Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সংখ্যাগুলো এলো কোথা থেকে?

মানবজীবনের সাথে সংখ্যা জিনিসটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। আপনি যা-ই করুন না কেন, সেখানে সংখ্যার ব্যাপারটি চলে আসা অবধারিত। সময় কিংবা হিসাব; মানবজীবনের একটি অংশই হচ্ছে সংখ্যা। কিন্তু সেই সংখ্যার উৎপত্তি নিয়ে আছে বেশ রহস্য। অনেকের মতে, প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা থেকে গণনা শুরু হয়েছে। তবে আজ আমরা সংখ্যার উৎপত্তি নিয়ে বলবো না। বরং অন্য কিছু মজাদার বিষয় নিয়েই আলাপ হবে, যা হয়তো এতদিন আমাদের সামনেই ছিলো, কিন্তু আমরা সেসব নিয়ে সেভাবে চিন্তাই করিনি!

অনেকের মতে সংখ্যার উৎপত্তি সুমেরীয় আমলে; Image Source: Thought co

ইলেভেন এবং টুয়েলভ

ইংরেজী ভাষায় সংখ্যা গণনার সময় টেনের পর আমরা ইলেভেন ও টুয়েলভ উচ্চারণ করে থাকি। অথচ তার পরবর্তীতে স্বাভাবিক নিয়মে আমরা থার্টিন কিংবা ফোর্টিন এভাবে ক্রমাগত সামনে এগোতে থাকি। প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন আমরা ওয়ানটিন বা টুটিন বলি না?

মূলত ইংরেজী সংখ্যার গণনা হলেও শুধুমাত্র ইলেভেন ও টুয়েলভ নামকরণের পেছনে জড়িত আছে জার্মান ভাষা। জার্মান ভাষায় ‘এইনলিফ’ শব্দটির মানে হচ্ছে একটি বাকি। তেমনই ‘টুয়ালিফ’ মানে হচ্ছে দুটি বাকি। এই দুটি শব্দ পরবর্তীতে বিবর্তনের মাধ্যমে ইলেভেন ও টুয়েলভ হয়ে গেছে। তবে এর পরের সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে ‘লিফ’ অংশটি উঠে গিয়ে ‘টিন’ ব্যবহার শুরু হয়। যেখানে টিন শব্দটির মানে হচ্ছে দশের বেশি। আর তাই থার্টিনের পর থেকে ইলেভেন ও টুয়েলভের মতো না উচ্চারিত হয়ে সংখ্যাগুলো তাদের প্রাচীনত্ব হারায়।

১১ ও ১২ বাকীদের মতো উচ্চারিত না হয়ে একটু আলাদা; Image Source: Mental Floss

৯১১ কেন ইমার্জেন্সি কল ?

একেবারে শুরুর দিকের ফোন সিস্টেমগুলো কোনো নাম্বার ব্যবহার করতো না। অপারেটররা ম্যানুয়ালি কলগুলোর সাথে সংযোগ প্রদান করতো। তাই সেই সময় নির্দিষ্ট কোনো ইমার্জেন্সি কলও ছিলো না।

পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে যখন ফোন নাম্বারের প্রচলন হলো, তখন এ ব্যাপারে বেশ ঝামেলার সৃষ্টি হলো। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র কমিশন ইমার্জেন্সি কলের ক্ষেত্রে একটি সমাধান দাবি করে। AT&T ছিলো তৎকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিকম অপারেটর। তারা বেছে নিলো ৯১১ নাম্বারটি। এই সংখ্যাটি বেছে নেওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিলো তৎকালীন আমলের ঘূর্ণায়মান ফোন। ইমারজেন্সি কল মানেই যত দ্রুত ডায়াল তত সুবিধা। সেক্ষেত্রে রোটারি ফোনগুলোতে ৯১১ ডায়াল করতে লাগতো সবচেয়ে কম সময়। তাই এই সংখ্যাটিই বেছে নেয় টেলিকম অপারেটররা। ৯১১ ইমার্জেন্সি কল এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বহাল তবিয়তে টিকে আছে।

৯১১ ইমারজেন্সি নাম্বার হিসেবে এখনো টিকে আছে; Image Source: Getty Image

চার সংখ্যার পিন নাম্বার

১৯৬৭ সালে স্কটিশ আবিষ্কারক জন শেপার্ড ব্যারন একদিন ভাবলেন, একটি চকলেট বার পাওয়ার মতো ক্যাশ টাকা পাওয়াটা সহজলভ্য হওয়া উচিৎ। ব্যাংকের ঝক্কি ঝামেলা কমানোর উপায় খুঁজতে গিয়েই তার মাথায় প্রথম ক্যাশ মেশিন বা এটিএম বুথের চিন্তা মাথায় আসে। তার এই চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়ে লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংক সর্বপ্রথম এটিএম ব্যাংক প্রথা চালু করে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় শনাক্তকরণ।

এই সমস্যা দূরীকরণে এগিয়ে আসেন শেপার্ড ব্যারন। তিনি একটি বিশেষ পেপার চেক প্রথা চালু করেন, যা ছিলো অনেকটা আজকের ডেবিট কার্ডের মতো। প্রতিটি পেপার চেকে আলাদা ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ নাম্বার থাকতো, যা পরবর্তীতে পিন নাম্বার হিসেবে পরিচিত লাভ করে। শুধুমাত্র একাউন্টের মালিকই কেবল জানতে পারবে সেই পিন নাম্বার। প্রথমে শেপার্ড চেয়েছিলেন ছয় সংখ্যার পিন নাম্বার তৈরি করতে। কিন্তু এতে বাধ সাধেন তার স্ত্রী। তার মতে, ছয় সংখ্যার নাম্বার মনে রাখা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। তার চেয়ে চার সংখ্যার নাম্বার মনে রাখা সহজ হবে, পাশাপাশি একটি মানও বজায় রাখবে। তাই স্ত্রীর কথা শুনে শেপার্ড চার সংখ্যার পিন নাম্বার সিস্টেম চালু করেন। সেই সিস্টেমটি বিদ্যমান রয়েছে এখনো।

Image Source: Weird.com

ম্যারাথন দৌড়ে কেন ২৬.২ মাইল?

