Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সিফিলিস যেভাবে জ্বালিয়ে দিয়েছিল ফেমিনিজমের প্রথম স্ফুলিঙ্গ

সময়টা ১৮৭৫ সালের ৩ নভেম্বর, স্থান ফিটজরোভিয়া।

লন্ডনের এই এলাকার সেন্ট্রাল লন্ডন সিক অ্যাসাইলাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক অল্পবয়সী তরুণী। হাসপাতালের রেকর্ডে তার নাম পর্যন্ত নেই। রেকর্ড খাতায় তার পরিচয় শুধু ইংরেজি দুটি হরফ দিয়ে, ‘এ জি‘।

চোখের পাতা ঢুলু ঢুলু, হাসপাতালের বেডে পিঠের ব্যথায় একা কাতরাতে থাকা এই ১৯ বছরের এই তরুণী নড়ার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল। সারা পিঠ জুড়ে তার গুটি গুটি লাল দাগ, ভারী হাত-পা; সবই ছিলো সিফিলিসের লক্ষণ। সেই সাথে একজন ভ্রষ্ট চরিত্রের নারীর লক্ষণ, তৎকালীন সময়ে তা-ই মনে করা হতো।

১৯ বছরের এই তরুণী পেশায় একজন যৌনকর্মী, অন্তত তার মেডিকাল রেকর্ড সেটাই দাবি করে। প্রায় ৮ সপ্তাহ আগে তিনি তার শরীরে একটা ছোট ব্রণ দেখেন, ব্রণটি বড় হলে খোঁচানোর কারণে সেখানে একটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটা ছিলো এমন এক শারীরিক ব্যাধি যা তৎকালীন চিকিৎসা সংস্থার মতে কেবলমাত্র নারীদের শরীরে জন্ম নিতো এবং কেবল নারীদের দেহ থেকে সংক্রমিত হতো।

এই ধারণার কারণে ১৯ শতকের কর্তৃপক্ষের এ রোগ প্রতিরোধের সকল কার্যক্রম ছিলো নারীদের নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে এ.জি এর মতো নারীদের।

তাদের এ কার্যক্রমের ফলটাও ছিলো অপ্রত্যাশিত, নারীদের উপর এ অন্যায় আচরণের কারণে যে জ্বলে ওঠে নারীবাদ আন্দোলনের (Feminism movement) স্ফুলিঙ্গ। শুরু হয় ফেমিনিজমের প্রথম ধাপ।

সিফিলিসে আক্রান্ত রোগী; Source: fineartamerica.com

১৫ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে সিফিলিসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলে একে যৌনকর্ম এবং দুশ্চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত বলে ধরা হয়। প্রথমে একে ‘দ্য পক্স’ হিসেবে ডাকা হলেও পরবর্তীতে এর নাম সিফিলিস দেয়া হয়। সিফিলিস নামটা এসেছে ১৫৩০ সালে প্রকাশিত এক লাতিন কবিতার একটি চরিত্র থেকে, যে কি না দেবতা জিউসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার পাপের শাস্তি পেয়েছিলো। যখন মানুষ বুঝতে পারে এই রোগ যৌনমিলনের ফলে সংক্রমিত হতে পারে, তখন একে বিমিশ্রতা বা ব্যভিচারের দৈব  শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যখন এ.জি একজন যৌনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন পতিতাদের সিফিলিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে ধরা হতো। কিন্তু এ ধারণা মোটেও কোনো বৈজ্ঞানিক ভাবনাপ্রসূত না। একবারের জন্যও তা তাদের ইনফেকশনে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ভাবা হয়নি, বরং এ ধারণার পেছনে তারা দায়ী করেছিলো যৌনকর্মীদের ‘নষ্ট’ চরিত্রকে। যৌনকর্মীদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করা হতো না।

প্লেগ বহনকারী ইঁদুর অথবা কলেরা বহনকারী নর্দমাকে যেভাবে দেখা হতো, যৌনকর্মী নারীদের ঠিক একইভাবে নজরে রাখা হতো। তারা যেন আর কাউকে তা সংক্রমিত না করতে পারে এজন্য তাদেরকে ধরার ব্যবস্থা করা হতো, তাদের ভাগ্যে কোনো চিকিৎসা জুটতো না।

