Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোম সাম্রাজ্যের উত্থান (পর্ব-৩৩): প্রথম মিথ্রিডেটিক যুদ্ধ

কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণ তীরে ছোট্ট রাজ্য উত্তর কাপ্পাডোসিয়া। এখানকার লোকেরা এশীয় বংশোদ্ভূত হলেও তারা হেলেনিস্টিক কৃষ্টি-কালচার দ্বারা প্রভাবিত ছিল। এখানেই সিনোপি শহরে রানী ষষ্ঠ লাওডিসের গর্ভে মিথ্রিডেটসের জন্ম। তার বাবা রাজা পঞ্চম মিথ্রিডেটস ১২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজধানী অ্যামাসিয়াতে নিজ প্রাসাদে শত্রুদের চক্রান্তে, সম্ভবত বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে নিহত হন। তার বড় ছেলে হিসেবে মিথ্রিডেটস সিংহাসনে অভিষিক্ত হন। কিন্তু বয়স কম থাকায় মা লাওডিস তার প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য চালাতে থাকেন। তার উপদেষ্টাদের অনেকেই মিথ্রিডেটসের বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। মিথ্রিডেটসকে রাজধানী থেকে দূরে পাঠিয়ে দেয়া হলেও তার শিক্ষাদীক্ষা চলতে থাকে। বলা হয়, বিভিন্ন ভাষা, শিল্পকলা আর সমরবিদ্যায় তিনি উচ্চমানের প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

আঠারো বছর বয়সে মিথ্রিডেটস রাজধানীতে ফিরে আসেন। জনগনের সহানুভূতি আদায়ের মাধ্যমে তিনি মা লাওডিসকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে নিজেকে সুসংহত করলেন। মা ও ছোট ভাইকে তিনি অন্তরীণ, মতান্তরে হত্যা করেন। পিতার হত্যাকারীদেরকেও তিনি খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিলেন। ১১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে মিথ্রিডেটস এককভাবে রাজ্য শাসন করতে থাকেন। 

মিথ্রিডেটস; Image Source: Ancient History Encyclopedia

মিথ্রিডেটস উচ্চাভিলাষী ছিলেন এবং সেই লক্ষ্যে সেনা ও নৌবাহিনী পুনর্গঠন করলেন। তিনি কৃষ্ণসাগরের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ধরে পশ্চিমে দানিউব পর্যন্ত নিজের সীমানা বৃদ্ধি করেন। এই রাজ্য কিংডম অফ পন্টাস (পন্টাসের শাব্দিক অর্থ- কৃষ্ণসাগরের উপকূলীয় এলাকা) নামে পরিচিত হয়। তিনি পার্শ্ববর্তী আর্মেনিয়ার রাজা  টিগ্রানেসের সাথে মৈত্রী স্থাপন করেন এবং তার সাথে নিজ কন্যার বিয়ে দেন।

কিংডম অভ পন্টাস; Image Source: ancient-origins.net

রোমের সাথে সংঘাতের কারণ

মিথ্রিডেটসের চোখ ছিল বৃহত্তর কাপ্পাডোসিয়া আর প্রতিবেশী রাজ্য বিথাইনিয়ার দিকে। সেখানে রাজত্ব করছিলেন আরিওবার্জানেস। কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পর মিথ্রিডেটস আর্মেনিয়ার সাহায্য কামনা করলে ৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে টিগ্রানেস বৃহত্তর কাপ্পাডোসিয়ায় প্রবেশ করে আরিওবার্জানেসকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন। আরিওবার্জানেস ছিলেন রোমের মিত্র।

এদিকে ৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজা নিকোমেডেসের মৃত্যু হলে বিথাইনিয়ার ক্ষমতায় অভিষিক্ত হলেন তার পুত্র চতুর্থ নিকোমেডেস। টিগ্রিনেস কাপ্পাডোসিয়াতে অভিযান চালালে মিথ্রিডেটসও নিকোমেডেসকে হটিয়ে এক বিথাইনিয়াতে পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করলেন।

