Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেসব রাষ্ট্রে ব্রিটিশরা কখনো আক্রমণ করেনি (পর্ব – ৯): মালি, মোনাকো ও লিখটেনস্টাইন

[অষ্টম পর্বের পর]

মালি

‘মালি প্রজাতন্ত্র’ (ফরাসি: République du Mali; বাম্বারা: ߡߊߟߌ ߞߊ ߝߊߛߏߖߊߡߊߣߊ, ‘মালি কা ফাসোজামানা’; ফুলা: 𞤈𞤫𞤲𞥆𞤣𞤢𞥄𞤲𞤣𞤭 𞤃𞤢𞥄𞤤𞤭, ‘রেনদান্দি মালি’) পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত একটি বৃহৎ স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। ১২,৪০,১৯২ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট এই রাষ্ট্রের উত্তর ও উত্তর–পূর্বে আলজেরিয়া, পূর্বে নাইজার, দক্ষিণ–পূর্বে বুর্কিনা ফাসো, দক্ষিণে আইভরি কোস্ট, দক্ষিণ–পশ্চিমে গিনি, পশ্চিমে সেনেগাল এবং উত্তর–পশ্চিমে মৌরিতানিয়া অবস্থিত। রাষ্ট্রটির সীমান্তে কোনো সমুদ্র নেই, ফলে ঔপনিবেশিক যুগে পরাক্রান্ত ব্রিটিশ নৌবহরের পক্ষে সমুদ্রপথে মালি আক্রমণ করা সম্ভব ছিল না। তদুপরি, মালির পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সবগুলোই সেসময় ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ, সুতরাং ব্রিটেনের জন্য স্থলপথে মালি আক্রমণ করাও সহজ ছিল না। এজন্য বর্তমান মালির ভূখণ্ডে কখনো ব্রিটিশ আক্রমণ পরিচালিত হয়নি। অবশ্য অঞ্চলটির ইতিহাসে ব্রিটিশরা যে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল, ব্যাপারটা এমন নয়।

বর্তমান মালির ভূখণ্ড পর্যায়ক্রমে পশ্চিম আফ্রিকার তিনটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। এই সাম্রাজ্যগুলো হচ্ছে – ঘানা সাম্রাজ্য, মালি সাম্রাজ্য এবং সোঙ্ঘাই সাম্রাজ্য। মালি সাম্রাজ্যের নাম থেকেই আধুনিক মালি রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়েছে। মালির বিখ্যাত শহর তিম্বুকতু ট্রান্স–সাহারান বাণিজ্যের ফলে বিত্তশালী হয়ে উঠেছিল এবং সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের কাছে এটি অনেকটা ‘আফ্রিকান এল দোরাদো’য় পরিণত হয়। উল্লেখ্য, এল দোরাদো (El Dorado) হচ্ছে একটি কল্পিত স্থান, যেটি বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদে পরিপূর্ণ এবং দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত বলে ধারণা করা হতো। অনুরূপভাবে, অত্যন্ত বিত্তশালী তুম্বুকতু শহরও সেসময় ইউরোপীয়দের জন্য এল দোরাদোর মতোই ছিল, কারণ ঊনবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত কোনো ইউরোপীয় ব্যক্তি তিম্বুকতুতে পৌঁছাতে পারেনি।

১৮০৫ সালে স্কটিশ জাতিভুক্ত ব্রিটিশ অভিযাত্রী মাঙ্গো পার্ক ৩০ জন সৈন্য ও কতিপয় অফিসারসহ তিম্বুকতুর উদ্দেশ্যে একটি অভিযানে রওনা হন। তার উদ্দেশ্য ছিল নাইজার নদী বরাবর অগ্রসর হয়ে বর্তমান মালির ভূখণ্ডের গভীরে অবস্থিত তুম্বুকতু শহরে পৌঁছানো। ইতিপূর্বে তিনি এই অঞ্চলে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ১৭৯৬ সালে পরিচালিত সেই অভিযানে তিনি সিগু অঞ্চলে নাইজার নদী পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন এবং নদী বরাবর কিছু দূর অগ্রসর হয়েছিলেন, কিন্তু রসদপত্র ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে প্রত্যাবর্তন করতে হয়।

মানচিত্রে স্থলবেষ্টিত পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্র মালি; Source: Encyclopedia Britannica

পার্কের ১৮০৫ সালের অভিযান পূর্বের অভিযানের তুলনায় বেশি সফল ছিল, কিন্তু একই সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য ছিল অত্যন্ত বিপর্যয়কর। এই অভিযানে তিনি পূর্ববর্তী অভিযানের তুলনায় বহু দূরে অগ্রসর হন এবং বর্তমান মালির সানসানদিংয়ে দুই মাস বিশ্রামের পর তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন। তিনি তার দিনপঞ্জি ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেগুলো ব্রিটেনে পৌঁছে যায়, কিন্তু তিনি নিজে ফিরে আসতে পারেননি। পার্কের খোঁজ করার জন্য প্রেরিত একটি ব্রিটিশ অনুসন্ধানী দল কেবল তার মিউনিশন্স বেল্টটি খুঁজে পেয়েছিল।

