মুম্বাই ঠিক কবে অর্থনীতিতে কলকাতাকে পেছনে ফেলেছিল, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমন প্রশ্ন অনেকের কাছেই অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক, এবং রীতিমতো হাস্যকর ঠেকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একসময় সত্যি সত্যিই কলকাতা অর্থনীতিতে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) চেয়ে। যদিও সেসব এখন সুদূর অতীত, তবু চলুন ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলিয়ে জেনে নিই, কবে কীভাবে কলকাতাকে পেছনে ফেলেছিল বোম্বে?
কলকাতা যখন ছিল ভারতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র
ব্রিটিশ আমলের সিংহভাগ জুড়ে কলকাতা কেবল ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক রাজধানীই ছিল না, ছিল বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রস্থলও। সেই ১৯৭৪ সালেই চার্লস কিন্ডলবার্জার তার The Formation of Financial Centers: A Study in Comparative Economic History শীর্ষক নিবন্ধে দেখিয়েছিলেন, ১৮৭১ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে অধিকাংশ সময়েই কলকাতার বাণিজ্যের পরিমাণ বোম্বের চেয়ে বেশি ছিল।
আর ঠিক সে কারণেই, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় উপনিবেশে জয়েন্ট স্টক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা করার, তারা স্বাভাবিকতই শুরুতে বেছে নিয়েছিল কলকাতাকে। ১৮০৬ সালে কলকাতায় জয়েন্ট স্টক ব্যাংকিংয়ের সূচনা ঘটে। আর বোম্বেতে এরও ৩৪ বছর পর, ১৮৪০ সালে। পাশাপাশি মাদ্রাজেও (বর্তমান চেন্নাই) একটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৩ সালে।
ব্যাংকিংয়েও কলকাতাই ছিল এগিয়ে
ব্যবসায়িক সূচকের মতোই, প্রেসিডেন্সি ব্যাংকসমূহের ইতিহাসে অধিকাংশ সময়েই ব্যাংক অব বোম্বের থেকে এগিয়ে ছিল ব্যাংক অব বেঙ্গল। এর মূল কারণ ছিল জনসংখ্যা। বোম্বের তুলনায় বঙ্গভূমির জনসংখ্যা অনেক বেশি থাকায়, ব্যাংক অব বেঙ্গলের গ্রাহকসংখ্যাও অনুমিতভাবেই বেশি ছিল।
একদিকে গ্রাহকসংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যাংক অব বেঙ্গলের সাধারণ জামানত বেশি তো ছিলই, সেইসাথে রাজনৈতিক রাজধানী হওয়ার সুবাদে সরকারি গচ্ছিত অর্থও ছিল বিশাল পরিমাণের। এই আধিপত্য ১৯১৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। কিন্তু ক্রমশই বোম্বে ব্যবধান কমিয়ে আনতে থাকে, যার প্রমাণ আমরা পাই নিচের পরিসংখ্যানে।
নতুন কোম্পানি চালুর প্রবণতাও ছিল কলকাতাতেই বেশি
ব্যাংকিং থেকে এবার যদি আসি নতুন নতুন কোম্পানি চালুর দিকে, দেখবো বোম্বের তুলনায় বাংলায় এই প্রবণতা ছিল ঢের বেশি। পুরো ভারতবর্ষে চালু হওয়া বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪৫-৫০%-ই ছিল বাংলায়, যেখানে বোম্বেতে সেই পরিমাণ মাত্র ১৩-১৫%। তবে রুপি কোম্পানির ক্ষেত্রে ১৯১৮ নাগাদ বোম্বে (৪০%) অনেকটাই ধরে ফেলে কলকাতাকে (৪৩%)। স্টার্লিং কোম্পানির ক্ষেত্রে আবার কলকাতাই (৭৩%) বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বোম্বের (১৯%) চেয়ে। এর মূল কারণ হলো চা কোম্পানিগুলো, যার অধিকাংশই স্টার্লিং কোম্পানির অধীনে ছিল।
কলকাতার পিছিয়ে থাকা যেখানে
তবে মাথাপিছু তুলনায় কিন্তু কলকাতার চেয়ে বোম্বেই ভালো অবস্থানে ছিল, যা থেকে বোম্বের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতাই প্রতীয়মান হয়। ব্যাংক অব বেঙ্গলের চেয়ে ব্যাংক অব বোম্বেতে জনপ্রতি গচ্ছিত অর্থ ছিল অন্তত চারগুণ বেশি!