মিথ্রিডেটসের শক্তিবৃদ্ধিতে রোমান সিনেট শঙ্কিত হয়ে পড়ে। প্রাচ্যে তাদের মূলনীতি ছিল যেকোনো উপায়ে রোমের অধিকৃত এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা এবং রোমের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে এমন কাউকে মাথা তুলে দাঁড়াতে না দেওয়া। কিন্তু ৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ইতালীয় প্রতিবেশীদের সাথে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে তারা এশিয়া মাইনরে নতুন করে সামরিক অভিযান চালাতে ইচ্ছুক ছিল না। মিথ্রিডেটস এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিলেন।

বিথাইনিয়া আর কাপ্পাডোসিয়াতে গণ্ডগোলের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেট অ্যাকুইলিয়াস আর ম্যান্সিনাসের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়। রোমের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে যেতে আর্মেনিয়া আর পন্টাস কেউই চাইছিল না। তারা পিছিয়ে গেলে আরিওবার্জানেস আর নিকোমেডেসকে নিজ নিজ রাজ্যের ক্ষমতা ফিরে পেলেন।

ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু নিকোমেডেস ক্ষমতা ফিরে পেলে অ্যাকুইলিয়াসকে প্রচুর অর্থ প্রদান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে অর্থের যোগান দিতে অ্যাকুইলিয়াস যৌথভাবে তাকে পন্টাস আক্রমণের প্ররোচনা দিলেন। তিনি মিথ্রিডেটসের শক্তিকে খাটো করে দেখেছিলেন এবং এশিয়া মাইনরের ঘাঁটিতে স্বল্প সংখ্যক রোমান সেনা নিয়েই মিথ্রিডেটসকে পরাজিত করা যাবে বলে তার ধারণা ছিল। মিথ্রিডেটস তাদের চাল বুঝতে পেরে বিথাইনিয়া আক্রমণ করে বসলেন। সূচনা হলো রোমের সাথে প্রথম যুদ্ধের।

প্রথম মিথ্রিডেটিক যুদ্ধ (৮৯-৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

এশিয়া মাইনরে রোমের নিজস্ব একটিমাত্র লিজিওন ছিল, যার অন্তর্ভুক্ত চার থেকে ছয় হাজার যোদ্ধা। মিথ্রিডেটস এগিয়ে আসলে তারা দ্রুত স্থানীয় সৈন্য সংগ্রহ করে তিনটি আলাদা বাহিনী গঠন করল। অ্যাকুইলিয়াস অবস্থান নেন পন্টাস আর বিথাইনিয়ার মাঝে, গভর্নর ক্যাসিয়াস বিথাইনিয়ার এবং গ্যালাশিয়ার সীমান্তে আর অপিয়াস কাপ্পাডোসিয়ার পাহাড়ের পাদদেশে। তাদের সাথে ছিল সাকুল্যে ৪০,০০০ সেনা। নিকোমেডেস নিজের ৫৬,০০০ সেনা নিয়ে বিথাইনিয়া থেকে পূর্ব প্যাফ্লাগোনিয়া অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হলেন।

মিথ্রিডেটসের সেনাবাহিনীতে ২,৫০,০০০ পদাতিক, ৪০,০০০ অশ্বারোহী আর ১৩০টি রথ ছিলে বলে তৎকালীন ঐতিহাসিকেরা দাবি করেন। তার নৌবাহিনীতে ছিল ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জাহাজ। আধুনিক ইতিহাসবিদেরা এই সংখ্যা অতিরঞ্জিত বলে মনে করলেও তারা একমত যে, মিথ্রিডেটসের সেনাবাহিনীর আকার রোমান ও নিকোমেডেসের সম্মিলিত বাহিনীর থেকে অনেক বড় ছিল।

