রোম সাম্রাজ্যের উত্থান (পর্ব – ২৫): তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধ

যামার সেই যুদ্ধের পর অতিক্রান্ত হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বছরের মতো সময়। রোম পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরাশক্তিতে। কিন্তু তাদের এককালের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী কার্থেজের কী হলো?

দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের শেষে রোমের দাপটের সামনে নতজানু কার্থেজ তার অতীত ঐতিহ্য ছাড়া আর প্রায় সবকিছুই হারিয়েছিল। তার সামরিক শক্তি নিঃশেষিত প্রায়, আর নৌবহর দশটি জাহাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রোমের অনুমতি ছাড়া যেকোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল নিষিদ্ধ। তদুপরি বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ নিয়মিত রোমকে পরিশোধ করতে হচ্ছিল। কিন্তু তার ভৌগলিক অবস্থান তো আর পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং কার্থেজ তার নৌবাণিজ্য চালু রাখতে পেরেছিল, এবং আফ্রিকার উপকূল হয়ে দিকে দিকে যেসব ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যদ্রব্য বেচাকনার তাগিদে পাড়ি জমাতেন তাদের সকলের কাছে কার্থেজ ছিল আকর্ষণীয় বাণিজ্যকেন্দ্র।

যুদ্ধের পরিসমাপ্তি কার্থেজকে লম্বা সময় শান্তি এনে দিয়েছিল, যে সময়টা তার অর্থনীতি দ্রুত পূর্বের সমৃদ্ধি ফিরে পাচ্ছিল। ১৯৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হ্যানিবাল কার্থেজ থেকে নির্বাসিত হবার পর রোমও আর এদিকে খুব একটা নজর দেয়নি এবং কার্থেজ স্বাধীনভাবে তার ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা রোমের ক্ষতিপূরণও পুরোটাই পরিশোধ করে দিতে সক্ষম হয়।

ম্যাসিনিসার প্রতিহিংসা

কিন্তু কার্থেজের সীমান্তেই ছিল তাদের এক পরম শত্রু, নুমিডিয়ার রাজা ম্যাসিনিসা। একসময় হ্যানিবালের কাঁধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করা ম্যাসিনিসা দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের শেষদিকে রোমের পক্ষে যোগ দেয়ার পর থেকেই কার্থেজের চরম শত্রুতে পরিণত হন। বলা হয়, কার্থেজের বিরুদ্ধে তার বিদ্বেষের মূল কারণ ছিল হাসড্রুবালের কন্যা সফোনিসবাকে বিয়ে করতে ব্যর্থ হওয়া। ম্যাসিনিসার পরিবর্তে হাসড্রুবাল সাইফ্যাক্সের হাতে তার কন্যাকে তুলে দিয়েছিলেন। এই অপমান ম্যাসিনিসা কোনোদিনই ভুলতে পারেননি।

যামার যুদ্ধের পর অন্যান্য বেশ কিছু কার্থেজিনিয়ানদের সাথে সফোনিসবাও ম্যাসিনিসার হস্তগত হয়। কিন্তু সিপিও ম্যাসিনিসার উপর সফোনিসবার প্রভাবের কথা চিন্তা করে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই তিনি সফোনিসবাকে রোমানদের হাতে তুলে দিতে বলেন। সফোনিসবার থেকে রোমান আনুকূল্য ম্যাসিনিসার কাছে বেশি প্রয়োজনীয় থাকায় তিনি সিপিওর দাবী মেনে নেন। সফোনিসবা রোমানদের হাতে বন্দি হবার থেকে বিষপানে আত্মহত্যাকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

কার্থেজের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ম্যাসিনিসা তাদের এলাকাতে মাঝে মাঝেই লুটতরাজ চালাতেন। এদিকে কার্থেজের ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধি রোমান সিনেটের অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হানতে শুরু করে। দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধে হ্যানিবালের চালান ধ্বংসযজ্ঞ রোমানরা কখনোই ভুলে যেতে পারেনি। কাজেই তাদের মধ্যে কার্থেজের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।চতুর ম্যাসিনিসা বাতাস কোনদিকে বইছে টের পেলেন। তার বয়স তখন সত্তরের উপরে, কিন্তু যোদ্ধা ও সেনানায়ক হিসেবে তার দক্ষতায় কোনো মরচে পড়েনি।

