Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইসরায়েলের গোপন অপারেশন: জাতিসংঘের প্রতিনিধি কাউন্ট বার্নাডোট হত্যাকাণ্ড

১৯৪৮ সালের ১৩ই মে সর্বশেষ ব্রিটিশ সৈন্যটি ফিলিস্তিন ত্যাগ করার পরপরই স্বাধীনতা ঘোষণা করে ইসরায়েল। আর তার সাথেসাথেই শুরু হয়ে যায় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। মাঝরাতের পরপরই পাঁচটি আরব সেনাবাহিনী একযোগে আক্রমণ করে ইসরায়েলের উপর। বিপরীত দিকে ইসরায়েলের জায়নবাদী ইহুদীরা নির্বিচারে আক্রমণ করে স্থানীয় আরবদের উপর। দখলকৃত এলাকাগুলো থেকে উচ্ছেদ করে লক্ষ লক্ষ স্থানীয় অধিবাসীদেরকে। যদিও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনকে ভাগ করে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের কারণেই এ সংকট তৈরি হয়েছিল এবং সবাই আগে থেকেই জানত এরকম একটি যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করলে শান্তি আলোচনার জন্য জাতিসংঘ কাউন্ট বার্নাডোট নামে এক সুইডিশ কূটনীতিককে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করে।

কাউন্ট ফোক বার্নাডোট; Image Source: Google Arts & Culture

কাউন্ট ফোক বার্নাডোট ছিলেন সুইডিশ রাজপরিবারের একজন সদস্য। ১৮৯৫ সালে স্কটহোমে জন্মগ্রহণ করা ফোক বার্নাডোটের দাদা ছিলেন সুইডেনের রাজা দ্বিতীয় অস্কার। শিক্ষাজীবন শেষ করে বার্নাডোট সুইডিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং মেজর পদ পর্যন্ত উন্নীত হন। পরবর্তীতে তিনি সুইডেনের বয়স্কাউটের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সুইডিশ বয়স্কাউটকে সুইডেনের প্রতিরক্ষাবাহিনীর সাথে সমন্বিত করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গান পরিচালনার এবং উদ্ধারকর্মের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেন। যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থাতেই ১৯৪৩ সালে তাকে সুইডিশ রেড ক্রসের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রেড ক্রসের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই মূলত কাউন্ট বার্নাডোট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেন। তিনি যুদ্ধাহত সেনা ও যুদ্ধবন্দী নাগরিকদেরকে উদ্ধার করার জন্য জার্মান বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর মধ্যে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করার প্রচেষ্টা চালান। তার সফল মধ্যস্থতায় যুদ্ধ সমাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন বন্দীশালা ও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে প্রায় ৩১ হাজার বন্দী মুক্তিলাভ করে। তিনি হেনরিখ হিমলারের সাথে দেন দরবার করে তাকে আত্মসমর্পণের ব্যাপারেও রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন, যদিও মিত্রবাহিনী সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

রেডক্রসের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ের একটি মিটিংয়ে বার্নাডোট; Image Source: Wikimedia Commons

মূলত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কাউন্ট বার্নাডোটের অসাধারণ সাফল্যের কারণেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তাকে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করে। যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই, ১৯৪৮ সালের ২০ মে সর্বসম্মতিক্রমে তার উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তার দায়িত্ব ছিল, ১৪ই মে পাশ হওয়া জাতিসংঘের রেজোল্যুশন ১৮৬ অনুসারে ফিলিস্তিনে বিবাদমান দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য শান্তি প্রস্তাব উত্থাপন করা। জাতিসংঘের ইতিহাসে এটিই ছিল বিশ্বের কোনো দেশে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রেরিত প্রথম কোনো কমিটি।

