Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গোয়েন্দাদের ব্যবহৃত গোপন যত যন্ত্র

কৈশোরে বিভিন্ন থ্রিলার উপন্যাস পড়ে কিংবা এ ধরনের সিনেমা দেখে বড় হয়ে গোয়েন্দা হতে চেয়েছে, এমন মানুষদের সংখ্যা অগণিত। শার্লক হোমস, ফেলুদা কিংবা সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর মতো গোয়েন্দাদের নানা কলা-কৌশল, বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা আর ব্যবহৃত নানা ধরনের যন্ত্রপাতিতে মুগ্ধ হয়েছে প্রত্যেকেই।

আমাদের আজকের আয়োজনও এই গোয়েন্দাদের নিয়ে। আরো ভালো করে বলতে গেলে গোয়েন্দাদের ব্যবহৃত গোপন বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে। সময়ের পরিবর্তনে, প্রযুক্তির অগ্রসরতায় এখন হয়তো তারা আর সেগুলো ব্যবহার করেন না। তবে এগুলো সম্পর্কে জানলেও মাঝে মাঝে নিজেদের মাঝে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়। আর দেরি না করে চলুন তবে সেই অন্যরকম অনুভূতির সাথেই সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক।

পাইপে লুকনো রেডিও

আপনি কোথাও বসে বসে পাইপে তামাক টানতে থাকলে কার ঠেকা পড়েছে আপনাকে গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করার? ঠিক এ কারণেই এমন পাইপের আশ্রয় নিয়েছিলো সিআইএ। তারা এর মাঝে লুকিয়ে রেখেছিলো একটি রেডিও রিসিভার। অ্যাসাইনমেন্টের জায়গায় গিয়ে একজন এজেন্ট পাইপ টানার ভান করতো কিংবা কখনো কখনো শুধু হাতে রেখে দিতো। গত শতকের ষাটের দশকে মূলত ব্যবহৃত হতো এটি।

সিগারেটের প্যাকেটে ক্যামেরা


গত শতকের মাঝামাঝি দিককার সময়ে ছোট আকৃতির ও নিঃশব্দে কাজ সারা যায়- এমন ক্যামেরাগুলোর মাঝে অন্যতম ছিলো ৩৫ মিলিমিটার টেসিনা ফিল্ম ক্যামেরাটি। দরকার পড়লে এই পার্লামেন্ট ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেটে লুকিয়েই ব্যবহার করা হতো এটি।

ক্যামেরাবাহী কবুতর

এমন কবুতরদের দেখা মিলেছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। তাদের গায়ে এসব ছোট আকারের হালকা ক্যামেরা বেঁধে ছেড়ে দেয়া হতো শত্রুপক্ষের নানা স্থাপনার কাছাকাছি। সেখান দিয়ে উড়ে যাবার সময় ক্যামেরা দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি উঠতে থাকতো। পরে গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পর সেই ছবিগুলো ব্যবহার করা হতো গোয়েন্দাগিরির কাজে। কবুতরগুলো মাটির অনেক কাছ দিয়ে উড়তো বলে এরোপ্লেন থেকে তোলা ছবির তুলনায় এ ছবিগুলো ছিলো অনেক ভালো মানের।

ইনসেক্টোথপ্টার

দেখতে আর আট-দশটা সাধারণ ফড়িংয়ের মতো মনে হলেও এটা কোনো জৈবিক ফড়িং নয়, বরং গোয়েন্দাগিরির উদ্দেশ্যে বানানো এক যান্ত্রিক ফড়িং। এর মাথার দিকের অংশে ছোট একটি মাইক্রোফোন বসানো থাকতো।

ক্ষুদ্রাকৃতির একটি ইঞ্জিনের সাহায্যে চালিত ইনসেক্টোথপ্টার নামক এ ডিভাইসটি মিনিটে ৬৫০ ফুট পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারতো, যা নিয়ন্ত্রণ করা হতো রিমোটের সাহায্যে। তবে ঘন্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হলেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। এজন্য যান্ত্রিক এ ফড়িংটি কখনোই ফিল্ড অপারেশনের স্বাদ পায় নি।

ডেড ড্রপ স্পাইক

বিভিন্ন সময়ই এজেন্টদের সরাসরি দেখা করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেত। এজন্যই বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে এগুলো ব্যবহার করতো সিআইএ। এর ভেতরের ফাঁপা অংশে কোনো ফিল্ম বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট ভরে তা মাটিতে এক জায়গায় পুঁতে রেখে চলে যেত একজন এজেন্ট। একই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কাজ করা আরেক এজেন্টকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখা হতো সেই জায়গার কথা। সে পরে কোনো এক সুবিধাজনক সময়ে সেখানে এসে সেগুলো তুলে নিয়ে যেত। এভাবেই সশরীরে দেখা না করেও চলতো এজেন্টদের মাঝে যোগাযোগ।