“একজন যৌনকর্মী নারী হলো এমন এক নারী যে তার অর্ধেক সত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছে। এই হারিয়ে যাওয়া সত্ত্বা হলো তার যা কিছু শুভ ও উত্তম। আর বাকি যে অর্ধেক অংশ থাকে, তা অপবিত্রতা বহন করা ছাড়া আর কিছুই করে না। … এরা সমাজের কীট, যারা কি না যেখানেই যায় কেবল কলুষতা ছড়ায়।”

– উইলিয়াম একটন (প্রস্টিটিউশন, কন্সিডারড ইন ইটস মোরাল, সোশ্যাল এন্ড স্যানিটারি এস্পেক্টস, ১৮৫৭)

যৌনকর্মী নারীদের নজরে রাখা, তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং আক্রান্ত নারীদের আলাদা করার জন্য বৈধ কার্যপদ্ধতির ব্যবস্থা করে দেয় দ্য কন্টেজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্টস (The Contagious Diseases Acts)। প্রায় একযুগ আগে এটি প্রথম ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডে প্রয়োগ করা হয়। আইনটির নামের মাঝে সবধরনের যৌনরোগের ইঙ্গিত থাকলেও এটি মূলত সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া পুরুষের মাঝে গনোরিয়া এবং সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করার স্বার্থেই প্রণয়ন করা হয়।

আক্রান্ত নারীদের ধরার জন্য তৎকালীন প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে (বন্দর, গ্যারিসন শহরে) চেকপোস্ট স্থাপন করে, যেখানে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের তাদের ইচ্ছামতো নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং পরীক্ষা করার এখতিয়ার দেয়া থাকতো। এসব পুলিশ কর্মকর্তারা এমন যেকোনো নারীকেই ধরতে পারতো, যারা তাদের ধারণানুযায়ী একজন যৌনকর্মী হবার ‘উপযুক্ত কারণ’ প্রদর্শন করতো।

সিফিলিস রোগী ধরার জন্য মেডিকাল পরীক্ষা; Source: welcomecollection.org

ধরা পড়া এ নারীদের একধরনের অভ্যন্তরীণ মেডিকাল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। নারীদের এই পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাবার বিষয়টিকে কাগজে-কলমে ঐচ্ছিক হিসেবে দাবি করা হলেও, বহু পুলিশ কর্মকর্তা হুমকি-ধামকি, ক্ষেত্রবিশেষে নাবালিকা ও নিরক্ষর নারীদের প্রতারিত করে এর ভিতর দিয়ে যাবার সম্মতি দিতে বাধ্য করতো।

এ আইনের পরবর্তী সংশোধনের কারনে সরকারি লিস্টে রেজিস্টারকৃত নারীদের প্রতি পনেরো দিন অন্তর আবার মেডিক্যাল পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হতো।

এই লিস্টে কারো নাম একবার উঠলে সে সমাজের সবচেয়ে নিচু কাতারে পড়ে যায়, যে কি না এক সাধারণ নারীর চেয়েও আরো অসহায়, সরকারি আদেশ অমান্য করলে যে তাকে জেলে ভরা হবে!

প্রথমদিকে মেডিক্যাল পরীক্ষা করার সময় একটা ধাতব যন্ত্র ব্যবহার করা হতো, যার নাম স্পেকিউলাম (Speculum)। এই যন্ত্র ডাক্তাররা নারীদের যোনীপথে ঢুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করতো।

সেসময়ে ডাক্তারদের ব্যবহারকৃত স্পেকিউলাম; Source: welcomecollection.org

সেসময়ের এক সিফিলিস বিশেষজ্ঞ একে ‘মেডিকাল নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার’ হিসেবে দাবি করলেও ফরাসি যৌনকর্মী নারীরা এ যন্ত্রকে ‘সরকারের শিশ্ন’ নাম দেয়। কন্টেজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নারীরা এ যন্ত্রের নাম দেয় ‘ধর্ষণের হাতিয়ার’।

মেডিকাল পরীক্ষার নামে যে সেসময়ে নারীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হতো, তা স্পষ্ট হয় এ পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাওয়া বহু নারীর জবানবন্দি থেকে।

“…অনেক সময় তারা অনেকগুলো যন্ত্র ব্যবহার করতো। প্রথমে তারা যোনীপথের ভিতরে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করতো… পরে তারা ভিতরে যন্ত্রটা ঢুকিয়ে দিতো। এরপর তারা সেটা টানাহেঁচড়া করতো, ভিতরে থাকা অবস্থাতেই সেটা ঘোরাতো।”

