বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর স্যামসন নিজের বাড়িতে ফিরে এলেন, এরপর বিয়ের দিন তারিখ ঘনিয়ে এলে আবার রওনা করলেন। যখন তিনি ঐ জায়গাটা অতিক্রম করছিলেন, যেখানে সিংহকে মেরেছিলেন, দেখলেন, সিংহের লাশের ওখানে মৌমাছি বাসা বেঁধেছে। তিনি সেখান থেকে সুমিষ্ট মধু সংগ্রহ করলেন, বাবা-মাকেও দিলেন।
বিয়ের আসরে, উপস্থিত ৩০ জন কনেপক্ষের ফিলিস্তিনিকে তিনি ধাঁধা ছুড়ে দিলেন। শর্ত ছিল, যদি তারা সমাধান করতে পারে, তবে তিনি তাদের তিরিশখানা সুন্দর লিনেন পোশাক দেবেন, আর না সমাধান করতে পারলে তারা তাকে দেবে সমপরিমাণ।
ধাঁধাটা ছিল সিংহের ঘটনা নিয়েই। [বাংলা না বরং ইংরেজি অনুবাদটাই দেয়া হলো-]
“Out of the eater came something to eat. Out of the strong came something sweet.”
ফিলিস্তিনিরা খুব গুরুত্ব সহকারেই নিল ব্যাপারটা। সমাধান করতে হিমশিম খেতে লাগল। তারা স্যামসনের নতুন স্ত্রী তিমনাহের কাছে গেল এবং হুমকি দিল, ধাঁধার উত্তর স্বামীর কাছ থেকে বের করতে না পারলে তার এবং তার বাবার বাড়ি পুড়িয়ে দেবে।
তিমনাহ অশ্রুভরা মুখে স্যামসনকে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো ধাঁধার রহস্য। একপর্যায়ে স্ত্রীকে তিনি ঘটনাটা খুলে বললেন। শীঘ্রই ফিলিস্তিনিদেরকে তিমনাহ বলে দিলেন সেটা।
যখন স্যামসন বুঝতে পারলেন তার স্ত্রী তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তিনি বেরিয়ে গেলেন, দূরের এক ফিলিস্তিনি গ্রামে খুন জখম করে ৩০ খানা পোশাক নিয়ে এসে তাদেরকে দিলেন। কিন্ত তিনি রাগের বশে নিজের বাবার বাড়িতে চলে এলেন।
ওদিকে তিমনাহর বাবা তিমনাহকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিলেন। যখন রাগ পড়ে এলে স্যামসন ফিরে এলেন, তখন তিনি আবিষ্কার করলেন তার বউ আর নিজের বউ নেই। তিনি ক্রোধে ৩০০ শেয়াল যোগাড় করলেন, এরপর তাদের লেজে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গ্রামের ক্ষেতে ছেড়ে দিলেন। তাদের সকল শস্য পুড়ে গেল। স্যামসন এ গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন।
যখন ঐ গ্রামের ফিলিস্তিনিরা জানতে পারল, কেন স্যামসন এরকম করেছে, তখন তারা তিমনাহসহ তার বাবাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলল।
ওদিকে ক্রোধে পাগল স্যামসন একের পর এক ফিলিস্তিনি হত্যা করতে লাগল। উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি নিধনকে তেমন পাপ কাজ বলে মনে করত না ইসরাইলিরা, অন্তত ওল্ড টেস্টামেন্টের ঘটনাগুলো পড়লে সেটাই মনে হয়।
৩০০০ সেনা নিয়ে ফিলিস্তিনি বাহিনী এতাম গুহাতে লুকিয়ে থাকা স্যামসনকে ধরতে আসলো। তাকে আটকে রাখা দড়ি তিনি সহজেই ছিড়ে ফেললেন, এরপর ওখানে ১০০০ ফিলিস্তিনি হত্যা করলেন।
