Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বুক অভ দ্য ডেড: প্রাচীন মিশরীয়দের মৃত্যু পরবর্তী পথ প্রদর্শক

মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিশরীয়রা বেশ সচেতন ছিল। মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনে কীভাবে চিরস্থায়ী সুখ লাভ করা যায়, তা নিয়ে তাদের চিন্তার অন্ত ছিল না। এজন্য তাদের বিশ্বাসের সুতোয় বাঁধা ছিল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মীয় পাঠসমূহ। এসব ধর্মীয় পাঠের মধ্যে ‘বুক অব দ্য ডেড’ বা ‘মৃতের গ্রন্থ’ অন্যতম।

নামের সাথে বুক বা বই সেঁটে দেওয়া থাকলেও এটি আর দশটা বইয়ের মতো নয়। এটি মূলত প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের সমাধিসৌধে প্রাপ্ত লিপির সমাবেশ। মৃতদের গ্রন্থ লেখা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দের কাছাকাছি সময় থেকে (নতুন সাম্রাজ্যের উত্থান কাল) খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ অব্দ পর্যন্ত। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ অব্দের দিকে পঞ্চম রাজবংশের ফারাও ইউনাসের পিরামিডে সর্বপ্রথম পিরামিড পাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। লিপিসমূহের মূল মিশরীয় নাম হচ্ছে ‘rw nw prt m hrw’, যে অনুবাদের প্রায় কাছাকাছি অর্থ হচ্ছে ‘Book of coming forth by day’ (আগত দিনের গ্রন্থ) এবং ‘Book of emerging forth into the light’ (জ্যোতির পানে উদীয়মান যাত্রার গ্রন্থ)। এই লিপিগুলো দিয়ে সরাসরি গ্রন্থ বোঝাচ্ছে, সেটাও নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না। ‘গ্রন্থ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে লিপিগুলোর সবচেয়ে কাছাকাছি অনুবাদ হিসেবে।

গডস অভ ইজিপ্ট মুভিতে পরকালের যাত্রা; Image Source: Thunder Road Pictures

মৃতের গ্রন্থের সূচনা মূলত দ্বিতীয় মধ্যবর্তী সময়ে। তবে এর বহুল ব্যবহার শুরু হয় নতুন সাম্রাজ্যের আমলে। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থানের পর মৃত ব্যক্তিকে ঠিক কী করতে হবে, তা নিয়ে মৃত ব্যক্তি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগবে। তাদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্যই এই ‘মৃতের গ্রন্থ’ নামক ব্যবস্থার আয়োজন। এটি কখনো ঠকঠক আওয়াজে খোদাই করা হতো সমাধিকক্ষের দেয়ালে, কখনো খসখস আওয়াজে প্যাপিরাসে লিখে ছোট বয়ামে ঢুকিয়ে রেখে দেওয়া হতো মৃত ব্যক্তির পাশে। এই লিপিসমূহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরোহিত নিজ হাতে লিখে গিয়েছেন, যাতে রাজকীয় ওই ব্যক্তিকে মৃত্যু পরবর্তী জীবনযাত্রাতে কোনো বেগ পোহাতে না হয়। পুরাতন বা মধ্য সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ কফিন পাঠসমূহের পাঠ প্যাপিরাসে নয়, চিত্রিত হয়েছিল সমাধিকক্ষের দেয়ালে।

আমুন, ন্যানি, কা- এর গায়কের জন্য বুক অভ দ্য ডেডের একটি অংশ; Image Source : The Metropolitan Museum of Art/Rogers Fund

শুরুর দিকে শুধুমাত্র রাজ পরিবারের ব্যক্তিবর্গের মৃতদেহের সাথেই মৃতের গ্রন্থ দিয়ে দেওয়ার রীতি চালু ছিল। সে প্রথা বিলুপ্ত করে সপ্তদশ রাজবংশের সময়ে রাজকীয় সভাসদ ও কর্মচারীদের মৃতদেহের সাথেও বুক অভ দ্য ডেড দেওয়া হতো। থেবসে দ্বিতীয় মধ্যবর্তীকালীন রাজবংশের সময়ে (খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ অব্দের কাছাকাছি) মৃতের গ্রন্থের রেওয়াজ শুরু হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যে ফারাওয়ের সমাধিতে সর্বপ্রথম মৃতের গ্রন্থ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি হলেন ত্রয়োদশ রাজবংশের রানি মেন্টুহোতেপ। অবশ্য সে কফিনে ‘বুক অভ দ্য ডেড’ এর পাশাপাশি পুরনো পিরামিড কফিনের পাঠসমূহও ছিল।