– দ্য ফরসিবল ইন্ট্রোস্পেকশন এ দেয়া এক নারীর সাক্ষাৎকার, ১৮৭০।

যখন সিফিলিসে আক্রান্ত কোনো নারী ধরা পড়তো, তখন তাকে আর সবার থেকে আলাদা করে পৃথক ওয়ার্ডে রাখা হতো, যেন তারা আর কোনো পুরুষকে সংক্রমিত না করতে পারে। ১৮৬০ সাল থেকে সিফিলিস রোগীদের আলাদা করে রাখা হাসপাতালগুলোতে তাদের নৈতিক শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা হতো, যেন তারা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কোনো অনৈতিক কার্যালাপে না জড়ায়।

যৌনব্যাধিকে বরাবরই নারীরূপে কল্পনা করা হতো; Source-welcomecollection.org

কন্টাজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্টের মূল ভিত্তি ছিলো, সিফিলিস রোগের জন্ম হয় নারীর শরীর থেকেই, পুরুষের দেহ থেকে যে তা সংক্রমিত হতে পারে তা একবারও ভাবা হয়নি।

এজন্য সিফিলিস, গনোরিয়া সহ অন্যান্য যৌনব্যাধিকে বহুকাল ধরেই এক নারীর রূপ দিয়ে কল্পনা করা হতো, যে কি না পুরুষদেহে সংক্রমিত করার জন্য সারাক্ষণ ওত পেতে থাকে।

অথচ যে কেউই বলতে পারতো, সিফিলিস কেবলমাত্র যৌনকর্মী, এমনকি সাধারণ নারী বহন করে না। যেদিন এ.জি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো, সেদিন আরেকজন নারীও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন একই কারণে। কিন্তু ত্রিশের কোঠায় থাকা এই নারী ছিলেন বিবাহিতা ও শিক্ষিত। তার পরিচয় ‘এ.পি’ হিসেবে লেখা ছিলো। হাতে চায়ের কাপ ধরার শক্তি হারাতে বসা এ নারীর কথাবার্তাও ছিল অসংলগ্ন, এবং তার প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা গিয়েছিলো। এর সাত বছর পূর্বে তার জিহ্বায় একটি পয়সা সদৃশ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিলো। এর কারণ? তার স্বামীর থেকে সংক্রমিত সিফিলিস।

এ.পি’র মতো নারীরা সাধারণত বিয়ের পূর্বে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকে। তাই তাদের অনৈতিক আচরণের দরুণ সিফিলিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অথচ পুরুষ যে সিফিলিসের বাহক হতে পারে এ সম্ভাবনার কথা কেউ ভাবেনি।

কন্টেজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্ট সেনাবাহিনীর স্বার্থে করা, এজন্য তারা এর সদস্যদের যৌনকর্মীদের ন্যায় পর্যবেক্ষণে রাখেনি। আবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল একজন দুশ্চরিত্র পুরুষের তুলনায় একজন গরীব যৌনকর্মীর সিফিলিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি- এমন ধারণার দরুন পুরুষরা সর্বদাই নজরের বাইরে থেকে গেছে।

কিন্তু এ ধারণার অবসান ঘটে যখন সিফিলিস বংশগতভাবে সংক্রমিত হওয়া শুরু করে।

বংশগতভাবে সিফিলিসে আক্রান্ত শিশু; Source: welcomecollection.org

সিফিলিসে আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ.পি’র ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিলো। যদিও সিফিলিস আক্রান্ত মায়ের শিশু জন্ম নিতে সক্ষম হয়, অধিকাংশই জন্মের অল্প সময় পর মৃত্যুবরণ করে।

আর বেঁচে থাকলেও তারা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয়। এদের অনেকেই সমাজের মানুষের বঞ্চনার শিকার হয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের জন্মের জন্য অনৈতিকতাকে দায়ী করা হতো।

কিন্তু যখন দেখা গেলো, সিফিলিসের লক্ষণ দেখা যায়নি এমন মায়ের কাছে সিফিলিসে আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে, তখন ডাক্তারেরা অবশেষে সিফিলিস সংক্রমণে পুরুষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এ.জি এবং এ.পি’র মতো নারীরা যে ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার প্রেক্ষিতেই প্রথমদিকের নারীবাদী আন্দোলনের মূল আলোচনার বিষয়ের একটি ছিলো পুরুষের দায়িত্ব। ১৮৬৯ সালে সমাজসংস্কারক হ্যারিয়েট মার্টিনিউ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সহযোগিতায় ‘দ্য লেডিজ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংঘটি কন্টেজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্ট বাতিলের লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালিত করে। এর সেক্রেটারি জোসেফাইন বাটলার বলেন, এ আইন নারী অধিকার লঙ্ঘন করে।

