১
১৫৩৫ সালে সম্রাট হুমায়ুন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে গুজরাট বিজয় করলেও মাত্র ১৩ মাস পরেই অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে সম্রাটকে গুজরাট ত্যাগ করে আগ্রায় ফিরতে হয়েছিলো। গুজরাট বিজয়ের পর সম্রাট হুমায়ুনের নিষ্কৃয়তা, আমিরদের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর মুঘলদের কিংবদন্তীতুল্য বিলাসিতাকেই এই পরাজয়ের পেছনে দায়ী করা হয়। গুজরাটের এই শোচনীয় পরাজয়ের বিষয়টি নিয়ে সম্রাট হুমায়ুন অত্যন্ত লজ্জিত এবং মর্মাহত ছিলেন।
মুঘল সাম্রাজ্যের মতো একটি পরাশক্তি সাম্রাজ্যের সম্রাট হিসেবে গুজরাটের ঘটনাটি হুমায়ুনের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর ছিলো।
১৫৩৫ সালে সম্রাট হুমায়ুন অনেকটা বিনা বাঁধাতেই বাহাদুর শাহকে পরাজিত করে গুজরাট অধিকার করে নিয়েছিলেন। গুজরাট অধিকারের পর হুমায়ুন গুজরাটে নামমাত্র একটি প্রশাসন ব্যবস্থা বহাল করে মাণ্ডুতে তার রাজকীয় ঘাটিতে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বসে রইলেন।
এদিকে গুজরাটের মুঘল প্রশাসকদের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর বিলাসিতাসহ নানা কারণে জনগণ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে পরিস্থিতি বুঝে বাহাদুর শাহ তার রাজ্য পুনরুদ্ধার করে নেন। অত্যন্ত অপমানিত হয়ে মুঘলদের গুজরাট ত্যাগ করতে হয়েছিলো সেবার।
আর তাই গুজরাট অভিযানের ব্যাপারটি মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের জন্য আত্মসম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। হুমায়ুন আগ্রাতে ফিরে কিছুদিন বিষন্ন আর অপমানিত হয়ে কালক্ষেপণ করলেন বটে, তবে তিনি গুজরাটে দ্রুতই আরেকটি অভিযান পরিচালনার জন্য সামরিক প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।
তবে হুমায়ুনেরর এই পরিকল্পনায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো মুঘল সীমান্তের পূর্বে শের খানের সন্দেহজনক গতিবিধি। মুঘল সীমানার পূর্বদিকে শের খানের নেতৃত্বে আফগানদের অভুতপূর্ব উত্থান ঘটছিলো। মুঘলদের হিন্দুস্তানের মাটিতে পা রাখার পরে মুঘলদের সাথে একাধিক যুদ্ধে পরাজয় সত্ত্বেও বারবার আফগানরা সংঘটিত হচ্ছিলো। আর আফগানদের মূল লক্ষ্যই ছিলো মুঘল সাম্রাজ্যের পতন। কাজেই হুমায়ুনকে স্বভাবতই শের খানকে চোখে চোখে রাখতে হচ্ছিলো।
২
১৫৩৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সাম্রাজ্যবাদী পর্তুগিজ জলদস্যুদের হাতে নির্মমভাবে খুন হলেন গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ।
প্রায় সমসাময়িক সময়েই মৃত্যুবরণ করেন মুঘল সেনাবাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন জেনারেল জুনায়েদ বারলাস মির্জা। মৃত্যুর পূর্বে তিনি জৈনপুরের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত জৈনপুরের শাসক হিসেবে তার অন্যতম দায়িত্ব ছিলো শের খানের উপর নজর রাখা।
