ভূত; যার একটি অর্থ অদৃশ্য আত্মা-বিশেষও হতে পারে, আবার অতীত সময়ও হতে পারে। সিটি অফ জয় খ্যাত কলকাতা বর্তমানে যেমন এক ঝাঁ চকচকে কসমোপলিটান সিটি, তেমনই এর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল সোনালী অতীতও। ব্রিটিশ আমলে ভূ-ভারতের রাজধানী ছিল এই শহর। যার নিদর্শন হিসেবে আজও এই শহরের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশ আমলের নানা পুরনো বাড়ি, সৌধ ও মনুমেন্ট। অর্থাৎ এর ভূত যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এবং সেই সমৃদ্ধি এতটাই বেশি যে, তা উপদ্রব চালিয়ে যাচ্ছে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও। ফলে কলকাতার ঐতিহাসিক বেশ কিছু নিদর্শনকেই ভূত তথা অদৃশ্য (ক্ষেত্রবিশেষে দৃশ্যমানও) আত্মা অধ্যুষিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজকের এই লেখায় আপনাদের সামনে তুলে ধরব কলকাতার তেমনই কিছু ভৌতিক স্থানের বৃত্তান্ত।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি
আলিপুরে অবস্থিত এই ভবনটিতে আগে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বাস। এবং কিংবদন্তী মতে, আজও তিনি এই ভবনেই বিরাজমান। রাতের বেলা যখন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঠিক সেই সময়ে অনেকেই তাকে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। আবার দিনের বেলা লাইব্রেরি খুললে বিভিন্ন চেয়ার-টেবিল এদিক-ওদিক হওয়ারও নজির রয়েছে। এখানে পড়াশোনা করতে আসা অনেকেই বলেছেন, বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকার একপর্যায়ে আচমকাই নাকি ঘাড়ে অদৃশ্য কারোর নিঃশ্বাস অনুভব করেছেন তারা। আবার কারো কারো ভাষ্যমতে, স্তব্ধ দুপুরে শুনেছেন অশরীরী কারোর পদচারণার শব্দ। লাইব্রেরির কর্মচারীরাও অনেকে অশরীরী সত্তার উপস্থিতি টের পেয়েছেন।
কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় হলো, কাউকে আক্রমণ করা হেস্টিংস সাহেবের ভূতের অভিসন্ধি নয়। বরং তিনি নাকি খুঁজে চলেছেন সেই ব্ল্যাক ব্যুরোটি, জীবিতাবস্থায়ও যেটির নাগাল তিনি পাননি। হেস্টিংস বিশ্বাস করতেন, এই ব্ল্যাক ব্যুরোটিই পারবে তাকে হাউজ অভ কমন্সে নির্দোষ প্রমাণ করতে। যদিও শেষ পর্যন্ত তার উপর থেকে সকল অভিযোগ তুলে নেয়া হয়েছিল, তবু হেস্টিংসের মন থেকে আজও দূর হয়নি নথিগুলো পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন।
শোনা যায়, ন্যাশনাল লাইব্রেরির প্রহরীরা নাকি প্রায়ই তাদের সাথে করে হনুমান চালিশা নিয়ে ঘোরেন, যেন হেস্টিংসের ভূত তাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। কিন্তু এরপরও ভূত দেখার উদাহরণ রয়েছে। তাছাড়া ২০১০ সালে ২৫০ বছরের পুরনো এই ভবনের ভূত-রহস্য আরো ঘনীভূত হয়, যখন হঠাৎ করেই সন্ধান মেলে এমন একটি রহস্যময় কক্ষের, যেটির বিষয়ে ইতিপূর্বে কেউই অবগত ছিল না। এবং আরো কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, কক্ষটির কোনো প্রবেশদ্বার নেই। নেই এমনকি কোনো গোপন ট্র্যাপডোরও। তবে কি এই কক্ষেই বাস করেন হেস্টিংস সাহেবের ভূত?
