Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভুলোমনা এক রসায়নবিদের যুগান্তকারী উদ্ভাবন ও অন্যান্য

ভুলোমনা স্বভাবের জন্য দৈনন্দিন জীবনে আমাদের কম ঝামেলায় পড়তে হয় না। কেউ ঘরের চাবি নিতে ভুলে যায়, কেউ মানিব্যাগ বিছানার উপর রেখে চলে আসে, কেউ মোবাইল চার্জার রেখেই চলে যায় দূরে কোথাও এবং এমনই আরো নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছি আমরা অনেকেই। কখনো কখনো নিজেদেরই হতে হয়েছে এর ভুক্তভোগী। তবে আজ এমন এক রসায়নবিদের গল্প করতে যাচ্ছি যার ভুলোমনা স্বভাবটির জন্যই তিনি যুগান্তকারী এক উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই সাথে থাকছে আরেকটি খেলনার গল্প যা নিতান্তই দুর্ঘটনাবশত উদ্ভাবন করে ফেলেছিলেন এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।

স্যাকারিন

কৃত্রিম মিষ্টিকারক পদার্থ হিসেবে স্যাকারিনের নাম কম-বেশি আমরা অনেকেই শুনেছি। বাংলায় কেউ কেউ একে আবার ভুল করে ‘স্যাগারিন’ বলেও ডেকে থাকেন। সে যা-ই হোক; আমাদের এ লেখার উদ্দেশ্য কারো উচ্চারণের ভুল শুধরে দেয়া নয়। বরঞ্চ এ স্যাকারিন উদ্ভাবনের পেছনে একজন রসায়নবিদের ভুলোমনা স্বভাব এবং কালক্রমে দুজন রসায়নবিদের মাঝে মনোমালিন্যকে তুলে ধরতেই এ লেখার অবতারণা।

ইরা রেমসেন

১৮৭৮-৭৯ সালের দিকে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এক ছোটখাট গবেষণাগারে প্রথম উদ্ভাবন করা হয় কৃত্রিম এ মিষ্টিকারক পদার্থটি। ইরা রেমসেন নামে রসায়নের এক প্রফেসরের তত্ত্বাবধানেই চলতো গবেষণাগারের যাবতীয় কাজকারবার। ১৮৭৭ সালে এইচ. ডব্লিউ. পেরোট ইমপোর্ট ফার্মের সাথে এক চুক্তি অনুযায়ী রেমসেনের গবেষণাগারটিতে যোগ দেন রাশিয়ান গবেষক কনস্টান্টিন ফাহ্‌লবার্গ।

যেদিন স্যাকারিন আবিষ্কার হয়েছিলো সেদিনকার কথা। গবেষণা করতে করতে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন ফাহ্‌লবার্গ যে, সেখান থেকে বেরিয়ে হাত ধোয়ার কথাটাও খেয়াল ছিলো না তার। বেশ ক্ষুধা লেগে যাওয়ায় সেই অবস্থাতেই খেতে বসে যান তিনি। কিন্তু খেতে গিয়ে চমকে উঠতে হয় তাকে। হাতে থাকা পাউরুটির টুকরোটা কেন যেন সেদিন অস্বাভাবিক বেশি মিষ্টি লাগছিলো। প্রথমে তিনি ভাবলেন যে, বেকারির কারিগরেরা হয়তো ভুলক্রমে পাউরুটি বানাতে গিয়ে তাতে চিনিও মিশিয়ে দিয়েছিলো। পরক্ষণেই তিনি সেই চিন্তা বাদ দেন। ফাহ্‌লবার্গ বুঝতে পারেন যে, গবেষণাগারে কাজ শেষ করে সম্ভবত তিনি হাত ধুতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই হাতে লেগে থাকা অজানা কোনো রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবেই এমনটা হচ্ছে।