১৮২৪ সালে ফ্রান্সের একটি ‘ভূগোল সমিতি’ ঘোষণা করে যে, যে ইউরোপীয় ব্যক্তি প্রথম তিম্বুকতুতে পৌঁছে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে, তাকে তারা ১০ হাজার ফ্রাঁ (ফরাসি মুদ্রা) পুরস্কার প্রদান করবে। ১৮২৬ সালে আরেক স্কটিশ জাতিভুক্ত ব্রিটিশ অভিযাত্রী মেজর আলেকজান্ডার ল্যাং তিম্বুকতুতে পৌঁছান, কিন্তু তিনিও সেখান থেকে জীবন্ত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করতে পারেননি। অবশেষে ১৮২৮ সালে ফরাসি অভিযাত্রী রেনে কাইয়ে প্রথম ইউরোপীয় ব্যক্তি হিসেবে তুম্বুকতুতে পৌঁছে সেখান থেকে নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হন। তিনি তার প্রাপ্য পুরস্কার বুঝে পান, এবং স্বাভাবিকভাবেই মালি ফ্রান্সের প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ব্রিটেন মালির অংশবিশেষ নিজেদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ লাভ করে, কিন্তু তারা এই সুযোগ গ্রহণ করেনি। ১৮৮৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত ওয়াসুলু সাম্রাজ্যের সম্রাট সামোরি তুরে ফরাসি আক্রমণ থেকে নিজের রাষ্ট্রকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন এবং এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি তার সাম্রাজ্যকে ব্রিটেনের আশ্রিত রাষ্ট্রে (protectorate) পরিণত করার প্রস্তাব করেন। বর্তমান মালির ভূখণ্ডের অংশবিশেষ ওয়াসুলু রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল, সুতরাং ব্রিটিশরা তুরের প্রস্তাব গ্রহণ করলে মালির অংশবিশেষ ব্রিটিশ শাসনাধীনে চলে যেত। কিন্তু সেসময় ব্রিটেন এই অঞ্চলে ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে আগ্রহী ছিল না। এজন্য তারা তুরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং এর মধ্য দিয়ে মালির অংশবিশেষকে ‘ইউনিয়ন জ্যাকে’র অধীনে আনার সম্ভাবনা বিলীন হয়ে যায়।

চিত্রকর্মে কিংবদন্তীর তুম্বুকতু শহর; Source: Heinrich Barth via Wikimedia Commons

১৮৮০–এর দশকে ফরাসিরা বর্তমান মালির ভূখণ্ডে উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করে এবং ১৯০৫ সালের মধ্যে বর্তমান মালির ভূখণ্ডের সিংহভাগ ফরাসি উপনিবেশ ‘ফরাসি সুদানে’র অন্তর্ভুক্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪০ সালে ফ্রান্স জার্মানির কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ফ্রান্সের ভূখণ্ডে ‘ভিশি ফ্রান্স’ নামক একটি জার্মানপন্থী রাষ্ট্র স্থাপিত হয়। ফরাসি সুদানের ঔপনিবেশিক প্রশাসন ভিশি ফ্রান্সের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। কিন্তু ১৯৪২ সালে মিত্রশক্তি (প্রধানত ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ভিশি–নিয়ন্ত্রিত আলজেরিয়ায় আক্রমণ চালায় এবং ফরাসি সুদানে মিত্রশক্তির আক্রমণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে ফরাসি সুদানের ঔপনিবেশিক প্রশাসন মিত্রশক্তিপন্থী ‘মুক্ত ফ্রান্সে’র প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। ফলে মিত্রশক্তি ফরাসি সুদানে আক্রমণ পরিচালনা থেকে বিরত থাকে।

এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ব্রিটেন বর্তমান মালির ভূখণ্ডে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারেনি। যুদ্ধ চলাকালে তুম্বুকতুতে মাত্র দুজন ব্রিটিশ সৈন্য জাহাজযোগে পৌঁছাতে পেরেছিল – জন গ্রাহাম ও উইলিয়াম সুটার। কিন্তু কোনো ব্রিটিশ আক্রমণকারী বাহিনীর অংশ হিসেবে নয়, বরং যুদ্ধবন্দি হিসেবে তারা সেখানে পৌঁছেছিল। তারা সেখানেই মৃত্যুবরণ করে এবং তাদেরকে সেখানেই কবরস্থ করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৮ সালে ফরাসি সুদান একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় এবং এটির নাম পরিবর্তন করে ‘সুদানি প্রজাতন্ত্র’ নামকরণ করা হয়। ১৯৫৯ সালে সুদানি প্রজাতন্ত্রকে পার্শ্ববর্তী ফরাসি উপনিবেশ সেনেগালের সঙ্গে যুক্ত করে ‘মালি ফেডারেশন’ গঠন করা হয়। ১৯৬০ সালে মালি ফেডারেশন ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং একই বছর সেনেগাল ও সুদানি প্রজাতন্ত্র মালি ফেডারেশন ত্যাগ করে পৃথক দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এরপর সুদানি প্রজাতন্ত্রের নামকরণ করা হয় ‘মালি’। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে মালি কখনো ব্রিটিশ প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং এজন্য ব্রিটেন কখনো এই অঞ্চলে সৈন্য প্রেরণ করেনি।

মানচিত্রে মালি ফেডারেশন। ১৯৫৯ সালে বর্তমান মালি ও সেনেগালের সমন্বয়ে এই রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছিল; Source: Wikimedia Commons

সামগ্রিকভাবে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সৈন্যরা বর্তমান মালির ভূখণ্ডে পরিচালিত একটি অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল বটে, কিন্তু সেই অভিযানটির উদ্দেশ্য আক্রমণাত্মক ছিল না। অনুরূপভাবে, বিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মালির ভূখণ্ডে যে দুজন ব্রিটিশ সৈন্য পৌঁছেছিল, তারাও অঞ্চলটিতে আক্রমণ চালানোর জন্য আসেনি, বরং যুদ্ধবন্দি হিসেবে এসেছিল। এজন্য মালি সেই স্বল্প সংখ্যক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে ব্রিটেন কখনো আক্রমণ পরিচালনা করেনি।

মোনাকো

‘মোনাকো রাজ্য’ (ফরাসি: Principauté de Monaco) পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি অতি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র (microstate)। ২.০২ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট এই রাষ্ট্রটি আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে ফ্রান্স এবং দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। অতি ক্ষুদ্র এই রাষ্ট্রটির একটি ব্যতিক্রমধর্মী ইতিহাস রয়েছে। ব্রিটিশরা কখনো এই রাষ্ট্রটির ভূখণ্ডে আক্রমণ পরিচালনা করেনি, কিন্তু এই রাষ্ট্রটি ব্রিটিশ ভূখণ্ডে আক্রমণ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেছে!

১২৯৭ সাল থেকে গ্রিমালদি রাজবংশ মোনাকোর শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মোনাকো বিভিন্ন রাষ্ট্রের করদ রাষ্ট্র ছিল এবং এই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ছিল জেনোয়া (বর্তমান ইতালির ভূখণ্ডে অবস্থিত একটি বিলুপ্ত নগররাষ্ট্র) ও ফ্রান্স। ১৩৩৮ সালে ফরাসি নৌবহর ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে আক্রমণ চালায় এবং মোনাকোর তৎকালীন রাজা শার্ল গ্রিমালদি তার নৌবহরসহ এই আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ব্রিটিশরা মোনাকোতে পাল্টা কোনো আক্রমণ পরিচালনা করেনি।

মানচিত্রে ফ্রান্স–বেষ্টিত ভূমধ্যসাগরীয় রাষ্ট্র মোনাকো; Source: Encyclopedia Britannica

অবশ্য ব্রিটিশরা যে এই অঞ্চলে একেবারেই কোনো সামরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেনি, এমন নয়। ১৭৯৬ সালের ২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘এইচএমএস সাউদাম্পটন’ মোনাকোর বর্তমান জলসীমায় ‘করসো’ নামক একটি জাহাজ আটক করে বলে জানা যায়। একই সময়ে বিখ্যাত ব্রিটিশ নৌসেনাপতি অ্যাডমিরাল হোরেশিও নেলসনও এতদঞ্চলে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে টহল দিচ্ছিলেন এবং ধারণা করা হয় যে, তার জাহাজগুলোও মোনাকোয় বর্তমান জলসীমায় প্রবেশ করেছিল। অবশ্য এই অঞ্চলে টহল দিয়ে নেলসন কোনো উল্লেখযোগ্য জাহাজ আটক করতে পারেননি।

