Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাটল অফ হেস্টিংস: ইংল্যান্ডে যেভাবে অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজত্বের অবসান ঘটে

পঞ্চম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে যখন রোমান সাম্রাজ্যের ইতি ঘটে তখন সেখানে ক্রমেই স্যাক্সনরা প্রভাবশালী হয়ে উঠতে থাকে। রোমানদের পতনের পর ইংল্যান্ডে শুরু হয় অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজত্ব। ইংল্যান্ডে যখন অ্যাংলো-স্যাক্সন শাসন বেশ রমরমা তখন ইউরোপে এক নতুন আতঙ্ক হাজির হয়। এই আতঙ্কের নাম ভাইকিংস। অন্যান্য ইউরোপীয় জাতিগুলোর কাছে ভাইকিংরা ছিল এক আতঙ্কের নাম। ভাইকিংরা যেখানেই তাদের নৌকা ভিড়িয়েছে সেখানেই ধ্বংস নেমে এসেছে। 

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাইকিংরা সমগ্র ইউরোপে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। দশম শতাব্দীর শুরুতে অন্যান্য অঞ্চলের মতো ফ্রান্সও ভাইকিংদের আক্রমণের শিকার হয়। তৎকালীন ফ্রাঙ্কিশ শাসক চার্লস দ্য সিম্পল ভাইকিংদের একটি দলকে উত্তর ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে বসবাসের সুযোগ দেন। রোলো নামক এক ভাইকিং ছিলেন এই দলটির নেতা যিনি নর্স ধর্ম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তার উত্তরাধিকারীরাই বংশানুক্রমে নর্মান্ডি শাসন করতে থাকে। রোলোর এমনই এক বংশধর ছিলেন উইলিয়াম, দ্য ডিউক অফ নর্মান্ডি। উইলিয়াম শুধু নর্মান্ডিকে শাসন করেই সন্তুষ্ট ছিলেন না, তিনি ইংল্যান্ডের সিংহাসনেও বসতে চেয়েছিলেন।

ডিউক অফ নর্মান্ডি, উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার ছিলেন ভাইকিংস বংশোদ্ভূত যিনি স্যাক্সনদের হটিয়ে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসতে চেয়েছিলেন; Image Courtesy: Wikimedia Commons

তখন ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর (রাজত্বকাল: ১০৪২-১০৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)। এডওয়ার্ডের নানা বাড়ি ছিল আবার নর্মান্ডিতে। নর্মান্ডির ডিউক দ্বিতীয় রিচার্ড ছিলেন তার মামা। এদিকে দ্বিতীয় রিচার্ড ছিলেন আবার উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারারের দাদা। অর্থাৎ এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর এবং উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার ছিলেন আত্মীয়। এছাড়া এডওয়ার্ড তার জীবনের বহুবছর নর্মান্ডিতে নির্বাসনে ছিলেন। ইত্যাদি কারণে ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে নর্ম্যানদের শক্তিশালী প্রভাব তৈরি হয়। তৎকালীন ইংল্যান্ডে সবচেয়ে প্রভাবশালী আর্ল ছিলেন আর্ল অফ ওয়েসেক্স, হ্যারল্ড গডউইনসন। ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসার আকাঙ্ক্ষা ছিল তারও। ফলে ইংল্যান্ডের রাজনীতি বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠে।

রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের সন্তানহীনতা ইংল্যান্ডের সিংহাসনের উত্তরাধিকার সংকট তৈরি করে; Image Courtesy: Wikimedia Commons

১০৬৬ সালের ৫ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু ইংলিশ রাজনীতিকে আরো উত্তেজিত করে তুলে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এডওয়ার্ড ছিলেন নিঃসন্তান। তার উপর মৃত্যুর পূর্বে তিনি কোনো সুস্পষ্ট উত্তরাধিকারীও রেখে যাননি। ফলে সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় ইংল্যান্ডের সিংহাসনের উপর তিনজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির দাবি উঠে। একজন ছিলেন আর্ল অফ ওয়েসেক্স, হ্যারল্ড গডউইনসন। আরেকজন ছিলেন ডিউক অফ নর্মান্ডি, উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার এবং অন্যজন ছিলেন কিং অফ নরওয়ে, হ্যারল্ড সিগার্ডসসন। 

এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী আর্ল হ্যারল্ড গডউইনসনকে কিংস কাউন্সিল রাজা নির্বাচিত করে। কিন্তু নর্মান্ডির ডিউক উইলিয়াম দাবি করেন ১০৫১ সালে তাকে রাজা এডওয়ার্ড সিংহাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় উইলিয়াম দাবি করেন, এডওয়ার্ড ১০৬৪ সালেও এক বৈঠকে তাকে ইংল্যান্ডের সিংহাসন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এদিকে আবার নরওয়ের রাজা হ্যারাল্ড সিগার্ডসসন দাবি করেন, তার পূর্বসূরি ম্যাগনাস দ্য গুড এবং ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজা হার্থাকনাটের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, যদি ইংল্যান্ড কিংবা নরওয়ের কেউ একজন উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যায়, তবে অন্যজন ইংল্যান্ড এবং নরওয়ে উভয়ের উত্তরাধিকার পাবে। এই চুক্তির কথা বলে হ্যারাল্ড হার্দ্রাদা ইংল্যান্ডের সিংহাসন দাবি করেন। ফলে ইংল্যান্ডের সিংহাসনকে ঘিরে ত্রিমুখী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। 

নরওয়ের রাজা হ্যারাল্ড হার্দ্রাদা ছিলেন ইংল্যান্ডের সিংহাসনের অন্যতম শক্তিশালী দাবিদার; Image Courtesy: Colin Smith/geograph.org.uk via Wikimedia Commons 

