প্রাচীন আরব কি সবুজে ঢাকা ছিল?

আরব উপদ্বীপ একটি বিস্তীর্ণ এবং বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত আরব উপদ্বীপ মানব সভ্যতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আরবের এই বিস্তীর্ণ মরুভূমি, যা প্রায় ২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। আরব উপদ্বীপের জলবায়ু গরম তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতযুক্ত। তবে বর্তমানে মরুভূমির মতো জলবায়ু থাকা সত্ত্বেও এমন কিছু প্রমাণ রয়েছে যে আরব একসময় আরও সবুজ এবং উর্বর ছিল। এই লেখায় আমরা প্রাচীন আরবের ভূগোল ও জলবায়ু সম্পর্কে জানবো, এবং আরবের প্রকৃতি যখন সবুজ ছিল সেই সময়ের ধারণা সম্পর্কে কথা বলবো।

যদিও আরব উপদ্বীপের প্রায় সব অংশ পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত, তবে অতীতে এমনটি ছিল না। উত্তর আফ্রিকা এবং আরব উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ মরুভূমির বেশিরভাগ অংশ একসময় সবুজে ঢাকা ছিল। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত করে যে এটি একসময় সবুজ এলাকা ছিল যা আফ্রিকা থেকে চলে আসা আদিম মানুষের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয়। প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে শুরু হওয়া হোলোসিনের সময় আরব উপদ্বীপের জলবায়ু ছিল অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত এবং আর্দ্র। এটি গাছপালা বিকাশ এবং মানব বসতির ইঙ্গিত দেয়। এই সময়কে ‘সবুজ আরব’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবং এটি প্রায় ৪,৫০০ থেকে ২,০০০ বছর আগপর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

আরব উপদ্বীপ যে তেলের বিশাল ভাণ্ডার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তেল হলো মৃত মাইক্রোস্কোপিক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর দেহাবশেষ, যারা লক্ষ লক্ষ বছর আগে মহাসাগর, নদী বা হ্রদে বাস করতো। অক্সিজেনের অভাব মৃত অণুজীবগুলো এসব হাইড্রোকার্বনে পরিণত হয়। আরব উপদ্বীপের দেশগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ রয়েছে। এই ধরনের বিশাল তেলক্ষেত্র থাকার অর্থ হলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, এমনকি শেষ বরফ যুগ শুরু হওয়ার আগে, আরব উপদ্বীপটি আজকের মতো শুষ্ক অনুর্বর ভূমি ছিল না; বরং হ্রদ এবং নদী অববাহিকার স্বর্গ ছিল। আর সেখানে বিচরণ করতো বহু প্রাণী।

প্রায় ৬,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নীলনদের উপত্যকার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে যেসব মানব সম্প্রদায় বাস করতো, একপর্যায়ে তাদের অনেকেই এশিয়ায় চলে আসে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূলত শুষ্ক মরুভূমির আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এই সম্প্রদায়গুলো আরবে আসতে আকৃষ্ট হয়। বর্তমানে আরব উপদ্বীপের বেশিরভাগ অংশ বালুকাময়, শুষ্ক এবং জনশূন্য হলেও এটি একসময় সবুজে ঢাকা ছিল। বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এরকম কিছু প্রমাণই সংগ্রহ করছেন। অতীতের আরব ছিল আর্দ্র আবহাওয়াসমৃদ্ধ, যেখানে পূর্ব আফ্রিকার সাভানার মতো পরিবেশ ছিল। বর্ষাকাল এবং গাছপালা বৃদ্ধির কারণে মৌসুমী বায়ু উত্তর দিকে সরে যায় এবং এই অঞ্চল আর্দ্র হয়ে ওঠে।

মানববসতির অবশিষ্টাংশ ‘সবুজ আরব’ যুগের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। এই সময়ে, বর্তমান শুষ্ক জলবায়ুর কারণে বসবাসের অনুপযোগী এলাকায় বৃহৎ জনবসতি গড়ে ওঠে। এই বসতিগুলো প্রায়শই শুকনো নদীর তলদেশের কাছাকাছি অবস্থিত ছিল, যা বর্ষাকালে জলে ভরা থাকতো। এই বসতিগুলোর অবশিষ্টাংশগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য, যেমন- বাড়ি ও সমাধি, সেই সাথে মৃৎশিল্প ও পাথরের হাতিয়ারের মতো শিল্পকর্ম।