Source: solarey.net

সময়টা ১৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আশেপাশে, ম্যাসিনিসা হামলা চালিয়ে কার্থেজের অধীনে থাকা লিবিয়ার কিছু অঞ্চল দখল করে বর্তমান ত্রিপোলির কাছাকাছি চলে আসেন। রোমের কাছে এর প্রতিকার প্রার্থনা করা ছাড়া কার্থেজের আর কিছুই করার ছিল না। কার্থেজের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোমান সিনেট ১৬১ ও ১৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দুটি প্রতিনিধিদল সেখানে প্রেরণ করে। তাদের কাজ ছিল ম্যাসিনিসার বিরুদ্ধে কার্থেজের অভিযোগ যাচাই করা। কিন্তু দুই দলই কার্থেজের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দখলকৃত অঞ্চলে ম্যাসিনিসার অধিকারকে স্বীকৃত দেয়।

১৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রতিনিধিদলের একজন ছিলেন বর্ষীয়ান সিনেটর মার্কাস পোর্সিয়াস কাটো। যুবা বয়সে তিনি দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধে রোমের বিরুদ্ধে কার্থেজের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কার্থেজ আবার রোমের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে এই নিয়ে তার মধ্যে একধরনের চাপা ভীতি ছিল। কার্থেজের অতীত সমৃদ্ধি ফিরে আসতে দেখে কাটোর এই ভীতি পরিণত হয় স্থির বিশ্বাসে। তিনি মনে করতেন, রোম যদি কার্থেজকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস না করে দেয় তবে আবার কার্থেজ রোমের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়াবে। তাই তিনি যখন রোমের ফিরে যান তারপর থেকে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করেন সিনেটকে কার্থেজের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর জন্য প্ররোচিত করতে। তার প্রতিটি বক্তৃতার শেষ হত এভাবে- Delenda est Carthago (কার্থেজকে ধ্বংস হতেই হবে)।

মার্কাস পোর্সিয়াস কাটো; Source: trendsmap.com

এদিকে রোমের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ম্যাসিনিসা কার্থেজের মূল নগর ব্যতিরেকে এর আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অধিকার করে নেন। অতিষ্ঠ হয়ে কার্থেজ রোমের অনুমতি না নিয়েই যুদ্ধযাত্রা করে। কিন্তু প্রায় নব্বইয়ের কাছাকাছি বয়স হলেও ম্যাসিনিসা কার্থেজের বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন, এবং তাদের থেকে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করে নেন। তবে তিনি সরাসরি কার্থেজে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকেন।

নুমিডিয়ানদের আক্রমণ; Source: reddit.com

কার্থেজিনিয়ানরা এবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। তারা ভাল করেই বুঝতে পারছিল যে রোম হয়তো এই সুযোগ ছাড়বে না। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে তাদের উপর নতুন করে আক্রমণ করবে। কাজেই কার্থেজ দ্রুত সিনেটের কাছে দূত পাঠাল। তারা যুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে রোমের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিল। সিনেট তাদের সহায়-সম্পত্তির সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেরত পাঠাল।

রোমের সৈন্য সমাবেশ

সিনেট কিন্তু ভেতরে ভেতরে কার্থেজকে পুরোপুরি মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিল না। যদিও তাদের মধ্যে এই বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। কাটো সবসময়ই কার্থেজের ধংসের পক্ষপাতি ছিলেন। তার এবং অন্যান্য সমমনা সিনেটরদের চাপে কন্সাল ম্যানিলিয়াস ও সেন্সরিয়াস সিসিলিতে সেনা সমাবেশ করতে শুরু করলেন। আবার কার্থেজিনিয়ান দূতরা রোমের সামনে আসলে তাদের বলা হলো কার্থেজের রোমের কাছে পরিপূর্ণ সমর্পণের প্রমাণ হিসাবে তাদের অভিজাত পরিবারগুলো থেকে তিনশ ছেলেমেয়েকে রোমে হস্তান্তর করতে হবে। মেনে নেয়া ছাড়া কার্থেজের আর কোনো উপায় ছিল না।

আফ্রিকার রোমান সেনাদল

১৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্তে কন্সালদের নেতৃত্বে ১৫০ জাহাজের রোমান বহর উটিকার উপকূলে এসে ভিড়ল। পুনরায় কার্থেজিনিয়ান দূতরা তাদের সামনে এলে এবার তারা জানালেন যে, কার্থেজের সদিচ্ছা রোমের কাছে স্পষ্ট। সেজন্য রোম কার্থেজের সুরক্ষার সব দায়িত্ব নিচ্ছে। তাই সিনেট মনে করে কার্থেজের কোনো অস্ত্রশস্ত্র দরকার নেই। সমস্ত অস্ত্র রোমের কাছে সমর্পণ করা উচিত। রোমকে যুদ্ধ করার কোনো উসিলা না দিতে কার্থেজ এবারও শর্ত মেনে নিল।