এরপর তিনি ফিলিস্তিনের গাজাতে চলে গেলেন। সেখানেও তার শক্তির খেল দেখালেন। তারপর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তের সোরেক গ্রামে কিছুদিন থাকার পর তিনি আরেক নারীর প্রেমে পড়ে গেলেন। তার নাম ছিল দেলিলা (Delilah)।
তার পুরনো শত্রু ফিলিস্তিনিরা পিছু ছাড়েনি। তারা লুকিয়ে দেলিলাকে ১১০০ রুপার মুদ্রা ঘুষ দিল, বিনিময়ে তাকে বের করতে হবে স্যামসনের শক্তির রহস্য কী। স্যামসন দেলিলাকে কোনোমতেই বললেন না কিছু, কোনো নারীকে বিশ্বাস করতে পারতেন না আর।
ক’বার মশকরা করে বলে দিলেন, ধনুকের দড়ি দিয়ে তাকে বাঁধলে তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন। ঘুমন্ত স্যামসনকে সেই দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে দেলিলা। কিন্তু স্যামসন সে দড়ি ছিড়ে ফেলে। স্যামসনকে বোঝায় দেলিলা, সে আসলে কেবল মজা করছিল।
আবারও ক’দিন পর দেলিলা জিজ্ঞেস করল, এবার স্যামসন বলল, নতুন, একদম নতুন দড়ি দিয়ে তাকে বাঁধলে শক্তি হারাবেন তিনি। সে রাতেও একই ঘটনা ঘটল। ঘুমন্ত স্যামসন জেগে উঠে দড়ি ছিড়ে ফেললেন।
ক’দিন পর তৃতীয়বারের মতো স্যামসন তাকে ভুল উত্তর দিয়ে দেখলেন দেলিলা আবারো তাকে কাবু করার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু দেলিলা পরে তাকে ধরে বসল, যদি স্যামসন তাকে আসলেই এত ভালোবাসে তবে কেন সে তার গোপন কথা শেয়ার করছে না? (উল্লেখ্য, স্যামসন মদ না পান করাতে মাতাল করে দেলিলা উত্তর বের করতে পারেনি)
এ কথাতে গলে গিয়ে স্যামসন তাকে বলে ফেললেন সত্যটা, তার চুল কেটে ফেললে তিনি শক্তি হারাবেন। সেদিন রাতে তা-ই হলো, তার চুল কেটে দেয়া হলো। শক্তিহীন স্যামসনকে সে রাত্রে ফিলিস্তিনিরা ধরে নিয়ে গেল গাজাতে, তারা তার দু’চোখ উপড়ে ফেলল।
ফিলিস্তিনিরা তাদের দেবতা দাগনকে বড় একটা উৎসর্গ দিল তাদের হাতে স্যামসনকে দেবার জন্য।
স্যামসনের কীর্তি দেখানোর জন্য ৩০০০ ফিলিস্তিনি জড়ো হলো হল রুমে। দুই পিলারের সাথে অন্ধ স্যামসনকে বেঁধে রাখল।
স্যামসন শেষবারের মতো শক্তি চেয়ে নিলেন ঈশ্বরের কাছে। এবং সে শক্তি ব্যবহার করে তিনি দুটি পিলার ভেঙে ফেললেন। পুরো হলরুম ধ্বসে পড়ল। স্যামসনের সাথে সাথে ৩০০০ ফিলিস্তিনিও মারা পড়ল। দেলিলার কী হলো সেটা কোনো গ্রন্থে বলা নেই, কিন্তু স্যামসনের লাশ সমাহিত করা হয় তার বাবা মানোয়ার কবরের পাশেই।
২০১২ সালের আগস্টে, ইসরাইলের তেলআভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকগণ বাইবেল মতে স্যামসনের এলাকার ওখানে একটি বৃত্তাকার সীল পান, যেখানে সিংহ আর শক্তিশালী লোকের ছবি আঁকা ছিল। তবে তারা এটাও বিবৃতি দেন যে, এ আবিষ্কার নিশ্চিত করে না যে সীলের এই ব্যক্তিই স্যামসন।
