গুপ্তচর হতে গিয়ে বেড়া টপকে সীমানা পার হয়ে সবজি বেচেছেন, টিকা দেবার নাম করে ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন, মাটির সুড়ঙ্গে অফিস খুলে বসেছেন– এমন অনেক রকম গুপ্তচরদের কথাই আমরা জানি। কিন্তু শত্রুদেশে গিয়ে গুপ্তচর ওদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, এমনকি মেজর পদ অবধি গিয়েছেন, এমন উদাহরণ পৃথিবীতে সম্ভবত একটাই। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সেই দুঃসাহসিক আন্ডারকাভার এজেন্ট রবীন্দ্র কৌশিকের জীবনটি তাই দুর্দান্ত রোমাঞ্চ ও বিবর্ণ ট্র্যাজেডিতে ঠাসা। আজকের লেখা সেটি নিয়েই।
১৯৫২ সালের ১১ এপ্রিল রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে জন্মেছিলেন রবীন্দ্র কৌশিক। কৈশোরে পা দিয়েই তিনি প্রেমে পড়েছিলেন অভিনয়ের। তখন থেকেই মঞ্চে কখনো চন্দ্রশেখর আজাদ, কখনো ভগত সিংয়ের মতো চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগাতেন সবাইকে। ১৯৬৫-৭১ এর উত্তাল সময়ে যার কৈশোর কেটেছে নিজ দেশের সাথে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের দ্বৈরথ দেখে, তার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ সঞ্চার হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু নয়! অভিনয় প্রতিভার সাথে সাথে সুদর্শন হওয়ায় সবাই তাকে তুলনা করতো কিংবন্তি অভিনেতা প্রয়াত বিনোদ খান্নার সাথে। রবীন্দ্রর জীবনে সবচেয়ে বড় মোড় আসে এরপর, যখন তার বয়স মাত্র ১৯।
উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌতে সেবার চলছিলো জাতীয় নাট্যোৎসব। সেখানে প্রাদেশিক প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন রবীন্দ্র। চীনের গুপ্তচর হবার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া এক ভারতীয় সেনার চরিত্রে একক অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মন জয় করেছিলেন সকলের। কিন্তু কে জানত, দর্শকসারিতে বসা ক’জোড়া মুগ্ধ চোখই তার পরবর্তী জীবন গড়ে দেবে?
রবীন্দ্রের অভিনয় নজর কাড়ে সেখানে উপস্থিত ভারতীয় বহির্বৈশ্বিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW)’ এর তিন কর্মকর্তার। সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে যায় সেখানেই। কর্মকর্তারা রবীন্দ্রকে তাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দেন। ঝুঁকি থাকলেও গর্ব আছে- জাতীয়তাবাদী মানুষের কাছে এ ধরনের পেশার মর্ম এমনই। সাহসী সদ্য-তরুণ রবীন্দ্রও তাই সেই প্রস্তাব লুফে নেন। ছদ্মপরিচয়ের আড়ালে থাকতে হবে ‘চিরশত্রু’ দেশ পাকিস্তানে, এই শর্ত জেনেও পিছপা হননি তিনি।
ইতোমধ্যে রবীন্দ্র গঙ্গানগরের একটি কলেজে বাণিজ্যে স্নাতক পড়ছিলেন। পড়াশোনার পাঠ কোনোরকম চুকিয়েই ও বাড়ির কাউকে সেভাবে কিছু না জানিয়েই তিনি চলে যান দিল্লিতে, র এর কাছে। সেখানে টানা দুই বছর রবীন্দ্র কৌশিককে যেতে হয় কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে। এ সময়টায় কালেভদ্রে পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন রবীন্দ্র। তখন পরিবারের শত কৌতুহলের একটাই জবাব দিতেন রবীন্দ্র, “দেশের সেবা করছি।”