ম্যারাথন দৌড়ের প্রচলন সেই আদি গ্রিক সভ্যতার সময়ে। এর পেছনে রয়েছে একটি সুন্দর ঘটনা। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ সালে পার্সিয়ান ও অ্যাথেনিয়ানদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে যখন পার্সিয়ানরা পরাজয় বরণ করে, তখন সেই সংবাদ উদ্বিগ্ন অ্যাথেনিয়ানদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দৌড় শুরু করেন ফিডিপাইডস। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রায় ২৫ মাইল দৌড়িয়ে ম্যারাথন শহরে এসে এই খবর দেন ফিডিপাইডস। তার এই দৌড়ের স্মৃতি রক্ষার্থে এর পর থেকে প্রতি বছর ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করে হয়। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে সেটি, ২৫ মাইল না হয়ে কেন ২৬.২ মাইল হলো?

আধুনিক অলিম্পিকের জনক পিয়েরে দ্য কুবার্তো ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ম্যারাথন দৌড়টি শুরু করেন গ্রিসের সেই বিখ্যাত ম্যারাথন ব্রিজ থেকেই। সেবার দৌড়টির দূরত্ব ছিলো প্রায় ২৫ মাইল। পরবর্তী দুই অলিম্পিকে ম্যারাথনের নির্দিষ্ট কোনো দূরত্ব ছিলো না। ১৯০৮ লন্ডন অলিম্পিকে এসে দৌড়ের সীমা নির্ধারণ করা হয় উইন্ডসর ক্যাসল থেকে হোয়াইট সিটি স্টেডিয়াম পর্যন্ত, যা ছিলো প্রায় ২৬ মাইল। কিন্তু রাজকীয় পরিবারের ভিউইং বক্সের সামনে দৌড় শেষ করার জন্য স্টেডিয়ামের ভেতরে আরো অতিরিক্ত ৩৮৫ গজ দূরত্ব বাড়ানো হয়। আর তাতেই ম্যারাথন দৌড় হয় ২৬.২ মাইলের। সেবারই অলিম্পিক কমিটি ম্যারাথনের এই দূরত্বকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানায়।

সেই থেকে ২৬.২ মাইল ম্যারাথন দৌড় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

ম্যারাথন দৌড়; Image Source: Reader’s Digest

ফেব্রুয়ারি মাস কেন ২৮ দিনের?

বর্তমানে আমাদের ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার মূলত জর্জিয়ান ক্যালেন্ডার। তবে একেবারে প্রথমদিককার ক্যালেন্ডারগুলোর মধ্যে রোমান ক্যালেন্ডার অন্যতম। সেই সময় মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দশ মাস মিলে তৈরি করা হয়েছিলো রোমান ক্যালেন্ডার, যাতে দিন ছিলো ৩০৪টি। শীতকালীন সময়টা ফসলের জন্য উপযোগী ছিলো না বিধায় প্রথম দুই মাস রোমানরা ক্যালেন্ডার থেকে বাদ দেয়।

ঐতিহাসিকদের মতে, রোমের রাজা দ্বিতীয় নুমা পম্পিলাস ক্যালেন্ডারটিকে চন্দ্রচক্রের সাথে সমন্বয় করার জন্য পরিবর্তন করার মনস্থির করলেন। ডিসেম্বরের পরে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি নামে আরো দুটি মাস সংযুক্ত করলেন তিনি। সকল ৩১ দিনের মাস থেকে একদিন কেটে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্য তিনি ৫৬ দিন বরাদ্দ করলেন। তাতে করে ৩৫৪ দিনের চন্দ্র বছর ক্যালেন্ডারের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।

কিন্তু এতে বাধ সাধে রোমানদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন। সেই সময় জোড় সংখ্যাকে খারাপ ভাগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাই জানুয়ারিকে একদিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করে ক্যালেন্ডারে মোট দিনের সংখ্যাও বিজোড় করে দেন নুমা। কিন্তু একই কাজ ফেব্রুয়ারির সাথে করলে মোট দিন সংখ্যা ৩৫৬ হয়ে আবার জোড় হয়ে যেতো।

তাই নুমা ২৮ দিনের ফেব্রুয়ারি মাস বহাল রেখে দেন। পরবর্তীতে এই মাসকেই দুর্ভাগা মনে করে রোমানরা তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন শেষকৃত্যানুষ্ঠান পালনের জন্য বেছে নিতো ফেব্রুয়ারিকে। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি শব্দটি সাবাইন গোত্র থেকে আগত। এর অর্থ বিশুদ্ধকরণ।

প্রাচীন ক্যালেন্ডার; Image Source: Pinterest

This Bangla article is about the origin of different kind of number system. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Feature Image : Independent

Related Articles