীটি প্রেরণ করলেন তাতে সৈন্যসংখ্যা ছিলো মাত্র ৭০০ কিংবা ৮০০ জন। চরম বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, মুঘলদের ক্ষুদ্র এই বাহিনীটি কাছেই শোচনীয় পরাজয় বরণ করে আফগানরা পিছু হটতে বাধ্য হলো। পেছনে ফেলে গেলো বিপুল পরিমাণ রসদ, যার পুরোটাই মুঘল সেনাবাহিনীর হাতে গিয়ে পড়লো।

সত্যিকার অর্থে সম্রাট হুমায়ুন যখন কাবুল ত্যাগ করেছিলেন, তখন থেকেই মুঘল সেনাবাহিনীর আত্মবিশাস ছিলো তুঙ্গে। অভিযানে যখন ধীরে ধীরে যখন সফলতা পাওয়া যাচ্ছিলো, সেই আত্মবিশ্বাস গেলো আরও বেড়ে। অন্যদিকে, আফগানরা এমনিতেই গৃহযুদ্ধের ভারে অতিষ্ঠ ছিলো, তার উপর মুঘল সেনাবাহিনীকে এমন বীরদর্পে অগ্রসর হতে দেখে তারা আরও সাহস হারিয়ে ফেললো।

আফগানরা এ সময় মুঘলদের ভয়ে এতটাই আতঙ্কগ্রস্থ ছিলো যে, কোনো ঘোড়ার পিঠে মুঘল যোদ্ধা দেখা মাত্রই তারা এমনভাবে পালাতো যে, ভুলেও একবার পেছনে ফিরে মুঘল সৈন্যটিকে দ্বিতীয়বার দেখার মতো সাহস আর তাদের ছিলো না। শের শাহের মৃত্যুর পর তার বীর সেনাবাহিনীর অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিলো, যা সত্যিই বিস্ময়কর।

এদিকে বৈরাম খান অবস্থান করছিলেন জলন্ধরে। তিনি সিকান্দার খান উজবেককে সামনে পাঠিয়ে পাঞ্জাবের মাছিওয়ারায় মোতায়েন করলেন। মাছিওয়ারায় গিয়ে সিকান্দার খান উজবেক আফগানদের কোনো তৎপরতা দেখতে না পেয়ে মাছিওয়ারা ছাড়িয়ে সিরহিন্দ দখল করে বসলেন। মুঘলরা সিরহিন্দ দখল করে বসলে সিকান্দার শাহ সুরির মাথায় চিন্তার ভাজ পড়লো। কারণ, সিরহিন্দ দখল করা মানে মুঘলদের জন্য দিল্লির দরজা খুলে যাওয়া।

সিকান্দার শাহ সুরি তখন আদিল শাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন। সিকান্দার খান উজবেককে বাঁধা দিতে তাই তিনি প্রেরণ করলেন তাতার খানকে। সাথে দিয়ে দিলেন ৩০,০০০ অশ্বারোহীর শক্তিশালী একটি বাহিনী। তাতার খানের উপর নির্দেশ হলো, যেভাবেই হোক, সিরহিন্দ থেকে মুঘলদের বিতাড়িত করো।

তাতার খান বিশাল বাহিনী নিয়ে সিরহিন্দের দিকে অগ্রসর হলেন। সিকান্দার খান উজবেক শক্তিশালী এই আফগান বাহিনী দেখে ভড়কে গেলেন। সিরহিন্দ ছেড়ে তো তিনি পালালেনই, সেই সাথে মাছিওয়ারাও ছেড়ে সোজা জলন্ধরের রাস্তা ধরলেন।

সিকান্দার খান উজবেক পিছু হটে জলন্ধর পৌঁছালে ব্যাপারটিতে বৈরাম খান ব্যক্তিগতভাবে চরম অপমানিত হলেন। তিনি নিজে আফগান বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেনাবাহিনী নিয়ে দ্রুত মাছিওয়ারার দিকে অগ্রসর হলেন তিনি।