সৌদি প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত একটি সাম্প্রতিক কনভেনশনে সৌদি আরবের বিভিন্ন অংশে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কিছু আবিষ্কার প্রকাশিত হওয়ার পর সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্বের ধারণা পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কনভেনশনের আয়োজক সৌদি কমিশন ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড এন্টিকুইটিস ন্যাশনাল হেরিটেজের (এসসিটিএইচ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী আল গাব্বান বলেন, “এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে আরব উপদ্বীপ একসময় একটি সবুজ জায়গা ছিল, বিশেষ করে আজকের মরুভূমি অঞ্চলগুলো।“

উত্তর সৌদি আরবের তাইমা প্রদেশের একটি শুকনো হ্রদের তলদেশে ৩,৫০,০০০ বছরের পুরনো একটি হাতির দাঁত পাওয়া গেছে। এছাড়া, প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে কুমির ও সামুদ্রিক ঘোড়ার মতো অন্যান্য প্রাণী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন যা শুষ্ক জলবায়ুতে বেঁচে থাকতে পারতো না। এছাড়াও গবেষক এবং বিজ্ঞানীরা আরব উপদ্বীপ জুড়ে ১০,০০০টি প্রাচীন হ্রদ এবং নদী আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া ৯০ হাজার বছরের পুরনো মানুষের হাড় এবং পাথরের সরঞ্জামও হ্রদের কাছে পাওয়া গেছে।

এক দশক আগপর্যন্ত, আরব উপদ্বীপটি বিজ্ঞানীদের জন্য তেমন কোনো আকর্ষণের স্থান ছিল না। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাথমিক বিবর্তন ও আফ্রিকার বাইরে তাদের ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাস এবং লেভান্ট অঞ্চলে প্রাথমিক মানববসতি সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যায়। আধুনিক ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ার কিছু অংশে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা করা হয়েছে। তবে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা দেখায় যে আরব উপদ্বীপ আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ার মধ্যে সেতু হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

জার্মানির জেনাতে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অব হিউম্যান হিস্ট্রির প্যালিওলিথিক প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল পেট্রাগ্লিয়া বলেছেন, “প্রাথমিক মানব অভিবাসনের মধ্যে আরবের কোনো নাম ছিল না, কারণ সেখানে আগে খুব কম কাজ করা হয়েছিল।” এই গবেষণা দলে জার্মানি, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য জায়গার বিজ্ঞানীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

প্রফেসর মাইকেল পেট্রাগ্লিয়া ১৯৭০ এর দশকে সৌদি সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে যা খুঁজে পেয়েছেন সৌদি আরবের বাইরে তা প্রায় সম্পূর্ণ অজানা। এই অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস যা আফ্রিকা থেকে আরব উপদ্বীপে মানুষের অভিবাসনের কার্যকর প্রমাণ দেখায়। “আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসার প্রথম ধাপ ছিল আরব, এবং আরবের এই বালির নীচে অনেক গোপন রহস্য রয়েছে। এমন একটি রহস্য যা এখন পর্যন্ত উপেক্ষিত হয়েছে।“