জুনায়েদ বারলাসের মৃতুর পর হুমায়ুন জৈনপুরের শাসক হিসেবে হিন্দু বেগকে নিয়োগ দিলে এই গুরুদায়িত্ব হিন্দু বেগের উপর এসে বর্তালো। হিন্দু বেগ জৈনপুরের শাসক হিসেবে দায়িত্ব নিলে শের খান বিপুল পরিমাণ উপঢৌকনসহ জৈনপুরে তার দূত প্রেরণ করেন। ভাসাভাসাভাবে তার কাছে গোয়েন্দা তথ্য আসছিলো যে, সম্রাট হয়তো বিহারে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারেন। শের শাহ তাই দ্রুত সব কিছু গুছিয়ে আনতে চাচ্ছিলেন।
তিনি হিন্দু বেগকে আশ্বস্ত করলেন যে, তিনি ভুলেও মুঘল সীমান্তে চোখ তুলে তাকাবেন না। শের খান নিজেকে একজন মুঘল অনুগত সেবক হিসেবে ঘোষণা করলেন।
উপঢৌকনের কারণেই হোক কিংবা সত্যি সত্যিই শের খানকে বিশ্বাসের কারণেই হোক, হিন্দু বেগ শের খানের দূতকে দিয়ে শের খানকে জানালেন,
‘আমি যতদিন জীবিত আছি ততদিন আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। কেউ আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।’
শের খানকে এই বার্তা পাঠানোর পর হিন্দু বেগ সম্রাট হুমায়ুনের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠালেন। বার্তায় তিনি লিখলেন,
‘শের খান আপনার প্রতি একান্তই অনুগত। তিনি বাদশাহর নামে খুতবা পাঠ করাচ্ছেন, এবং বাদশাহর নামেই মুদ্রা প্রচলন করেছেন। শের খান বাদশাহর সীমানাও কখনো লঙ্ঘন করেনি। বাদশাহের প্রত্যাবর্তনের (আগ্রা) পর শের খান এমন কোনো কাজ করেনি, যার ফলে বাদশাহর তার প্রতি কোনো অভিযোগ থাকতে পারে।’
দুটি বার্তার মূলভাব বুঝতে পারলে স্পষ্টই বোঝা যায়, হিন্দু বেগ শের খানের উপঢৌকন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। শের খান তখন পর্যন্ত হুমায়ুনের অনুগত ছিলেন এটা সত্য। তিনি হুমায়ুনের নামেই খুতবা পাঠ করাচ্ছিলেন আর তার নামেই মুদ্রা প্রচলিত ছিলো, এটাও সত্য। কিন্তু শের খানের পরিকল্পনা ভালো করে লক্ষ্য করলে স্পষ্টই বোঝা যায়, শের খানের লক্ষ্য ছিলো মুঘল সালতানাতের মসনদ। হিন্দু বেগের এই সামান্য ব্যাপারটি না বোঝার কোনো কারণই ছিলো না।
তবে হিন্দু বেগের পাঠানো বার্তা পাওয়ার পর হুমায়ুন আপাতদৃষ্টিতে সন্তুষ্ট হলেন।
৩
এদিকে হুমায়ুন যখন গুজরাট থেকে তার রাজধানীতে ফিরে এলেন, তখনই খান খানান ইউসুফ খইল হুমায়ুনকে পরামর্শ দিলেন,
‘শের খানকে উপেক্ষা করা মোটেই বিজ্ঞের মতো কাজ হচ্ছে না। তার মধ্যে বিদ্রোহের প্রবণতা রয়েছে। শের খান রাজনীতি বোঝে, আবার রাজ্যের প্রশাসন কীভাবে পরিচালনা করতে হবে, তা-ও বোঝে। সব আফগানদের সে ইতোমধ্যে তার পতাকাতলে নিয়ে নিয়েছে।’
সম্রাট হুমায়ুন খান খানান ইউসুফ খইলের এই সতর্কবার্তা গুরুত্বের সাথে নেননি। তিনি শের খানকে তখনো তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে রাজি ছিলেন না। বিশেষত হিন্দু বেগের পত্র পাওয়ার পর তিনি আবারও কর্মোদ্যম হারিয়ে আরামে ডুবে রইলেন।
কিন্তু শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় সতর্ক থাকার জন্য সম্রাট হুমায়ুন সেনাবাহিনীতে নতুন সৈন্য নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন।
এদিকে শের খান হুমায়ুনের বিহার অভিযান বাতিলের সংবাদ পেলেন। এই সংবাদটির জন্যই তিনি অপেক্ষা করছিলেন।
মুঘলদের দিক থেকে নিরাপদ হয়ে শের খান ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে দ্রুত জালাল খান আর খাওয়াস খানকে বাংলার রাজধানী গৌড় বিজয়ের জন্য প্রেরণ করেন।