রোমান সিনেটরদের মধ্যে বচসা তখনও চলমান। কাটো কার্থেজের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই চলেছেন। তার সাথে একমত অনেক রোমান সিনেটর, যার মধ্যে সিপিওর নাতি অ্যামেলিয়ানাস অন্যতম। ওদিকে সিপিওরই আরেক আত্মীয় ন্যাসিকা তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করছিলেন।

রোম এবার তার সর্বশেষ দাবী জানালো। কার্থেজের সকল অধিবাসীকে নগর ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। তাদের নতুন আবাস হবে উপকূল থেকে ১৬ কিলোমিটার ভেতরে। এই শর্ত ছিল কার্থেজের প্রাণশক্তি, তার নৌবাণিজ্যের মৃত্যুর ফরমান। কার্থেজের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। তারা রোমের দাবি প্রত্যাখ্যান করল এবং যুদ্ধের ডাক দিল। 

কার্থেজের যুদ্ধপ্রস্তুতি

কার্থেজিনিয়ানরা রোমের অবরোধ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করল। শহরের সব দাসদের মুক্ত করে দেয়া হলো। কার্থেজের অধিবাসীরা যে যেভাবে পারে অস্ত্র বানাতে লাগল। বলা হয়, মহিলারা তাদের মাথার চুল দিয়ে ক্যাটাপুল্টের দড়ি তৈরি করেছিল।

নগর হিসেবে কার্থেজ যথেষ্ট সুরক্ষিত। শহরের উত্তর দিকে পাহাড় আর বাগান। এছাড়া ত্রিশ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরক্ষিত প্রাচীর নগর ঘিরে আছে। লেক তিউনিসের তীরবর্তী কার্থেজের দুটি পোতাশ্রয়ই প্রাকৃতিকভাবেই চারদিকে আবদ্ধ এবং শুধু একটিমাত্র অংশ দিয়েই সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব। পার্শ্ববর্তী এলাকা নেফেরিসে হাসড্রুবাল নামে এক জেনারেলের অধীনে কার্থেজের সেনাদল অবস্থান করছিল। লিবিয়ার অধীনস্থ অঞ্চলগুলোও এসময় কার্থেজের পক্ষ ত্যাগ করেনি।

অবরোধের প্রথম দুই বছর

Source: pinterest.ca

রোমান সেনাদল কার্থেজবাসীর দৃঢ়তায় আর তাদের কম্যান্ডারদের অযোগ্যতার কারণে এসময় কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। ১৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা সরাসরি নগরপ্রাচীর আক্রমণের চেষ্টা করলেও বাজেভাবে ব্যর্থ হয়। একই বছর কার্থেজের পোতাশ্রয় দিয়ে ঢুকতে চাইলে সেখান থেকে কার্থেজিনিয়ানরা জ্বলন্ত জাহাজ রোমান বাহিনীর দিকে পরিচালনা করে তাদের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসময় রোমান সেনাদের মধ্যে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

Source: weaponsandwarfare.com

ম্যাসিনিসা হয়তো রোমকে সাহায্য করতে পারতেন। কিন্তু রোমানরা তার সাহায্য চায়নি এবং ১৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৯০ বছর বয়সে ম্যাসিনিসার মৃত্যু হলে তার অভিজ্ঞতার সুযোগ নেয়ার সম্ভাবনা বিলীন হয়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগের বছর কাটোও মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং কার্থেজের দুই পরম শত্রু এর শেষ দেখে যেতে পারেননি।   

১৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নতুন রোমান জেনারেল পিসো উটিকার উত্তরে কার্থেজের বিশ্বস্ত মিত্র হিপাক্রা নগরে আক্রমণ করেও কোনো সাফল্য পেলেন না। সমরনায়কদের ক্রমাগত ব্যর্থতায় রোমান নাগরিকরা তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠে। তাদের দাবির মুখে সিনেট ১৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিশেষ আইনের ভিত্তিতে সিপিও অ্যামেলিয়ানাসকে কন্সাল নিযুক্ত করে কার্থেজে অবরোধের ভার তার হাতে তুলে দেয়।

অবরোধের তীব্রতা বৃদ্ধি

অ্যামেলিয়ানাস  দ্রুত রোমান সেনাদল পুনর্গঠন করলেন। তার অধীনে কার্থেজের চারদিকে রোমান বেষ্টনী শক্তিশালী করা হলো। দুই পোতাশ্রয়ও সিপিও ঘিরে ফেললেন। কার্থেজিনিয়ানরা কয়েকটি জাহাজ একত্রিত করে পোতাশ্রয় দিয়ে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলেও রোমানরা তাদের ব্যর্থ করে দেয়।