কনস্টান্টিন ফাহ্‌লবার্গ

সাধারণ যেকোনো মানুষ এমন পরিস্থিতিতে অজানা আশঙ্কায় দৌঁড় লাগাতো হাসপাতালে। কিন্তু কনস্টান্টিন ফাহ্‌লবার্গ ছিলেন একজন গবেষক। তাই নিজের এমন অদ্ভুত উদ্ভাবনে নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন, একইসাথে আনন্দিতও হলেন অনেক। কিন্তু সেদিন স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করা লেগেছিলো তার। তাই ঠিক কোন রাসায়নিক পদার্থটি হাতে লাগার দরুন এ মিষ্টতার উদ্ভব হয়েছে, তা তিনি ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না।

রেমসেনের সেই বিখ্যাত ল্যাব যেখানে স্যাকারিন উদ্ভাবন করেছিলেন ফাহল্‌বার্গ

এরপরই শুরু হলো ফাহ্‌লবার্গের পাগলামি। ল্যাবে ফিরে গিয়ে তার ডেস্কের উপর থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলো একে একে চেখে দেখা শুরু করলেন তিনি! অল্প সময় পরেই তিনি পেয়ে গেলেন তার কাঙ্খিত সেই মিষ্টি স্বাদের উৎস। সালফোবেঞ্জয়িক এসিড, ফসফরাস ক্লোরাইড আর অ্যামোনিয়ার এক মিশ্রণ থেকেই তিনি পেয়েছিলেন সেই কড়া মিষ্টি স্বাদ। সেইদিন সকালেই তিনি এই মিশ্রণগুলো উত্তপ্ত করে তৈরি করেছিলেন বেঞ্জয়িক সালফাইনাইড। এটি নিয়ে আগেও কাজের অভিজ্ঞতা ছিলো ফাহ্‌লবার্গের। কিন্তু কোনোদিনই এর স্বাদ চেখে দেখার দরকার হয় নি তার।

এরপর আর দেরি করলেন না ফাহ্‌লবার্গ। রেমসেনের সাথে একটি সায়েন্টিফিক পেপার লিখে ফেললেন তিনি। ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত সেই পেপারে তাদের দুজনকেই স্যাকারিনের উদ্ভাবক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। তবে কয়েক বছরের মাঝে স্যাকারিনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বুঝতে পেরে ডিগবাজি দেন ফাহ্‌লবার্গ। ১৮৮৬ সালে করা স্যাকারিনের পেটেন্টে তাই নিজেকেই এর একমাত্র আবিষ্কারক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। আর এটা নিয়েই ফাহ্‌লবার্গের সাথে রেমসেনের গন্ডগোল শুরু হয়।

ফাহ্‌লবার্গের কাজটি মূলত রেমসেনের গবেষণাগারেই হওয়ায় রেমসেন চেয়েছিলেন এর সহ-উদ্ভাবক হিসেবে অন্তত তার নামটি থাকুক। অন্যদিকে ফাহ্‌লবার্গের পক্ষে দাঁড়ানো লোকদের মন্তব্য ছিলো যে, এর আগেও তিনি সালফোবেঞ্জয়িক এসিড নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তাই উদ্ভাবনের কৃতিত্ব মূলত তারই। এরপর থেকে ফাহল্‌বার্গের নামই শুনতে পারতেন না রেমসেন। ঐ নামটি শুনলেই তিনি বলে উঠতেন, “ফাহল্‌বার্গ একটা বদমাশ। তার নামের সাথে আমার নাম উচ্চারিত হতে শুনলেই আমার বমি আসে।”

রাসায়নিক গঠনানুযায়ী স্যাকারিনের নাম- ‘anhydroorthosulphaminebenzoic acid’। কিন্তু এমন নাম জনসাধারণ উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত ভেঙে যাবে! তাই ফাহ্‌লবার্গ বেছে নিয়েছিলেন ‘Saccharin’ শব্দটি যা এসেছে ‘Saccharine (চিনির মতো)’ থেকে। Saccharine এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Saccharon’ থেকে যার অর্থ ‘চিনি’। Saccharon আবার এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘শর্করা’ থেকে!