১৫৩২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলার সুলতান নুসরত শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ বাংলার মসনদে স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু মাত্র ৩ মাস পরেই নতুন সুলতানকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন নুসরত শাহের ভাই আবদুল বদর। তিনি গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ উপাধি নিলেন।
রক্তপাতের মাধ্যমে মসনদে বসায় শুরু থেকেই গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের মসনদে আরোহণ প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। শের খান এই সুযোগটিই নিলেন।
বাংলার হোসেন শাহি রাজবংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ শের খানের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত এই আক্রমণের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। আর এদিকে, শের খান সরাসরি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন বাংলার রাজধানী গৌড়ের দিকে।
গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহকে এখন অবশ্যই গৌড় রক্ষা করতে হবে। তিনি গৌড়ের সুরক্ষিত দুর্গে আশ্রয় নিলেন। শের খানের আফগান বাহিনী বাংলার রাজধানী গৌড় অবরোধ করলো।
৪
এদিকে শের খানের বাংলা আক্রমণের সংবাদ শুনে হুমায়ুনের চোখ খুললো। তিনি এবার বুঝতে পারলেন, শের খান ধীরে ধীরে মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। ১৫৩৭ সালের ২৭ জুলাই তিনি বাংলা আর বিহার জয়ের জন্য রাজধানী ত্যাগ করলেন।
রাজধানী ত্যাগ করার পূর্বে তিনি দিল্লি রক্ষার জন্য মীর ফখর আলীকে নিয়োজিত করে এলেন। আর সাম্রাজ্যের অপর রাজধানী আগ্রা রক্ষায় নিয়োজিত করলেন মীর মুহাম্মদ বকশিকে। এছাড়া, সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ইয়াদগার নাসির মির্জাকে কালপিতে, নূরউদ্দিন মুহাম্মদ মির্জাকে কনৌজে নিয়োগ দিলেন। হিন্দু বেগ পূর্বের মতোই জৈনপুরে বহাল থাকলেন।
এই অভিযানে সম্রাটের সাথী হয়েছিলেন তার ভাই আসকারী মির্জা, হিন্দাল মির্জা, তার পত্নীগণ, রুমি খান, তরদী বেগ, বৈরাম খান, কাসিম হুসেন খান উজবেক, জাহিদ বেগ, জাহাঙ্গীর কুলি বেগসহ মুঘল দরবারের আরো বেশ কিছু আমির। আমিরদের অধিকাংশ রওনা হলেন নদীপথে, মূল বাহিনী গেলো স্থলপথে।
হুমায়ুন প্রথমে গেলেন শের খানের শক্তিশালী দুর্গ চুনারের দিকে। তিনি যখন রাজকীয় সেনাবাহিনী নিয়ে চুনার দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছালেন, তখন চুনার দুর্গ দখল প্রসঙ্গে মুঘল আমিরদের মাঝে দ্বিমত দেখা গেলো। এই দুর্গটি শের খানের একটি শক্তিশালী ঘাটি হিসেবে বিবেচিত হতো। পেছনে একটি শক্তিশালী শত্রু ঘাটি রেখে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ না। তাই হুমায়ুনের তুলনামূলক নবীন আমিররা হুমায়ুনকে আগে চুনার দুর্গ দখলের পরামর্শ দিলো।
একদিক থেকে আগে চুনার দুর্গ দখল করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো। কারণ শের খানের বাহিনী তখনো গৌড় দখল করতে পারেনি। সুলতান মাহমুদ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে দুর্গ ধরে রেখেছেন। তাই সহজ হিসাব হচ্ছে, আগে চুনার দখল করে এরপর গৌড়ের দিকে এগোনো যাক।
