উদ্ধার করতে আসা বিমানটি ধ্বংস হবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অ্যাক্সেলসন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। লুট্রেল তখন একা জীবিত। শত্রুদের চোখের আড়ালো কোনো এক বড় পাথরের একপাশে লুকিয়ে কেবলই মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তিনি। হঠাৎ করে পৃথিবীটা কি আলোর গতিতে চলতে শুরু করলো নাকি? ঘড়িতে সময় যে আর চলে না! তার তখন মনে হচ্ছিল, বাকীরা মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে! পৃথিবীতে এখন কেবল তিনি একা বেঁচে আছেন, যাকে হত্যা করতে অসংখ্য আরপিজি আর একে-৪৭ প্রস্তুত! ৬০০ কোটি মানুষের পৃথিবীতেও এমন নিঃসঙ্গ অনুভূতি পেতে হবে, তা কি লুট্রেল কোনোদিন ভেবেছিলেন? হতাশার সাগরে খাবি খেতে খেতে যখন তলিয়ে যাবার উপক্রম হলো, তখনই আরো একবার তার কানে এলো মার্কিন হেলিকপ্টারের গগনবিদারী শব্দ। লুট্রেলের কানে সে শব্দ কি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার ডাক মনে হয়নি? ঘড়িতে সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিট।
“We gotta let ’em go.”- Lieutenant Murphy
অপর তিনজনকে লেফট্যানেন্ট মারফি যখন তার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, তখন সময় দুপুর ২টা। তারা এখন যে এলাকায় আছেন, সেখানে কোনো কারণে রেডিও সিগন্যালের ব্ল্যাকআউট ঘটেছে। উপর মহলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো উপায় হয়নি। যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা ডেনি ডায়েটজ কেবল নিজের বার্তাটিই প্রেরণ করতে পেরছেন, সেটি আদৌ পৌঁছেছে কিনা, কিংবা কোনো প্রতিউত্তর আসবে কিনা তার নিশ্চয়তা ছিল না। নিজেদের ভোটের ফল যা এসেছে তা-ই করতে হবে। কীসের ভোট? আর কাদের ছেড়ে দেয়া হবে? অপারেশন রেড উইংয়ের শুরুতেই গণ্ডগোল বাঁধানো ঘটনাটি দেখতে ফ্ল্যাশব্যাক করে আধঘণ্টা আগে চলে যেতে হবে।
২৮ জুন, ২০০৫। ইউএস নেভি সিলস এর চারজন স্পেশাল অফিসার লেফট্যানেন্ট মারফি, মার্কাস লুট্রেল, ডেনি ডায়েটজ এবং ম্যাথিউ এক্সেলসন অবস্থান করছেন আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের সাওতালো সার নামক একটি পাহাড়ের ঢালে। তারা চারদিক পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সামনে এগোনোর ছক কষছেন। এমন সময় মার্কাস লুট্রেলের কানে এলো পাতার মড়মড় শব্দ। কেউ একজন আসছে এদিকেই! শব্দ ক্রমশ বেড়ে চলে, একজন নয়, একাধিক হবার সম্ভাবনাই বেশি! সবাই যখন বন্দুক তাক করে গাছের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে প্রস্তুত, তখনই পাহাড়ের একপার্শ্বে সরু রাস্তা বেয়ে উঠে এলো তিনজন ছাগপালক। তাদের সাথে প্রায় শখানেক ছাগল। তারা সিল অফিসারদের দেখেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে উদ্যত হন। সিল সদস্যরা তৎক্ষণাৎ তাদেরকে ধরে ফেলেন। তখন ঘড়িতে সময় ১টা বেজে ৩০ মিনিট।
শুরু হলো ডেনি ডায়েটজের বাগ্রাম হেডকোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগের প্রাণান্ত চেষ্টা। কিন্তু সিগন্যাল না পৌঁছুতে পেড়ে হাল ছাড়লেন তিনি। হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া তিনজন ব্যক্তির প্রত্যেকেই নিতান্ত সাদাসিধে মানুষ। তাদের কাছে সন্দেহ করবার মতো কোনো অস্ত্র বা তেমন কিছুও নেই। উপরন্তু একজনের বয়স অনুর্ধ্ব ১৫ হবে। কিন্তু তাতেই বা কী? এদের ছেড়ে দিলে, এরা যে তালেবানদের কাছে খবর পৌঁছে দেবে না তার গ্যারান্টি কী? সিদ্ধান্ত হলো সবাই ভোট দেবে। একজন মাত্র এদেরকে হত্যা করার জন্য ভোট দিলেন। ফলে বাকী তিনজনের মতামতের উপর ভিত্তি করে, আধঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হলো গোবেচারা ছাগপালকদের।
