Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দুনিয়া কাঁপানো ৫ দুধর্ষ নারী মাফিয়া

নারী- মমতাময়ী, আবেগপ্রবণ। একটি সমাজ সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার পিছনে নারীর ভূমিকার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এজন্যই তো নেপোলিয়নের মুখে উচ্চারিত হয়- “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের সভ্য শিক্ষিত জাতি দেব”। কিন্তু সব নারীই যে আদর্শের প্রতিরূপ হবেন তা কিন্তু নয়। এই পৃথিবীতে এমন অনেক নারী রয়েছে যাদের নৃশংসতার কথা শুনলে আপনি শিউরে উঠতে পারেন। মাদক, চোরাচালান, খুন, রাহাজানি, মানি লন্ডারিং কোথায় জড়িত নেই এই তারা! দুনিয়া কাঁপানো এমনি ৫জন দুধর্ষ নারী মাফিয়ার গল্প বলব আজ।

 

রোসেটা কুটোলো

ইতালির কুখ্যাত মাফিয়া রাফায়েল কুটোলোর বোন। ১৯৩৭ সালে জন্ম এই রোসেটা কুটোলোকে মাফিয়া সাম্রাজ্যের ‘সিস্টার অফ রাফায়েল’ নামেও ডাকা হত। জীবনের শুরুতে এই ধুসর চুলের নারী খুবই ধার্মিক ছিলেন। মায়ের সাথে একাকী ইতালির নেপলসের একটি গ্রামে বসবাস করতেন। গোলাপের চাষ করতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি হয়ে উঠেন ভয়ঙ্কর মাফিয়া।

রোসেটা কুটোলো

রোসেটা কুটোলো

তার ভাই মাদক সম্রাট রাফায়েল জীবনের অধিকাংশ সময় জেলেই বন্দি ছিলেন। জেলবন্দি থাকা অবস্থায় মাদক চোরাচালান ব্যবসার দায়িত্ব নেয় রোসেটা। জেল থেকে রাফায়েল যে নির্দেশ এবং পরামর্শ দিতেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন রোসেটা। পনের বছরের অধিক সময় ধরে গোলাপ চাষের আড়ালে ভাইয়ের মাদক সম্রাজ্যে ভাইয়েরই নির্দেশে নিভৃতে কাজ করে গেছেন এই নারী।

ভাইয়ের এই সংগঠনের দায়-দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করার কারণে জেলে থেকেও রাফায়েল তার মাদক সাম্রাজ্যকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, রোসেটা সেসময় থেকেই এই সংগঠনকে শক্ত হাতে ধরতে না পারলে এই সংগঠন ভেঙ্গে পড়তো। রোসেটা একটি দূর্গ কিনেছিলেন। সেখানেই আড়ালে চলতো চোরাচালান ব্যবসা। সর্বশেষ, ১৯৯৩ সালে পুলিশের কাছে ধরা দেন রোসেটা কুটোলো।

 

সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান

১১ অক্টোবর ১৯৬০ সালে জন্ম সান্ড্রা আভিলা বেলট্রানের। চোখে মুখে সবসময়ে লেগে থাকতো দুষ্টুমির ইঙ্গিত। তার মুচকি হাসি সকলকে মোহিত করে রাখতো। যখনই ফটোশুট করাতেন তখনই আরও মোহনীয় রূপ বেরিয়ে আসতো তার। কিন্তু তার এই হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকতো এক হিংস্র ইমেজ। তাকে কেন্দ্র করে মেক্সিকোতে গড়ে উঠে এক বিশাল মাদক জগত। দেশের সবচেয়ে বড় ড্রাগ ডিলার ও গ্যাংস্টার হয়ে উঠেন সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান।

সুন্দরী সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান

সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান

৫৬ বছরের সান্ড্রা একসময় হয়ে উঠে মেক্সিকো সহ পুরো আমেরিকা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় ড্রাগ মাফিয়া। বেশ ধনী মহিলা সান্ড্রা বলতে গেলে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক। মাদক সাম্রাজ্যে তাকে ‘দ্যা কুইন অফ দ্যা প্যাসিফিক’ অনেকে ডেকে থাকেন।