যুদ্ধের রথ © Clare, Israel Smith/ Wikimedia Commons

প্যাফ্লাগোনিয়াতে অ্যাম্নিয়াস নদীর কাছে মিথ্রিডেটসের জেনারেল নিওপ্টলেমাস ও আর্কেলাস নিকোমেডেসকে পরাজিত করেন। এরপর মিথ্রিডেটস তার মূলবাহিনী নিয়ে পূর্ব বিথাইনিয়া ধরে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। অ্যাকুইলিয়াস পিছিয়ে গেলেন স্যাঙ্গারিয়াস নদীর তীরবর্তী এলাকাতে। এখানে প্রোটোপাচিয়াম দুর্গের কাছে মিথ্রিডেটসের বাহিনীর একাংশ তার নাগাল পেয়ে যায়। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নিওপ্টলেমাস আর নেমানেস । তাদের সেনাসংখ্যাও ছিল রোমানদের থেকে বেশি।

প্রায় দশ হাজার সেনা হারিয়ে অ্যাকুইলিয়াস রোমান প্রদেশ পার্গে্মামে পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি সাগর পাড়ি দিয়ে লেসবসে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মাইটেলিনের লোকেরা তাকে মিথ্রিডেটসের হাতে তুলে দিল। অ্যাকুইলিয়াসের পিতা এশিয়ার গভর্নর থাকাকালে এখানকার মানুষকে অনেক শোষণ করেছিলেন। অ্যাকুইলিয়াসও তার লোভের জন্য ঘৃণিত ছিলেন। তাই মিথ্রিডেটসের নির্দেশে গলায় ফুটন্ত স্বর্ণ ঢেলে দিয়ে তাকে হত্যা করা হলো।

ফুটন্ত স্বর্ণ © Atlantide Phototravel/Corbis

ক্যাসিয়াস প্রথমে ফ্রাইজিয়ার সুরক্ষিত দুর্গে আশ্রয় নিলেন। মিথ্রিডেটসের অগ্রযাত্রা দেখে তিনি নিজের অবস্থার অসারতা উপলব্ধি করলেন। কাজেই ক্যাসিয়াস রোডসে সরে যান। অপিয়াস লাওডিস শহরে অবস্থান করছিলেন। তিনি মিথ্রিডেটস কর্তৃক অবরুদ্ধ হবার অনুমান করে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু মিথ্রিডেটস নগরবাসীকে অপিয়াসকে হস্তান্তরের বিনিময়ে সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে। যুদ্ধের বাকি সময় অপিয়াস মিথ্রিডেটেসের হাতে বন্দি ছিলেন।

এশিয়াটিক ভেস্পারস: এশিয়া মাইনর থেকে রোমান গভর্নররা প্রচুর কর আদায় করত। সেই কর দিতে বাসিন্দাদের আবার রোমান ব্যাংকারদের থেকেই উচ্চসুদে টাকা ধার নিতে হতো। এসব কারণে এখানকার মানুষের মধ্যে রোমের প্রতি চাপা ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। মিথ্রিডেটস একে উস্কে দিতে চাইলেন। তার আদেশে ৮৯/৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের নির্দিষ্ট তারিখে এশিয়া মাইনর জুড়ে সমস্ত রোমান ও ইতালীয় নাগরিকদের আলাদা করে হত্যা করা হয়। সমসাময়িক ঐতিহাসিকেরা ৮০,০০০ নিহতের কথা বললেও আধুনিক ইতিহাসবেত্তারা এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি বলে মনে করেন। এই ম্যাসাকার এশিয়াটিক ভেস্পার নামে পরিচিত।

এশিয়া মাইনরে বিপর্যয়ের সংবাদ পেয়ে সিনেট সুলার হাতে প্রাচ্যের সামরিক দায়িত্ব হস্তান্তর করে। তবে মারিয়াসে সাথে সংঘাতের কারণে তৈরি হয়ে রোম ত্যাগ করতে করতে ৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হয়ে যায়।   

৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

এশিয়া মাইনরে রোমের বিপক্ষে তার সাফল্যে গ্রিকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। তাদের অনেকেই রোমের নিষ্পেষণ থেকে মুক্তির জন্য মিথ্রিডেটসের দিকে হাত বাড়াল। বসন্তের শুরুতে এথেন্স থেকে দার্শনিক ও কূটনীতিক অ্যারিস্টিওন মিথ্রিডেটসের দরবারে হাজির হলেন। তিনি ফিরে গেলে রোম বিরোধীরা শহরের ক্ষমতা তার হাতে ন্যস্ত করে এবং মিথ্রিডেটসকে গ্রিসে আসার আমন্ত্রণ জানাল।