ক্রমশ ঢালু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে অদৃশ্য হলো ছাগপালকেরা। এবার দ্রুত পা চালাতে হবে নেভি সিল সদস্যদের। কারণ, ছাগপালকেরা তাদের অবস্থান জানিয়ে দিলে পরিণতি কী হবে তা ভালো করেই জানা আছে সবার। যেদিকে যাবার কথা, তা থেকে কিছুটা বাঁ দিকে বিচ্যুত হয়ে নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক সময়ের লক্ষ্য ঠিক করে, দ্রুত পা ফেলতে লাগলেন চারজন। ৪০ মিনিট পূর্বের ধীরস্থির ভাবটা এখন আর নেই তাদের মধ্যে। কিন্তু পা গুলো যেন আগের চেয়ে ভারী মনে হচ্ছিল। যদিই তালেবান অ্যামবুশের শিকার হতে হয়? তবে ঘড়ির কাঁটার টকাস টকাস শব্দে প্রতিটি সেকেন্ড অতীত হবার সাথে সাথে একটু একটু করে পাগুলো হালকা হচ্ছিল! অনেকক্ষণ পর তাদের মনে প্রশ্ন জাগলো, ছাগপালকের কাউকে কিছু বলেনি তো?
ছাগপালকেরা চলে যাবার ঠিক ২ ঘন্টা পর, নিজেদের বাঁয়ে, পাহাড়ের দক্ষিণ দিক থেকে হৃৎকম্প বাড়িয়ে দেয়ার মতো শব্দ আসতে লাগলো। নেভি সিলদের দলটি তখন আগের অবস্থান থেকে কয়েক কিলোমিটার সরে এসেছে। তখন তারা সারেক উপত্যকায় অবস্থান করছেন। দূর থেকে অস্পষ্ট দেখে তারা ধারণা করেছিলেন একে-৪৭ আর আরপিজি নিয়ে অন্তত ৮০ জন যোদ্ধার একটি দল তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু আক্রমণের ভিডিও দুটি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ৮০ জনের অনেক কম যোদ্ধা সেখানে গিয়েছিল। ফুটেজ দুটি ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন আহমদ শাহ নিজে। অন্যদিকে ডেনি ডায়েটজ আরো একবার হেডকোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে লাগলেন। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে এসেছে। ঘড়িতে সময় বিকাল ৪টা।
এদিকে, কুনার প্রদেশের প্রতিটি উপত্যকার ভাঁজও আহমদ শাহ’র মুখস্ত। তাই নিজের সেনাদের তিনি সঠিকভাবে ছড়িয়ে দিতে লাগলেন। তার যোদ্ধারা সিল সদস্যদের তিনদিক থেকে ঘিরে নিতে লাগলো। আর সিল সদস্যরাও তাদের নিশানা তাক করতে শুরু করলেন। এরই মাঝে আরো একবার অপ্রত্যাশিত সংবাদ এলো ডায়েটজের কাছ থেকে। ‘রেস্কিউ’ এর আবেদন করে হেডকোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি! প্রকৃতপক্ষে হেডকোয়ার্টারে সাহায্যের বার্তা পৌঁছেছিল, শুধু কনফার্মেশনটাই পৌঁছেনি ডায়েটজের কাছে। এরই মধ্যে মার্কিন সৈন্যদের পলায়নের পথ রোধ করা হয়ে গিয়েছে। তালেবান যোদ্ধারা যখন মাত্র ২০ গজ দূরত্বের মধ্যে পৌঁছে গেল, গুলি ছুড়তে শুরু করলেন সিল সদস্যরা।
উল্লেখ্য, যেদিক থেকে ঘেরাও করা হয়নি, সে দিকটা পাহাড়ের খাড়া ঢাল। সেদিক থেকে ঘেরাও করবার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে সে ঢাল থেকেই নীচে গড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত দিলেন মারফি। চারজন একে একে ব্যস্তসমস্তভাবে লাফ দিয়ে অমসৃণ পাথুড়ে ঢালের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে বেশ খানিকটা নীচের সমতল অংশে গিয়ে পড়লেন। একাধিকবার গুলিবিদ্ধ হয়ে ডায়েটজ ততক্ষণে রক্তে রঞ্জিত। নীচে আছড়ে পড়ে গুরুতর ব্যথা পেয়েছেন মারফি আর লুট্রেলও। এদিকে গড়িয়ে পড়ার সময় চিকিৎসার উপকরণও হারিয়ে গেছে। তথাপি, সেগুলো দেখার সুযোগ নেই, আরো একটি ৩০ ফুট ঢালে লাফ দিলেন তারা। উদ্দেশ্য, নীচের গ্রামে গিয়ে কোথাও আশ্রয় নেয়া। উপর থেকে ক্রমাগত এলোপাথাড়ি গুলি করেই চলেছে আহমদ শাহ ও তার যোদ্ধারা। প্রতি মিটার পথ যেন এক একটি মাইল! গ্রাম আর কতদূর? তখন সময় ৪টা বেজে ৩০ মিনিট।