তাত্ত্বিকভাবে, মোনাকোর বর্তমান জলসীমায় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর অযাচিত প্রবেশকে মোনাকোর ওপর ব্রিটিশ আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কিন্তু সেসময় কোনো রাষ্ট্রের জলসীমা বর্তমানের মতো সুনির্দিষ্ট থাকত না, সুতরাং এখন যেটিকে মোনাকোর জলসীমা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেসময় মোনাকোর সরকার এরকমভাবে বিবেচনা করত কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তদুপরি, ব্রিটিশ নৌবহর মোনাকোর ভূখণ্ডে কোনো ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করেনি এবং মোনাকোর সৈন্যদের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংঘর্ষও হয়নি। এজন্য এই ঘটনাগুলোকে বাস্তবিক অর্থে মোনাকোর বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের ‘আক্রমণ’ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশরা স্থলপথে মোনাকোয় আক্রমণ চালানোর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত এরকম কোনো আক্রমণ পরিচালিত হয়নি। ১৯৪৩ সালে ইতালি মোনাকো দখল করে নেয়, কিন্তু একই বছর ইতালি মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ইতালির প্রাক্তন মিত্র জার্মানি ইতালি ও ইতালি–অধিকৃত মোনাকো দখল করে নেয়। ১৯৪৪ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সে যুদ্ধরত ব্রিটিশ প্যারাট্রুপাররা মোনাকোর সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থান করছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদেরকে সেখান থেকে জাহাজযোগে ইতালির নেপলসে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এর ফলে ব্রিটিশ সৈন্যদের আর মোনাকোর ভূখণ্ডে প্রবেশ করা হয়নি। ১৯৪৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্যারাট্রুপাররা জার্মানদের কাছ থেকে মোনাকো দখল করে নেয় এবং এর মধ্য দিয়ে মোনাকো আবার একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই অভিযানে কিছু ব্রিটিশ সৈন্য অংশগ্রহণ করেছিল, এরকম সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এজন্য একে মোনাকোর ভূখণ্ডে ব্রিটেনের ‘আক্রমণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

সামগ্রিকভাবে, ইতিহাসে মোনাকো একটি ব্যতিক্রমধর্মী অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম এই রাষ্ট্রটি ব্রিটেনের ওপর আক্রমণ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু এই রাষ্ট্রটির ভূখণ্ডে ব্রিটিশরা কখনো আক্রমণ চালিয়েছে, এরকম কোনো প্রমাণ নেই। এজন্য মোনাকো সেই বিরল রাষ্ট্রগুলোর একটি, যাদেরকে কখনো ব্রিটিশ আক্রমণের মোকাবিলা করতে হয়নি।

লিখটেনস্টাইন

‘লিখটেনস্টাইন রাজ্য’ (জার্মান: Fürstentum Liechtenstein) মধ্য ইউরোপে অবস্থিত একটি অতি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। ১৬০ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট এই রাষ্ট্রটি ইউরোপের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির পশ্চিম ও দক্ষিণে সুইজারল্যান্ড এবং পূর্ব ও উত্তরে অস্ট্রিয়া অবস্থিত। প্রশাসনিকভাবে রাষ্ট্রটি একটি আধা–সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। একে তো রাষ্ট্রটির সীমান্তে কোনো সমুদ্র নেই, তদুপরি রাষ্ট্রটি আয়তনে ক্ষুদ্র ও কৌশলগত গুরুত্বের দিক থেকে প্রায় গুরুত্বহীন। এজন্য ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি কখনো ব্রিটিশ আক্রমণের সম্মুখীন হয়নি। অবশ্য তাই বলে যে ব্রিটেনের সঙ্গে রাষ্ট্রটির কখনোই কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি, এমন নয়।

মানচিত্রে লিখটেনস্টাইন; Source: Encyclopedia Britannica

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে গঠিত এই রাষ্ট্রটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার (এবং পরবর্তীতে অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরির) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেন ছিল মিত্রশক্তির সদস্য, অন্যদিকে অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরি ছিল কেন্দ্রীয় শক্তির সদস্য। অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরির সঙ্গে লিখটেনস্টাইনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ব্রিটিশ সরকার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটিকে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু স্থলবেষ্টিত লিখটেনস্টাইন আক্রমণ করা ছিল তাদের জন্য একটি কঠিন কাজ, কারণ শত্রুরাষ্ট্র অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরি বা নিরপেক্ষ সুইজারল্যান্ড কোনোটির মধ্য দিয়েই লিখটেনস্টাইনে সৈন্য প্রেরণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তদুপরি, লিখটেনস্টাইন আক্রমণ করা ছিল সামরিক–কৌশলগত দিক থেকে অর্থহীন। এজন্য লিখটেনস্টাইনের ওপর সরাসরি আক্রমণ চালানোর পরিবর্তে ব্রিটিশরা রাষ্ট্রটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এভাবে লিখটেনস্টাইনের নাম সেই রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় সংযুক্ত হয়েছে, যাদের ভূখণ্ডে ব্রিটেন কখনো আক্রমণ পরিচালনা করেনি।

Related Articles