দ্য লেডিজ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন সরাসরিভাবে তৎকালীন চিকিৎসাব্যবস্থা এবং এর নারীদের অবদমনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রকাশিত রিপোর্টের বিরোধীতা করে সংঘটি বলে, আদতে এই চিকিৎসাপদ্ধতি সিফিলিস সংক্রমণ রোধ ও নিরসনের লক্ষ্যে কোনো কাজ করছে না।

সংঘটির মতে, আইনটি আসলে সিফিলিসকে জাতীয় স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হিসেবে নয়, বরং পুরুষের কামনা পূরনের লক্ষ্যে যে ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে তার একটি অপ্রত্যাশিত ফল হিসেবে গণ্য করছে।

“দোষের ভুক্তভোগী যে লিঙ্গ তাদের শাস্তি দেয়া আর যে লিঙ্গ সমস্যা ও এর করুণ ফলের জন্য দায়ী তাদের শাস্তি না দেয়াটা বিশাল অন্যায়।”

– দ্য লেডিজ আপিল এন্ড প্রোটেস্ট, ১৮৭০

তৎকালীন সময়ে মধ্যবিত্ত খ্রিস্টধর্মীয় নারীরা যে যৌন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিল তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তবে যদিও নারীবাদী আন্দোলনরত নারীরা সকল শ্রেণীর নারীর অধিকার নিয়ে সংগ্রাম শুরু করেছিলো, তারা যৌনকর্ম পেশার বিরোধী ছিলো। কেননা যৌনকর্মকে তারা মনে করতো পুরুষের কামনা চরিতার্থ করার জন্যই সৃষ্ট একটি পেশা, যা কি না নারীর অবদমনের উপরেই প্রতিষ্ঠিত।

আন্দোলনের লক্ষ্য ছিলো মূলত দুটি- কন্টেজিয়আস অ্যাক্ট আইনের বাতিলকরণ ও যৌনকর্ম পেশার অবসান।

“যৌনব্যাধির কারণ হলো নারীদের পরাধীনতা, তাই একটিকে ধ্বংস করার জন্য অন্যটিকে ধ্বংস করা জরুরি।”

– ক্রিস্টাবেল পানখ্রুস্ট, অ্যা উইমেন্স কোয়েশ্চেন, ১৯১৩

এ.জি লন্ডনের হাসপাতালে আসার প্রায় দশ বছর পর দ্য কন্টেজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্টস এর অবসান ঘটলেও সিফিলিস হবার প্রকৃত কারণ খোঁজা এবং নারী অধিকারের লড়াই চলে আরো প্রায় চল্লিশ বছর।

এ আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী খ্রিস্টাবেল পানখ্রুস্ট বিশ্বাস করতেন, যৌন ব্যাধির মতো ভয়ংকর অমঙ্গলকে কেবল সেদিনই ঠিকভাবে মোকাবেলা করা যাবে, যেদিন নারীরা স্বাধীনতা পাবে আর পুরুষেরা নারীদের মতো সমান নৈতিক ক্ষেত্র থেকে চিন্তা করতে শুরু করবে। তার এ ভাবনা থেকে সৃষ্টি হয় আন্দোলনের স্লোগান, “Votes for Women and Chastity for Men” (নারীর জন্য ভোট, পুরুষের জন্য কৌমার্য)

এ লেখার শুরুতে বলা এ.জি এবং এ.পি, কেউই কন্টেজিয়াস ডিজিজেস অ্যাক্টের বাতিল দেখে যেতে পারেনি। ভোটদানের অধিকারও তারা পায়নি। হাসপাতালে ভর্তি হবার এক সপ্তাহের মধ্যে এ.জি মারা যায়, এর ৩ মাস পর এ.পি। একই কারণে নিজেদের ব্যবধান নির্বিশেষে দুজনই একই করুণ পরিণতির সম্মুখীন হয়।

এভাবে সিফিলিসের মতো এক ভয়ংকর রোগ ফেমিনিজম আন্দোলনে একটি ছোট তরঙ্গের সৃষ্টি করে, যা একসময় এক বিশাল ঢেউয়ে পরিণত হয়, যার স্রোতে নড়ে ওঠে গোটা সমাজের ভিত।

ফিচার ছবিসূত্র- hellonews.ru

Related Articles