পাকিস্তানের মূলধারায় মিশতে উর্দু জানার বিকল্প নেই। আর সামরিক বাহিনীর মতো স্পর্শকাতর জায়গায় কারো সন্দেহদৃষ্টি এড়াতে বিশুদ্ধ পাকিস্তানী (লাহোরি) ঢঙে উর্দু বলতে পারাটা ছিলো আরো জরুরি। তাই রবীন্দ্রর প্রশিক্ষণের প্রথম পর্বই ছিলো ভাষা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাবি সৈন্যের সংখ্যাধিক্যের কারণে পাঞ্জাবি ভাষা জানাটাও বাড়তি যোগ্যতা ধরা হয়। ওদিকে জন্মস্থানটা পাঞ্জাব-রাজস্থান সীমান্তবর্তী শহরে হওয়ায় পাঞ্জাবিটাও এমনিই চোস্ত ছিলো রবীন্দ্রর।
ভাষার পর পাকিস্তানের সংস্কৃতি ও ভৌগোলিকতারও বিশদ পাঠ দেওয়া হয় রবীন্দ্রকে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, আলামত বিনষ্টসহ গুপ্তচরবৃত্তির আপাদমস্তক শেখানো হয় হাতেকলমে। যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ‘মুসলিম’ পরিচয়েই পাঠানো হত, ফলে রবীন্দ্রকে কুরআন পঠন-পাঠনসহ ইসলামের যাবতীয় রীতিনীতিও শেখানো হয়। এমনকি ‘নবী আহমেদ শাকির’ নামধারণ করে পাকিস্তানে প্রবেশের আগে রবীন্দ্রকে খতনাও (Circumcision) করানো হয়, যাতে তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে!
দুবাই হয়ে ১৯৭৫ সালে ২৩ বছর বয়সে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন ‘শাকির’। র এর বানানো জাল কাগজ দিয়ে নিমিষেই পাকিস্তানি নাগরিকত্বের সনদও বানিয়ে ফেলেন তিনি। সামরিক বাহিনীতে যোগদানের সুবিধার্থে পাকিস্তানের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার পুনরায় স্নাতক করতেই হত। সেজন্যই তিনি ভর্তি হন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। সেখান থেকে পাস করে ১৯৭৯ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন্ড অফিসার হবার পর তার প্রেম হয় সেনাবাহিনীরই এক দর্জির মেয়ে আমানতের সাথে। বিয়েথা করে থিতু হতে সময় নিলেন না রবীন্দ্র! ঘরে এলো ফুটফুটে কন্যাসন্তান। আমানত ও সদ্য ভূমিষ্ট কন্যাকে নিয়ে মাঝে একবার ভারত এসেছিলেন বটে, তবে পরিবারকে বলেছিলেন, “দুবাইতে কাজ করছি”।
পাকিস্তানে ফিরেই সুসংবাদ শোনেন রবীন্দ্র- পদোন্নতি পেয়েছেন মেজর র্যাঙ্কে। এর মধ্যে চাকরির চার বছরে পাকিস্তানের গোয়েন্দাবিভাগ ও সমরকৌশলের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মোর্স কোডের মাধ্যমে ভারতে পাচার করতেন রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে কাজে লাগিয়ে সামরিক ফায়দাও ভারত কম লোটেনি। এমনও হয়েছে যে, পাকিস্তান রাজস্থান সীমান্তে যুদ্ধের ফাঁদ পেতেছে, ওদিকে ভারত সেটা আগেই টের পেয়ে ফাঁদটাকে পাকিস্তানের জন্য বুমেরাং করে দিয়েছে! র এজন্য তাকে ‘ব্ল্যাক টাইগার’ উপাধিও দেয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো তথ্য না থাকলেও রবীন্দ্রর ভাই রাজেশ্বরনাথ কৌশিকের ভাষ্যমতে, অন্তত হাজার দুয়েক ভারতীয় সেনার প্রাণ বেঁচেছে তার ভাইয়ের জন্য।
১৯৮৩ সালে ঘোর শনি নেমে আসে রবীন্দ্রর জীবনে। সে বছরের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্রর সাথে দেখা করতে ইনায়েত মসিহ নামে এক চরকে পাকিস্তানে পাঠায় র। কিছু সূত্রমতে, রবীন্দ্র ও ইনায়েতের যৌথ সমন্বয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনার ছক এঁটেছিলো র। এই চর ইনায়েত আবার গিয়েই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কাছে ধরা পড়ে যান। ফলে অবধারিতভাবেই ফাঁস হয়ে যায় ব্ল্যাক টাইগারের আসল পরিচয়। গ্রেফতার হন তিনি। এরপর শিয়ালকোটে দীর্ঘ দু’বছর জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার ওপর চালানো হয় সীমাহীন শারীরিক নির্যাতন। ১৯৮৫ সালে নিম্ন আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিলেও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান রবীন্দ্র।