তৃতীয় মধ্যবর্তী যুগে (খ্রিঃ পূঃ ১০৭০ – খ্রিঃ পূঃ ৯৪৬ অব্দ) থেবসে প্রাপ্ত ফারাও আনেরুর
বুক অভ দ্য ডেডের একটি অংশ; Image Source : Egyptian Museum, Turin

‘বুক অভ দ্য ডেড’ এর বিস্তর বিকাশ ঘটে মিশরের নতুন সাম্রাজ্যের উত্থানকে সাথে নিয়ে। তখন থেকে মৃতের গ্রন্থ দেয়ালে লেখার বদলে প্যাপিরাসের নথিতে লিখে সমাধিতে মৃতদেহের একপাশে রেখে দেওয়া হতো। তৃতীয় মধ্যবর্তীকালীন মৃতদের গ্রন্থ লেখা হতো হায়রাটিক লিপিতে। হায়ারোগ্লিফ জটিল প্রকৃতির ছিল বলে প্রাচীন মিশরীয়দের মাঝে পরে আরও দুটি লিখন পদ্ধতির প্রচলন ঘটে। একটি হলো, ‘হায়রাটিক’ এবং অপর‍টি ‘ডেমোটিক’। হায়ারোগ্লিফ থেকে বিবর্তিত হয়েই হায়রাটিক লিপির উৎপত্তি। বলা যায়, এই লিপিটি হায়ারোগ্লিফিক লিপির সরল সংকলন। হায়রাটিক লিপির উদ্ভব হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দের দিকে। মূলত, প্যাপিরাসে লেখার সুবিধা থেকেই উদ্ভব হয় হায়রাটিক লিপির। 

হায়ারটিক লিপিতে লিখিত বুক অভ দ্য ডেডের একটি অংশ; Image Source : The British Museum

ফারাও হাতশেপসুত এবং তৃতীয় তুথমোসের সময়কালে মৃতদের গ্রন্থের একটি মন্ত্র দারুণ জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিয়েছিল। সেটি হলো বুক অব দ্য ডেডের ১২৫ নম্বর মন্ত্র ‘Weighing of the Heart’ বা ‘হৃৎপিণ্ডের ওজন’। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত এটি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ঘটা এক অনুষ্ঠান। যেখানে দেবতারা মৃত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড পরখ করে দেখবেন, তা যথেষ্ট হালকা কি-না। এর উপর ভিত্তি করেই তার মৃত্যু পরবর্তী জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ হবে। পঞ্চবিংশ এবং ষষ্ঠবিংশ রাজবংশের আমলে ‘বুক অভ দ্য ডেড’ এ হালনাগাদ ও সংশোধনের ছোঁয়া লেগেছিল। সংশোধিত এই সংস্করণকে ‘Saite recention’ বলে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীকালের রাজবংশগুলোতে এই সংশোধিত গ্রন্থের সাথে ‘Books of breathing’ (শ্বাসক্রিয়ার গ্রন্থ) এবং ‘Books of traversing eternity’ (পারলৌকিক গ্রন্থ) নামে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের উদ্ভব ঘটেছিল।

প্যাপিরাসে বর্ণিত বুক অব দ্য ডেডের ১২৫ নম্বর মন্ত্র ‘Weighing of the Heart’
এর অনুষ্ঠান চিত্র; Image Source: Sesostris Manfred Werner

মৃতের গ্রন্থে খণ্ড খণ্ড আকারে প্রায় ১৯২টি মন্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থানের পর কীভাবে কী করতে হবে- এই মন্ত্রসমূহে সে নির্দেশনাই বলে দেওয়া ছিল। প্রাচীন মিশরীয় উপকথা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির সামনে প্রথমেই যে দেবতা হাজির হন, তিনি হলেন মৃতের জগতের অধিকর্তা দেবতা আনুবিস। তার মাথা শিয়ালের এবং দেহ মানুষের। মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তি বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। আনুবিস তাকে সে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন। উক্ত গ্রন্থের ১২৫ নং মন্ত্র অনুযায়ী, সেই মৃত ব্যক্তিকে অনন্তকালের পথ প্রদর্শনের কাজটা করে থাকেন দেবতা আনুবিস। যাত্রাপথে মৃত ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন ৪২ জন দেবতার মুখোমুখি হতে হয়। এই সময় দেবতারা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিতে যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। তখন সব উত্তর দিতে হয় বুক অভ দ্য ডেডের সাহায্যে। একজন দেবতার কাছে উত্তর দিয়ে যেতে হয় আরেকজনের কাছে। এভাবে মোট ৪২ জনের কাছে ৪২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। উত্তরগুলো দিতে হয় ‘না-বোধক’ হিসেবে। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নেগেটিভ কনফেশন’ বা ‘ঋণাত্মক স্বীকারোক্তি’। অ্যানির প্যাপিরাসে ৪২টি নেগেটিভ কনফেশনের তালিকা দেওয়া আছে। এর মধ্যে কিছু হলো-