মিথ্রিডেটস তার সুযোগ্য জেনারেল আর্কেলাসের অধীনে একদল সেনা পাঠালেন। এরা পথিমধ্যে ডেলোসে রোমান বন্দর ধ্বংস করে দিল। আর্কেলাস এখানকার মন্দির থেকে প্রচুর অর্থসম্পদ লুট করে নিলেন। তিনি গ্রিসে আসামাত্র স্পার্টা, বিলুপ্ত আকিয়ান লীগের অন্তর্গত বহু নগরী এবং বোয়েশিয়ার অনেক এলাকা রোমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। ইজিয়ান সাগরে মিথ্রিডেটসের জাহাজ পাহারা দিতে লাগল। তবে ইউবোয়া আর ম্যাগনেশিয়া রোমের প্রতি অনুগত ছিল।

ডেলোসের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ; Image Source: sailingissues.com

পুরো গ্রিসে রোমানদের মাত্র দুটি লিজিওন, যারা থ্রেসিয়ান গোত্রগুলোর সাথে যুদ্ধের কারণে মেসিডোনিয়াতে অবস্থান করছিল। সেখানকার গভর্নর সেন্টিয়াস তার অফিসার সুরার অধীনে ছোট একটি সেনাদল আর্কেলাসের দিকে প্রেরণ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলেন না। তবে এই সীমিত শক্তি নিয়েও সুরা আর্কেলাসকে কিছু সময় ঠেকিয়ে রাখতে সমর্থ হন। বিদ্রোহী এলাকা থেকে আর্কেলাসের কাছে সেনা সহায়তা এসে পৌঁছলে সুলা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। তবে তিনি আর্কেলাসকে দেরি করিয়ে দিয়েছিলেন, ফলে তিনি কাঙ্ক্ষিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারার আগেই সুলা মূল রোমান বাহিনী নিয়ে গ্রিসে পা রাখলেন। আর্কেলাস পিরেউস শহরে ঘাঁটি গাড়লেন।  

৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

আর্কেলাসের দেখানো পথ ধরে সুলা ডেলফির ওরাকলের মন্দির লুট করলেন। বিপুল ঐশ্বর্য পাওয়া গেল যার ভাগ সুলা তার সেনাদের দেন এবং ইটোলিয়া ও থেসালি থেকে আরো অনেক নতুন সেনা নিয়োগ করেন। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে রোমান মিত্রদের থেকে নৌবহর গঠন করতে সুলা তার সহকারী লুসেলাসকে পাঠালেন।

ডেলফির মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ; Image Source: greece.greekreporter.com

সুলা অবিলম্বে এথেন্স এবং তার বন্দর নগরী পিরেউস অবরোধ করে বসলেন।ইজিয়ানে মিথ্রিডেটসের নৌবহরের আধিপত্যের সুবাদে পিরিউসে প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ অব্যাহত ছিল, কিন্তু এথেন্স পুরোই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু কঠিন অবরোধের মুখেই শহরবাসীরা দাঁত কামড়ে পড়ে থাকে। অবশেষে শীত চলে আসলে সুলা শীতকালীন ক্যাম্পে চলে যান, তবে তিনি অবরোধ জারি রাখার মতো প্রয়োজনীয় সেনা রেখে গেলেন।

৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

মিথ্রিডেটসের এক ছেলে আর্কাথিয়াস এক বিরাট সেনাদল নিয়ে থ্রেস ও মেসিডোনিয়ার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হল। সুলা বুঝতে পারলেন, বেশি দিন অবরোধ চালিয়ে গেলে আর্কাথিয়াস তাকে পেছন থেকে আঘাত করতে পারেন। তিনি দ্রুত অবরোধ শেষ করতে চাইলেন। এথেন্সের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেদিকে তিনি বেশি মনোযোগ দিলেন। শহরবাসীরা ক্ষুৎপিপাসায় তখন কাতর। এর মধ্যে মার্চ মাসে নগরপ্রাচীরের এক দুর্বল জায়গা দিয়ে রোমান সেনারা শহরে অনুপ্রবেশ করে।