কিন্তু রাজনীতির মাঠে সহজ হিসাব বলে কিছু থাকে না।
হুমায়ুন যখন খান খানান ইউসুফ খইলকে তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, তখন তিনি বললেন,
‘নবীনদের পরামর্শ হচ্ছে আগে চুনার দখল করা। কিন্তু প্রবীণদের পরামর্শ হলো, গৌড়ে প্রচুর ধন-সম্পদ পরে আছে। তাই আগে গৌড় দখল করে নেয়া যাক। এরপর খুব সহজেই চুনার দখল করে নেয়া যাবে।’
রাজনীতির ময়দানে যে সহজ হিসাব নিকাশ বলতে কিছু নেই, তা খান খানা ইউসুফ খইলের পরামর্শ থেকে বোঝা যায়। আগে চুনার দখল করে নেয়া আপাতদৃষ্টিতে ভালো পরামর্শ মনে হলেও, এই সিদ্ধান্তে যে মুঘলদের অনেক ক্ষতি হতে পারে, তা তিনি আগেই অনুমান করতে পেরেছিলেন। মুঘলরা যদি চুনার দুর্গ দখল করতেও পারে, তাহলেও চুনার দখল করতে করতেই শের খানের গৌড় তথা বাংলা দখল করে নেয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায়। আর যদি শের খান গৌড় দখল করে নেয়, তাহলে তার হাতে বাংলার বিপুল সম্পদ চলে যাবে। এই বিপুল সম্পদের বিনিময়ে চুনার দুর্গ কিছুই না।
বাংলার এই বিপুল সম্পদ হস্তগত করতে পারলে শের খানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে যাবে। শের খান আরো বিশাল সেনাবাহিনী অনায়াসেই গঠন করতে পারবেন।
কিন্তু বিজ্ঞ চোখ যা দেখতে পারে, তরুণ চোখ তা দেখতে পারে না।
সম্রাট হুমায়ুন খান খানান ইউসুফ খইলকে বললেন,
‘যেহেতু আমি একজন নবীন, তাই নবীনদের পরামর্শই আমার ভালো মনে হচ্ছে। পেছনে চুনারের মতো শক্তিশালী একটি দুর্গ রেখে আমি সামনে এগোতে চাই না।’
খান খানান ইউসুফ খইলকে কিছু না বলে নিজ শিবিরে ফিরে এলেন। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে তিনি তার সঙ্গীদের বললেন,
‘শের খানের বিরাট সৌভাগ্য যে মুঘলরা গৌড়ে যাচ্ছে না। মুঘলরা চুনার দখল করার আগেই শের খান গৌড় দখল করে নিবে। আর গৌড়ের বিপুল সম্পদ তার অধিকারে চলে যাবে।’
৫
হুমায়ুন যে একেবারেই নির্বোধ ছিলেন বা রাজনীতি বুঝতেন না, তা কিন্তু নয়। গৌড়ের আগে চুনার দখল করা সিদ্ধান্তের পেছনে তার অনেকগুলো কারণ আছে।
চুনার দুর্গ শের খানের অন্যতম একটি শক্তিস্তম্ভ ছিলো। তিনি তার এই দুর্গটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। ঠিক এ কারণেই হুমায়ুন যখন ১৫৩২ সালে চুনার অবরোধ করেছিলেন, তখন শের খান দুর্গটি ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তাছাড়া চুনার দুর্গে তখনও শের খানের রাজকোষ জমা ছিলো। চুনার দখল করতে পারলে এই রাজকোষ হুমায়ুনের হাতে এসে পড়তো।
চুনার দুর্গ দখল না করে সামনে অগ্রসর হলে আরেকটি সমস্যা হতে পারতো। হুমায়ুন এই দুর্গকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলে খুব সহজেই যে বাংলা আর চুনার- এই দুই দিক থেকে আক্রান্ত হতে পারতেন, সেই সম্ভাবনাকে একাবারেই উড়িয়ে দিতে পারেননি তিনি।
এছাড়া, প্রথমে চুনার অবরোধের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, হুমায়ুনের গুজরাটের ভয়াবহ তিক্ত অভিজ্ঞতা। গুজরাটে তিনি শক্তিশালী চাম্পানীর দুর্গ দখল না করে ক্যাম্বে পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। এই অভিযানে হুমায়ুন প্রথমে সহজেই বিজয় লাভ করলেও শেষপর্যন্ত তাকে লজ্জাজনকভাবে পিছু হটতে হয়েছিলো।
