দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মানির শক্তি ক্রমশ ক্ষয় হতে শুরু করে। এ সময় জার্মানিতে থাকা সুভাষের পক্ষে কিছুতেই নিরাপদ ছিল না। তার স্বপ্নের আজাদ হিন্দ ফৌজকে নিয়ে ভারতে পদার্পণ করতে হলে তাকে যে করেই হোক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেতে হবে। কিন্তু যাবেন কীভাবে? বিমানে যাওয়া এ মুহূর্তে কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। একমাত্র উপায় সাবমেরিন। কিন্তু তাতেও নিশ্চয়তা কোথায়? ইংলিশ চ্যানেল, উত্তর সাগর, ভূমধ্যসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর- সবকিছুই এখন মিত্রবাহিনীর দখলে। কখন যে টর্পেডো, মাইন বা ভারী কামানের পাল্লার মধ্যে পড়ে যেতে হবে না তা কে বলতে পারে? কিন্তু সবকিছুর পরও সাবমেরিন যাত্রাই সবচেয়ে নিরাপদ ভাবা হলো। কারণ সাবমেরিনে ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম।
এ যাত্রাপথের প্রথমার্ধের পথই সবচেয়ে বিপদসঙ্কুল। ঠিক হলো সে দায়িত্ব নেবে জার্মান সরকার। তারা নেতাজিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সংলগ্ন মাদাগাস্কারের কাছাকাছি একটি স্থানে পৌঁছে দেবে। বাকি অংশের দায়িত্ব জাপান সরকারের।
সাবমেরিনে যাত্রা শুরুর আগে সুভাষের কয়েকটি বক্তৃতা রেকর্ড করা হলো। তার অবর্তমানে এই রেকর্ডগুলো আজাদ হিন্দ রেডিও থেকে প্রচার করা হবে। ব্রিটিশ-মার্কিন শক্তিকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এ পরিকল্পনা সাজানো হলো। তারা যেন ভুল বোঝে যে, নেতাজি জার্মানিতেই রয়েছেন।
সাবমেরিনে সুভাষ বোসের সঙ্গী হিসেবে একজনকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া গেলো। সুভাষ বেছে নিলেন আবিদ হাসানকে। হায়দ্রাবাদের তরুণ এই ছাত্র বার্লিনে অধ্যয়নরত। সুভাষের একান্ত সচিব হিসেবে তিনিও সাবমেরিনে যাত্রা করেন। ছোট মাপের সাবমেরিনে আর যারা ছিলেন, তারা যানটির জার্মান চালকদল।
U-180 সাবমেরিনটি সুভাষের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। সেই চরম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়েও একজন ভিন্ন রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজনে সাবমেরিনের ব্যবস্থা করা সত্যিই অভাবনীয়। সেই অভাবনীয় সম্মান সেদিন জার্মানি নেতাজিকে দিয়েছিল।
৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩; সুভাষ বোসকে নিয়ে সাবমেরিন যাত্রা শুরু করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক নজিরবিহীন যাত্রা। জার্মানির ‘কিল’ নৌ বন্দর থেকে এ যাত্রা শুরু হয়। জার্মান সাবমেরিনটি ছিল সাবেকি ধরনের। ডিজেল ইঞ্জিনে চলা সাবমেরিনের সাথে আজকের সাবমেরিনের আকাশ-পাতাল তফাত। জলের তলায় একটানা আটচল্লিশ ঘন্টার বেশি চলতে পারতো না। তারপর ব্যাটারিতে চার্জ দেয়ার জন্যে মাঝে মাঝেই জলের ওপরে ভেসে উঠতে হতো। বিপজ্জনক উত্থান। যেকোনো মুহূর্তে শত্রুপক্ষের নজরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু এছাড়া অন্য কোনো উপায়ও ছিল না।
ওপরে উদ্দাম উচ্ছ্বল সমুদ্র। অবিরাম ঢেউ গড়ছে আর ভাঙছে। অবিরাম ঢেউ ভাঙার শব্দ চলছে। শেষ নেই যেন এই ভাঙা-গড়া মিছিলের। নীচে চলমান সাবমেরিন। মন্থর গতি। ভাসমান অবস্থায় ঘন্টায় বিশ নট। জলের নীচে ঠিক তার অর্ধেক। মাঝে মাঝে আরও কম। এ যাত্রা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ পথ অতি কঠিন ও কঠোর।