যে সময়ের আলোচনা করছি, তখন সময়টা ছিলো শীতকাল। প্রচন্ড শীতে যেখানে টেকাই দায়, সেখানে আবার যুদ্ধ হয় কীভাবে! এই ভেবে তরদী বেগ চাইলেন শীতটা মাছিওয়ারাতেই কাটিয়ে বর্ষার পর আফগানদের মুখোমুখি হতে। কিন্তু বৈরাম খান রাজি ছিলেন না। কারণ সেনাবাহিনী এখন আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় অবস্থান করছে। দীর্ঘ বিশ্রাম তাদের হতোদ্যম করে দিতে পারে। তাছাড়া, আফগানরা যদি মুঘল সেনাবাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আক্রমণ করে বসে, তাহলে এতদিনের সব অর্জন ব্যর্থতায় রুপ নিবে।

সতলজ নদী; Image Source: crayon.pk

অগত্যা তরদী বেগ সতলজ নদী পাড়ি দেয়ার ব্যাপারে একমত হলেন। ১৫৫৫ সালের ১৫ মে দুপুরের কিছু সময় পর মুঘল সেনাবাহিনী সতলজ নদী পাড়ি দিলো। এদিকে সতলজের অপর তীরে আফগানরা তখন ঘাটি গেড়ে বসে ছিলো। তারা যখন দেখলো যে মুঘল সেনাবাহিনী নদী পাড়ি দিচ্ছে, তখন তারাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে লাগলো।

নদী পার হয়ে বৈরাম খান দ্রুত সেনাবাহিনীকে চার ভাগে ভাগ করে ফেললেন। সিকান্দার খান উজবেককে অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্ব দিয়ে বৈরাম খান থাকলেন মূল বাহিনীর সাথে। আর বাহিনীর ডান বাহুর নেতৃত্বে রইলেন খিজির খান হাজারা, তরদী বেগ ছিলেন বাম বাহুর দায়িত্বে। এই যুদ্ধে আফগান বাহিনীতে প্রায় ৩০,০০০ অশ্বারোহী ছিলো। মুঘল সেনাবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ঠিক কত ছিলো তা স্পষ্ট না জানা গেলেও বেশিরভাগ ঐতিহাসিকেরই মত হলো, মাছিওয়ারার এ যুদ্ধে মুঘল সেনাবাহিনীর আকার আফগানদের চেয়ে অনেক ছোট ছিলো।

মুঘল সেনাবাহিনীর ছোট আকারের বিষয়টি আফগানরাও লক্ষ্য করেছিলো। তাছাড়া নদী পাড়ি দিয়ে যুদ্ধের জন্য মুঘল যোদ্ধারা তখনও ঠিকভাবে সজ্জিত হতে পারেনি। সুযোগ বুঝে আফগানরা এগোতে শুরু করলো। বিশৃঙ্খল অবস্থায় শত্রুকে জাপটে ধরতে পারলে আগে থেকেই অর্ধেক বিজয় সম্ভব হয়।

তরুণ বয়সের বৈরাম খান; Image Source: Wikimedia Commons

যুদ্ধ শুরু হলো সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে। আফগানরা ধারণা করেছিলো, ছোট্ট মুঘল সেনাবাহিনীকে জাপটে ধরে দ্রুত পরাজিত করে যুদ্ধ শেষ করা সম্ভব হবে। কিন্তু সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও যুদ্ধ থামার কোনো নাম-গন্ধই পাওয়া গেলো না। আফগান সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা বাড়তে লাগলো।

এদিকে সন্ধ্যার পর ঘটে গেলো আরেক বিপর্যয়। যুদ্ধক্ষেত্রে আফগানদের সেনা অবস্থানের কাছাকাছি একটি গ্রাম ছিলো। যুদ্ধের একপর্যায়ে এই গ্রামটিতে আগুন লেগে গেলো। দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন আফগানদের ভয়াবহ একটি বিপদে ফেলে দিলো। গ্রামটি আফগানদের কাছাকাছি হওয়ায় আগুনের তীব্র আলোতে মুঘল যোদ্ধারা আফগান সেনাদের অবস্থান স্পষ্ট ভাবেই দেখতে পাচ্ছিলো। কিন্তু, অন্ধকারে থাকায় মুঘল সেনাবাহিনীর যোদ্ধাদের ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলো না আফগানরা। আফগান যোদ্ধাদের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পূর্ণ সুযোগ নিলো মুঘল তীরন্দাজরা। মুঘল তীরন্দাজদের তীব্র তীর বর্ষণে আফগানরা চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো।

ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে মাত্র ১০ ঘন্টার যুদ্ধেই আফগানরা চরমভাবে পরাজিত হলো। বিপুল সংখ্যক আফগান সৈন্যের মরদেহ যুদ্ধের ময়দানে রেখেই বাকিরা পালিয়ে গেলো। আফগানদের বিপুল পরিমাণ রসদও এসে পড়লো মুঘলদের হাতে।