তার দু’চোখের সম্মোহনী সুধা যেকোনো পুরুষকেই কাছে টেনে নেয়ার মতই। এমন যাদু মাখানো তার দু’চোখ যে খোদ পুলিশ কর্তারা পর্যন্ত তার প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। গুলির লড়াই নয়, চোখের ইশারায় মেক্সিকোর দুই পুলিশ কর্তাকেই পকেটে পুরেছিলেন সান্ড্রা। দু’বার দুই পুলিশকে বিয়ে করেন বেলট্রান। পরবর্তীকালে দুই স্বামীকে ড্রাগ ব্যবসার কাজে নামিয়ে ছিলেন তিনি। পরে সুযোগ বুঝে দু’জনকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে  সান্ড্রাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাদক, চোরাচালানের সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে পুলিশকে বেলট্রান জানিয়েছিলেন, কাপড় বেচে সংসার চালাতে হয় তাকে।

মাফিয়া কুিইন সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান

মাফিয়া কুিইন সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান

 

মেলিসা ক্যালডেরন  

১২ আগস্ট ১৯৮৪ সাল। মেক্সিকোতে জন্ম এই মেলিসা ক্যালডেরনের। এত অল্প বয়সেই গড়ে তুলেছিলেন এক বিশাল মাদক সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী মেলিসা মারগারিতা ক্যালডেরন ওজেদা। মাদক সম্রাট পেড্রো-র সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন তিনি। অপহরণ করে বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া, মুক্তিপণ না মিললে অপহৃতের বাড়ির সামনেই তার লাশ ফেলে আসার মত দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটানোই হল এই নারী মাফিয়া মেলিসার বাম হাতের কাজ। সবসময় তার সাথে থাকে দুটি মেশিনগান।

মেলিসা অন্ধকার জগতে  ‘La China’ নামে অধিক পরিচিত।  যে কোনও জঙ্গি সংগঠন তাকে লুফে নিতে সর্বদা  তৈরি। তবে ড্রাগ দুনিয়ার বাইরে তার আর কিছুতেই বিশ্বাস নেই। সান্ড্রা পরবর্তী মেক্সিকোর সব চেয়ে নৃশংস নারী গ্যাংস্টার মেলিসা। দুনিয়ার সব থেকে ভয়ানক নামগুলির তালিকায় তার নাম এসেছে।

hg

মেক্সিকো পুলিশের দেয়া তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, মেলিসার বায়োগ্রাফি বেশ আকর্ষণীয়। ২০০৫ সালে অসৎসঙ্গে পড়ে এই ব্যবসায় তার হাতেখড়ি হয়। আরেক মাদক সম্রাট এল চ্যাপো গুজম্যানের হাত ধরে তার উত্থান ঘটে। মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০০৮ সালেই দিব্যি বনে যান মাফিয়া কুইন নামেই। মেজাজি মাথা ও সুন্দর চেহারার জন্য এ সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হতে তার বিশেষ দেরি হয়নি।

পুলিশের আরেকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মেলিসা ক্যালডেরন কম করে হলেও ১০৫ জনকে গুলি করে খুন করেছে। ৩২ বছরের মেলিসার অধীনে ৩০০ জন কুখ্যাত খুনি ও গুণ্ডা অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। আপাতত বন্দি মেলিসা। তাকে ধরার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তারই সহযোগী পেদ্রোকে। অথচ এই পেদ্রোকে একসময় গভীরভাবে ভালবাসেন মেলিসা। সেই প্রেমিক পেদ্রোই শেষমেশ তার প্রেয়সীকে ধরিয়ে দিয়েছিল পুলিশের হাতে।