সুভাষ ধরেই নিয়েছিলেন- বিপদসঙ্কুল এই পথের শেষ বোধ হয় আর দেখা হবে না। এই আশঙ্কার কথা তিনি এক চিঠিতে তার ‘প্রিয় মেজদাদা’ শরৎচন্দ্র বোসকে জানিয়েছিলেন। তবে, সুভাষ ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসার মানুষ মোটেই ছিলেন না। বুঝতে পেরেছিলেন, জার্মানি হঠাৎ রাশিয়া আক্রমণ করায় যুদ্ধ নানাদিকে ছড়িয়ে পড়বে। এই অবস্থায় ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ হানার উপযুক্ত জায়গা হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আর সেখানে পৌঁছার একমাত্র উপায় সাবমেরিন।
চারপাশে শত্রুপক্ষের বেড়াজাল। ব্যাটল শিপ, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার বিমান বহর, ডেপথচার্জ, টর্পেডো সবকিছু যেন হাঁ করে বসে আছে হিংস্র হায়েনার মতো। একটু টের পেলে আর রক্ষা নেই। তাই যেতে হবে খুব সন্তর্পনে। সবচেয়ে মারাত্মক ডুবন্ত মাইনগুলো। হাজার, হাজার শক্তিশালী ডুবন্ত মাইন দিয়ে পুরো উপকূলটাই ঘিরে আছে। কোনো একটার সাথে সামান্য সংঘর্ষ হলেই মৃত্যু অনিবার্য।
ঘুম নেই, সদা সতর্ক সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন মুসেমবার্গ। সারা চোখে রাত্রি জাগরণের ক্লান্তি। যেভাবেই হোক সুভাষ বোসকে পৌঁছে দিতে হবে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে। দিনের পর দিন চলে যায়। সাবমেরিনের চলার গতির বিরাম নেই। এদিকে সাবমেরিনের কেবিনে সুভাষ তার আগামী দিনের সংগ্রামের পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে এই লড়াই চালিযে যেতে হবে।
ছোট্ট কেবিন। সোজা হয়ে দাঁড়াবার উপায় নেই। দু’পা হেঁটে চলার মতো জায়গা নেই। সেদিকে নেতাজির কোনো নজর নেই। দেহের ওজন প্রায় ১৬ পাউন্ড কমে গেছে। মুখ দাড়িতে ঢাকা। গায়ে জার্মান নৌ বিভাগের পোশাক। মুখে নির্ভুল জার্মান ভাষা। সুভাষের এই ছদ্মবেশের আড়াল থেকে আসল মানুষকে খুঁজে বের করা সহজসাধ্য নয়। চারদিকে মার্কিন-ব্রিটিশ বাহিনীর কড়া নজরদারি চলছে। যেকোনো মুহূর্তে সাবমেরিনটি শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সুভাষের এ সতর্কতা। এখানে তিনি সাবমেরিনের এক জার্মান অফিসার মাত্র।
নেতাজি রাতে তিন-চার ঘন্টার বেশি ঘুমাতেন না। বাকি সময়টায় শুধু কাজ আর কাজ। নানা ধরনের পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরিতে তিনি ব্যস্ত। জাতীয়তাবাদে সেনাবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে বিভিন্ন বক্তৃতার খসড়া প্রস্তুত করা, নারীবাহিনী গঠনের ভাবনা, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজোর কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার নীতি স্থির করা, তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’-এর সংশোধন ইত্যাদি তার নিয়মিত কাজের মধ্যে ছিল। সেক্রেটারি আবিদ হাসান নোট নিতেন এবং পরে তা টাইপ করে সংরক্ষণ করতেন। নেতাজি যখন সিঙ্গাপুর আর মালয়ে যান তখন সেখানে দেয়া তার একটি বক্তৃতা চারদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সে বক্তৃতা আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। এসব বক্তৃতার খসড়া সাবমেরিনে বসেই তৈরি করা হয়েছিল।
