Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডেরিনকুয়ু পাতাল শহর: মাটির নিচে প্রাচীন সৌন্দর্য

বর্তমান তুরস্কের নেভশেহির প্রদেশের কাপাডোশিয়া অঞ্চল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু এ অঞ্চলে ডাইনোসর যুগের পর ব্যাপকহারে সংগঠিত হয় অগ্নুৎপাতের ঘটনা। তেমনই এক ভয়াবহ অগ্নুৎপাতে ফলে লাভার গরম আবরণের নিচে চাপা পড়ে বিস্তীর্ণ এই এলাকা। দিনের পর দিন রোদ-বৃষ্টি ও বাতাসের আর্দ্রতার প্রভাবে লাভার আবরণ পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় নরম শিলামাটিতে। একসময় এসব মাটি ভেদ করে সৃষ্টি হয় সবুজ-সতেজ প্রকৃতি। গড়ে ওঠে বিভিন্ন মানববসতি।

ডাইনোসর যুগের পর লাভার নিচে চাপা পড়ে বিস্তীর্ণ এই এলাকা; Image Source: Getty Images

নির্মাণ ও বসবাস ইতিহাস

ঐতিহাসিকদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০-১৬০০ শতাব্দীতে কাপাডোশিয়ায় বসবাস করতো হিট্টাইট সম্প্রদায়ের মানুষজন। বৈরী প্রকৃতি, আগ্রাসী জাতিগোষ্ঠী ও দুর্ধর্ষ ডাকাতদের সঙ্গে অভিযোজন করেই চলছিল তাদের জীবন। একদিন তারা বুঝতে পারলেন, স্বজাতি ও সম্পদের সুরক্ষায় অদূরে নরম শিলা মাটি খুঁড়ে নির্মাণ করা সম্ভব এক সুরক্ষিত পাতাল শহর। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। একে দুইয়ে সামর্থ্যবান সকলেই হাত লাগালেন নির্মাণযজ্ঞে।

কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে ধীরে ধীরে মাটির প্রায় ২৫০ ফুট গভীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে নগরীর পরিসীমা। অবশেষে গড়ে ওঠে কারুকার্যখচিত সুরক্ষিত এক গোপন শহর ডেরিনকুয়ু। শান্তিপ্রিয় হিট্টাইট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার মানুষ একত্রে বসবাস করতো এ শহরে। আর তাই সবার নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতে মাটির উপরিভাগে তৈরি করা হয় ৬০টি গোপন দরজা। শহরের অলিতে-গলিতে আলো-বাতাস ও অক্সিজেনের বাধাহীন চলাচল নিশ্চিতে আরও নির্মিত হয় প্রায় ১,৫০০ চিমনি।

একসময় মাটি কেটে বানানো হয় অগণিত আঁকাবাকা সুড়ঙ্গপথও। এগুলো তৈরির মূল কারণ অন্য জাতির কেউ এ শহরে এলে যেন মুহূর্তেই দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েন, দ্বিধায় পড়ে যান শহরের অভ্যন্তরে প্রবেশের মূল সুরঙ্গ নিয়ে। এভাবেই কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে তৈরি হয় জটিল ও দুরুহ গঠনবিশিষ্ট এককালের রহস্যময় ডেরিনকুয়ু পাতাল নগরী।

জটিল ও দুরুহ গঠন বিশিষ্ট এককালের রহস্যময় ডেরিনকুয়ু পাতাল নগরী; Image Source: Wikimedia Commons

ফ্রিজিয়ান-অটোমান যুগ

নির্মাণের পর বহুবছর অবধি এখানে বসবাস করেছে হিট্টাইট সম্প্রদায়ের মানুষজন। তবে, ইতিহাসের বাঁক ঘুরে সুরক্ষিত ডেরিনকুয়ু শহর একসময় ফ্রিজিয়ানদের হাত হয়ে কুক্ষিগত হয় বাইজেনটাইনদের হাতে। তারা একে ব্যবহার করা শুরু করে যুদ্ধে আত্মগোপনের ঢাল হিসেবে। ৭৮০-১১৮০ সালে যখন আরব-বাইজেনটাইন যুদ্ধের দামামা বাজছিল, তখন আরবদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অতর্কিত হামলা থেকে স্বর্ণমুদ্রা, গবাদিপশু ও প্রাণের সুরক্ষায় বাইজেনটাইনরা হামলে পড়তো এসব গুহায়। আরবরা আক্রমণ করলেই সৈন্য-সামন্ত ব্যতীত অন্যরা নিজেদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে লুকিয়ে পড়তো এখানে।