অবশ্য ভূতটি ওয়ারেন হেস্টিংসের না হয়ে অন্য কারোও হতে পারে। তিনি লর্ড মেটকাফের স্ত্রী লেডি মেটকাফ। অনেকের মতে, তার অতৃপ্ত আত্মাই নাকি ঘুরঘুর করে এই লাইব্রেরির অন্দরে-বাহিরে। কয়েক বছর আগে এই লাইব্রেরির সংস্কার কাজ করতে এসে ১২ জন শ্রমিক বেঘোরে প্রাণ হারান। তারপর থেকে ভূতের ভয় আরো বেড়ে গেছে জনসাধারণের মনে।
হেস্টিংস হাউজ
জনমনে ভীতি সঞ্চার করেছে আলিপুরের হেস্টিংস হাউজও। এবং এখানে ভূতের উপদ্রব সম্পর্কেও প্রায় একই রকম কাহিনীই প্রচলিত আছে। বলা হয়ে থাকে, হেস্টিংস যখন ভারতবর্ষ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে যান, তখন তিনি নাকি মূল্যবান কিছু সম্পদ এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। সেগুলো ফেরত নিতেই ভূত হয়ে বারবার ফিরে আসেন তিনি। তবে তার সেই ফিরে আসাও কিন্তু যথেষ্ট রাজকীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ। কোনো কোনো রাতে চারটি ঘোড়ায় টানা ক্যারেজকে নাকি এই বাড়ির সামনে এসে থামতে দেখা যায়। এবং এরপর অনেকে নাকি সেই ক্যারেজ থেকে হেস্টিংস সাহেবের আত্মাকে বের হয়ে আসতে দেখেছেন। কেউ কেউ আবার অতশত দেখেননি, শুধু পায়ের আওয়াজ শুনেছেন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে। আবার অনেকের মুখে কিছুটা ভিন্ন কাহিনীও শোনা যায়। তাদের মতে, হেস্টিংস সাহেব নাকি ঘোড়ার ক্যারেজে নয়, বরং একটি ঘোড়ার পিঠে চেপে ফিরে আসেন।
ন্যাশনাল লাইব্রেরির মতোই, এ বাড়িতেও হেস্টিংস সাহেবের ভূতই একমাত্র উপদ্রবের কারণ নয়। এক কমবয়েসি বালকের ভূতও কখনো কখনো বাড়ির সামনের মাঠে দেখা যায়। তার কারণ, এই মাঠে একদল বালক ফুটবল খেলত, এবং একবার তাদের একজনের বুকে এত জোরে বল আঘাত করে যে তার তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়। ভয় পেয়ে তার বাকি বন্ধুরা পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে অনেকেই মাঠের আশপাশ থেকে যাওয়ার সময় বালকটির কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছেন। অনেকে নাকি বালকটিকে সরাসরি দেখেছেনও। আজও সে তার বন্ধুদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছে ওই মাঠের মাঝখানটিতে দাঁড়িয়েই।
এছাড়া মানুষ ভূতের পাশাপাশি এ বাড়িতে ঘোড়া ভূতেরও জনশ্রুতি রয়েছে। এককালে এই বাড়িতে নাকি এক ধনাঢ্য ব্যক্তি বাস করতেন, যার ছিল ঘোড়ার বেজায় শখ। নিজের ঘোড়াগুলোকে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি। আর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সাদা ঘোড়াটিকে। কিন্তু এক রাতে কেউ একজন ঘোড়াটিকে গুলি করে যায়। ফলে মৃত্যু হয় ঘোড়াটির। এরপর থেকে প্রায় রাতেই নাকি ফিরে আসে ঘোড়াটি, আবার কিছুক্ষণ বাদে হাওয়ায় মিলিয়েও যায়।
সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি
পার্ক স্ট্রিট বিখ্যাত এখানকার পাব ও খাবারের দোকানগুলোর জন্য। পাশাপাশি এখানেই অবস্থিত যে খ্রিস্টান কবরস্থানটি, সেটি এককালে পরিচিত ছিল ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নন-চার্চ সিমেট্রিগুলোর একটি হিসেবে। ১৭৬৭ সালে খোলা এই কবরস্থানে রয়েছে প্রায় ১,৬০০ কবর। তবে বহুদিন অব্যবহৃত থাকায় অধিকাংশ কবরই ছেয়ে গেছে ঝোপঝাড় ও লতাপাতায়। আর কবরস্থানটি পরিণত হয়েছে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনে। প্রচুর মানুষ এসে ভিড় জমায় এই কবরস্থানে। কবরে শায়িত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের পরিচয় ও বিবরণ তাদের অনুসন্ধানী মনের খোরাক জোগায়। তাছাড়া ফটোগ্রাফারদের কাছেও এর রয়েছে এক ভিন্ন মাত্রার আবেদন।