চারজনের মধ্যে সবার আগে মৃত্যুবরণ করলেন ডায়েটজ। অ্যাক্সেলসন, মারফি আর লুট্রেল ঢাল গড়িয়ে নীচে নেমে চলেছেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মারফি। অপর দুই সঙ্গীকে রক্ষা করতে তিনি উন্মুক্ত স্থানে গিয়ে রেডিও সিগন্যাল প্রেরণ করেন। রেডিও সিগন্যাল সচল হলেও বিদ্রোহীদের গুলিতে তার হৃদযন্ত্রের সিগন্যাল চিরতরে অচল হলো! অ্যাক্সেলসন আর লুট্রেল যখন কোনোরকম আহমদ শাহ’র যোদ্ধাদের আঁটকে রাখছেন, তখন শোনা গেল মার্কিন হেলিকপ্টারের গগনবিদারী শব্দ। আকাশে দেখা গেল দুটি এমএইচ-৪৭ চিনকুক বিমান। জীবিত দুজনের আশার পালে হঠাৎ করেই প্রবল বেগে হাওয়া লাগতে শুরু করলো। কিন্তু হাওয়া বন্ধ হতে সময় নিল মাত্র কয়েক মিনিট! একটি চিনকুক বিমান থেকে সৈন্যরা যখন অবতরণ করবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই বিদ্রোহীদের আরপিজি-৭ এর একটি গোলা আঘাত করে বিমানটিক। কয়েক মূহুর্তে পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে আছড়ে পড়ে বিমানটি। তখন ঘড়িতে সময় বিকাল ৫টা।
একটু পিছিয়ে যাই চলুন। অপারেশন রেড উইংয়সের মঞ্চায়ন ঠিক হয়ে যায় ২০০১ সালেই, যখন আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করে। ২০০৪ সালের মধ্যে মার্কিন এবং জোটের বাহিনী আফগানিস্তানের অধিকাংশ প্রদেশেই স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়। তারা মূলত ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরো দেশকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে নিয়মমাফিক বিভিন্ন প্রদেশে অভিযান চালাচ্ছিলেন। এরকম অসংখ্য অভিযানের একটি হচ্ছে অপারেশন রেড উইংস, যা কিনা কুনার প্রদেশকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ছিল। এই অভিযানের মূল টার্গেট ছিল সে অঞ্চলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসী এবং ঐ প্রদেশের ‘অ্যান্টি কোয়ালিশন মিলিশিয়া’ তথা এসিএম এর কমান্ডার আহমদ শাহ। সে স্থানীয়ভাবে ঐ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো নিজস্ব বাহিনী দ্বারা। যা হোক, পুরো অপারেশনের পরিকল্পনা করে মেরিনরা, যা ৫ ধাপে বিভক্ত ছিল।
- নেভি সিলদের একটি ছোট দল সাওতালো সার পাহাড়ের ঢালে অবতরণ করে চারদিক পর্যবেক্ষণ করবে, পাহাড়ের পাদদেশের দিকে অগ্রসর হবে এবং আহমদ শাহ’র অবস্থান নিশ্চিত করবে।
- দ্বিতীয় ধাপে একটি এমএইচ-৪৭ হেলিকপ্টার থেকে নেভি সিল ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন টিম’ এবং একটি ম্যারিন দল আহমদ শাহ ও তার লোকজনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করবে।
- তৃতীয় ধাপে, আফগান ও মার্কিন সৈন্যরা মিলে পুরো সারেক ও পেক উপত্যকা শত্রুমুক্ত করবে।
- চতুর্থ ধাপে, তারা অপারেশনের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করবে এবং আহত বেসামরিক নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে।
- মূল অপারেশন মূলত সেখানেই শেষ। পঞ্চম ধাপে মেরিনদের উক্ত অঞ্চলে পরবর্তী ১ মাস অবস্থান করে বিদ্রোহী বা এসিএম বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার কথা।