কাউন্ট বার্নাডোট দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই, জুনের ১১ তারিখ থেকে দুই পক্ষের মধ্যে একমাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সক্ষম হন। তিনি কায়রো, বৈরুত, আম্মান ও তেল আবিবে গিয়ে বিবাদমান পক্ষগুলোর নেতাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিনকে ভাগ করে পাশ হওয়া জাতিসংঘের রেজোল্যুশনটি ছিল দুর্ভাগ্যজনক। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তিনি সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে ভিন্ন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যেখানে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল নামে দুইটি ভিন্ন রাষ্ট্রের পরিবর্তে আরব ও ইহুদী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক অস্ট্রেলীয় যুদ্ধবন্দীর সাথে কথা বলছেন বার্নাডোট; Image Source: Wikimedia Commons

বার্নাডোটের প্রস্তাবের প্রাথমিক খসড়া বিভিন্ন দিক থেকে জাতিসংঘের পূর্বের রেজোল্যুশনের তুলনায় কম পক্ষপাতিত্বমূলক ছিল। এখানে ইহুদীদের জন্য তুলনামূলকভাবে ছোট এবং আরবদের জন্য ফিলিস্তিন ও ট্রান্সজর্ডানের সমন্বয়ে অপেক্ষাকৃত বড় ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। হাইফা এবং লাইডা এয়ারপোর্টকে শুধুমাত্র ইহুদীদের দখলে না রেখে মুক্ত এলাকায় রূপান্তরের কথা বলা হয়। এছাড়াও নেগেভ ও জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ আরবদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার এবং গ্যালিলিকে ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাবও ছিল এতে। ইহুদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইউরোপ থেকে ইহুদী অভিবাসী প্রবেশের সীমার উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা এতে ছিল না, কিন্তু ইসরায়েল থেকে বাস্তুচ্যুত তিন লাখ আরব শরণার্থীকে অবিলম্বে ইসরায়েলে ফিরতে দেওয়ার শর্তও অন্তর্ভুক্ত ছিল এই প্রস্তাবে।

বার্নাডোটের প্রস্তাব মোটামুটি আরবদের পক্ষে গেলেও আরবরা তা প্রত্যাখ্যান করে এই যুক্তিতে যে, এর আগে তারা একাধিকবার জাতিসংঘকে এবং ব্রিটিশ প্রশাসনকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছিল, যারা শেষপর্যন্ত ইহুদীদের পক্ষেই কাজ করেছিল। তাছাড়া যুদ্ধের প্রথম দিকে আরবরা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। সে সময় তারা ফিলিস্তিন থেকে ইসরায়েলকে চিরতরে উচ্ছেদ করার স্বপ্ন দেখছিল। ফলে বার্নাডোটের প্রস্তাব জাতিসংঘের পূর্বের প্রস্তাবের তুলনায় অনেকটা নিরপেক্ষ হলেও আরবদের দৃষ্টিতে তা যথেষ্ট ছিল না।

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাত্রাপথে সাংবাদিকদের সাথে বার্নাডোট; Image Source: Wikimedia Commons

অন্যদিকে বার্নাডোটের প্রস্তাব স্বাভাবিকভাবে ইহুদীরাও প্রত্যাখ্যান করে। জায়নবাদী ইহুদীরা কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের বুকে নিজেদের জন্য যে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করে আসছিল, তার দীর্ঘমেয়াদী সফলতার জন্য স্থানীয় আরবদেরকে উচ্ছেদ করা এবং জেরুজালেমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর নিজেদের দখলে রাখাটা ছিল খুবই জরুরী। কিন্তু বার্নাডোটের প্রস্তাবের অনেকগুলো শর্তই ছিল তাদের এই স্বার্থের প্রতিকূলে। এছাড়াও সে সময় যুদ্ধবিরতির আড়ালে ইউরোপ থেকে জাহাজ ভর্তি অস্ত্র এবং ইহুদী স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের আগমনের ফলে ইহুদীদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জন্মাতে থাকে যে, কোনো রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে সামরিক পদক্ষেপই তাদের পক্ষে বেশি সহায়ক হবে। ফলে বার্নাডোটের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জুলাইয়ের ৮ তারিখ থেকে পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

