Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন: প্রাচীন এক চায়ের দোকানের টিকে থাকার গল্প

চা পান করতে ভালোবাসেন? পছন্দের এই পানীয়টির বয়স কত জানেন? প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ চা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। আর সেই ঐতিহ্যবাহী চা বিক্রি করে এখনো একইভাবে চলে আসছে চীনের একটি চায়ের দোকান। বলছিলাম চীনের ‘গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন’ এর কথা। আর দশটা সাধারণ চায়ের দোকানের চাইতে অনেকটা ভিন্ন এই দোকানটি। ভিন্নতা রয়েছে দোকানটির ইতিহাসে।

গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন টি হাউজ; Image Source: cdn1.i-scmp.com

চায়ের জন্ম হয়েছিল চীনা সম্রাট ‘শেন নাং’ এর হাত ধরে। না জেনেই কাকতালীয়ভাবে চা উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য নিয়ে অসম্ভব সচেতন ছিলেন শেন নাং। পানি ফুটিয়ে পান করলে এর জীবাণু অনেকটা দূর হয়ে যায়। এতে অসুখ কম হয়। এই ব্যাপারটি খেয়াল করেছিলেন সম্রাট। আর তাই কেবল তিনি নিজেই নন, রাজ্যের সবাইকেই পানি ফুটিয়ে পান করার নির্দেশ জারি করেন তিনি।

এমনই এক দিনের কথা। ক্যামিলিয়া গাছের নিচে বসে ফুটন্ত পানি পান করছিলেন সম্রাট। এসময় বাতাসে কয়েকটি পাতা এসে পড়ে পানির উপরে। সেগুলো তুলে ফেলে দেওয়ার আগেই লক্ষ্য করেন সম্রাট, গরম পানি ভিন্ন একটা রং ধারণ করেছে। পরবর্তীতে সেই রঙিন পানি পান করেন তিনি। বেশ চনমনে ভাব কাজ করে তার। সারাটা দিন বেশ ফুরফুরে কাটে সম্রাটের। অদ্ভুত এবং অজানা এই তরল পান করে শেন নাং এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, পরবর্তীতে এই পানীয় পান করা শুরু করেন তিনি। সেই থেকে তার চা পান করার অভ্যাস শুরু হয়।

কেবল চায়ের স্বাদে নয়, টি হাউজটির ভেতরের কারুকার্যও আপনাকে ভিন্ন এক অনুভূতি দেবে। ইতিহাসের পাতার সরাসরি সাক্ষী যেন এই চায়ের দোকানটি। আগের কয়েক শতকের ধর্মীয় ও আরো নানা রকমের ইতিহাস পাওয়া যাবে এতে। একটু নিচেই আছেন সমাজতান্ত্রিক চিনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং। তার ছবির চারপাশ ঘিরে আছে আলোর ছোঁয়া, সমাজতন্ত্রের স্লোগানসহ আরো অনেক কিছু। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশের রাজধানী চাংদুর শহর পেংঝেনে অবস্থিত এই চায়ের দোকানটির দালানের বয়স প্রায় ৩০০ বছর। আর চারপাশে আধুনিকতার প্রভাবে বিভিন্ন পরিবর্তন চলে আসলেও শহরটির মানুষ নিজেদের শেকড়ের চিহ্ন হিসেবে এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে ঠিক আগের মতোই রেখেছে।

গুয়ানিয়েনের ভেতরে আড্ডায় ব্যস্ত সবাই; Source: i.guim.co.uk

দোকানের ব্যবস্থাপক কিউয়াং লি কঠোর পরিশ্রম করেন এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে। রোজ ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। চুলায় পানি চড়িয়ে অপেক্ষা করেন ক্রেতার। প্রতিটি কাপ বিক্রি হয় ২ ইয়ানে। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যান লি। ক্লান্তি নেই তার। হাসিমুখে, নীল কাপড় পরে হাত চালান তিনি।

চায়ের দোকানের দালানটি অবশ্য আগে মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন সেই মন্দিরের জায়গায় এখন মন্দিরের দেবীর নামেই নির্মিত হয়েছে গুয়ানিয়েন চায়ের দোকান। গুয়ানিয়েনে মোট ৫০টি বসার আসন আছে। তবে দোকানে ভীড় হয় আরো অনেক বেশি। নিজেদের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন শহরের বাকিরাই। শহরের অন্যান্য চায়ের দোকানের মতো দুর্লভ বা রকমারি চা পাওয়া যায় না গুয়ানিয়েনে। অন্দরমহলেও খরুচে সাজ নেই। বাঁশের খুব সাধারণ বসার আসন, সাথে অতি সাধারণ বাল্ব।

পেংঝেনের আরো অনেক ঐতিহ্যের মতো আগুনে পুড়ে যায়নি এই চায়ের দোকান। একইসাথে চীনা ইতিহাসের কয়েক শতকের মধ্যেও নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয়, আধুনিক জীবনের ছোঁয়াও এড়িয়েছে এটি। পুরো জায়গাটাই এমন। এখানে হারিয়ে যাওয়া চীনকে খুঁজে পাবেন আপনি। বিশ্বাস না হলে নিজের দেখে নিন। 

হাসতে হাসতে বলেন লি। সেই হাসিতে মিশে থাকে দীর্ঘদিনের লালিত ঐতিহ্যের গর্ব। পেংঝেনের বাসিন্দা হিসেবে অনেকদিন ধরে আছেন ঝিহু ফু। গুয়ানিয়েন টি হাউজ নিয়ে বলতে গিয়ে স্বপ্নালু হয়ে ওঠে তার চোখ।