তাছাড়া, হুমায়ুন ভাবতে পারেননি, বাংলার শাসক গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ এত সহজেই শের খানের হাতে পরাজিত হবে। তার ধারণা ছিলো, মাহমুদ শাহ আরো বেশ কিছুদিন গৌড় ধরে রাখতে পারবেন। মাহমুদ শাহের সেই যোগ্যতা ছিলো, তিনি দীর্ঘদিন বাংলার মসনদে ছিলেন। তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারও নেহায়েত খালি ছিলো না। কাজেই হুমায়ুন ধারণা করেছিলেন, বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ দীর্ঘদিন শের খানের অবরোধ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন, আর সেই সুযোগে হুমায়ুন চুনার অধিকার করে ধীরে সুস্থে বাংলার দিকে অগ্রসর হবেন।
তবে, ঐতিহাসিকেরা হুমায়ুনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটিকে উল্লেখ করেছেন তা হলো, হুমায়ুন কখনোই শের খানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেননি বা করতে পারেননি। তিনি জানতেন শের খান উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু শের খানের কতটুকু সামর্থ্য আছে, সে সম্পর্কে হুমায়ুন কখনো স্পষ্ট ধারণাও করতে পারেননি।
এসব যুক্তি হিসাবে নিলে মনে হবে হুমায়ুনই ঠিক ছিলেন।
কিন্তু সমস্যা হলো, চুনার খুব দ্রুতই দখল হয়ে যাবে, এমনটা ভাবলেও দুর্গটি দখলে নিতে প্রায় ৬ মাস লেগে গেলো। হুমায়ুন চাইলেই বিশ্বস্ত কাউকে চুনার দখলের দায়িত্ব দিয়ে বাংলার দিকে এগিয়ে যেতে পারতেন। এক্ষেত্রে শের খান হয়তো পরবর্তীতে বাংলা দখলের সুযোগ পেতেন না।
৬
এদিকে সম্রাট হুমায়ুনের অগ্রযাত্রার কথা শুনে শের খানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। সম্রাট যে এভাবে হুট করে এগিয়ে আসতে পারেন, এই ব্যাপারটি তার হিসাবে ছিলো না। তিনি হুমায়ুনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে দূত পাঠালেন।
কিন্তু সম্রাট হুমায়ুন তার কোনো জবাব দিলেন না।
শের খান এবার নিজের বিপদ বুঝতে পারলেন। তিনি খাওয়াস খানের উপর গৌড় দখলের দায়িত্ব দিলেন। তার পুত্র কুতুব খান, বুলাকী খান আর গাজী সুরির উপর দায়িত্ব দিলেন চুনার দুর্গ রক্ষার। এরপর তিনি তার পরিবার নিয়ে বহরকুণ্ড দিকে পিছু হটলেন।
১৫৩৭ সালের নভেম্বর মাসে হুমায়ুন চুনারের নিকট সেনা ছাউনি ফেললেন।
এই সেনা ছাউনিতে একটি মজার ঘটনা ঘটলো। বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর হুমায়ুনের বোন মাসুমা বেগমের স্বামী জামান মির্জা গুজরাটের সিংহাসনে বসতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি গুজরাট থেকে পালিয়ে গেলেন। হুমায়ুন যখন চুনার দুর্গ অবরোধ করতে সেনা ছাউনি ফেললেন, তখন জামান মির্জা নতমস্তকে হুমায়ুনের তাবুতে প্রবেশ করলেন। বোন মাসুমা বেগমের অনুরোধে হুমায়ুন জামান মির্জাকে আগেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
হুমায়ুনের সাথে আসকারি মির্জা আর হিন্দাল মির্জা ছিলেন। তারা জামান মির্জাকে স্বাগত জানালেন। জামান মির্জা সম্মানজনক মুঘল খেলাত এবং ঘোড়া প্রদান করা হলো।
হুমায়ুন এই কাজগুলো করেছিলেন নিজের বোনের দিকে চেয়েই। কিন্তু একজন বিচক্ষণ শাসক হিসেবে এটি অবশ্যই ভুল ছিলো। শাসকের কঠিন দায়িত্ব হুমায়ুন আবেগ দিয়ে পরিচালনা করলেন। হুমায়ুনের আমিররাও বিষয়টি এভাবেই দেখলো।