কার্থেজের পোতাশ্রয় অবরোধ; Source: Ancient History Encyclopedia

চারদিক থেকে অবরুদ্ধ কার্থেজ দুর্ভিক্ষ আর রোগবালাইয়ে কাতর হয়ে পড়ল। ইতোমধ্যে হাসড্রুবাল নগরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি তার প্রতিপক্ষদের হত্যা করে নগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন।ওদিকে ১৪৭-১৪৬ এর শীতে সিপিও নেফেরিসে থাকা কার্থেজিনিয়ান সেনাদলকে পরাজিত করেন। যোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিকসহ প্রায় ৭০,০০০ মানুষকে রোমানরা হত্যা করে।

কার্থেজের পরাজিত সেনাদল; Source: pinterest.ca

কার্থেজের পতন

১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্ত। সিপিও তার চূড়ান্ত হামলা পরিচালনা করলেন। কার্থেজের একটি পোতাশ্রয় ব্যবহার করে রোমান বাহিনী নগরে ঢুকে পড়ল। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় আর রোগে পীড়িত কার্থেজিনিয়ানরা সহজ শিকার ভেবে থাকলে রোমানরা ভুল করেছিল। তারা প্রবল বিক্রমে রুখে দাঁড়াল।

Source: Ancient History Encyclopedia

নগরের রাস্তায়, অলিতে-গলিতে, দালানকোঠার ভেতরে চলতে লাগল হাতাহাতি যুদ্ধ। ছয়দিন লেগে গেল রোমানদের কার্থেজের প্রধান দুর্গ, বিরসার কাছে পৌঁছতে। এখানে হাসড্রুবাল ও শহরের বেঁচে থাকা অধিবাসীদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছিলেন। রোমান সেনাবাহিনীর চাপে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

কার্থেজের ভেতরে রোমান সেনাদল; Source: alchetron.com

ওদিকে রোমানদের পক্ষত্যাগী অনেক সৈন্য কার্থেজের হয়ে লড়াই করেছিল। তাদের মধ্যে বেঁচে থাকা ৯০০ সেনা আশ্রয় নেয় অ্যাপোলোর মন্দিরে। সেখানে হাসড্রুবালের স্ত্রী ও দুই সন্তানও ছিল। তারা মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দিলে সবাই তাতে লাফিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয়। দেয়। রোমান সেনারা ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়ে শহরে আগুন লাগিয়ে দেয়।

সতের দিন ধরে কার্থেজ দাউ দাউ করে জ্বলে। নগরের সব স্থাপনা, এর বাগান, দুর্গ সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। রোমান সেনাপতির নির্দেশে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা হয় কার্থেজের চিহ্ন। এর পঞ্চাশ হাজার বন্দিকে রোমানরা দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। কার্থেজের কিছু অঞ্চল নুমিডিয়ার অধীনে চলে যায়।  বাকি অংশ আফ্রিকা নামে নতুন প্রদেশ হিসেবে রোমের অন্তর্ভুক্ত হয়। যেসব নগর আগেই রোমের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল সেগুলোকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়ে রোমান সেনাদলের বেশিরভাগ অংশ আফ্রিকা ত্যাগ করল।

কার্থেজের ধ্বংসস্তূপ; Source: Encyclepaedia Britannica

পুড়ে ছারখার কার্থেজ পড়ে রইল অভিশপ্ত মৃত এক নগর হিসেবে। একশ বছর পর জুলিয়াস সিজার এখানে রোমান কলোনি স্থাপন করার আগপর্যন্ত কার্থেজে কোনো মানুষ পা ফেলেনি।        

This is a part of the series on the Rise of the Ancient Rome. This article describes the events of the third Punic War and the subsequent destruction of Carthage.

References:

1. Hoyos, D. (2017). The Third Punic War, 149–146 BC. In The “The Encyclopedia of Ancient Battles”, First Edition. Edited by Michael Whitby and Harry Sidebottom. John Wiley & Sons Ltd. doi: https://doi.org/10.1002/9781119099000.wbabat0400

2. Pennell, R. F. (1921). History of Rome from the Earliest times down to 476 Ad. The Macmillan Company, New York, USA.

3. Boak, A. E. R. (1921) History of Rome to 565 A. D. The Macmillan Company, New York, USA.

Feature Image: busy.org

Related Articles

Exit mobile version