যা-ই হোক, মোটামুটি এরকম সময়েই ইসরায়েলের হাল ধরেন নবী হযরত শামুয়েল (আ) (Samuel)। তার হাত দিয়ে ইসরায়েলের নতুন এক যুগ শুরু হয়। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি অচেনা কণ্ঠে তাকে ডাকতে শুনতে পেতেন। প্রথম প্রথম ভেবেছিলেন তার বাবা ডাকছে। একদিন রাত্রে ডাক পেয়ে বাবার কাছে গেলে বাবা বললেন, তিনি ডাকেননি, এরপর শামুয়েলকে ঘুমোতে যেতে বললেন। শীঘ্রই শামুয়েল বুঝতে পারলেন, এটা আসলে ঐশ্বরিক স্বর। তিনি তখন বললেন, “বলুন, প্রভু, আপনার বান্দা শুনছে।” এরপর আল্লাহ্ তাকে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে অনিষ্ট দূর করবার পথ দেখাতে শুরু করলেন। তিনি ছিলেন অনেক দিন পর ইসরাইলের একজন বড় নবী। তার শেষ বয়সে ইসরাইলের লোকেরা চাচ্ছিল অন্য জাতির মতো তাদের একজন রাজা থাকুক।
ইহুদী গ্রন্থের পাশাপাশি কুরআনও শামুয়েলের এ ঘটনা বর্ণনা করে-
“মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী (শামুয়েল) বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইয়ের হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে। অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা’আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন।” [কুরআন ২:২৪৬]
আল্লাহ্র আদেশে নবী শামুয়েল (আ) সল (Saul)/তালুত-কে (আরবিতে) রাজা হিসেবে মনোনীত করলেন। কিন্তু গরীব ঘর থেকে উঠে আসায় তাকে ইহুদীরা মেনে নিতে অস্বীকার করল প্রথমে।
“আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপর? অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশি। আর সে সম্পদের দিক দিয়েও সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তাকে পছন্দ করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত।” [কুরআন ২:২৪৭]
আল্লাহ্ যে সত্যিই তাকে মনোনীত করেছেন তার প্রমাণ হিসেবে ইহুদীদের হারিয়ে ফেলা আর্ক অফ দ্য কোভেন্যান্ট সিন্দুক তাদের কাছে ফিরে আসবে, এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো। কুরআন বলছে-
“বনী-ইসরাঈলদেরকে তাদের নবী আরো বললেন, তালূতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে তোমাদের পালকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনের সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে থাকবে মূসা, হারুন এবং তাঁদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে।” [কুরআন ২:২৪৮]
তালুত ছিলেন ইসরাইলের প্রথম রাজা। প্রথমদিকে খুবই ভালো শাসন চালাতে লাগলেন তিনি। আশপাশের অনেক রাজ্যেই বিজয় ছিনিয়ে আনলেন। তার প্রতাপে মোয়াব, আমোন, এদোম, জোবাহ, আমালিকিয় এবং ফিলিস্তিনিরা কাঁপতে লাগলো। তাদের সাথে অনেক যুদ্ধেও অবতীর্ণ হন তিনি। এবং তাকে কী করতে হবে না হবে সেটা শামুয়েলের মাধ্যমে আল্লাহ্ বলে দিতেন।
