Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পশুপ্রীতি যখন মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ

বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, বিচ্ছেদ সবকিছু নিয়েই থাকে সাধারণ মানুষের অপরিসীম কৌতূহল ও আগ্রহ। আর কারো মৃত্যু যদি হয় অপঘাতে, তা-ও আবার কোনো পশু-পাখির আঘাতে, তাহলে তো সেটি জানার জন্য কারো যেন তর সয় না। পৃথিবীতে স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিখ্যাত বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন কোনো না কোনো প্রাণীর আক্রমণে। সেই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো একনজরে দেখে নেয়া যাক।

স্টিভ আরউইন

স্টিভ আরউইন; Image Source: ranker.com

পশুর হাতে অকালে প্রাণ হারানো মানুষের কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম স্টিভ আরউইনের কথা চলে আসে। ১৯৬২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তার জন্ম। অস্ট্রেলিয়ার একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘দ্যা ক্রোক্রোডাইল হান্টার’ এর উপস্থাপক ছিলেন তিনি। কুমির সহ নানা রকম হিংস্র বন্য প্রাণীর সম্মুখীন হয়ে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা ছিল তার কাজ। সেবার তিনি জলচর কিছু হিংস্র প্রাণী নিয়ে কাজ করছিলেন। এমনই এক শো’র কাজ চলাকালে স্টিং রে মাছের বিষাক্ত লেজ তার বুকে এসে বিঁধে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সালটা ছিল ২০০৬। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর।

টিমোথি ট্রেডওয়েল

টিমোথি ট্রেডওয়েল; Image Source: ranker.com

১৯৫৭ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই ভালুকপ্রেমী ব্যক্তি। তিনি একাধারে ভালুকপ্রেমী, পরিবেশবিদ, ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার এবং খয়েরি রংয়ের ভালুক সংরক্ষণের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। উত্তর আমেরিকার এক বিশেষ প্রজাতির খয়েরি রংয়ের ভালুকদের ‘গ্রিজলি’ বলা হয়। এই প্রজাতি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। আমেরিকার আলাস্কায় অবস্থিত কাটমাই ন্যাশনাল পার্কে তিনি তার জীবনের প্রায় ১৩ বছর ব্যয় করেছেন এই ভালুকদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ১৩ বছরের মাথায় গিয়ে হঠাৎ করেই তারা একদিন ভালুকের আক্রমণের শিকার হন। পার্কটিতে ভালুকরা তাদের উপর হামলা করে বসে, ছিন্ন ভিন্ন করে ফলে দেহের নানা অঙ্গ, এমনকি শরীরের বেশ কিছু অংশ খেয়েও ফেলে। ২০০৩ সালে ৪৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

ডায়ান হুইপেল

ডায়ান হুইপেল; Image Source: ranker.com

১৯৬৮ সালে আমেরিকার নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন ডায়ান হুইপেল। তিনি একজন নামকরা ল্যাক্রোস খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষণদাতা ছিলেন। সানফ্রান্সিস্কোর একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করতেন তিনি। ঘটনার দিন সেই সময় ডায়ান কিছু গৃহস্থালি সামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তার প্রতিবেশীর পোষা কুকুরটি কী করে যেন বাঁধনমুক্ত হয়ে তার উপর হামলে পড়ে এবং মুহূর্তেই তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে। কুকুরটির এমন আগ্রাসী আক্রমণের কারণ অনুসন্ধান করলে জানা যায়, প্রতিবেশী ব্যক্তিটি কুকুর কেনার আগে অবৈধ ডগ ফাইটিং খেলানোর জন্য কোনো এক ব্যক্তি কুকুরটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যার কারণে কুকুরটি ভয়ংকর রকমের হিংস্র মনোভাবের ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

সুরিন্দর সিং বাজওয়া

সুরিন্দর সিং বাজওয়া; Image Source: ranker.com

ভারতের এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৫৫ সালে। তিনি দিল্লীর ডেপুটি মেয়র ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে। তিনি তার বাড়িতে একদল উত্তর ভারতীয় ছোট প্রজাতির বানরের হামলার শিকার হন। বানরগুলো তাকে দোতলার বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দেয় এবং তিনি মাথায় প্রচন্ড রকমের আঘাত পান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এসময় তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

জর্জ ওয়েন্ট হেনসলি

জর্জ ওয়েন্ট হেনসলি; Image Source: ranker.com

১৯৫৫ সালে জর্জ ওয়েন্ট হেনসলি আমেরিকার টেনেসি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশাগত জীবনে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। সাপকে খুব দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। তিনি বাইবেলে উল্লিখিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী সাপকে সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণে আনতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতপক্ষে ধর্মে বিশ্বাসী একজন নিষ্পাপ ব্যক্তিকে কখনো কোনো বিষধর সাপ দংশন করবে না এবং সেই ব্যক্তি খুব সহজেই সাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।

জর্জ ধর্মবিষয়ক নানান উপদেশ দিতেন এবং এরকম আলোচনা সভায় অনেকেই সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলতেন ঈশ্বর ঐ ব্যক্তির ধর্ম পরীক্ষা নিয়েছেন এবং এটা তার পক্ষ থেকে সকলের প্রতি একটি বার্তা ছিল। তোমরা সবাই সত্যের পথে ফিরে আসো। এমন বিশ্বাসের কোনো বাস্তবিক ভিত্তি না থাকলেও তিনি তার বিশ্বাসে অনড় ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ২৪ জুলাই একটি আলোচনা সভায় তিনি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা একটি বিষধর সাপকে একটি জারে ঢুকানোর চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ করেই সাপটি ফণা তুলে তাকে দংশন করে বসে এবং তিনি তৎক্ষণাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালে নিয়ে যেতে উদ্যত হলে তিনি বেঁকে বসেন এবং যেতে অস্বীকৃতি জানান। এই গোঁড়ামি তাঁকে পরের দিন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তখন তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