মেটে রংয়ের ট্রান্সমিটার

ছবি দেখলেই বোঝা যায় যে, এ ডিভাইসটির রঙ একে সহজেই মাটির সাথে মিশে যেতে সহায়তা করতো। এজন্যই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে এটি ব্যবহার করতো সিআইএ। ১,০০০ ফুট দূর থেকেও মাটিতে কম্পন শনাক্ত করা যেত এর মাধ্যমে। কম্পন ধরা পড়লে পরবর্তীতে রেডিও সিগনালের মাধ্যমে সিআইএ’র কাছে চলে যেত বার্তা।

আয়না

আয়না মানুষ ব্যবহার করে নিজেদের চেহারা দেখা, চুল ঠিকঠাক করা, রুপসজ্জার মতো কাজে। কিন্তু এমন গতানুগতিক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো সিআইএ। তারা এ আয়নাটি এমনভাবে তৈরি করেছিলো যাতে একটি বিশেষ কোণে ধরলে এর ভেতরে লুকনো গোপন মেসেজটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

যান্ত্রিক মাছ চার্লি

নব্বইয়ের দশকের দিকে সমুদ্রের তলদেশে শত্রুপক্ষের নৌ-যানের উপর নজরদারির উদ্দেশ্যে চার্লি নামের এ যান্ত্রিক মাছটি বানিয়েছিলো সিআইএ। রিমোটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত এ মাছের শরীরে লুকানো ছিলো একটি মাইক্রোফোন, আর প্রপালশন সিস্টেম ছিলো লেজের দিকটায়।

বেলী বাস্টার

প্রতিপক্ষের উপর নজরদারির জন্য বিচিত্র এ ড্রিল মেশিনটি পঞ্চাশের দশকে ব্যবহার করতো সিআইএ। এজন্য এর পেছনের দিকটি পেটের সাথে ঠেস দিয়ে দেয়ালে লাগানো হতো সূক্ষ্ম প্রান্তটি। এরপর হাতলটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেয়ালে ছিদ্র করে সেখানে একটি মাইক্রোফোন বসিয়ে দিয়ে চলে আসতো সেই এজেন্ট।

ফাঁপা রৌপ্যমুদ্রা

দূর থেকে দেখলে মুদ্রাগুলোকে আর আট-দশটা সাধারণ রৌপ্যমুদ্রার মতোই মনে হবে। কিন্তু কাছে গেলেই দেখা মিলবে বিচিত্র এক জিনিসের। কারণ এ মুদ্রাটি নিরেট নয়, একেবারেই ফাঁপা। এর ভেতরে ফিল্ম বা অন্য কোনো বার্তা লুকিয়ে রাখা যেত।

দুজন মানুষ যদি একজন আরেকজনের সাথে রাস্তায় মুদ্রা বিনিময় করে, তাহলে সন্দেহ করবে না কেউই। এজন্যই নিরাপদে যোগাযোগ ও তথ্য পাচারের জন্য একসময় এটি ব্যবহার করতো সিআইএ।

কাফলিঙ্কে কম্পাস

কাফলিঙ্কে লুকনো এমন ক্ষুদ্রাকৃতির কম্পাসের দেখা মিলতো ১৯৩০ সালের দিকে। পালানোর সঠিক রাস্তা খুঁজে বের করতেই মূলত এটি ব্যবহার করতেন একজন এজেন্ট।

মাইক্রোডট ক্যামেরা

কোনো ছবি কিংবা টেক্সটকে আকারে অনেক ছোট করে কোনো ছোট ডিস্কে ধারণ করার কৌশলকে বলা হয় মাইক্রোডট। মাইক্রোডটগুলো সাধারণত বৃত্তাকার এবং ১ মিলিমিটার ব্যাসের হয়ে থাকে। গত শতকের চল্লিশের দশকে এমন মাইক্রোডট ক্যামেরা বানিয়েছিলো সিআইএ’র প্রকৌশলীরা।

মাইক্রোডট ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি কিংবা এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত ডকুমেন্টগুলো পরবর্তীতে চিঠি, আংটি কিংবা ফাঁপা মুদ্রায় করে স্থানান্তর করা হতো।