এবং যদি কোম্পানিগুলোকেও বিবেচনায় আনি, কলকাতার কোম্পানিগুলোর চেয়ে বোম্বের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক মূলধনই ছিল বেশি। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে কলকাতা এগিয়ে থাকলেও, গড় বিবেচনায় বোম্বের অবস্থাই তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল।
কবে থেকে কলকাতার চূড়ান্ত অবনমন শুরু?
কিন্তু এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, কবে বোম্বে সবধরনের হিসাব-নিকাশেই কলকাতাকে পরিষ্কারভাবে পেছনে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছিল? ক্লিয়ারিং হাউজের (নিকাশ ঘর) পরিসংখ্যান থেকে এ ব্যাপারে প্রাথমিক কিছু ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য প্রেসিডেন্সি ব্যাংক ও স্থানীয় ব্যাংকগুলোর মিলিত উদ্যোগে ক্লিয়ারিং হাউজগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯১৩ সালে ভারতে ক্লিয়ারিং হাউজগুলোতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৫,০৩৫ লক্ষ রুপি। এর মধ্যে কলকাতায় লেনদেন ছিল ৫১%, অন্যদিকে বোম্বেতে মাত্র ৩৩.৭%। মাদ্রাজের ভাগ ছিল ৩.৬%, আর দিল্লির একেবারেই নগণ্য। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে ক্রমশই কলকাতা ও বোম্বের মধ্যকার ব্যবধান ঘুচে যেতে থাকে। ১৯৪৭ সালে এসে তাদের পরিমাণ প্রায় সমান-সমান হয়ে যায়। এবং এরপরের ইতিহাস, বোম্বের কলকাতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলার ইতিহাস।
১৯৫০ সালের মধ্যেই, বোম্বের লেনদেনের পরিমাণ কলকাতার চেয়ে প্রায় ৬%* এর থেকেও বেড়ে যায়। কলকাতার হিস্যা যেখানে কমে ২৮%-এ দাঁড়ায়, বোম্বেতে তা ছিল ৩৫%। ওদিকে ১৯৪৭ সাল থেকেই মাদ্রাজের হিস্যা ৫-৬% এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল।
দিল্লির হিস্যাও সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে, যার পেছনে মূল অবদান পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অব কমার্সের, যেটি পাকিস্তান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে দিল্লিতে তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছিল।
এখানে উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে অন্য ক্লিয়ারিং হাউজগুলোতেও লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছিল। কেননা স্বাধীন দেশের ব্যাংকিং খাতকে বিস্তৃত করার জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট শহরগুলোতেও একের পর এক ক্লিয়ারিং হাউজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। ফলে লড়াইটা এখন আর কেবল কলকাতা ও বোম্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এরই মধ্যে আবার পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট ব্যবস্থারও প্রচলন ঘটে, যার ফলে ক্লিয়ারিং হাউজগুলোর আর একক সাম্রাজ্য ছিল না। তারা পরিণত হয়েছিল অনেকগুলো সম্ভাব্য উপায়ের মধ্যে নিছকই একটি সাধারণ উপায়ে।
এবং এভাবেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়টাতে, কলকাতাকে সরিয়ে দিয়ে বোম্বে বনে যায় ভারতের অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
কিন্তু কেন এমনটি ঘটল?