এবার তাহলে স্যাকারিন কোন কোন জায়গায় বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোই জানা যাক। ক্যালরি কিংবা কার্বোহাইড্রেটবিহীন বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও কোমল পানীয়ের মিষ্টিকারক হিসেবে ব্যবহার করা হয় স্যাকারিন। দুইটি বিশ্বযুদ্ধের সময়ই চিনির সংকটকালে ইউরোপে এর মূল বিকল্প ছিলো স্যাকারিন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিংবা যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছেন, তাদের জন্যও চিকিৎসকেরা কৃত্রিম এ মিষ্টিকারক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া কোমল পানীয়, বিভিন্ন বেকারীতে প্রস্তুত খাদ্যসামগ্রী, জ্যাম, চুইং গাম, ক্যানে সংরক্ষিত ফল, ক্যান্ডি, সালাদ ইত্যাদিতে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় ফাহল্‌বার্গের হাত না ধোয়ার ফলে আশীর্বাদ রুপে পাওয়া এ রাসায়নিক পদার্থটি!

স্লিঙ্কি

স্প্রিংয়ের মতো খেলনা ‘স্লিঙ্কি’র সাথে সবার পরিচয় না-ও থাকতে পারে। শুরুতে তাই ছবি দিয়ে দিচ্ছি যা দেখলে ধারণা করা সহজ হবে। মজাদার এ খেলনাটি দিয়ে খেলতে গেলে মনে হবে যে, কোনো স্প্রিংমানব বুঝি সারা ঘর জুড়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে টলতে টলতে হেঁটে বেড়াচ্ছে!

স্লিঙ্কির এ ভিডিওটি দেখলে সহজেই অনুমান করতে পারবেন এর বিখ্যাত হবার মূল কারণ।

১৯৪৩ সালের কথা। ফিলাডেলফিয়া শিপইয়ার্ডে কাজ করতেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রিচার্ড জেমস। একদিনের কথা, নিজের ডেস্কে বসে যুদ্ধজাহাজগুলোর আউটপুট হর্সপাওয়ার পরিমাপের উদ্দেশ্যে একটি মিটার তৈরির জন্য আপনমনে কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। উত্তাল সমুদ্রেও যাতে মিটারটি ঠিকমতো কাজ করে সেজন্য তাতে বিশেষভাবে বানানো এক ধরনের স্প্রিং ব্যবহার করা হয়েছিলো। হঠাৎ করেই অসাবধানতাবশত তার হাতের ধাক্কায় সেই স্প্রিংটি ডেস্ক থেকে পড়ে যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পড়ে যাবার পর সেটি স্থিতিস্থাপকতার জন্য এমনভাবে ঘরের কিছু অংশে ছুটে বেড়ালো যা দেখে পুরো তাজ্জব বনে গেলেন জেমস।

রিচার্ড জেমস

সাথে সাথে তিনি ছুটে গেলেন বাসায়, স্ত্রীকে জানালেন অফিসের পুরো ঘটনা। ঠিকমতো এমন স্প্রিং বানাতে পারলে সেগুলোকে তিনি ‘হাঁটাতে’ পারবেন বলেও জানালেন তিনি। আর এমন কিছু বানানো গেলে সেগুলোকে পরবর্তীতে বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে বাজারজাত করার ইচ্ছার কথাও জানালেন জেমস।

পরীক্ষামূলকভাবে কিছু স্প্রিংয়ের খেলনা বানিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করলেন জেমস। সবাই এর ভূয়সী প্রশংসা করলো। ওদিকে তার স্ত্রী বেটি ডিকশনারি ঘাটিয়ে খেলনাটির জন্য নাম ঠিক করলেন ‘Slinky’, যার অর্থ সর্পিল ও সরু।