কিস অফ ডেথ

নামের মাঝে চুম্বনের ছোঁয়া থাকলেও সেই চুম্বন ভালোবাসা মিশ্রিত কিছু ছিলো না। কারণ এটি ছিলো একটি সিঙ্গেল শট ৪.৫ মিলিমিটার পিস্তল। লিপস্টিক হোল্ডারের মাঝে লুকিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় এটি বহন করতো কেজিবি’র সদস্যরা। তবে আসলেই এটি কখনো ব্যবহৃত হয়েছিলো কিনা তা জানা যায় নি।

ট্রান্সমিটার লাগানো জুতা

গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে পূর্ব ইউরোপে নিয়োজিত পাশ্চাত্য কূটনীতিকেরা সাধারণত স্থানীয় মার্কেটগুলো থেকে কাপড়চোপড় কিংবা জুতা কিনতেন না। এগুলো তারা ডাকযোগে নিজেদের দেশ থেকেই আনানোর ব্যবস্থা করতেন। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছিলো রোমানিয়ার সিক্রেট সার্ভিস। ডাক বিভাগের সাথে যোগসাজশে তারা বাইরের দেশ থেকে সেসব জিনিস তাদের দেশে আসার পর জুতার হিলের অংশে ট্রান্সমিটার লাগিয়ে দিতো।

গাছে লুকনো বাগ

গাছের কাটা অংশের আদলে বানানো এ বাগ সত্তরের দশকে মস্কোর কাছাকাছি এক গাছপালা ঘেরা এলাকায় রেখে এসেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা। কাছাকাছি এক সোভিয়েত এয়ার বেজ থেকে আসা সিগনাল গোপনে রিসিভ করতেই মূলত ব্যবহার করা হতো এটি। বাগটি সেই সিগনাল পাঠাতো একটি স্যাটেলাইটে যা পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি জায়গায় প্রেরণ করা হতো। সৌরশক্তির সাহায্যেই চালানো হতো ডিভাইসটি। শেষ পর্যন্ত এক কেজিবি এজেন্ট ঠিকই এর সন্ধান পেয়েছিলো।

সিল্ক ম্যাপ

ওয়াটারপ্রুফ রঙ দিয়ে সিল্কের কাপড়ে মুদ্রিত এ ম্যাপগুলো নিজেদের কাছে রাখতো এজেন্টরা। দরকার পড়লে ম্যাপে দেখানো রাস্তা ধরিয়ে পালিয়ে যেত তারা।

চাবির রিংয়ে ক্যামেরা

সত্তরের দশকের সিআইএ এজেন্টদের চাবির রিংয়ের মাঝে দেখা মিলতো এসব ক্যামেরার।

বোতামরুপী ক্যামেরা

ক্যামেরা লুকনোর জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের গোয়েন্দারা। এর মাঝে জনপ্রিয় একটি কৌশল ছিলো কোটের বোতামরুপী ক্যামেরা। এক্ষেত্রে লেন্স হিসেবে কাজ করতো বোতাম, আর ট্রিগার থাকতো পকেটে। ছবি তোলার দরকার হলে শুধু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ছবি তুলে নিতো একজন এজেন্ট।

দেয়ালের ভেতর দিয়ে দেখা

ছবিতে দেখানো জিনিসটা হাল আমলের সেলফি স্টিকের মতো লাগলেও এটি আসলে বড়সড় একটি লেন্স যা দিয়ে দেয়ালের অপরপাশের সবকিছু দেখা যেত। আশির দশকে পূর্ব জার্মানির এজেন্টরা দেয়ালে ফুটো করে অপরপাশের ছবি তুলে রাখতে এটি ব্যবহার করতো।

মিনক্স

এককালে গোয়েন্দাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিলো এ মিনক্স ক্যামেরা। হাতের তালুতেই এঁটে যাওয়া এ ক্যামেরা দিয়ে একবারে ৫০টির মতো ছবি তোলা যেত। আর সেই ছবিগুলোও হতো বেশ ভালো মানের। তবে সবসময় যে সরাসরি একজন এজেন্টের হাতে ক্যামেরা শোভা পেত, সেটি বলা যাবে না। কখনো কখনো ফাঁপা ব্রাশের ভেতরেও ঢুকিয়ে রাখা হতো এ ক্যামেরাটি।

তথ্যসূত্র

 

  • https://goo.gl/BKKD83
  • https://goo.gl/aY2ZcL
  • https://goo.gl/iJEAjb
  • https://goo.gl/GZ899p
  • https://goo.gl/UPdPCG

Related Articles