চীনের অনেক ইতিহাসই একেবারে হারিয়ে গিয়েছে, কিংবা নতুন করে পুরোনো কিছু তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে তেমনটি হয়নি। শুধু এই রাস্তাটিই বছরখানিক আগে নির্মিত। 

বয়স্করাই বেশি আসেন এই দোকানে; Image Source: english.jschina.com.cn

স্থানীয় প্রশাসনও এই ঐতিহ্যকে রক্ষার জন্য কাজ করে চলেছে। শুধু চায়ের দোকানটিই নয়, এখানে এসে আরো অনেক পুরনো রেস্তোরাঁ খুঁজে পাবেন আপনি। স্থানীয় বাসিন্দা, ৭৩ বছর বয়সী ঝ্যাং বলেন-

এখানে আমরা সবাই স্থানীয় মানুষ, বিশ্বাসী ক্রেতা। 

চায়ের দোকানে আসা এক তরুণী বলেন-

এখানে প্রাচীন চীনের এমন অনেক ইতিহাস আছে, যেগুলো বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখানো হয় না। এই চায়ের দোকান, এর চারপাশের সবকিছু, এগুলোকে মোটেও বর্তমান আধুনিক চীনের কিছু বলে মনে হয় না। আমি গুয়াংঝু থেকে এসেছি এবং সেখানকার বড় শহরগুলোতে চীনের এই প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোকে দেখতে পাওয়া সম্ভব হয় না, তবে এখানে ব্যাপারটি একটু আলাদা। এখানে অতীত ইতিহাস যেন আবার জীবন্ত হয়ে ফিরে আসে।

গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন টি হাউজে কিউয়াং লি সবসময় সবাইকে অভ্যর্থনা জানান গরম পানিতে ভর্তি থার্মোস বোতলে ফুল মিশিয়ে। কাউকেই কম সমাদর করেন না তিনি।

এটা তাদের কাছে নিজের দ্বিতীয় বাড়ির মতো। বিশেষ করে যারা চাংদু থেকে দূরে বাস করেন তাদের জন্য তো অবশ্যই।

৩০ বছর বয়সে প্রথম এখানে কাজ শুরু করেন লি। এরপর প্রায় দুই যুগ পার হয়ে গিয়েছে। শুরু থেকেই সবসময় চেষ্টা করেছেন লি, যেন গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়নে কোনো ধরনের পরিবর্তন না আসে। কেন এত কষ্ট করছেন তিনি? প্রশ্ন করা হলে উত্তরে লি জানান,

কেন কষ্ট করি? কারণ, এখানে মানবিকতার স্পর্শ পাই আমি। প্রতিদিনের জীবন অনেক বেশি সাধারণ লাগে এখানে, স্বাভাবিক মনে হয়। সত্য বলতে গেলে, এই ব্যবসায় তেমন লাভ হয় না। কিন্তু তারপরও কীভাবে এটাকে বাদ দিই? এখানে এমন অনেকে আছেন যারা প্রতিদিন চা পান করার জন্য প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে আসেন।

৫০ বছর বয়সী ক্রেতা তিয়ান জাইপোর মতে, দোকানটি মানুষকে বাস্তবের হিসেব নিকেশে ভর্তি জীবন থেকে বের করে সামাজিক বন্ধনের সাথে পরিচিত করে তোলে।

বর্তমানে মানুষ একে অন্যের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য এর চাইতে ভালো কোনো স্থান হতেই পারে না। তবে তরুণেরা আজকাল আর তেমন একটা আসেন না।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালেও চীনে যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত স্টারবাকসের মোট ৪১১টি শাখা ছিল। এখন সেটা বেড়ে মাত্র পাঁচ বছরে ছয়গুণ হয়ে গিয়েছে।

চা তৈরি হচ্ছে গুয়ানিয়েনে; Image Source: cdn1.i-scmp.com

মজার ব্যাপার হলো, শুধু চা পানের জন্য নয়, এখানে নিয়মিত অনেক মানুষই ছবি তোলার জন্য আসেন। তাদের কাছে গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন টি হাউজ শুধুমাত্র চীনের প্রাচীন ইতিহাসের সাথে নিজের একটা ছবি তুলে রাখার মতো মজার বিষয়। নিজেদের ইচ্ছামতো দোকানের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করেন এবং প্রতিদিনের ক্রেতাদের সরিয়ে নিজেদের প্রভাব খাটান তারা। এতে যে সমস্যা হয় না তা নয়। তবে এতে দোকানের পরিচিতি বাড়ে বলে মিস্টার লি কিছুই বলেন না। তবে এই চিত্রগ্রাহকদের কেউই দোকানে চা পান করেন না। তাদের মনোযোগ থাকে শুধু ছবিতে। বিশেষ করে বন্ধের দিনে এই ভিড় অসম্ভবরকম বেড়ে যায় বলে জানান লি।

গুয়ানিয়েন টি হাউজে কীভাবে যাবেন?

প্রাচীন গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন টি হাউজে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে চাংদুর শুয়াংলিউ জেলার, পেংঝেন শহরের ২৩ ম্যাশিবা স্ট্রিটে। পেংঝেনের যাওয়ার জন্য ক্যাব নেওয়া সবচাইতে ভালো। ৪৫-৬০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। এবার চীনে গেলে না হয় ইতিহাসের সাক্ষী গুয়ানিয়েন প্যাভিলিয়ন টি হাউজ থেকে ঘুরেই আসবেন!

This is a bengali article. This article is about the oldest tea house of China, Guanyin Pavilion. All the sources are hyperlinked into the article. 

Feature Image: i.guim.co.uk

Related Articles