কিন্তু একপর্যায়ে তালুত নিজেই নিজের কথা মতো চলা শুরু করলেন, শামুয়েলের পরামর্শ না নিয়ে। যেমন ফিলিস্তিনিদের সাথে একবার যুদ্ধে যাবার কথা তখন, শামুয়েল জানালেন তিনি সাত দিনের মাঝে উপস্থিত হবেন এবং যুদ্ধে যাবার আগের আচারগুলো পালন করে দেবেন। কিন্তু এতক্ষণ অপেক্ষা করতে রাজি হলেন না তালুত, তিনি নিজেই কুরবানি দেয়া শুরু করলেন, যেটা শামুয়েলের দেবার কথা। তালুতকে অনেক কথা শোনালেন শামুয়েল (আ)।
পরে একবার শামুয়েল (আ) জানালেন, তালুতকে আমালেকীয় রাজ্য আক্রমণ করতে হবে, বিশেষ নির্দেশ ছিল- এমনকি রাজাকেও মেরে ফেলতে হবে। কিন্তু তালুত সেটা না করে যুদ্ধ জেতার পর অন্য সবাইকে মারলেও রাজাকে জীবিত রাখলেন।
শামুয়েল এটা জানবার পর তালুতকে জানালেন, তালুত এখন রাজা হিসেবে যোগ্য না, কারণ সে আদেশ অমান্য করে চলেছে। শামুয়েল চলে যাবার জন্য ফিরতেই পেছন থেকে তালুত তার আলখাল্লা আকড়ে ধরল। শামুয়েলের আলখাল্লা ছিড়ে গেল, তালুতের হাতে আলখাল্লার এক টুকরো চলে এলো। শামুয়েল বললেন, এভাবে একদিন তার রাজ্যও তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। এরপর শামুয়েল (আ) নিজ হাতে আমালেকীয় সেই রাজাকে হত্যা করে বেরিয়ে গেলেন। বেরিয়ে পড়লেন নতুন যে রাজা হবে তাকে গোপনে মনোনয়ন করতে।
রাজা তালুত তখন অশান্ত হয়ে পড়লেন। পরের কিছু মাস তিনি একদমই মন বসাতে পারতেন না কিছুতেই। তাকে যেন দুর্ভাগ্য তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তিনি মন শান্ত করা সুর শুনতে চাইলেন। সভাসদরা পরামর্শ দিল এক বীণাবাদকের নাম, সে নাকি খুব ভালো বীণা বাজাতে পারে, সুরেলা কণ্ঠ আছে তার। বাইবেল বলছে, তখন সেই বালককে নিয়ে আসা হলো বেথেলহেম থেকে, যে আদতে কেবল এক মেষপালক ছিল।
ওদিকে তালুতের ঘুম হারাম হয়ে গেল যখন দেখলেন ফিলিস্তিনিরা বিশাল বাহিনী নিয়ে ইজরায়েলের উপর প্রতিশোধ নিতে আসছে। এক নিচু উপত্যকায় দু’বাহিনী মুখোমুখি হতে রওনা হলো। ফিলিস্তিনি সেনাবাহিনীকে সে মুহূর্তে সবাই ভয় পেত, কারণ তাদের একজন ভয়ংকর যোদ্ধা ছিল যার নাম ছিল গোলায়াথ, বা আরবিতে জালুত। তাকে ফিলিস্তিনি বাহিনী “চ্যাম্পিয়ন” মনোনয়ন দেয়। অর্থাৎ সম্মুখ যুদ্ধে একজনের বিপক্ষে আরেকজনের লড়াইতে ফিলিস্তিনি বাহিনীকে প্রতিনিধিত্ব করবে জালুত। জালুত ফিলিস্তিনের রাজা না হলেও, তার নামেই ফিলিস্তিনি বাহিনী পরিচিতি পেয়ে যায়, তার দানবীয় শক্তির যশে।
এখানে কুরআন একটি কাহিনী জানায় যেটা বাইবেলে অনুপস্থিত-
“অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরোলো, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তু যে লোক হাতের আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষ অবশ্য তেমন গুরুতর হবে না। অতঃপর সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন ছাড়া। পরে তালূত যখন তা পার হলো এবং তার সাথে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত এবং তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে।” (কুরআন ২:২৪৯)