মেলিসার বয় ফ্রেন্ড পেদ্রো

মেলিসার বয় ফ্রেন্ড পেদ্রো

তবে পুলিশ মেলিসাকে ধরতে পেদ্রোকে ব্যবহার করেছে বেশ সুকৌশলে। পেদ্রোর ওপর থেকে সব অপরাধের চার্জ তুলে নেয়া হবে এমন টোপেই এতোদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক বিসর্জন দিয়ে পুলিশের কাছে মেলিসার গোপন ডেরার খোঁজ দেয় পেদ্রো। পুলিশও সুযোগ বুঝে মেলিসাকে গ্রেপ্তার করে। তবে তাই বলে মেলিসার মাদক সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়নি। পুলিশের অনুমান, জেল থেকেই এই সাম্রাজ্য চালাচ্ছে ডন মেলিসা।

 

এনিডিনা আরিলানো ফেলিক্স

তিনি মারিও পুজোর লেখা ‘গডফাদার’ চরিত্র না হলেও অপরাধ দুনিয়ায় বিশেষভাবেই পরিচিত ‘গডমাদার’ নামে। অনেকে আবার ‘দ্য বস’ নামেও ডাকে। ১২ এপ্রিল ১৯৬১ সালে জন্ম এই গড মাদার মেক্সিকোর সব থেকে বড় ড্রাগ চক্র Tijuana Cartel-এর মালিক। এর আগে এই  গ্রুপ তার পাঁচ ভাইয়ের অধীনে ছিল।

ভাইদের সাথে এনিডিনা আরিলানো ফেলিক্স

ভাইদের সাথে এনিডিনা আরিলানো ফেলিক্স

এনিডিনা তাদেরকে মানি লন্ডারিং এবং প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করতো। কিন্তু ২০০০ সালে তাদের প্রধান পরিকল্পনাকারীর পতন ঘটে। তখন থেকে এই গ্রুপের কর্তৃত্ব  চলে আসে এনিডিনার হাতে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এনিডিনা বিশ্বের প্রথম ড্রাগ ব্যবসায়ী যে চক্রের সাথে সরাসরি যুক্ত না থেকে প্রথমে দলের আর্থিক দেখভাল করতো। পরবর্তীসময়ে তার ভাইদের গ্রেফতার আর কয়েকজন দলের কয়েজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে এই মাফিয়ার ড্রাগ সাম্রাজ্যে প্রবেশ ঘটে। বর্তমানে তিনি একমাত্র নারী ডন যার হাতে রয়েছে সবচেয়ে বড় ড্রাগ কারবারের কর্তৃত্ব।

 

মারিয়া লিওন

ইনি স্প্যানিশ অভিনেত্রি মারিয়া লিওন নন। অপরাধ জগতের কুখ্যাত ডন মারিও লিওন। ১৩ সন্তানের জননী এই মারিও লিওন লস এঞ্জেলসের মাফিয়া জগতের মাথা। মাদক চোরাচালান থেকে সুপার কিলিং, হিউম্যান ট্রাফিকিং- সব জায়গায় তার নাম নানাভাবে জড়িয়ে আছে।

অপরাধ জগতের কুখ্যাত ডন মারিও লিওন

অপরাধ জগতের কুখ্যাত ডন মারিও লিওন

২০০৮ সালে লস এঞ্জেলসে পুলিশের গুলিতে মারিয়ার ছেলে ড্যানি মারা যায়। ফলে লস এঞ্জেলসে থাকা মারিয়ার কাছে আর নিরাপদ মনে হয়নি। গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য চলে আসে মেক্সিকোতে। মৃত ছেলের শেষকৃত্যে সামিল হতে গিয়ে ধরা পড়ে। পরবর্তী সময়ে মারিয়াসহ এই গ্রুপের অনেক সদস্যই ধরা পড়ে। আদালতে মারিয়ার ৮ বছরের সাজা হয়।

This article is in Bangla and it's about the world's topmost 5 invincible mafia women.

 

References

1. mirror.co.uk
2. dailyrecord.co.uk
3. askmen.com
4. therichest.com
5. independent.co.uk
6. theguardian.com

Featured Image: Youtube.com

Related Articles