অ্যারিস্টিওন ও তার সমর্থকেরা নগরের মূল দুর্গে আশ্রয় নিলেন। কয়েকমাস সেখানে অবরুদ্ধ থাকার পর তাদের পতন হয়। এর মাঝেই এথেন্সের শাসনক্ষমতা সুলা রোমের প্রতি অনুগত গ্রিকদের হাতে তুলে দিলেন। এদিকে আর্কাথিয়াস পথে মৃত্যুবরণ করলে মিথ্রিডেটসের সেনাদের অগ্রযাত্রা ধীর হয়ে পড়ে।

সিজ টাওয়ার © Ian V. Hogg/ Encyclopædia Britannica

এথেন্সের পতন হলে পিরেউসের উপর আক্রমণ জোরদার করা হল। আর্কেলাস বাধ্য হন শহরের মূল দুর্গ মিউনাইখিয়াতে পিছিয়ে যেতে। এখান থেকে তিনি উত্তর দিকে সরে গেলে পিরেউস সুলার নিয়ন্ত্রণে চলে আসল। আর্কেলাস যোগ দিলেন আর্কাথিয়াসের বাহিনীর সাথে।

এদিকে বোয়েশিয়াতে হর্টেনসিয়াসের অধীনে ৬,০০০ অশ্বারোহীর একটি রোমান ডিটাচমেন্ট অগ্রগামী মিথ্রিডেটিক বাহিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখছিল। আর্কেলাস তাদের সাথে যোগ দিলে রোমানরা শত্রুবাহিনী দিয়ে বেষ্টিত হয়ে যাবার অবস্থায় পড়ে যায়। হর্টেনসিয়াস পাহাড়ের মধ্য দিয়ে কোনোক্রমে আর্কেলাসকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে এসে সুলার সাথে মিলিত হলেন। 

ব্যাটল অভ চেরোনা

এলাটিয়ার এক পাহাড়ের উপর রোমানরা ছাউনি ফেলল। তাদের সামনে সেফেসাস নদী, অপর পাড়ে রোমানদের উত্তরদিকে আর্কেলাসের ক্যাম্প। তার পদাতিক, অশ্বারোহী সবই সুলার থেকে অনেক বেশি। তদুপরি তার বাহিনীতে ছিল অনেক রথও। এখানকার বেশিরভাগ এলাকা ছিল সমতল, যা ঘোড়ার জন্য সুবিধাজনক।

সুলার যাতায়াত আর রসদপত্রের সবথেকে সহজ রাস্তা ছিল নদী ধরে দক্ষিণ-পূর্বে চেরোনা শহরের ভেতর দিয়ে। শহরের প্রবেশমুখে সংকীর্ণ এক গিরিপথের উপর পারাপোটামি দুর্গ দ্বারা চেরোনা সুরক্ষিত ছিল। সুলা দ্রুত একদল সেনা পাঠিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তার রসদপত্রের রাস্তা বন্ধ করার মানসে এবার আর্কেলাস চেরোনার দিকে এগিয়ে গেলেন। মূল প্রবেশপথে রোমানদের শক্ত ঘাঁটি থাকায় তিনি উত্তর দিকে থেকে পাহাড়ি পথ ধরে শহর আক্রমণের ফন্দি করলেন। নগরবাসীরা খবর পেয়ে সুলার কাছে সাহায্যের আবেদন জানায়। সুলা তার অফিসার গ্যাবিনাসকে কিছু সেনা সহ শহরে পাঠিয়ে দিলেন।