বার্নাডোট অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি তার প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনেন এবং ব্রিটিশ, মার্কিন, ইসরায়েলি ও আরব বর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন। সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে তিনি তার প্রস্তাবের দ্বিতীয় খসড়া চূড়ান্ত করেন। ইসরায়েল অবশ্য এই দ্বিতীয় খসড়ার সাথেও একমত পোষণ করেনি। কিন্তু যেহেতু বার্নাডোটের সাথে মার্কিন এবং ব্রিটিশ প্রতিনিধিদেরও আলাপ হয়েছিল, তাই একটা ক্ষুদ্র সম্ভাবনা ছিল যে, এটি কিছুটা পরিবর্তিত রূপে হলেও জাতিসংঘে পাশ হয়ে যেতে পারে। আর এই ঝুঁকিটা নিতে একেবারেই রাজি ছিল না ইসরায়েলের ইহুদীদের চরমপন্থী সংগঠন লেহি।

জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সাথে বার্নাডোট ও তার সহকর্মীরা; Image Source: refugeesmigrants.un.org

লেহির সদস্যরা ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে বার্নাডোটকে হুমকি দিতে শুরু করে – “এজেন্ট বার্নাডোটের প্রতি পরামর্শ: আমাদের দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যাও।” তারা বার্নাডোটকে ইহুদীবিদ্বেষী এবং নাৎসিবাহিনীর দালাল হিসেবে অভিযুক্ত করে। তাদের দাবি অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বার্নাডোট ইচ্ছে করেই আরো বেশি সংখ্যক ইহুদীকে নাৎসিদের হাত থেকে মুক্ত করেনি এবং তার ইহুদীবিদ্বেষের কারণেই তিনি সমঝোতা প্রস্তাবে এমন সব শর্ত আরোপ করেছেন, যা ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের স্বার্থের পরিপন্থী।

লেহির রেডিও স্টেশন থেকেও বার্নাডোটের বিরুদ্ধে একের পর এক হুমকি আসতে থাকে। সেখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, বার্নাডোটের পরিণতি হবে লর্ড মোয়েনের মতো। লর্ড মোয়েন ছিলেন কায়রোতে অবস্থিত ব্রিটিশ রেসিডেন্ট মিনিস্টার, যার প্রকৃত নাম ছিল ওয়াল্টার এডওয়ার্ড গিনেস। ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীদের অনুপ্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করার কারণে লেহির প্রধান ইৎজাক শামিরের নির্দেশে লেহির দুইজন এজেন্ট তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল।

লেহির হুমকিগুলো নিছকই ফাঁকা বুলি ছিল না। কিন্তু বার্নাডোট তাদের হুমকিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেননি। তিনি ভেবেছিলেন, আরব এবং ব্রিটিশ কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করলেও জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে হত্যা করার মতো সাহস লেহি করবে না। কিন্তু বার্নাডোটের অনুমান ভুল ছিল। আর সে ভুলের প্রায়শ্চিত্য তাকে করতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে। তার প্রস্তাব পাশ হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে লেহি তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। লেহির প্রধান ইৎজাক শামির বার্নাডোটের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। তিনি লেহির চারজন কর্মকার্তাকে নিয়োগ করেন বার্নাডোটকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। 

১৯৪৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর, কাউন্ট বার্নাডোট এবং তার সহকর্মীরা যখন তিনটি জীপে করে জেরুজালেমের জাতিসংঘের হেডকোয়ার্টার থেকে রেহাভিয়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তাদের পথ আগলে বসে লেহির একটি জীপ। জীপ থেকে নেমেই তিন সন্ত্রাসী ছুটে যায় জাতিসংঘের জীপগুলোর দিকে।  তাদের মধ্য থেকে দুইজন জাতিসংঘের জীপগুলোর চাকা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে সেগুলোকে অচল করে দেয়। আর তৃতীয় জন, ইহোশুয়া কোহেন, দ্বিতীয় জীপটির দরজা খুলে সাব মেশিনগান দিয়ে এর ভেতরটা পুরোপুরি ঝাঁঝরা করে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন ভেতরে থাকা এক ফরাসী কর্ণেল, আঁন্দ্রে সেরো এবং কাউন্ট বার্নাডোট। হাসপাতালে নেওয়ার পর বার্নাডোটের বুকে ছয়টি বুলেটের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। 