মাছিওয়ারা যুদ্ধটি মাত্র ১০ ঘন্টা ধরে চললেও এর তাৎপর্য ছিলো ব্যাপক। এই যুদ্ধে পরাজয় হিন্দুস্তানে আফগানদের ভাগ্য একরকম নিশ্চিতই করে দিলো। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে আফগানরা মাছিওয়ারা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলো। তাদের বিশাল সংখ্যাক যোদ্ধা তো নিহত হয়েছিলোই, সেই সাথে তাদের প্রচুর ঘোড়া আর অন্যান্য রসদ মুঘলদের হস্তগত হয়েছিলো। এর বিপরীতে মুঘলদের খুব সামান্যই হতাহত হয়েছিলো।

মাছিওয়ারার এই যুদ্ধের পর বৈরাম খান প্রায় বিনা বাঁধায় আগ্রসর হয়ে আবারও সিরহিন্দ দখল করে নিলেন। তাছাড়া হিসার ফিরোজা আর দিল্লির কিছু অংশসহ পুরো পাঞ্জাব সম্রাট হুমায়ুনের পদানত হলো।

এই যুদ্ধের পুরোটা কৃতিত্বই ছিলো বৈরাম খানের। তিনি শীত শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে আফগানরা আরও সুগঠিত হওয়ার সুযোগ পেতো। তাতে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা ছিলো মুঘলদেরই। যা-ই হোক, সম্রাট হুমায়ুন যখন এ যুদ্ধে বৈরাম খানের বীরত্বের কথা শুনলেন, তখন প্রচন্ড খুশি হয়ে তিনি তাকে ‘খান-ই-খানান’ উপাধী প্রদান করলেন।

এদিকে আফগান শিবিরের চিত্র তখন ভিন্ন। সিকান্দার শাহ সুরি মাছিওয়ারায় তার বাহিনীর এই করুণ পরিনতির কথা শুনলেন, তখন পুরো হতভম্ভ হয়ে গেলেন। তার বিশাল একটি বাহিনী বলতে গেলে মুঘল সৈন্যদের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে গিয়েছে। অথচ কিছু দিন আগেও ইব্রাহীম শাহ সুরির বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে তিনি বিজয় অর্জন করেছিলেন!

যা-ই হোক, সিরহিন্দ থেকে মুঘল সেনাবাহিনীকে ঝেটিয়ে বিদায় করার জন্য সিকান্দার শাহ সুরি এবার নিজেই রওয়ানা হয়ে গেলেন। তার সাথে প্রায় ৮০,০০০ সৈন্যের শক্তিশালী একটি বাহিনী। পথে তেমন যাত্রা বিরতি না করে তিনি সোজা এসে সিরহিন্দ দুর্গ অবরোধ করলেন।

বৈরাম খান পড়লেন বিপদে। তার সাথে যে অল্প সংখ্যক সৈন্য আছে, তা নিয়ে সিকান্দার শাহ সুরির বিশাল এই বাহিনী মোকাবিলা করা অসম্ভব। দ্রুত সম্রাট হুমায়ুনের কাছে বার্তা প্রেরণ করা হলো। বৈরাম খানের আপাতত আর করার কিছুই নেই। অপেক্ষা এবার সম্রাটের জন্য।

[এই সিরিজের পূর্বের প্রকাশিত পর্বটি পড়ুন এখানে। সিরিজের সবগুলো লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।]

This article is in Bangla language and it's a short discussion about The Battle of Machhiwara, which was fought between Mughal Army and Suri Army in 1555.

References:

1. মোগল সম্রাট হুমায়ুন, মূল (হিন্দি): ড হরিশংকর শ্রীবাস্তব, অনুবাদ: মুহম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৫

2. তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াত, মূল: জওহর আবতাবচি, অনুবাদ: চৌধুরী শামসুর রহমান, দিব্য প্রকাশ, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ (চতুর্থ মুদ্রণ)

3. আইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী, মূল গ্রন্থ: আকবরনামা, মূল গ্রন্থের লেখক: আবুল ফজল, অনুবাদ: পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, দিব্য প্রকাশ, জানুয়ারি ২০১২ (২য় মুদ্রণ)

Feature Image: Wikimedia Commons

Related Articles