আর্কেলাস শহরের কাছে এসে অ্যাকোন্টিয়াম ও হিডাইলিয়াম পর্বতের মাঝখানে শিবির করলেন। তার সাথে প্রায় এক লাখ সেনা ছিল। তিনি কিছু সেনা রাখলেন নিকটবর্তী থুরিয়াম পর্বতের উত্তর ঢালে। সুলার সাথে ছিল ৪০,০০০ এর মতো সৈন্য। তিনি স্থানীয় গাইডদের দিয়ে তার বাহিনীর ছোট একটি অংশ থুরিয়ামের দিকে পাঠালেন, আর নিজে মূল বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে তাদের দিকে অগ্রসর হলেন। এখানে সেফেসাসের উপত্যকায় দুটি বাহিনীই মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হল। এলাকাটি ছিল পাহাড়ি, যা অশ্বারোহী আর রথগুলোর কার্যকারিতা সীমিত করে ফেলে।

ব্যাটল অভ চেরোনা; Image Source: busy.org

সুলা রোমান বাহিনীর ডানবাহুতে অবস্থান নেন। বামদিকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মুরেনা। থুরিয়ামের দিকে পাঠান রোমানরা যখন পর্বতের ঢালে আবির্ভূত হলো, তখন আর্কেলাসের বাহিনীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আর্কেলাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তার রথ নিয়ে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পাহাড়ি এলাকাতে এগুলোর গতি ধীর হয়ে পড়ে। রোমানরা দুই পাশে সরে গেলে তাদের মধ্য দিয়ে রথ চলে যায় এবং এগুলোতে থাকা যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। এরপর পদাতিক সেনারা পরস্পরের সাথে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত হলো।

অচলাবস্থার উদ্ভব হলে আর্কেলাস অশ্বারোহীদের নিয়ে রোমান বাম বাহুতে আঘাত করলেন। মুরেনাকে সহায়তা করতে হর্টেনসিয়াস সেদিকে এলেও আর্কেলাসের প্রবল চাপে এই অংশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো। সুলা এবার নিজেই এগিয়ে এলেন। তাকে ডানবাহু থেকে সরে যেতে দেখে আর্কেলাস সেদিকে চূড়ান্ত আঘাত হানার পরিকল্পনা করলেন। কিন্তু সুলা টের পেয়ে সংরক্ষণে থাকা অশ্বারোহী সেনাদল নিয়ে আর্কেলাসের আগেই ডান বাহুতে ফিরে আসলেন।

পন্টিয়াক জেনারেল তার বাহিনী গুছিয়ে নেবার আগেই রোমানরা ডানদিক থেকে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বামে মুরেনা আর হর্টেনসিয়াসও শত্রুদের হটিয়ে দেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাকোন্টিয়াম পর্বত মাঝখানে পড়ায় পন্টিয়াক সেনারা দু’ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। প্রচুর সেনা নিহত হয়। মাত্র দশ হাজার সেনা নিয়ে আর্কেলাস কলচিসে পালিয়ে আসতে পারলেন। সুলা চেষ্টা করেও তাকে ধরতে পারলেন না।

ফ্ল্যাকাসের আগমন

৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মারিয়াসের মৃত্যুর পর কন্সালশিপ পান ফ্ল্যাকাস। সিনেট সুলার কম্যান্ড প্রতিস্থাপন করতে তাকে গ্রিসে পাঠাল। ফ্ল্যাকাসের সেনাদল গ্রিসে অবতরণ করলে সুলা বোয়েশিয়া থেকে সরে এসে তাদের উপর নজর রাখলেন। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, ফ্ল্যাকাস তাকে আক্রমণ করতে পারেন। এদিকে কলচিসে আর্কেলাসের কাছে নতুন করে ৮০,০০০ সেনা এসে পৌঁছলে তিনি আবারো বোয়েশিয়াতে হামলা চালান। সুলা বাধ্য হলেন নতুন এই বিপদের মোকাবেলা করতে।