বেটি জেমস

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা জেমস-বেটি দম্পতিকে আরো উৎসাহী করে তুললো। তারা এবার বাণিজ্যিক পর্যায়ে স্লিঙ্কি বানানোর কথা ভাবতে লাগলেন। অবশেষে স্বপ্নকে সত্যি করতে ৫০০ ডলার লোন নিলেন তারা, একটি কোম্পানি স্থাপন করে সংক্ষিপ্ত পরিসরে স্লিঙ্কি বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেলো। ফিলাডেলফিয়ার এক খুচরা বিক্রেতার কাছে তারা গিয়েছিলেন স্লিঙ্কিকে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য। সেই লোকটি রাজি হয়, সিদ্ধান্ত হয় সামনের বড়দিন উপলক্ষ্যে তার দোকানে বিক্রির জন্য ৪০০ স্লিঙ্কি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।

এভাবে চলে যায় কয়েকদিন, স্লিঙ্কি বিক্রি হয় না একটিও। এত শখ করে বানানো খেলনার ব্যবসা এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না জেমস। তাই তিনি ঠিক করলেন সেই দোকানে গিয়ে নিজেই খদ্দেরদের দেখাবেন স্লিঙ্কির কলাকৌশল। স্ত্রী বেটি জানালেন ঘরের কাজ শেষ করে রাতের বেলা তিনিও যাবেন দোকানে। রাতে তিনি ঠিকই গিয়েছিলেন দোকানে, কিন্তু গিয়ে যা দেখলেন তার জন্য মোটেই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। দোকানের সামনে ততক্ষণে তৈরি হয়ে গিয়েছিলো বিশাল বড় এক লাইন, সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে স্লিঙ্কি কেনার জন্য। সেদিন জেমসের বুদ্ধির জোরে মাত্র ৯০ মিনিটে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো ৪০০ স্লিঙ্কির সবগুলোই।

শুরুর দিকে ভালোই চলছিলো স্লিঙ্কির ব্যবসা। কিন্তু ১৯৬০ সালের দিকে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে জেমস চলে যান বলিভিয়ায়। সেখানে গিয়ে ধর্মপ্রচারকদের দলে নাম লেখান তিনি। অপরপক্ষে বেটি ঠিকই থেকে যান স্লিঙ্কির কোম্পানির সাথেই। এত কষ্ট করে তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে যেতে তার মন সায় দেয় নি।

স্বামী চলে যাবার পর ব্যবসার হাল ধরলেন বেটি নিজেই। সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজালেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো, স্বামীর চেয়ে ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে তিনি অনেক বেশি কৌশলী। তার সুদক্ষ পরিচালনায় কোম্পানিটি আবার উঠে দাঁড়িয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কোম্পানির পরিসর। আজ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩০ কোটিরও বেশি স্লিঙ্কি বিক্রি করেছে কোম্পানিটি।

স্লিঙ্কির বিজ্ঞাপন

পত্রিকায় খেলনাটি নিয়ে বেরিয়েছিলো খবর

বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া খেলনার কথা বললে অবধারিতভাবেই চলে আসবে স্লিঙ্কির নাম। খেলনা শিল্পে অনন্য অবদানের জন্য টয় ইন্ডাস্ট্রি হল অফ ফেমে ২০০১ সালে জায়গা করে নেন বেটি জেমস। ২০০৮ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার স্বামী রিচার্ড জেমস অবশ্য এরও অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। বলিভিয়ায় যাওয়ার ১৪ বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে পরলোকগমন করেন দুর্ঘটনাবশত স্লিঙ্কির আইডিয়া পাওয়া এ উদ্ভাবক।

২০১১ সালে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ১৯৪৫ সাল থেকে তখন পর্যন্ত প্রায় ৫০,০০০ টন তার ব্যবহার করা হয়েছিলো স্লিঙ্কি তৈরিতে, যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০,৩০,০০০ মাইলের সমান!

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্ব

১) সুপার গ্লু, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও পোস্ট-ইট নোট

 

This article is in Bangla language. It's about some inventions that were invented unintentionaly.

References:

১) todayifoundout.com/index.php/2014/05/saccharin-discovered-accident/

২) saccharin.org/facts/benefits-saccharin/

৩) todayifoundout.com/index.php/2011/08/the-slinky-was-originally-used-for-testing-horsepower-on-battle-ships/

Featured Image: zf.ro

Related Articles