কিন্তু প্রথম ধাপেই তালগোল পাকিয়ে বিভীষিকায় রূপান্তরিত হয় পুরো অপারেশনটি। ২৮ জুনের ধ্বংসযজ্ঞ শেষ হয়েছিল এমএইচ-৪৭ চিনকুকের বিধ্বস্ত হবার মধ্য দিয়েই। গুরুতর আহত অবস্থায় একাই বেঁচে রইলেন লুট্রেল। ভাগ্যক্রমে তিনি আশ্রয় পান পাশতুন সম্প্রদায়ের গুলাব খান নামক এক ব্যক্তির কাছে। পাশতুন সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী তারা তাদের অতিথিদেরকে সকল দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বাধ্য। সে রীতি যথার্থভাবে পালন করেন গুলাব খান। ২৯ জুন আহমদ শাহ লুট্রেলের অবস্থান শনাক্ত করে ফেলে। সে গুলাব খানকে প্রাণনাশের হুমকি দিলেও গুলাব লুট্রেলকে তাদের হাতে তুলে দেন নি।
এদিকে, ২৯ জুন থেকে মার্কিন বাহিনী সিল সদস্যদের মৃতদেহ কিংবা জীবিতদের জন্য উদ্ধার অভিযান শুরু করে। প্রায় ৩০০ জন সামরিক সদস্য এই অভিযানে অংশ নেয়। ১ জুলাই মারফি, এক্সেলসন আর ডায়েটজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২ জুলাই উদ্ধার করা হয় লুট্রেলকে। জীবনবাজি রেখে লুট্রেলকে রক্ষা করা গুলাব খানের প্রাণসংশয় অনুধাবন করে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। মার্কিন এবং আফগান বাহিনী কুনার প্রদেশ ত্যাগ করার পরই আহমদ শাহ পুনরায় সেখানে প্রবেশ করেছিলেন। তবে, আহমদ শাহকে ধরতে কিংবা হত্যা করতে আগস্ট মাসেই ‘অপারেশন হোয়েলার’ পরিচালনা করা হয়। এই অপারেশনে আহমদ শাহ গুরুতর আহত হয়ে পালিয়েছিলেন। তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকেও সে অঞ্চল মুক্তি পায়। পরবর্তীতে, ২০০৮ সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আহমদ শাহ।
অপারেশন রেড উইংস শুরু হবার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়। মূলত, উদ্ধার অভিযানের সময় তা রেড উইংস-২ নামধারণ করে। নেভি সিলের ৩ জন সদস্য ছাড়াও, উদ্ধার করতে এসে ধ্বংস হওয়া বিমানে উপস্থিত আরো ১৬ জন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা সেদিন মৃত্যুবরণ করেন, যা ছিল একদিনে মার্কিন বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী বাহিনীর সবচেয়ে বড় হতাহতের ঘটনা। অন্যদিকে আহমদ শাহ’র মোট ৩৫ (বিভিন্ন উৎসে সংখ্যাটা বিভিন্নরকম, সর্বোচ্চ ৩৫) জন যোদ্ধা নিহত হন। কিন্তু এর ফলাফল ছিল আহমদ শাহ’র জন্য অত্যন্ত সাফল্যজনক। তিনি ব্যাপক পরিমাণ গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। তাছাড়া ১৯ জন মার্কিন সেনা হত্যা করায় তালেবানদের দ্বারা ব্যাপক প্রশংসিত হন। উপরন্তু একটি মার্কিন হেলিকপ্টারও ধ্বংস করেছেন। সব মিলিয়ে অপারেশন রেড উইংস ছিল মার্কিনীদের জন্য একটি পুরোদস্তর বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া মার্কাস লুট্রেলকে নিয়ে ২০১৩ সালে হলিউডে তৈরি হয়েছে ‘লোন সার্ভাইভর’ সিনেমা।
উল্লেখ্য, অপারেশন রেড উইংসে চারজন নেভি সিল সদস্যের সাথে ঘটে যাওয়া নাটকীয় গোলাগুলির মূহুর্তগুলোর কথা লুট্রেলের কাছে আমরা জানতে পারি। লুট্রেল মারা গেলে সেগুলো জানবার কোনো উপায় ছিল না। তথাপি, একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। নেভি সিলদের এই অপারেশনকে ঘিরে পরবর্তীতে অসংখ্য গল্প-গুজব ছড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতেও যেসব সংবাদ প্রচার হয়, সেগুলোর মধ্যে বেশ ভিন্নতা ছিল। মার্কিন বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ছাড়া অধিকাংশ তথ্যের মাঝেই অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।
ফিচার ছবি: nbcnews.com