এর কিছু কারণের হদিস পাওয়া যায় বিমল সি ঘোষের ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত A Study of Indian Money Market-এ।
- বিশ্বযুদ্ধগুলো কলকাতার অবস্থান নাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রেখেছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কলকাতার অর্থনীতিতে অবর্ণনীয় দুর্দশা বয়ে এনেছিল। কলকাতা বন্দর তখন থেকেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, যা কলকাতার স্থানীয় অর্থ-বাজার ও ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- কলকাতা বন্দরের দুরবস্থার সুযোগটিকে দারুণভাবে কাজে লাগায় বোম্বে। তখন বোম্বে বন্দরই হয়ে ওঠে ভারতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী বন্দর। তাছাড়া বোম্বে সবসময়ই প্রাকৃতিকভাবে বন্দরনগরী হওয়ার জন্য বেশি মানানসই ছিল (ভুলে যাবেন না, ‘বোম্বে’ শব্দের পর্তুগিজ অর্থ হলো ‘ভালো উপসাগর’)। কলকাতা বন্দর ছিল সমুদ্র থেকে ৮০ মাইল নদীপথ অভ্যন্তরে, যার ফলে এই বন্দরে ভেড়া কার্গো জাহাজগুলোর জন্য খুবই কঠিন কাজ ছিল। অপরদিকে, বোম্বে সুয়েজ খালের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায়, ইউরোপ থেকে আগত অধিকাংশ জাহাজই এই বন্দরে নোঙর ফেলত। কলকাতায় শিপিংয়ের খরচও অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল। ফলে বোম্বের বন্দরব্যবস্থা যখন শীর্ষে পৌঁছে গেল, বাণিজ্যও সেই একই পথ অনুসরণ করল।
- বোম্বের রেলসংযোগ কেবল দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের সাথেই নয়, এমনকি পাঞ্জাবের সাথেও ছিল। পাঞ্জাব থেকে করাচি বন্দর কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও, স্রেফ রেল যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় পাঞ্জাবের ব্যবসায়ীদের কাছে বোম্বে বন্দরের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি ছিল।
- বোম্বের স্বদেশী ব্যাংকাররা অনেক বেশি উদার ছিলেন, এবং তারা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও তাদের স্বভাবসুলভ ঔদার্য্যবশত গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দিতেন, যার ফলে ক্যালকাটার তুলনায় বোম্বের ব্যাংকিং খাত ফুলে-ফেঁপে বড় হতে থাকে।
- বোম্বেতে তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বাজার ছিল – স্টক এক্সচেঞ্জ, কাপড় ও স্বর্ণের। অন্যদিকে, কলকাতার ছিল কেবলই পাট, যার অধিকাংশই আবার বিদেশে রপ্তানি করা হতো। পাশাপাশি কলকাতার স্টক এক্সচেঞ্জ থাকলেও, বোম্বেরটির বয়স অনেক বেশি ছিল, এবং পশ্চিমা অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠতার কল্যাণে সেটির গুরুত্বও বেশি ছিল।
কারণ বাঙালির হাল ছেড়ে দেয়া মনোভাবও
এসব কারণের পাশাপাশি ২০১১ সালে ক্লডি মারকোভিটস তার ২০১১ সালে প্রকাশিত বই Premier Industrial Centres Bombay and Calcutta-তে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। সেটি হলো কলকাতা ও বোম্বের উদ্যোক্তাদের মানসিকতা। কলকাতার উদ্যোক্তারা যেখানে দুয়েকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেই হাল ছেড়ে দিতেন, সেখানে বোম্বের উদ্যোক্তারা দিতেন অসীম ধৈর্যের পরিচয়। একটি ব্যবসা কাজ না করলে তারা নতুন আরেকটি ব্যবসা শুরু করতেন।
ব্যাংকিং ব্যর্থতাও দায়ী
১৯১৫-৬৫ এর মধ্যে ভারত বিশালসংখ্যক ব্যাংকিং ব্যর্থতারও সাক্ষী হয়। এই সময়কালের মধ্যে দেড় হাজারের কাছাকাছি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় প্রকোপটি পড়েছিল বাংলায়। বোম্বেতে ১২৬টি ব্যাংকের বিপরীতে বাংলায় বন্ধ হয়েছিল ৩৬০টি ব্যাংক। বিশেষ করে এই হার অনেক বেশি বেড়ে যায় ১৯৪৭ সালে বাংলা দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার পর। ১৯৪৭-৬৫ সময়কালে বোম্বেতে যেখানে মাত্র ১৩টি ব্যাংক বন্ধ হয়েছিল, বাংলায় হয়েছিল ১৬৮টি। বিভক্তি ছাড়াও ব্যাংকিং ব্যর্থতার পেছনে আরেকটি গুরুতর কারণ ছিল সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। বোম্বের ব্যাংকাররা এ কাজে যতটা চৌকস ও পারদর্শী ছিলেন, বাংলার ব্যাংকাররা তার ধারেকাছেও ছিলেন না।