সেই সুরেলা কণ্ঠের প্রাক্তন মেষপালক তখন ইসরাইলের বাহিনীতে তার তিনজন বড় ভাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে আসছিল, বড় ভাইয়েরা সৈন্য ছিল। সে ফিলিস্তিনিদের মুখে ইসরাইলের প্রভুর নিন্দা শুনে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে কড়া কথা বলল, সেটা অন্যরা শুনে তালুতের কাছে রিপোর্ট করে দিল। তালুতের সামনে তাকে উপস্থিত করা হলে সে বলল, সে চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। তালুত নিজের বর্ম খুলে তাকে পরিয়ে দিলেন।
ছেলেটির নাম ছিল দাউদ, বেথেলহেমের দরিদ্র মেষপালক ইয়াসির পুত্র। ধর্মীয় ইতিহাসের বিখ্যাত সেই দ্বন্দ্বযুদ্ধে গুলতি ছুঁড়ে দাউদ জালুতকে লুটিয়ে ফেললেন মাটিতে। বিশাল জালুত/গোলায়াথের সামনে দাউদ বা ডেভিডকে লাগছিল একদম পুঁচকে। (এজন্য David vs Goliath বলতে এখন বড়-ছোটর অসম যুদ্ধ বোঝানো হয় এখন)
কিন্তু তালুত জানতেন না, এই সেই কিশোর যাকে নবী শামুয়েল (আ) গোপনে ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে মনোনীত করেছেন। তিনি জানতেন না ভবিষ্যতে রাজপুত্র জোনাথানের সাথে ছেলেটির বন্ধুত্ব কোন পরিণতিতে গড়াবে, জানতেন না এই সামান্য ছেলেটি বড় হয়ে তাকে স্থলাভিষিক্ত করবে। জানতেন না, এ ছেলেটিই হবে নবী দাউদ (আ) এবং ইসরায়েলের বিখ্যাততম রাজা, কিং ডেভিড। যে দাউদ (আঃ) ও তার পুত্র সুলাইমান (আ) সূচনা করবেন ইসরাইলের স্বর্ণযুগের!
পরবর্তী সিরিজে থাকবে সেই ঘটনাগুলোই।
আর এ সিরিজের পর্বগুলো হলো:
প্রথম পর্ব: ইহুদী জাতির ইতিহাস: সূচনা পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব: মিশরে যাবার আগে কেমন ছিল বনি ইসরাইল?
তৃতীয় পর্ব: হযরত ইউসুফ (আ): দাসবালক থেকে মিসরের উজির- ইহুদী জাতির ইতিহাস
চতুর্থ পর্ব: ইউসুফ-জুলেখার কাহিনীর জানা অজানা অধ্যায়
পঞ্চম পর্ব: মসজিদুল আকসা আর বাইতুল মুকাদ্দাসের ইতিবৃত্ত
ষষ্ঠ পর্ব: দাসবন্দী বনী ইসরাইল এবং হযরত মুসা (আ:) এর জন্ম
সপ্তম পর্ব: মিসরের রাজপ্রাসাদ থেকে সিনাই পর্বত
অষ্টম পর্ব: সিনাই পর্বত থেকে ফারাওয়ের রাজদরবার
নবম পর্ব: মিসরের অভিশাপ
দশম পর্ব: দ্বিখণ্ডিত লোহিত সাগর, এক্সোডাসের সূচনা
একাদশ পর্ব: মরিস বুকাইলি আর ফিরাউনের সেই মমি
দ্বাদশ পর্ব: তূর পর্বতে ঐশ্বরিক সঙ্গ এবং তাওরাত লাভ
ত্রয়োদশ পর্ব: ইসরাইলের বাছুর পূজা এবং একজন সামেরির ইতিবৃত্ত
চতুর্দশ পর্ব: জীবন সায়াহ্নে দুই নবী
পঞ্চদশ পর্ব: রাহাব ও দুই গুপ্তচরের কাহিনী
ষোড়শ পর্ব: জেরিকোর পতন এবং স্যামসনের অলৌকিকতা
সপ্তদশ পর্ব: এক নতুন যুগের সূচনা
বোনাস প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল:
দ্য ফার্স্ট মুসলিম: একজন ইহুদীর চোখে মহানুভব হযরত মুহাম্মাদ (সা)