বার্নাডোট এবং আঁন্দ্রে সেরোর মৃতদেহ; Image Source: Wikimedia Commons

বার্নাডোট হত্যাকান্ডের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েল কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একে ‘জেরুজালেমের ইহুদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক সংগঠিত কাপুরোষোচিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস পরদিন মন্তব্য করেছিল, এই হামলার ফলে ইসরায়েলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কোনো আরব সেনাবাহিনীর পক্ষে এত স্বল্প সময়ে এত বড় ক্ষতি করা সম্ভব হতো না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন এর মাত্র কিছুদিন আগেই আরেক ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইরগুনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে তাদেরকে নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বার্নাডোটকে হত্যার পরে তিনি বুঝতে পারেন, লেহিকেও আর বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না। তিনি লেহিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।

বেন গুরিয়নের নির্দেশে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবাহিনী, জেনারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (পরবর্তীতে শিন বেত বা শাবাক) প্রধান ইসের হারেল লেহির সদস্যদের বিরুদ্ধে বিশাল অভিযান পরিচালনা করেন। তার অভিযানে লেহির কয়েক শত সদস্য গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু মূল হত্যাকাণ্ডে যে চারজন অংশ নিয়েছিল, তাদের কেউই শেষপর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পরপরই তারা ধর্মীয় শহর শারেই পিনাতে গিয়ে সেখানকার হারেদি সম্প্রদায়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করেছিল। কয়েকদিন পর সেখান থেকে তারা মালবাহী ট্রাকের পেছনে লুকিয়ে তেল আবিবে চলে গিয়েছিল। 

প্যারিসে বার্নাডোট এবং আঁন্দ্রে সেরোর মৃতদেহ; Image Source: Wikimedia Commons

ইসের হারেলের ওয়ান্টেড লিস্টের সবার শীর্ষের নামটি ছিল লেহির প্রধান ইৎজাক শামিরের। কিন্তু শামিরও গ্রেপ্তার হননি। অভিযান চলাকালীন সময়ে কিছুদিন তিনি আত্মগোপনে ছিলেন, কিন্তু মাত্র দুইমাস পরেই যখন গ্রেপ্তারকৃত সকল লেহি সদস্যকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা ঘোষণা করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়, তখন তিনিও ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদে যোগদান করেন এবং আরো পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। আর কাউন্ট বার্নাডোটের খসড়া প্রস্তাব, যেটি হয়ত ফিলিস্তিনিদের অধিকার কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে পারত, সেটির অপমৃত্যু ঘটে বার্নাডোটের মৃত্যুর সাথে সাথে।

তথ্যসূত্র: Rise and Kill First: The Secret History of Israel’s Targeted Assassinations 

এই সিরিজের অন্যান্য পর্ব

(১) সন্ত্রাসী সংগঠন লেহি’র গুপ্তহত্যা (২) উগ্র জায়নবাদের উত্থান (৩) ইহুদীদের নৈশ প্রহরী হাশোমারের ইতিহাস (৪) আইডিএফের পূর্বসূরি হাগানার উত্থান (৫) নাৎসিদের উপর ইহুদী ব্রিগেডের প্রতিশোধ (৬) ফিলিস্তিন থেকে জার্মানদের উচ্ছেদ (৭) যে সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলের সৃষ্টি (৮) হাসান সালামা হত্যাপ্রচেষ্টা (৯) পালায়াম এবং ছদ্মবেশী আরব ইউনিটের নাশকতা (১০) গোয়েন্দাবাহিনী আমান এবং শিন বেতের অভ্যুদয় (১১) ইসরায়েলের প্রথম আন্তঃবাহিনী খণ্ডযুদ্ধ

ফিচার ইমেজ: tommyhansson.wordpress.com

Related Articles