৭
বহরকুণ্ড থেকে শের খান তার পরিবার নিয়ে রোহতাস দুর্গের দিকে যাত্রা করলেন। ঐতিহাসিক ফারিশতার বর্ণনানুযায়ী, রোহতাস দুর্গটি তখন রাজা হরিকৃষ্ণ রাইয়ের অধীনে ছিলো। শের খান প্রথমে রাজার অনুমতি নিয়েই দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলেও পরে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে দুর্গটির দখল বুঝে নেন।
এদিকে এর ভেতরেই শের খানের কাছে পরপর দুটি দুঃসংবাদ এসে পৌছায়। গৌড় দখলের দায়িত্বে নিয়োজিত খাওয়াস খান পানিতে ডুবে মারা গেছেন। আর প্রায় ৬ মাস দুর্গ রক্ষা করতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত চুনার দুর্গ মুঘল সাম্রাজ্যের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। এই ঘটনা ১৫৩৮ সালের মার্চ মাসের।
শের খানের পুরো পৃথিবী যেন হঠাৎই কেঁপে উঠলো। যেহেতু চুনার অধিকার সম্পন্ন হয়েছে, মুঘল সম্রাট এবার অবশ্যই গৌড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। এদিকে গৌড় দুর্গের এক ইঞ্চির দখলও শের খানের বাহিনী নিতে পারেনি।
শের খান বুঝে গেলেন, এই করুণ অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে, যেকোনো মূল্যেই হোক দ্রুত বাংলার রাজধানী গৌড় দখল করে নেয়া। শের খান খাওয়াস খানের ভাই মুসাহিব খানকে যেকোনো মূল্যে দৌড় দখলের নির্দেশ দিয়ে বাংলায় প্রেরণ করলেন।
মুসাহিব খান শের খানের নির্দেশ নিয়ে গৌড়ে গিয়ে পৌঁছালেন। তিনি গৌড়ে পা ফেলেই জালাল খানকে বললেন,
‘সম্রাট (হুমায়ুন) আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। সুলতান (শের খান) আমাদের বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব গৌড় দুর্গ দখল করে নিতে।’
জালাল খান সব শুনে বললেন, প্রস্তুত হতে তো কমপক্ষে আরো একটা দিন লাগবে। একদিন অপেক্ষা করুন।
মুসাহিব খান জবাব দিলেন, ‘আমার উপর আদেশ রয়েছে, কিছুক্ষণের ভেতরেই আক্রমণ শুরু করতে হবে।’
জালাল খানের মাথায় চিন্তার ভাজ পড়ে গেলো।
৮
এদিকে জালাল খানকে তার বাহিনীর কাছে প্রস্তুতি নিতে পাঠিয়ে মুসাহিব খান দ্রুত তার সদ্যমৃত ভাইয়ের শিবিরে গেলেন। ভাইয়ের সহযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করলেন তিনি। মুসাহিব খানের নির্দেশে একদল বার্তাবাহক রণবাদ্য বাজিয়ে সেনা ছাউনিতে ঘোষণা দিতে দিতে এগুচ্ছিলো,
‘নষ্ট করার মতো আর সময় হাতে নেই। দ্রুত তৈরি হয়ে নিন।’
মুহুর্তেই শের খানের বাহিনীর এই অংশটি জ্বলে উঠলো। তবে অন্যদিকে মুসাহিব খানের এই ব্যস্ততা জালাল খান, শুজায়ত খানসহ অন্যান্য আমিরদের বিরক্তির কারণ হলো। তারা নিজেদের বঞ্চিত ভাবতে লাগলেন। তবে শের খানের নির্দেশ অমান্য করার সাহস হলো না কারো। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাহিনীতে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ পাঠাতে লাগলেন।
জালাল খান তার বাহিনী নিয়ে আসার পূর্বেই মুসাহিব খান গৌড় দুর্গে আক্রমণ চালিয়ে বসলেন। এদিকে বাংলার রাজধানী গৌড়ের দুর্গের ভেতরের অবস্থা শোচনীয়। দীর্ঘ অবরোধে খাদ্যশস্যের ঘাটতি তো হয়েছেই, সেই সাথে বাংলার সেনাদের উৎসাহ কিংবা সাহসও আশংকাজনকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে।