অতঃপর একদিন বাইজেনটাইনরাও পরাজিত হয় অটোমানদের কাছে। ফলশ্রুতিতে ডেরিনকুয়ু পাতাল শহর হাত বদল হয় পুনরায়। বিংশ শতাব্দীর পূর্বে তারা এ পাতাল শহরকে বন্দীদের জন্য ব্যবহার করা শুরু করে। ইতিহাসবিদদের ধারণা, তাদের আগে গ্রিকরাও মঙ্গোলিয়ানদের হাত থেকে বাঁচতে বসতি গড়ে এখানে।

তারপর কেটে গেছে আরও শত বছর। সূত্রপাত ঘটেছে অগণিত বিবর্ণ ঘটনার। শেষ হয়েছে অটোমান অধ্যায়ের। ফলে, গ্রীস ও তুরস্কের যুদ্ধের পর ১৯২৩ সালে উভয় ভূখণ্ডের মধ্যে আদান-প্রদান হয় নিজেদের জনগণ। সেসময় সেখানে বসবাসরত খ্রিস্টান অধিবাসীরা ছেড়ে যায় রহস্যময় এই পাতাল শহর। অবশেষে চূড়ান্তভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে প্রায় ৩ হাজার বছর পূর্বে গড়ে ওঠা এই পাতাল নগরী।

Image Source: Getty Images

পুনরাবিষ্কার

গ্রীকরা পাতাল শহর ছেড়ে যাওয়ার পর কেটে গেছে আরও বহুবছর। একসময় মানুষজনও ভুলে গেছে প্রাচীন এ নগরীর আদিকথা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক রাষ্ট্র তুরস্ক। ১৯৬৩ সালে ধর্মভীরু তুর্কিদের বেশ কিছু বসতিও গড়ে উঠতে দেখা যায় এ অঞ্চলে। এরকমই এক বসতবাড়িতে একদিন একজন মধ্যবয়স্ক লোক নিজ গৃহের সংস্কার ও মেরামত করছিলেন। ঘরের দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলছিলেন হাতুড়ির আঘাতে। তখনই আচমকা ধসে পড়ে কক্ষের নড়বড়ে মেঝে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটির নিচের জরাজীর্ণ এক গুহায়।

গুহার ক্ষয়ে যাওয়া মাটির দরজার দিকে এগিয়ে যান তিনি। দেখতে পান এরকম অসংখ্য গুহার সমাহার। মনের অজান্তেই সেদিন তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন ৩ হাজার বছর পুরনো ডেরিনকুয়ু শহর। রহস্যময় এ ঘটনার খবর বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আবিষ্কারের নেশায় কিছুদিন পর প্রত্নতাত্ত্বিকরাও ছুটে আসেন এখানে। সরঞ্জাম গুছিয়ে শুরু করেন অনুসন্ধান। একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে নগরীর রহস্যময় গোলকধাঁধাপূর্ণ গঠনশেলীর বৃত্তান্ত।প্রায় ১৮ তলাবিশিষ্ট এ শহরের বিভিন্ন তলায় খুঁজে পাওয়া যায় আস্তাবল, তেলের ঘাঁনি, গুদামঘর, ভোজনকক্ষ, ভূগর্ভস্থ রত্নভান্ডার, প্রার্থনাকক্ষসহ আরও অনেক কিছুই। শহরের দ্বিতীয় তলায় দেখা মিলেছে কিছু অদ্ভুতদর্শন সমাধিরও।

এ থেকে অনুমান করা হয়, দ্বিতীয় তলাটি প্রার্থনালয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অপরপাশে মৃতদের বিশেষ নিয়মে সমাহিত করার কাজে ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়াও শহরের অভ্যন্তরে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য খুঁজে পাওয়া গেছে নলাকৃতির বিশেষ সুরঙ্গের। এসব সুরঙ্গ দিয়ে পানি এসে জমা হতো কুপের তলদেশে। ইতিহাসবিদদের ধারণা, স্কুল, গির্জা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারও ছিল এখানে। সবমিলিয়ে এক পরিপূর্ণ সমৃদ্ধ শহর ছিল এই ডেরিনকুয়ু পাতাল নগরী।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নগরীর রহস্যময় গোলকধাঁধাপূর্ণ বৃত্তান্ত; Image Source: Wikimedia Commons

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিচিত্র সংস্কৃতির সাক্ষী এ নগরীর দ্বার ১৯৬৯ সালে পর্যটকদের জন্য উন্মোচিত করা হয়। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে নগরীর বিপজ্জনক কিছু স্থান এখনো রাখা হয়েছে সংরক্ষিত অবস্থায়। নিরেট রহস্যের চাদরে আবৃত তুরস্কের এই প্রাচীন শহর সর্বদাই পৃথিবীর সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে তার পানে।

This is a Bengali article about the Derinkuyu Underground City, Turkey.
Feature Image: Wikimedia Commons
References:
1. Turkey's underground city of 20,000 people - BBC Travel
2. Derinkuyu: History of Turkey’s Underground City - Historic Mysteries.

Related Articles