নেচার মিডল ইস্ট প্রকল্পে তিনি বলেছেন,

আমরা প্রথম যে কাজটি করেছি তা হলো রিমোট সেন্সিং। উদাহরণস্বরূপ, আমরা স্যাটেলাইট চিত্রগুলো দেখেছি এবং দেখতে পেয়েছি যে আক্ষরিক অর্থে হাজার হাজার প্রাচীন নদী রয়েছে যা সৌদি আরবকে অতিক্রম করেছে। আমরা এখন ১০,০০০ প্রাচীন হ্রদের সন্ধান পেয়েছি। আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক জিনিস হলো জীবাশ্ম আবিষ্কার। আমরা হাতির জীবাশ্ম পেয়েছি। এগুলো ছিল বিশাল প্রাণী, আফ্রিকান হাতির চেয়ে অনেক বড়। এছাড়া এখানে জলহস্তিও ছিল। যেহেতু জলহস্তিরা শুষ্ক পরিস্থিতিতে বাঁচতে পারে না, তাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য সবুজ পরিবেশ ও পানির দরকার ছিল। সুতরাং, আরব জুড়ে অবশ্যই প্রচুর হ্রদ নদী ছিল, এবং এই প্রাণীদের খাওয়ার জন্য গাছপালা ও প্রচুর ঘাস ছিল।

“প্রবাহিত নদী এবং হ্রদ, তৃণভূমি এবং সাভানা দ্বারা বেষ্টিত, প্রাণীদের আকৃষ্ট করতো এবং তারপরে মানুষরা তা অনুসরণ করেছিল,” তিনি আরও বলেন,

আরব উপসাগরের একটি সুপরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড রয়েছে, যা ১০,০০০ বছর পুরনো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করেছে, কীভাবে সমাজের মানুষেরা শিকারী-সংগ্রাহক থেকে পশু-শিকারী এবং জেলেদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে তা পরীক্ষা করে আরও ভালভাবে বোঝা দরকার। এছাড়া আরব উপসাগরের গভীরে এমন নিদর্শন রয়েছে, যা ১,০০,০০০ বছর বা তারও বেশি আগের গোপন ইতিহাসকে বহন করতে পারে। এজন্য এই অঞ্চলে বিস্তারিত প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এবং খনন অত্যন্ত প্রয়োজন।

উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবের প্রাগৈতিহাসিক কালে প্রাপ্ত পাথরের উপর চিত্রিত প্রাণীর ছবির উপর নতুন গবেষণায় দেখা গেছে এখানে একসময় সেসব প্রাণী ও মানুষরা বিচরণ করত, এবং তারা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবিত হয়। ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং সৌদি কমিশন ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড ন্যাশনাল হেরিটেজের সহযোগিতায় প্যালিওডেজার্টস প্রজেক্টের গবেষকরা প্রাণীদের ছবিসহ ২৫৪টি পাথরে খোদাই করা চিত্রশিল্পের একটি অংশ খুঁজে পেয়েছেন। গ্রেট নাফুদ মরুভূমির জাবাল উম্ম সানমানে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হ্রদের তীরে পাথরে খোদাই করা চিত্রশিল্প, এপিগ্রাফি এবং মানুষের বসবাসের প্রমাণ মিলেছে, যার বয়স প্রায় ৮,০০০ বছর। এটি বর্তমানে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য বিবেচনাধীন রয়েছে।

প্রায় ১১,০০০ থেকে ৬,০০০ বছর আগে আর্দ্র আবহাওয়ার শেষ পর্যায়টি ছিল বলে ধারণা করা হয়। এরপর আরব তার বর্তমান শুষ্ক অবস্থায় ফিরে আসে এবং মরুভূমিতে পরিণত হয়। প্রায় ৫,০০০ বছর আগে আরব অঞ্চল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু আরবের লোকেরা খুব চালাক ছিল; তারা চমকপ্রদ এবং উদ্ভাবনী কাজ করেছে। তারা গৃহপালিত প্রাণী, এমনকি উদ্ভিদকেও তাদের অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করে, এবং ভূগর্ভস্থ কূপ খনন করতে শুরু করে, যা তাদের খরার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার আশা দেখায়।

মানুষ মরুদ্যানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। পরে এই অঞ্চলে উটের আগমন ঘটে এবং এরা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি মানুষকে এক মরুভূমি থেকে অন্য মরুভূমিতে সংযুক্ত হতে, এবং সেই শুষ্ক মরুভূমি জুড়ে পণ্য বাণিজ্য ও বিনিময় করার সুযগ দেয়। এই চিত্র কেবল গত কয়েক হাজার বছরের। এটি বেশ নতুন জীবনধারা যা গত ১০,০০০ বছরে তৈরি হতে শুরু করেছে। এর আগে সেখানে শুধুমাত্র শিকারিদের আনাগোনা ছিল।