মুসাহিব খান চূড়ান্ত আক্রমণ পরিচালনা করলে সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ তার সাথে থাকা বাংলার সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধের মাঠে নেমে এলেন। মুসাহিব খান তার যোগ্যতা, ধৈর্য্য, কর্মতৎপরতা আর সাহসীকতার চূড়ান্তটা দেখালেন। তার প্রবল আক্রমণে বাংলার সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়ে গেলো। সুলতান মাহমুদ ভাটার দিকে পালিয়ে গেলেন।
৯
এই যুদ্ধের জয়লাভের পর মুসাহিব খান আর জালাল খান গৌড়ের বিপুল পরিমাণ সম্পদ হস্তগত করে নেন। অন্যদিকে বাংলার সৈন্যদের পাইকারি হারে হত্যা করা হয়। সুলতান মাহমুদের কয়েকজন পুত্র শের খানের বাহিনীর হাতে আটক হন।
এদিকে চুনার দুর্গে দখল বুঝে নেয়ার পর হুমায়ুন বানারস দখল করে নেন। বানারস থেকে তিনি শোন নদীর তীরবর্তী ‘মনের’ নামক স্থানে পৌঁছান। তার উদ্দেশ্য ছিলো বহরকুণ্ডার দিকে আগ্রসর হয়ে শের খানকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা। শের খান হুমায়ুনের উদ্দেশ্য বুঝে গেলেন। তিনি অসহায় বোধ করতে লাগলেন।
স্বাভাবিকভাবে হুমায়ুন যা করতে চাইছিলেন, তা-ই করা উচিত ছিলো। কিন্তু বিচিত্র চরিত্রের অধিকারী এই মুঘল সম্রাট কী মনে করে কে জানে, শের খানের কাছে দূত প্রেরণ করলেন। মুঘল রাজদূত কবুল হুসেন তুর্কমান শের খানের দরবারে গেলেন। শের খানের কাছে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করা হলে প্রচণ্ড বুদ্ধিমান শের খান সাময়িকভাবে হুমায়ুনের সব প্রস্তাবই মেনে নিলেন। তিনি দূতের মাধ্যমে সম্রাটকে জানালেন,
‘আমি গৌড় অধিকার করে নিয়েছি। আমার পেছনে বিশাল এক আফগান সেনাবাহিনী আছে। এখন সম্রাট যদি বাংলা আক্রমণ থেকে বিরত থাকেন, তাহলে আমিও সম্রাটের নিকট বিহার অর্পণ করে দিতে রাজি আছি। তিনি যাকেই বিহারের ক্ষমতায় বসান না কেন, আমি তার হাতেই বিহার ছেড়ে দিবো। সুলতান সিকান্দারের শাসনামলের বাংলার সীমানা মেনে চলবো আমি। বাংলা থেকে নিয়মিত বার্ষিক ১০ লাখ মুদ্রাও কর দিবো আমি। তবে শর্ত শুধু একটিই। সম্রাটকে বাংলা অভিযান পরিত্যাগ করে আগ্রা ফিরে যেতে হবে।’
সম্রাট দূতের মাধ্যমে পাঠানো শের খানের বক্তব্য খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। শের খানের প্রস্তাব তার কাছে ভালোই লাগলো। তিনি শের খানের প্রস্তাব মেনে নিলেন।
সম্রাট হুমায়ুন শের খানের জন্য একটি উৎকৃষ্ট মানের ঘোড়া উপহার পাঠালেন। সঙ্গে দিলেন বিশেষ রাজকীয় মুঘল খেলাত।
শের খান সম্রাটের পাঠানো উপহার পেয়ে খুবই খুশি হলেন। তিনি বললেন,
‘সম্রাটের কাছে স্বীকার করে নেয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতিই আমি পূরণ করবো। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই, সম্রাট ও আমার মধ্যে যেন কোনদিন বিভেদ দেখা না দেয়। আমি সম্রাটের অধীন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের একজন সেবক।’
সময়ের মহান এই দুই নৃপতি সমঝোতামূলক একটি চুক্তিতে আসলেন বটে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে কোনোকিছুই আগে থেকে নিশ্চিত ভাবে বলে দেওয়া সম্ভব হয় না। রাজনীতির খেলা সবসময়ই পরিবর্তনশীল!