সিক্রেট সার্ভিসের আদি নিয়মানুযায়ী, নিজেদের গুপ্তচর শত্রুপক্ষের কাছে ধরা পড়ে গেলে তার সমস্ত নথি সে দেশ থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়। একই কারণে ভারতও তাদের জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে রবীন্দ্র কৌশিক পরিচয় সম্পর্কিত সকল রেকর্ড মুছে ফেলে। পাকিস্তান যখন গণমাধ্যমে ফলাও করে ভারতীয় গুপ্তচরের ধরা পড়বার এ ঘটনাটি প্রচার করতে লাগলো, ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সরাসরি পাকিস্তানের এ দাবিকে নাকচ করে দেন।
সরকার যেখানে তার চরম বিশ্বস্ততম নাগরিককেই অস্বীকার করছে, তখন তার মুক্তির জন্য লড়াইটা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন হয়ে যায় তার পরিবারের জন্য। তবু রবীন্দ্রর সাবেক বিমানবাহিনী কর্মকর্তা বাবা জে এন কৌশল, মা অমলা দেবী ও ভাই রাজেশ্বরনাথ যথাসম্ভব দেনদরবারের সকল চেষ্টাই করে যান। কিন্তু ফল মিলছিলো না কিছুতেই। ওদিকে রবীন্দ্রর কারাজীবন কাটছিলো কখনো শিয়ালকোটে, কখনো কোট লখপটে, কখনোবা মিয়ানওয়ালিতে। এর মধ্যেই তিনি বাঁধিয়ে ফেলেছিলেন যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্ট। অসুস্থ থাকাকালে তিনি গোপনে ভারতের জয়পুরে থাকা স্বজনদের চিঠি পাঠাতেন। বাবার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন-
“ক্যায়া ভারত জ্যায়সে বাড়ে দেশকে লিয়ে কুরবানি দেনেওয়ালোঁ কো ইয়েহি মিলতা হ্যায়?”
চিঠিগুলোতে ছেলের দুর্বিষহ জীবনের কথা সইতে না পেরেই কিনা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হুট করেই মারা যান রবীন্দ্রর বাবা। থেমে থাকেননি মা অমলা দেবী। ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে একের পর এক চিঠি লিখে গেছেন, কখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর, কখনো প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপায়ী, বিজেপি নেতা এলকে আডবানি বা যশোবন্ত সিং বরাবর। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে অমলা দেবী বলেছিলেন,
“সরকারের কেউ না রবীন্দ্রকে ছাড়িয়ে আনবার ব্যাপারে বিচলিত, না আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে দু’চার কথা বলছে। এমনকি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্যও আমরা পাচ্ছি না”।
অমলা দেবীর বারংবার পাঠানো চিঠির জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জবাব ছিলো নির্মমভাবে সংক্ষিপ্ত- “বিষয়টি পাকিস্তানের হাতে চলে গেছে”।
১৬ বছর কারাভোগের পর ২০০১ সালের ২১ নভেম্বর মুলতানের নিউ সেন্ট্রাল জেলে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্র কৌশিক। কারাগারের পেছনেই কবর দেওয়া হয় তাকে। কৌশলগত কারণে তার লাশ ফিরিয়ে আনার জন্যও তৎপরতা দেখায়নি ভারত সরকার। মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে পাঠানো এক চিঠিতে মাকে রবীন্দ্র লিখেছিলেন,
“আমেরিকার নাগরিক হলে জেল থেকে তিন দিনেই বেরিয়ে আসতাম!”