  • আমি চুরি করিনি;
  • আমি কোনো অপরাধ করিনি;
  • আমি মানুষকে হত্যা করিনি;
  • আমি মিথ্যা বলিনি;
  • আমি প্রতারক নই;
  • আমি ব্যভিচার করিনি;
  • আমি কাউকে কষ্ট দিইনি;
  • আমি কারণ ছাড়া শুধু শুধু রাগ করিনি;
  • আমি দেবতাদের নিন্দা করিনি;
  • আমি হিংসার মানুষ নই;
  • ইত্যাদি….

নেবসিসের প্যাপিরাসে ৪২ জন বিচারকের নামও উল্লেখ করা আছে।

আনুবিস হুনেফারকে বিচারসভায় নিয়ে আসছেন; Image Source : The British Museum

মজার ব্যাপার হলো, প্রফেট মোজেসের টেন কমান্ডেন্টস বা দশ আদেশের সাথে মৃতের গ্রন্থের কিছু প্রশ্নের মিল পাওয়া যায়। পথিমধ্যে বিভিন্ন বিপদসংকুল অবস্থা পার করে মৃত ব্যক্তি উপস্থিত হন দেবতা ওসাইরিসের কাছে। এই দেবতা দাঁড়িপাল্লার নিক্তিতে মৃত ব্যক্তির শেষ বিচারের হিসাব-নিকাশ করেন। এক পাল্লায় দেওয়া হয় মৃত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড, অপর পাল্লায় দেবী মা’তের পালক। হৃৎপিণ্ডের ওজন পালকের সমান বা কম হলে বেঁচে যাবে ওই ব্যক্তি। তার জন্য বরাদ্দ থাকবে পরকালের অনন্ত সুখ-শান্তি। তবে, হৃৎপিণ্ডের ওজন পালকের চেয়ে বেশি হয়ে গেলেই শেষ। ওই ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করবে নরকের ভয়ঙ্কর সকল শাস্তি।

দেবী মা’তের পালক সমেত দাঁড়িপাল্লা; Image Source: Thunder Road Pictures

Saite recension-এ মৃতের গ্রন্থের অধ্যায়গুলোকে চারটি খণ্ডে ভাগ করা হয়েছিল।

প্রথম খণ্ড

অধ্যায় ১-১৬ পর্যন্ত প্রথম খণ্ড গঠিত। এখানে মৃত ব্যক্তিকে সমাহিত করার নিয়ম বলে দেওয়া আছে। সেই সাথে এও উল্লেখ করা আছে, মৃত ব্যক্তি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে যাবার জন্য বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান, দেবতা আনুবিসের সহায়তায়।

দ্বিতীয় খণ্ড

১৭-৬৩ অধ্যায় নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় খণ্ডে দেবতা ও স্থানের পৌরাণিক উৎপত্তির ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। এতে বর্ণনা করা আছে, মৃতকে পুনরায় জীবিত করা হয়, যাতে তিনি জেগে উঠেন এবং প্রাতঃকালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পুনর্জন্ম হয়।

তৃতীয় খণ্ড

৬৪-১২৯ অধ্যায় সম্বলিত। মৃত ব্যক্তি সৌরযানে করে অন্তরিক্ষে পরিভ্রমণ করেন। সন্ধ্যায় পাতালপুরীতে দেবতা ওসাইরাসের সামনে উপস্থিত হন।

চতুর্থ খণ্ড

অধ্যায় ১৩০-১৮৯ পর্যন্ত। এখানে বলা হয়েছে, বিচারকার্য সম্পন্ন হবার পর মৃত ব্যক্তি আশীর্বাদ-পুষ্ট হয়ে দেবতা হিসেবে মহাবিশ্বে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। প্রতিরক্ষামূলক কবচ, খাদ্য সরবরাহ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কথাও বলা আছে।

সবগুলো মন্ত্র অবশ্য একজনের জন্য দিয়ে দেওয়া হতো না। দেয়া হতো ব্যক্তি ভেদে, প্রয়োজন অনুসারে।