বিবিসি-তে সিলভিয়া স্মিথ ব্যাখ্যা করেছেন, গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে আদি মানবরা আরবে যাওয়ার দুটি নদীপথ অনুসরণ করেছিল; একটি আধুনিক দিনের হর্ন অফ আফ্রিকার ল্যান্ডব্রিজ ধরে, এবং অন্যটি সিনাই উপদ্বীপ জুড়ে। যদিও গবেষকরা এই আদি মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পাননি, তবে তাদের পাথরের হাতিয়ারগুলো পূর্ব আফ্রিকায় প্রাপ্ত হাতিয়ারগুলোর মতোই। সৌদি কমিশন অন ট্যুরিজম অ্যান্ড ন্যাশনাল হেরিটেজের ডেপুটি ডিরেক্টর আলি ইব্রাহিম আল ঘাবান স্মিথকে বলেছেন, “এটা অনুমান করা যুক্তিসঙ্গত যে শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষ আরবে কমপক্ষে ১,২৫,০০০ বছর ধরে, এবং সম্ভবত আরও কিছুটা বেশি সময় ধরে আছে।“

দ্য হোলোসিন জার্নালে মে মাসে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় গবেষকরা প্রাণীর খোদাই বিশ্লেষণ করে ১৬ প্রজাতির প্রায় ১,৫০০ প্রাণী শনাক্ত করেছেন। পাথরে খোদাই করা শিল্পকর্ম (যদিও এর সময় নির্ণয় করা কঠিন) আর্দ্র পরিবেশের সাথে মিলে যায়। তারা দেখেছেন যে প্রাথমিক খোদাই যুগে চিতা, চিতাবাঘ, হায়েনা, অ্যারাবিয়ান নেকড়ে, গাজেল, সিংহ, আইবেক্স এবং একধরনের বন্য গাধাসহ বিস্তৃত বন্যপ্রাণী রয়েছে যা ওনেজার নামে পরিচিত। শিকারী কুকুর ও গবাদি পশুর মতো গৃহপালিত প্রাণীও দেখা যায়, এবং শিকারী-সংগ্রাহক থেকে পশুপালকদের মধ্যে মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

পরবর্তী পর্যায়ে বন্যপ্রাণীর এসব চিত্রকর্ম অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যায়। গবাদি পশুর ছবিও অদৃশ্য হয়ে যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে চারণভূমি সব শুকিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে এই শিল্পকর্মগুলো মরুভূমি অভিযোজিত গৃহপালিত প্রাণী, যেমন- উট, ঘোড়া এবং গাধা দিয়ে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই গবেষকরা পেট্রোগ্লিফের দিকে ঝুঁকেছেন (খোদাই করা ছবি, যা পাথরে আঁকা হয়েছে), যা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হাইলের কাছে শুওয়াইমিস নামক স্থানে বেলেপাথরকে ইঙ্গিত করে। সেখানে একটি শুষ্ক জলপথের দু’পাশে পাথরের উপরে বিভিন্ন ফসলের চিত্র ফুটে উঠেছে। বেদুইন আরবরা সম্ভবত এই চিত্রগুলো সম্পর্কে জানতেন।

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী অক্ষের ২৪.১ ডিগ্রি থেকে বর্তমান ২৩.৫ ডিগ্রিতে পরিবর্তনের কারণে মৌসুমী বৃষ্টিপাত পিছিয়ে গেছে, যা এই অঞ্চলের ভূমিকে সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এনেছে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে জলবায়ুর পরিবর্তন এই মরুভূমিকে আবারও সবুজ করে তুলতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, সবুজ আরবের চক্রাকার প্রকৃতির অর্থ হলো ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময় এই অঞ্চলটি আবার জমকালো এবং গাছপালায় পূর্ণ হয়ে উঠবে, যদিও গবেষকরা নিশ্চিত নন যে এটি কখন ঘটতে পারে এবং সাধারণভাবে জলবায়ু পরিবর্তন সবুজায়ন সৃষ্টিতে বাধা দেবে কিনা।