ব্যাটল অভ অর্কোমেনাস

বোয়েশিয়ার অর্কোমেনাসের সমতলভূমিতে দু’পক্ষ মুখোমুখি হলো। সুলা তার সেনাদলের মধ্যভাগে পদাতিকদের তিন সারিতে সাজালেন। শত্রুদের রথ যাবার জন্য সারির মাঝে অনেক ফাঁক রাখা ছিল। দ্বিতীয় সারির সামনে চোখা তক্তার স্পাইক তৈরি করে ফেলে রাখা হল। সুলার আদেশে সেনাদলের দু’পাশে পরিখা খনন করা হয়, যাতে আর্কেলাসের অশ্বারোহীরা পাশ থেকে আক্রমণ করতে না পারে।

যুদ্ধ শুরু হলে পরিখার কারণে আর্কেলাসের অশ্বারোহীরা ব্যর্থ হয়। তিনি এবার পদাতিক বাহিনী রোমান মধ্যভাগের দিকে প্রেরণ করেন। তাদের আগে ছিল রথ। রোমান পদাতিকেরা দ্বিতীয় সারির স্পাইকের পেছনে সরে গেলে বেশিরভাগ রথই এই স্পাইকে আটকে যায়। অনেক ঘোড়া আতঙ্কিত হয়ে রথ নিয়ে ঘুরে আর্কেলাসের বাহিনীর উপর দিয়েই ছুটে যায়। ফলে তার সেনাসজ্জা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। প্রায় দশ থেকে পনেরো হাজার সেনা মারা যায়। সেদিনের জন্য যুদ্ধ সমাপ্ত হলো।

ব্যাটল অভ অর্কোমেনাস; Image Source: carson-modelsport.com

পরবর্তী দিনের শুরুতেই সুলার আদেশে আর্কেলাসের ক্যাম্পের চারদিকে পরিখা খনন শুরু হয়। সুলা চাচ্ছিলেন আর্কেলাসকে তার শিবিরে অবরুদ্ধ করে ফেলতে। আতঙ্কিত পন্টিয়াক সেনারা হঠকারীভাবে রোমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সুলার সেনারা শোচনীয়ভাবে তাদের পরাস্ত করে। প্রচুর হতাহত ফেলে আর্কেলাস পালিয়ে গেলেন। গ্রিসে মিথ্রিডেটসের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। আর্কেলাসের পরামর্শে মিথ্রিডেটস সুলার সাথে আলোচনা চালু করলেন। কিন্তু সুলার শর্তাবলি মেনে নিতে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। এদিকে মিথ্রিডেটসের জাহাজ ইজিয়ানে ঘুরে বেড়াতে থাকায় সুলার পক্ষে সরাসরি পন্টিয়াসে অভিযান চালান সম্ভব হচ্ছিল না।

এশিয়া মাইনরে অভিযান

ফ্ল্যাকাস এদিকে থ্রেস ও মেসিডোনিয়াতে রোমান নিয়ন্ত্রণ শক্ত করলেন। তিনি সুলার সাথে কোনো সংঘাতে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কাজেই ফ্ল্যাকাস বসফরাস অতিক্রম করে বিথাইনিয়াতে প্রবেশ করলেন।   

এদিকে মিথ্রিডেটসের স্বেচ্ছাচারিতা আর নিষ্ঠুর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে বহু শহর এবার তার বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করল। মিথ্রিডেটস কিছু শহর দখল করলেও বাকিগুলো তাকে প্রতিহত করে। এদিকে ফ্ল্যাকাসের সেনারা লুটপাট করতে করতে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু ফ্ল্যাকাস সামরিক নিয়মকানুনের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন বলে সেনাদের যথেচ্ছ লুণ্ঠনে বাধা দেন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ফ্ল্যাকাসের অফিসার ফিম্ব্রিয়ার মদদে তাকে হত্যা করে ফেলে।  

ফিম্ব্রিয়া যোগ্য হলেও অত্যন্ত নিষ্ঠুর কম্যান্ডার ছিলেন। তিনি সেনাদের নির্বিচার লুণ্ঠনের সুযোগ দেন। শহরের পর শহর জয় করে তিনি দ্রুত মিথ্রিডেটসের মূল ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হন। নিকোমেডিয়া, সাইজিকাস, ইলিয়াম ইত্যাদি শহরে তাণ্ডব চালানো হয়।