টলেমী যুগে (খ্রিঃ পূঃ ৩৩২ – খ্রিঃ পূঃ ৩০ অব্দ) থেবসে প্রাপ্ত ফারাও তায়েশনাখত এর বুক অভ দ্য ডেডের একটি অংশ; Image Source: Egyptian Museum, Turin

বুক অব দ্য ডেড খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল মধ্যযুগে। কিন্তু তখনো প্রাচীন মিশরীয় ভাষার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই, প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, মৃতদের গ্রন্থ প্রবর্তিত ধর্মসমূহের ধর্মগ্রন্থের মতোই পবিত্র। কার্ল রিচার্ড লেপ্সিয়াস টলেমি যুগের একটি লিপি অনুবাদের পর এর নাম দেন বুক অভ দ্য ডেড। মন্ত্রগুলোর বিন্যাস ঘটেছিল মূলত তার হাত ধরেই। তিনি সর্বমোট ১৬৫টি মন্ত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। পিরামিড-কফিন পাঠসমূহে নরখাদক স্তবগানের উল্লেখ থাকলেও, মৃতদের গ্রন্থে এমন কিছুর উল্লেখ ছিল না। মনিব শ্রেণির পাশাপাশি তাদের স্ত্রীদের সমাধিতেও মৃতের গ্রন্থের পাঠ দিয়ে দেওয়া হতো। বুক অভ দ্য ডেডের ইতিহাসের শুরুতে, একজন নারীর জন্য ১টি, এবং একজন পুরুষের জন্য মোটামুটি ১০টি কপি তৈরি করা হতো।

কার্ল রিচার্ড লেপ্সিয়াস; Image Source : British Museum Press

একনজরে মৃতের গ্রন্থের কালক্রম

  • খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ – আবিদোসে শায়িত ফারাওদের সমাধিতে হায়ারোগ্লিফ সংরক্ষণ।
  • খ্রিষ্টপূর্ব ২৩৪৫ অব্দ – মিশরের প্রথম রাজকীয় পিরামিড (ফারাও ইউনাস)। প্রথম পিরামিড পাঠের ব্যবহার শুরু হয়েছিল এই সময়। সমাধিস্তম্ভে খোদিত হয়েছিল সাহিত্য, যাকে বুক অব দ্য ডেড’র প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় বলা যায়।
  • খ্রিষ্টপূর্ব ২১০০ অব্দ – প্রথম কফিন পাঠের অস্তিত্ব মেলে এই সময়ে, যা উন্নীত হয়েছিল পিরামিড পাঠ থেকে। বুক অভ দ্য ডেড’র অনেক মন্ত্র সরাসরি এই কফিন পাঠের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।
  • খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ – নতুন সাম্রাজ্যের পথপ্রদর্শক রানি মেনথুহোতেপের কফিনে খোদাই করা বুক অভ দ্য ডেড’র একদম শুরুর দিকে মন্ত্র।
  • খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দ – সমাধিকক্ষের দেয়ালে মন্ত্র লেখার বদলে প্যাপিরাসে মন্ত্র লেখার চল শুরু।
  • খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দ – এই সময়ে মন্ত্রগুলো ধাপে ধাপে সাজিয়ে দেওয়ার রীতি শুরু হয়।
  • ৪২ – ৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দ – স্থানীয় ধর্ম সরিয়ে মিশরে খ্রিষ্টান ধর্মের আধিপত্য শুরু হয়। ফলে হারিয়ে যেতে থাকে প্রাচীন মিশরীয় ফারাওদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি।
অ্যানির প্যাপিরাসের একটি মন্ত্র; Image Source: Wikimedia Commons

বইয়ে এমনও জন্তুর বর্ণনা দেওয়া আছে যারা পাতালপুরী প্রহরায় নিযুক্ত। নামগুলোও বাহারি ধাঁচের। যেমন – রক্তগঙ্গায় নৃত্যকারী লোক, সাপের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা লোক, ইত্যাদি। ‘বুক অভ দ্য ডেড’ লিখা হতো লাল ও কালো কালি ব্যবহার করে। লাল কালি ব্যবহার করা হতো মন্ত্রের শিরোনাম, শুরুর অংশ, শেষের অংশ, ভয়ঙ্কর প্রাণীর নাম লিখার জন্য, আর মন্ত্রগুলো লিখা হতো কালো কালিতে। বুক অভ দ্য ডেড বা মৃতের গ্রন্থ মূলত সে ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটায়, সে দুর্বোধ্য ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে কতটা উদ্বিগ্ন ছিল।

Related Articles