সাবমেরিনের ভেতরে দিন-রাত সবই সমান। এর ভিতরে সবকিছুই যেন বৈচিত্রহীন। এখানকার খাওয়াদাওয়া স্বাদহীন। ডুবো জাহাজটি প্রথমে উত্তর সাগর অতিক্রম করে। আটলান্টিক মহাসাগরে যাওয়ার ওটাই ছিল একমাত্র পথ। হঠাৎই মাঝে মাঝে মাইক্রোফোনে সতর্কমূলক বার্তা আসে- হ্যালো! হ্যালো! ডাইভ! ডাইভ! পানির চাপ দেখে মনে হয়, কাছে কোথাও ডেস্ট্রয়ার ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনই সাবমেরিনকে পানির নীচে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কিছু সময় পর শত্রুপক্ষের ডেস্ট্রয়ার চলে যেতেই সাবমেরিনে থাকা সবাই মুক্তির নিঃশ্বাস নিতে থাকেন।
ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চ। সাবমেরিন এগিয়ে চলছে সেই একইভাবে। এর মধ্যেও নেতাজি ব্যস্ত তার পরিকল্পনা সাজাতে। মেয়েদের নিয়ে তিনি একটি বাহিনী করতে চান। এ বাহিনীর নাম হবে ঝাঁসির রানী বাহিনী। এ সংগ্রামে মেয়েদের পিছিয়ে থাকলে কোনোমতেই চলবে না। লক্ষ্ণীবাঈ, মতিবাঈয়ের মতো কত মহিয়সী নারীর জন্ম হয়েছে এই ভারতবর্ষে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার জন্য এ বীরাঙ্গনারা নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছেন। তাই আজাদ হিন্দ ফৌজে অবশ্যই মহিলাদের ইউনিট খোলা হবে- এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন সুভাষ। তারাও দেশকে ভালবাসে। সুযোগ পেলে তারা নিশ্চয়ই পারবে। আবিদ হাসান নোট লিখে চলেছেন নিজের মনে। নেতাজির কাছে আগে কাজ। তারপর অন্য কথা। কাজের ব্যাপারে কোনো ত্রুটি হলে আর রক্ষা নেই।
এভাবে সাবমেরিন এগোতে থাকে। মাঝে মাঝে বিপদ আসে। আবার তা কেটেও যায়। কিন্তু এবারের বিপদ আরও ভয়ঙ্কর। হঠাৎই মাইক্রোফোনে সাবমেরিন কমান্ডারের উত্তেজিত কন্ঠস্বর, সাবমেরিন শত্রুর জালে আটকা পড়েছে। সাবমেরিনে থাকা সবার মধ্যে উৎকন্ঠার ছাপ। একমাত্র ব্যতিক্রম নেতাজি। কিছুক্ষণ চারপাশে চোখ বুলিয়ে সুভাষ আবার তার কাজের মধ্যে ডুবে গেলেন। আবিদ হাসান মুখে প্রকাশ না করলেও তার মনের মধ্যে প্রচন্ড ঝড় বয়ে চলেছে। শত্রুর জালে আটকা পড়ার অর্থ হলো হয় মৃত্যু, নয়তো বন্দী জীবন, যেকোনো একটাকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু সুভাষের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি কিছু বিষয়ে নোট নেয়ার জন্য আবিদ হাসানকে বলছিলেন, কিন্তু সামনে আশু বিপদের চিন্তায় আবিদ অন্যমনস্ক থাকায় নেতাজি ধমকে উঠেন, “আমি দু দুবার বললাম, তা এখনও কি না নোট নিলে না।” এ কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে আবার কাজের মধ্যে ডুবে গেলেন আবিদ হাসান।
আক্রমণই আত্মরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায়। সাবমেরিন কমান্ডার নির্দেশ দিলেন, “চার্জ টর্পেডো“। কিন্তু কন্ট্রোল রুমের মারাত্মক ভুলে টর্পেডো চার্জের পরিবর্তে গোটা সাবমেরিনটা পানির ওপর ভেসে উঠলো। বিপক্ষের ফাইটার জাহাজটা তার গতি পরিবর্তন করে সাবমেরিনটা লক্ষ্য করে ঝড়ের মতো ছুটে আসতে লাগলো। ধ্বংস নয়, গোটা সাবমেরিনটা বন্দী করাই তাদের লক্ষ্য। বিপদ দেখে সাবমেরিন কমান্ডার উত্তেজিতভাবে নির্দেশ দিতে লাগলেন, “ডাইভ, ডাইভ!” ফাইটার জাহাজটি সাবমেরিনের প্রায় কাছে চলে