ব্ল্যাক টাইগারের মৃত্যুর পর সান্ত্বনার ছলে তার পরিবারকে ভারত সরকার ৫০০ রুপি ভাতা দেওয়া শুরু করে, যেটি পরে বেড়ে ২০০০ রুপি হয়েছিলো। সেটিও বন্ধ হয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেদিন হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায় রবীন্দ্রর মা অমলাদেবীরও! রবীন্দ্রর মৃত্যুর কিছুকাল অতিবাহিত হবার পর তার স্ত্রী ও কন্যাসন্তানও বেমালুম নিখোঁজ হয়ে যায়।
দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে কিছুই মিললো না, এমনকি সব হারাবার পর সামান্য অর্থ সাহায্যও নয়- আফসোস হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে রবীন্দ্রর ভাই রাজেশ্বর বলেছিলেন,
“টাকা নয়, তখন চেয়েছিলাম দাদাকে ফিরিয়ে আনতে, আর এখন চাই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। গোয়েন্দা চররাই যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আসল ভিত, এই স্বীকৃতিটুকু দিক রাষ্ট্র। … উর্দিপরা লোকেদের যদি সরকার সম্মানিত করতে পারে, তবে ছদ্মবেশী চরদের কেন নয়?”
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া সালমান খান অভিনীত ছবি ‘এক থা টাইগার’ নাকি ব্ল্যাক টাইগারের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই নির্মিত, এমন গুঞ্জন থাকলেও ছবির নির্মাতারা কখনো এটি স্বীকার করেননি। এমনকি ছবির মূল চরিত্রের নাম ‘টাইগার’ হওয়াটা নিছক কাকতালীয় কিনা, এ প্রশ্নেরও সুরাহা হয়নি। তবে রবীন্দ্র কৌশিকের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করেছিলো, ‘ব্ল্যাক টাইগার’ থেকেই ‘টাইগার’-এর সৃষ্টি! তাই অনুমতি প্রসঙ্গে নির্মাতাদের কাছে উপেক্ষিত রবীন্দ্র-পরিবারের আপত্তিও কম ছিলো না। সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দাপ্রধান মলয় কৃষ্ণ ধরের লেখা ‘মিশন টু পাকিস্তান’ উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রটি রবীন্দ্রের ছায়ায় রচিত। এখানে অবশ্য লেখক রবীন্দ্রর স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেননি।
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তাল এমন আরেকজনকে নিয়ে, যার নাম কুলভূষণ যাদব। পাকিস্তানে ভারতীয় ‘গুপ্তচর’ হিসেবে আটক এই ব্যক্তির নাগরিকত্ব ভারত অস্বীকার না করলেও পাকিস্তানের আরোপিত অভিযোগকে শুরু থেকেই মিথ্যা বলছেন তারা। গত বছরের ডিসেম্বরে পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তানে দেখা করতে গেলে তাদের কাছে গুপ্তচরবৃত্তির কথা ‘স্বীকার’ করেন কুলভূষণ! এ ‘স্বীকারোক্তি’কে আবার অবিশ্বাস করছেন ভারতীয়রা। এমন অবিশ্বাস পাকিস্তানিদের ভেতরও দেখা গিয়েছিলো যখন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানে আটক সর্বজিত সিংয়ের বোন দলবীর একা হাতে ‘নিরপরাধ’ ভাইকে মুক্ত করবার মিশনে নেমেছিলেন! সীমান্তের দু’পারেই কয়েদখানায় এসব ‘গুপ্তচর’ বাস করছেন এবং কোনো পক্ষই কখনো নিজেদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগকে স্বীকার করেনি।
একটি পক্ষের কাছে রবীন্দ্র হলেন প্রতারক, ষড়যন্ত্রকারী, সন্ত্রাসী; আরেক পক্ষের কাছে তিনি সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অবতার। ‘ধূসর’ গুপ্তচরদের তাই সাদা-কালোর বাইনারি পদ্ধতিতে বিচার করা খুবই মুশকিল। তাই সে মেরুকরণে না হেঁটেও এটা কিন্তু বলাই যায়, ধরা পড়ে যাবার পর নিজ দেশ থেকেই ব্রাত্য করে দেবার ব্যাপারটি বেশ অমানবিক। অবশ্য এটাই সত্যিকারের বা মিছেমিছি ‘গুপ্তচর’দের জীবন! জাতীয়তাবাদের কাছে রক্তের দাম আছে, কিন্তু অমলা দেবী বা দলবীরদের রক্ত পানি করা সংগ্রামের কি দাম আছে?