তথ্যসূত্র
১। মোগল সম্রাট হুমায়ুন, মূল (হিন্দি): ড হরিশংকর শ্রীবাস্তব, অনুবাদ: মুহম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০০৫
২। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস (মধ্যযুগ: মোগল পর্ব), এ কে এম শাহনাওয়াজ, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা, ৩য় সংস্করণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০২
৩। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়, সাহাদত হোসেন খান, আফসার ব্রাদার্স, ২য় মুদ্রণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৩
৪। তারিখ-ই-শের শাহ; মূল: আব্বাস সারওয়ানী, অনুবাদ গ্রন্থের নাম: শের শাহ, অনুবাদক: সাদিয়া আফরোজ, সমতট প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০১৫
৫। রিয়াজ-উস-সালাতীন, মূল লেখক: গোলাম হোসায়ন সলীম, অনুবাদ গ্রন্থের নাম: বাংলার ইতিহাস, অনুবাদক: আকবরউদ্দীন, অবসর প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারী ২০০৮
৬। হুমায়ুননামা, মূল: গুলবদন বেগম, অনুবাদ: এ কে এম শাহনাওয়াজ, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২০১৬
এই সিরিজের আগের পর্বসমূহ
১। প্রাক-মুঘল যুগে হিন্দুস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা || ২। তরাইনের যুদ্ধ: হিন্দুস্তানের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া দুই যুদ্ধ || ৩। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: দাস শাসনামল || ৪। রাজিয়া সুলতানা: ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক || ৫। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: খিলজী শাসনামল || ৬। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তুঘলক শাসনামল || ৭। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তৈমুরের হিন্দুস্তান আক্রমণ ও সৈয়দ রাজবংশের শাসন || ৮। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: লোদী সাম্রাজ্য || ৯। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর গঠন এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস || ১০। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কিছু অস্ত্রশস্ত্র || ১১। জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবুর: ‘একজন’ বাঘের উত্থান || ১২। বাদশাহ বাবরের কাবুলের দিনগুলো || ১৩। বাদশাহ বাবর: হিন্দুস্তানের পথে || ১৪। বাদশাহ বাবরের হিন্দুস্তান অভিযান: চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি || ১৫। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান: হিন্দুস্তানে বাবরের চূড়ান্ত লড়াই || ১৬। খানুয়ার যুদ্ধ: মুঘল বনাম রাজপুত সংঘাত || ১৭। ঘাঘরার যুদ্ধ: মুঘল বনাম আফগান লড়াই || ১৮। কেমন ছিল সম্রাট বাবরের হিন্দুস্তানের দিনগুলো? || ১৯। মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যু: মুঘল সাম্রাজ্য এবং হিন্দুস্তানের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের অকাল পতন || ২০। সিংহাসনের ষড়যন্ত্র পেরিয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের অভিষেক || ২১। মুঘল সাম্রাজ্যের নতুন দিগন্ত: সম্রাট হুমায়ুনের ঘটনাবহুল শাসনামল || ২২। দিল্লি সালতানাত থেকে মুজাফফরি সালতানাত: প্রাক-মুঘল শাসনামলে গুজরাটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস || ২৩। মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযানের প্রেক্ষাপট || ২৪। সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযান: সুলতান বাহাদুর শাহের পলায়ন || ২৫। সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযান ও গুজরাটের পতন || ২৬। গুজরাট থেকে মুঘলদের পলায়ন: মুঘল সাম্রাজ্যের চরম লজ্জাজনক একটি পরিণতি || ২৭। শের খান: হিন্দুস্তানের এক নতুন বাঘের উত্থানের গল্প || ২৮। শের খানের বাংলা অভিযান || ২৯। গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ হত্যাকাণ্ড: সাম্রাজ্যবাদী পর্তুগীজদের বিশ্বাসঘাতকতার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ
ফিচার ইমেজ: Wikimedia Commons