তবে ইতিহাসপ্রিয় ও সৌন্দর্যপিপাসুদের কাছে এই কবরস্থানের অপরিসীম গুরুত্ব থাকলে কী হয়েছে, অনেক মানুষের কাছে এটি একটি ভীতিপ্রদ স্থানও বটে। এই স্থানে বেড়াতে আসা অনেক দর্শনার্থীই দাবি করেছেন, তাদের নাকি মাথা ঝিমঝিম করছে, তারা অসুস্থ অনুভব করছেন। এমনকি সারাজীবন হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা না থাকা অনেকেরও নাকি এখানে এসে দমবন্ধ হয়ে এসেছে। কেউ কেউ তো বমি করতে করতে শয্যাশায়ীও হয়ে পড়েছেন। এছাড়া অনেক ফটোগ্রাফারই বলেছেন, তাদের এই স্থানে তোলা বিভিন্ন ছবিতে নাকি রহস্যজনক অবয়ব ধরা পড়েছে, যা সামনাসামনি কখনো তাদের নজরে আসেনি।
সবসময়ই কিন্তু কবরস্থানটির নামে এমন দুর্নাম ছিল না। কীভাবে এই দুর্নাম রটল, সেই গল্প বলছি, শুনুন। একবার এক পর্যটক দল বেড়াতে এসেছিলেন এই কবরস্থানে। তারা ক্যামেরাবন্দি করছিলেন কবরস্থানের অমূল্য সব চিত্র। এরই এক পর্যায়ে হঠাৎ করে একজন পর্যটক তার ক্যামেরায় একটি অস্পষ্ট সাদা ছায়ামূর্তি দেখতে পান। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান তিনি। তাৎক্ষণিক অ্যাজমা আক্রমণের শিকার হন তিনি, যদিও ইতিপূর্বে তার কোনো অ্যাজমার ইতিহাস ছিল না। কথিত আছে, কবরস্থান ভ্রমণের কিছুদিনের মধ্যে পর্যটক দলটির বাকি সদস্যরাও একে একে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। এবং সেই থেকেই ভূতুড়ে খেতাব পেয়ে যায় কবরস্থানটি।
রাইটার্স বিল্ডিং
টমাস লায়ন্সের নকশায় ১৭৭০ সালে স্থাপিত হয় রাইটার্স বিল্ডিং, যার বাংলা নাম মহাকরণ। এটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক ভবন। তবে শুরুর দিকে, ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইউরোপীয় কেরানিদের বসবাসের জন্য উনিশটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হয় এখানে, যেগুলি দেখতে ছিল সারিবদ্ধ দোকানের মতো। তখনকার দিনে এই কেরানিদের বলা হতো রাইটার। তাদের থেকেই ভবনটির নাম হয়েছে রাইটার্স বিল্ডিং।
কলকাতা শহরের বুকে এত পুরনো ও প্রকাণ্ড একটি দালান থাকবে, আর তার নামে ভূতুড়ে অপবাদ জুটবে না, তা কি আর হয়! স্থানীয়দের মধ্যে যারা একদম দিনের শেষ ভাগে, রাইটার্স বিল্ডিং প্রায় নির্জন হয়ে যাওয়ার পর সেখানে গিয়েছেন, তারা কার যেন ফিসফিসানি, হাসি, এমনকি আর্তচিৎকারের আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পেয়েছেন। একটি জনপ্রিয় অভিমত হলো, এসব ভূতুড়ে শব্দের পেছনে দায়ী ব্রিটিশ আমলের কতিপয় বিপ্লবী।
অনেকে হয়তো অবাক হয়ে ভাবছেন, ভূতের সাথে আবার বিপ্লবীদের সম্পর্ক কী! আসলে বিপ্লবীদের সাথে সম্পর্ক ভূতের নয়, রাইটার্স বিল্ডিংয়ের। এই রাইটার্স বিল্ডিংয়েই ১৯৩০ সালে এক দুঃসাহসী অভিযানের মাধ্যমে কারাবিভাগের প্রধান অত্যাচারী ইংরেজ অফিসার এন. জি. সিম্পসনকে হত্যা করেন তিন বিপ্লবী — বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত। এই ঘটনার অব্যবহিত পরে ভবনের অলিন্দে নিরাপত্তারক্ষী ও কমিশনার টেগার্টের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে বিপ্লবী-ত্রয়ীর যে সংঘর্ষ হয় তা “অলিন্দ যুদ্ধ” নামে পরিচিত। সংঘর্ষের শেষে গ্রেফতার এড়াতে বাদল গুপ্ত সেখানেই আত্মহত্যা করেন, বিনয় হাসপাতালে মারা যান ও দীনেশের ফাঁসি হয়। ভূত-বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে আজো যে ভূতুড়ে কার্যকলাপ হয়, তার নেপথ্যের নায়ক তিন বিপ্লবীর অতৃপ্ত আত্মা।
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন
শেষমেষ ভৌতিক জায়গার তালিকায়ও চলে এলো রবীন্দ্রনাথের নাম! না, রবীন্দ্রনাথ এখানে ভূত হয়ে আসেননি। তবে তার নামে নামাঙ্কিত কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনটির সাথে অপমৃত্যুর খুব অস্বাভাবিক যোগাযোগ। আত্মহত্যার উপায় হিসেবে মেট্রো লাইনে ঝাঁপ দেয়া কলকাতাবাসীর বেশ পছন্দের। এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মতে, কলকাতার মোট আত্মহত্যার ৫০ শতাংশই নাকি হয় এই রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে। বলাই বাহুল্য, এভাবে স্টেশনটি পরিণত হয়েছে শহরের আত্মহত্যার কেন্দ্রস্থলে।
আর এ কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেই স্থানে কেউ আত্মহত্যা করে, মানুষজন সেই স্থানটিকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। একই কথা খাটে এই স্টেশনের বেলায়ও। কলকাতাবাসী না পারতে রাতের শেষ ট্রেনটি এই স্টেশন থেকে ধরে না। আর হাতেগোনা যে কজন এই স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়েন, তাদের দাবি, সন্ধের পর থেকেই নাকি আত্মহত মানুষদের আত্মারা এখানে আড্ডা বসায়। অনেকে তো স্বচক্ষে বিভিন্ন ছায়ামূর্তিকে ঘুরে বেড়াতে দেখার দাবিও করেন।
মল্লিক ঘাট
হাওড়া ব্রিজের নিচে অবস্থিত ফুলের বাজারটি পরিচিত মল্লিক ঘাট নামে। কলকাতা শহরের অন্যতম প্রবেশমুখ এটি। দিনের আলো ফোটার পর থেকেই হরেক রকম ফুলের সমারোহে ভরে যায় এই বাজার। তাছাড়া ভোরবেলা হুগলি নদীর স্নিগ্ধ-সুন্দর রূপও দেখা যায়। তাই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন মল্লিক ঘাট দর্শনে।
কিন্তু ভোরবেলা যত স্নিগ্ধই হোক না কেন এই মল্লিক ঘাট, রাতের আঁধারে এটিই জনমনে ভয়াবহ ত্রাস ছড়ায়। রাতের বেলা যারা এই ঘাটটিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাদের অনেকেই বলে থাকেন, এখানে নাকি প্রায়ই বিভিন্ন রকম ভৌতিক ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দাবি, কোনো এক সাদা শাড়ি পরিহিত মহিলাকে নাকি ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সেই মহিলা নাকি মাঝেমধ্যে নাকি সুরে কান্নাও জুড়ে দেন।
হাওড়া ব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যার অজস্র নজির রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হওয়া সেইসব অতৃপ্ত আত্মাই নাকি মল্লিক ঘাট আতঙ্কের নেপথ্য কারণ।
পুতুলবাড়ি
ভূতের গল্প বা চলচ্চিত্রে প্রায় সময়ই পুতুলের বড় ধরনের ভূমিকা দেখা যায়। সুতরাং যে বাড়ির নামই পুতুলবাড়ি, সেখানে যে ভূতের আনাগোনা লেগে থাকবে, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!
পুতুলবাড়ি মূলত পুরনো, জরাজীর্ণ একটি বাড়ি, যার নিচতলায় অল্প কিছু মানুষের বাস। আর বাড়িটির উপরের তলা ও ছাদ বিচিত্র সব প্রাচীন রোমান ঘরানার পুতুলে ভর্তি। কাউকে এই বাড়ির উপরতলায় উঠতে দেয়া হয় না। এমনকি দিনের আলো থাকতেও না। কেননা বিশ্বাস করা হয়, উপরতলাগুলো দখল করে রেখেছে বারাঙ্গনাদের আত্মা, যারা ব্রিটিশ আমলের পূর্ব থেকে শুরু করে এমনকি ব্রিটিশ আমল চলাকালীনও ধনবান জমিদারদের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হতেন।
স্থানীয় অনেক মানুষই দাবি করেন, রাতের বেলা পুতুলবাড়ির উপরতলা থেকে নাকি নারীকণ্ঠের বিলাপ ও অট্টহাসির গা শিউরানো শব্দ ভেসে আসে। এ কাহিনী সত্য হোক বা না হোক, প্রায় পরিত্যক্ত ও ক্ষয়প্রাপ্ত বাড়িটির চেহারাই যথেষ্ট যে কারো শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত নামিয়ে দিতে।
ইতিহাসের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/