কফিনে শেষ পেরেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থানান্তর
কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপনের লোকেশনও কলকাতার তুলনায় বোম্বেকে অনেকটাই সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যায় বলে কিন্ডলবার্জারের অভিমত। ১৯১৪ সালে জন মেনার্ড কিনেস ও স্যার ই. ক্যাবল ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপনের একটি মেমো তৈরি করেন। সেখানে সম্ভাব্য দুটি শহরের নাম প্রস্তাব রাখা হয়। একটি ছিল কলকাতা, আর অপরটি দিল্লি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, শুরুতে বোম্বের নাম বিবেচনাই করা হয়নি। বোম্বের জায়গায় দিল্লিকে ভাবার কারণ, প্রেসিডেন্সি ব্যাংক তিনটির মধ্যে দিল্লির শাখাটিই অপেক্ষাকৃত স্বাধীন বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৩৫ সালে যখন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া স্থাপনের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়, সেই লড়াইয়ে দিল্লির বদলে বোম্বেই ফিরে আসে। একদিকে কলকাতা বিবেচিত হয় ভারতের ‘সোনালী অতীত’-এর প্রতীক হিসেবে, অপরদিকে বোম্বে দেশটির ‘সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত’-এর প্রতীক হিসেবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় দুইটি শহরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যৌথ প্রধান কার্যালয় স্থাপনের। এবং প্রথম বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয় কলকাতাতেই। কলকাতা ও বোম্বে উভয় শহরই ভারতের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, গভর্নররা তাদের সময় উভয় স্থানেই সমান ভাগে ভাগ করে ব্যয় করতে থাকেন (অন্যান্য কেন্দ্রে মাঝেসাঝে পর্যবেক্ষণের কাজে যাওয়া বাদে)। এবং দুই শহরেই ব্যাংকের গভর্নরের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু ১৯৩৭ সালে তৎকালীন গভর্নর জেমস টেইলর অনুরোধ জানান প্রধান কার্যালয়টি কেবল বোম্বেতে স্থানান্তরের। ততদিনে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে প্রধান কার্যালয়ের দুটি শাখা থাকায়, এক শাখা থেকে অন্য শাখায় যাওয়া এবং একই কাজ দুই শাখাতেই পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে প্রচুর সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, ব্যাংকের প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে করাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বরে প্রধান কার্যালয় স্থায়ীভাবে বোম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরও অবশ্য গভর্নর কলকাতা থেকে বোম্বে, আবার বোম্বে থেকে কলকাতা যাতায়াত অব্যাহত রাখেন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন গভর্নর বি. রামা রাউর অনুরোধে ক্যালকাটা হাউজ বিক্রি করে দেয়া হয়। ফলে বোম্বে পরিণত হয় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একমাত্র কেন্দ্রে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে অবশ্যই বোম্বের ক্রমশ ভারতের অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে ওঠা বড় ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু তারপরও, যতদিন এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি, কলকাতার আশা সামান্য হলেও বেঁচে ছিল। কিন্তু এরপর কলকাতার সব আশাই চিরতরে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়।
শেষ কথা
অনেকের মতেই, ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে নয়া দিল্লিতে স্থানান্তরের মাধ্যমেই কলকাতার অবনতির সূচনা ঘটে। কিন্তু অনেকেরই বিশ্বাস, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব হারানোর চেয়েও, কলকাতার জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিল অর্থনৈতিক আধিপত্য বোম্বের কাছে হারিয়ে বসা। এবং সেই ধাক্কা কলকাতা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে শীঘ্রই কলকাতা আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে, এ আশাই থাকুক।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/