ফিম্ব্রিয়ার বিজয়; Image Source: realmofhistory.com

মিথ্রিডেটসের বাহিনী রাইন্ডেকাস নদীর ধারে বিথাইনিয়াতে ফিম্ব্রিয়াকে বাধা দিতে চেষ্টা করল। ফিম্ব্রিয়া তাদের পরাজিত করে তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন উপকূলীয় পিটেন শহর পর্যন্ত। এরপর তিনি ফ্রাইজিয়াতে রোমানদের হৃত এলাকা পুনরুদ্ধার করেন।

৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

লুসেলাস এদিকে সাইপ্রাস, ফিনিশিয়া আর প্যাম্ফাইলিয়া থেকে নৌ সাহায্য পেলেন। ৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্তে রোডিয়ান নেভি আর লুসেলাসের বহর মিলে ইজিয়ানে মিথ্রিডেটসের নৌবাহিনীর উপর মরণাঘাত হানে। মিথ্রিডেটসের গর্বের বাহিনী টুকরো টুকরো হয়ে গেল। ফলে সুলার সামনে এশিয়া মাইনর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। 

রোম ও পন্টাসের নৌযুদ্ধ; Image Source: history.com

সমাপ্তি

পরাজয় নিশ্চিত বুঝে মিথ্রিডেটস সুলার শর্ত মেনে নিতে রাজি হন। সুলাও চাইছিলেন দ্রুত এই সমস্যার নিষ্পত্তি করে রোমে ফিরে যেতে, যেখানে মারিয়ানরা ক্ষমতা দখল করে আছে। বর্তমান তুরস্কের বিগা উপদ্বীপের দার্দানেস শহরে সুলা আর মিথ্রিডেটস মিলিত হন। শর্ত অনুযায়ী, মিথ্রিডেটস কাপ্পাডোসিয়া, বিথাইনিয়া এবং এশিয়া মাইনরে তার দখলকৃত সমস্ত এলাকা রোমের হাতে তুলে দেন, তার নৌবাহিনী আকারে ছোট করতে সম্মত হন এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে রোমকে তৎকালীন হিসাবে প্রায় ৩,০০০ ট্যালেন্টের সমপরিমাণ অর্থ দেন। তবে তিনি তার মূল রাজ্য, কিংডম অভ পন্টাস অক্ষুন্ন রাখতে সমর্থ হলেন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই চুক্তি ছিল মূলত মৌখিক, লিখিত আকারে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করে সুলা ফিম্ব্রিয়াকে দমন করতে চললেন। ফিম্ব্রিয়ার অনেক সেনাই সুলার দলে যোগ দিলে তিনি পার্গামমে পালিয়ে যান। সেখানেই তিনি আত্মহত্যা করেন। সুলা এরপর এশিয়া মাইনরে রোমের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করলেন। যেসব শহর মিথ্রিডেটসের পক্ষ নিয়েছিল, সেখানে রোমান গ্যারিসন স্থাপন করা হয় এবং তাদের উপর বিপুল জরিমানা ধার্য করা হয়, যা আজকের হিসেবে প্রায় ২৪ মিলিয়ন ডলার। ৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মুরেনাকে গভর্নরের দায়িত্ব দিয়ে সুলা গ্রিসের উদ্দেশে এশিয়া মাইনর ত্যাগ করলেন। সেখানে তিনি রোমান নিয়ন্ত্রণ জোরদার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক এলাকা পুনর্গঠন করলেন। এরপর ৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি ইতালির দিকে রওনা হন।

This is a Bengali language article as a part of the series about the rise of Ancient Rome. This article describes the events of the first Mithridatic Wars.

References

  1. Boak, A. E. R. (1921) History of Rome to 565 A. D. The Macmillan Company, New York, USA.
  2. Mark, J. J. (2017, December 04). Mithridates VI
  3. Rickard, J। (2008), First Mithridatic War, 89-85 B.C

Featured Image: Ancient History Encyclopedia

Related Articles