এসেছে। আর মাত্র ফুট তিনেক বাকি। হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে সাবমেরিনটি কাত হয়ে গেলো একপাশে। সব শেষ, এবার মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু না, এবার আর কন্ট্রোল রুমের ভুল হয়নি। ধাক্কা লেগে ব্রিজের রেলিংটার কিছু অংশ ভেঙে গেলেও সাবমেরিনটি আবার অদৃশ্য হয়ে গেল সমুদ্রের নীচে। হাজার চেষ্টা করে তার আর সন্ধান পাওয়া গেল না। এবারের মতো রক্ষা পাওয়া গেলো। সাবমেরিনটি আবার আগের মতোই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে চলতে লাগলো।
আসন্ন বিপদ থেকে মুক্তিলাভ করেও সুভাষের কোনো হেলদোল নেই। তিনি নিশ্চিন্তে তার কাজ করে যেতে লাগলেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও সংগ্রাম ছাড়া অন্য কিছুর কথা ভাবতে তিনি রাজি নন।
সাবমেরিন কমান্ডার বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে সাবমেরিনে কর্মরত তার জার্মান ক্রুদের ধন্যবাদ জানালেন। তারপর তিনি যা বললেন তা উপস্থিত সবাইকে সেদিন অবাক করে দিয়েছিল। ক্যাপ্টেন বলেছিলেন, “আমি আমার সহকর্মীদের বলছি, আপনারা অবশ্যই ভবিষ্যতের পথচলায় আমাদের সহযাত্রী এই ভারতীয় নেতা ও তার সেক্রেটারির কাছ থেকে ঘোর বিপদে শান্ত আর অবিচলিত থাকার শিক্ষাটি গ্রহণ করবেন।”
জার্মানি থেকে সাবমেরিনে রওনা হওয়ার ঠিক দু’মাস পরে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে মাদাগাস্কার উপকূলে একটি পেরিস্কোপ দেখা গেল। স্পষ্ট সংকেত। জার্মান সাবমেরিনের পেরিস্কোপও মাথা উঁচু করলো। একটু পরে জাপানি সাবমেরিন I-29 ভেসে উঠলো জলের ওপর। তারপর জার্মানদেরটা। জলে বেশ ঢেউ ছিল। সেই ঢেউয়ে ভাসানো হলো ভেলা। ভেলায় চেপে নেতাজি ও তার সেক্রেটারি জার্মানির সাবমেরিন থেকে জাপানি সাবমেরিনে উঠলেন। একটু হাত নাড়ানাড়ি হলো। তারপরেই আবার জলে ডুব দিল দুই সাবমেরিন। দুর্গম অভিযানের বড় পর্যায়টি শেষ হলো। আর মাত্র এক মাস জাপানি সাবমেরিনে। এই পর্বটা ভাল মতো কাটাতে পারলেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শক্ত মাটি পাওয়া যাবে।
জার্মানির সাবমেরিনের তুলনায় জাপানি সাবমেরিন আকারে বেশ বড়সড়। বড় কেবিন। হাঁটাচলার পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। জাপানি ডুবোজাহাজে ওঠার পরেই নেতাজি বেশ আনন্দে ছিলেন। এ আনন্দ সুদূর ইউরোপ থেকে ঘরে ফেরার আনন্দ। ভারতবাসীর কাছে এশিয়া তো ঘরই। জার্মান সাবমেরিনের সবার সাথে নেতাজি ও আবিদ হাসানের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। জার্মান ভাষাতেই এই দুজন বেশ দক্ষ ছিলেন। তাই জার্মানদের সাথে ভাষার আদানপ্রদানে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু জাপানি সাবমেরিনে তা হয়ে ওঠেনি। এ দুজন জাপানি ভাষা তেমন না জানায় সাবমেরিনে থাকা জাপানিদের সাথে কথা চালানোর কোনো উপায় ছিল না। ওদের দলে পাকা কোনো দোভাষীও ছিল না। তার ফলে কোনোমতে চলতো ভাববিনিময়।
এদিকে একমাস আর ওদিকে দু’মাস- এই তিন মাসের সুদীর্ঘ পথ সাবমেরিনে চেপে আসার পরে সুমাত্রার সবংয়ে নামলেন নেতাজি আর আবিদ হাসান। পায়ের তলায় ঠেকলো শক্ত মাটি, সেই মাটি আবার এশিয়ার। দৃঢ়চেতা নেতাজিকে সেদিন দীপ্ত দেখাচ্ছিল। তার পরের ইতিহাস উজ্জ্বল সংগ্রামের আর এক দীর্ঘ ইতিহাস।