গ্রীসের অধিপতি রাজা আলেকজান্ডার

রাজা আলেকজান্ডার; Image Source: ranker.com

১৮৯৩ সালে গ্রীসে জন্মগ্রহণ করেন রাজা আলেকজান্ডার। তিনি মৃত্যুর তিন বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯১৭ সাল থেকে গ্রীসের শাসনভার গ্রহণ করেন। একদিন তিনি তাতোই সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে সহচর কুকুরটিকে নিয়ে হাঁটতে বেড়িয়েছিলেন। পথিমধ্যে তারই এক পোষা বানর এসে কুকুরটির সাথে মারামারি জুড়ে দেয়। বানর আর কুকুরের মধ্যে লড়াই থামানোর জন্য রাজা এগিয়ে গেলে বানরটি রাজার পা এবং কাঁধে কামড় বসিয়ে দেয়। অসচেতনতার কারণে রাজা পরবর্তীতে কোনো প্রতিষেধক নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি এবং ফলস্বরূপ কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর শরীরে ইনফেকশন বাসা বাঁধে। তার জীবন রক্ষার্থে চিকিৎসা চলাকালে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়। কিন্তু ততদিনে পুরো শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনার দিন থেকে ঠিক দু’সপ্তাহ পর তিনি মারা যান। মাত্র ২৭ বছর বয়সে গ্রীসের এই অধিপতির জীবনপ্রদীপ নিভে যায়।

জিন ব্যাটেন

জিন ব্যাটেন; Image Source: ranker.com

নিউজিল্যান্ডের এই নারী বিমানচালক ১৯০৯ সালে রটরুয়া শহরে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৩০ এর দশকে বেশ কিছু রেকর্ড ব্রেকিং ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে তিনি নিউজিল্যান্ডের এক অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন। তিনি সর্বপ্রথম পাইলট ছিলেন, যিনি কিনা এককভাবে নিউজিল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডের যাত্রাপথের পুরো সময়টা একা বিমান চালিয়েছেন। এর বেশ কয়েক বছর পর ব্যক্তিগত কিছু কারণে তিনি পারিবারিক জীবনে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এবং একাকীত্ব দূর করতে বিশ্বের নানান দেশে ভ্রমণ করতে থাকেন। ১৯৮২ সালে স্পেনের মাজোরিকা দ্বীপে অবস্থানকালে তিনি একটি কুকুরের কামড়ে আহত হন এবং কোনো এক অজ্ঞাত কারণে চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। ইনফেকশন ধীরে ধীরে পুরো শরীরকে গ্রাস করতে থাকে এবং কিছুদিন পর তিনি মারা যান। তখন তার বয়স ছিল ৭৩ বছর।

অ্যালেন ক্যাম্পবেল

অ্যালেন ক্যাম্পবেল; Image Source: ranker.com

১৯৫৩ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডায় জন্মগ্রহণকারী অ্যালেন ক্যাম্পবেলের স্বপ্ন ছিল তিনি স্থলের সর্ববৃহৎ প্রাণী হাতিকে নিয়ে কাজ করবেন, তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে গবেষণা করে একজন দক্ষ প্রশিক্ষক হয়ে উঠবেন। জ্যাকসন ভিলা এবং ব্যাটনের বিভিন্ন জায়গায় তিনি হাতিদের প্রশিক্ষণ দিতেন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় তিনি হাতির পিঠে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শহরের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে সকলকে এই প্রাণী সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন। ১৯৯৪ সালে একটি শো চলাকালীন সময়ে টাইক নামের একটি হাতি হঠাৎ করে ক্ষেপে গিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। অ্যালেন টাইককে সামলাতে গিয়ে হাতির পদতলে পিষ্ট হয়ে মারা যান। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৪১ বছর।

প্যাট্রিসিয়া উইমেন

প্যাট্রিসিয়া উইমেন; Image Source: ranker.com

কানাডার স্বনামধন্য বন্যপ্রাণীবিদ প্যাট্রিসিয়া উইমেন ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ওন্টারিওর হ্যালিবার্টন ফরেস্ট এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ রিজার্ভ সংস্থাটিতে কর্মরত ছিলেন। এখানে বেশ কিছু নেকড়কে নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। এই জায়গায় কাজ শুরুর তিন দিনের মাথায় তিনি চারটি নেকড়ের আক্রমণের শিকার হন। নেকড়েরা তাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খায়। ১৯৯৬ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে এই জীববিদ অপঘাতে মারা যান।

সপ্তম নিকোলা জ্রিনসকি

সপ্তম নিকোলা জ্রিনসকি; Image Source: ranker.com

সপ্তম নিকোলা জ্রিনসকি একজন বহু ভাষাভাষী কবি ছিলেন। হাংগেরীর বিখ্যাত জ্রিনসকি পরিবারে ১৬২০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। রাজনীতি এবং দক্ষ যুদ্ধ কৌশলে পারদর্শী হিসেবে এই পরিবারের সুখ্যাতি বহুকালের, যদিও সপ্তম নিকোলার যুদ্ধবিদ্যার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। ১৬৬৪ সালে বনে এক শিকারে গিয়ে তিনি একটি বন্য শুকরের কামড়ে বেশ গুরুতরভাবে জখম হন এবং মারা যান। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর।

ফিচার ইমেজ- ranker.com

Related Articles