নরওয়ের রাজা হ্যারাল্ড হার্দ্রাদাকে সহযোগিতা করছিলেন হ্যারল্ড গডউইনসনের ভাই টস্টিগ গডউইনসন। এই দুই গডউইনসনের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না। এর আগে টস্টিগ গডউইনসন ছিলেন নর্থামব্রিয়ার আর্ল। তার কঠোর শাসনের ফলে ১০৬৫ সালে নর্থামব্রিয়ায় বিদ্রোহ দেখা দিলে তার উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর তিনি কয়েকটি জাহাজ ও কিছু সৈন্য নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে স্কটল্যান্ড হয়ে নরওয়েতে চলে যান। নরওয়েতে তার সঙ্গে দেখা হয় সেখানকার রাজা হ্যারাল্ড হার্দ্রাদার। টস্টিগ হার্দ্রাদার সাহায্যে তার ভাইকে সরিয়ে সিংহাসন দখলের একটি সুযোগ দেখতে পান। 

ইংল্যান্ড আক্রমণের উদ্দেশ্যে হ্যারাল্ড হার্দ্রাদা আনুমানিক প্রায় ৩০০টি জাহাজের সমন্বয়ে একটি নৌবহর গঠন করেন। কিছু মত অনুযায়ী হার্দ্রাদার বহরে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৫০০-এর মতো। সেইসঙ্গে তার সৈন্য সংখ্যা ছিল আনুমানিক প্রায় ১২,০০০-এর মতো। হ্যারাল্ড হার্দ্রাদার এই নৌবহর ১০৬৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব উপকূলে টাইন নদীর মুখের কাছে অবতরণ করে। সেখানে টস্টিগ ১২টি জাহাজের একটি ছোট নৌবহর নিয়ে হাজির হয়। হার্দ্রাদা ও টস্টিগের এই দুই নৌবহর সেখান থেকে দক্ষিণে যাত্রা করে এবং ইয়র্কের মূল শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে রিকলে অবতরণ করে। 

হার্দ্রাদা ও টস্টিগের সম্মিলিত বাহিনী ফুলফোর্ড গেট এবং স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের যুদ্ধে হ্যারল্ডের বাহিনীর মুখোমুখি হয় (মানচিত্রে ১০৬৬ সালে সংঘটিত প্রধান তিনটি যুদ্ধের অবস্থান দেখানো হয়েছে); Image Courtesy: TimeRef 

১০৬৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইয়র্কের কাছাকাছি ফুলফোর্ড গেটে মার্সিয়ার আর্ল এডওয়াইন এবং নর্থামব্রিয়ার আর্ল মরকারের নেতৃত্বে একটি অ্যাংলো-স্যাক্সন সেনাবাহিনী হার্দ্রাদার সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়। সেই যুদ্ধে নরওয়ের রাজা বিজয়ী হয়। এরইমধ্যে হ্যারল্ড গডউইনসন অন্য একটি বাহিনী নিয়ে আরো উত্তর দিকে যাত্রা করে। ৫ দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর হ্যারল্ডের সেনাবাহিনী স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে হার্দ্রাদার বাহিনীর মুখোমুখি হয়। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের যুদ্ধে হার্দ্রাদা ও টস্টিগের সম্মিলিত বাহিনী হ্যারল্ডের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধে হার্দ্রাদা ও টস্টিগ উভয়েই নিহত হয়। হার্দ্রাদার পুত্র ওলাফ মাত্র ২৪টি জাহাজ নিয়ে কোনোরকম পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। 

স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের যুদ্ধে হ্যারল্ডের অ্যাংলো-স্যাক্সন বাহিনী হার্দ্রাদা ও টস্টিগের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে; Image Courtesy: Peter Nicolai Arbo via world History Encyclopedia 

উত্তরে হ্যারল্ড তার একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেও দক্ষিণে তার জন্য অন্য এক ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা করছিল। তিনি ডিউক অফ নর্মান্ডি, উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার। 

উত্তরে দুটি যুদ্ধ করে হ্যারল্ডের বাহিনী দক্ষিণে যাত্রা করে। ফুলফোর্ড গেট এবং স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের যুদ্ধে হ্যারল্ড তার অনেক সৈনিক হারান। প্রায় ৭০০০ থেকে ৮০০০ সৈন্য নিয়ে হ্যারল্ড তার প্রতিদ্বন্দ্বী উইলিয়ামের বাহিনীকে প্রতিহত করতে এগিয়ে যান। অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে উইলিয়ামও একইসংখ্যাক সেনাবাহিনী নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। কিন্তু হ্যারল্ডের বাহিনী ছিল পরিশ্রান্ত অন্যদিকে উইলিয়ামের বাহিনী অনেকদিন ধরেই এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। উইলিয়াম তার বাহিনী নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে হেস্টিংসের কাছে এসে হাজির হন। 

একাদশ শতাব্দীতে কাপড়ে নকশা করা একটি শিল্পকর্মে নর্ম্যান নৌবহরের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার চিত্র; Image Courtesy: Rolf Richardson/Alamy Stock Photo via English Heritage

১০৬৬ সালের ১৪ অক্টোবর হ্যারল্ড ও উইলিয়ামের বাহিনী হেস্টিংস থেকে ৬ মাইল দূরে বর্তমান ব্যাটল নামক স্থানে মুখোমুখি হয়। সেদিন ভোরে উইলিয়ামের বাহিনী রণক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হয়। হ্যারল্ডের বাহিনী পাহাড়ের উপরের দিকে অবস্থান নেয়। হ্যারল্ডের সৈন্যরা একটি তলোয়ার, বড় কুড়াল, লম্বা বর্শা দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং তারা একটি চেইনের কোট পরিহিত ছিল। এছাড়া সেই বাহিনী নাকের গার্ড এবং ঢাল সহ একটি হেলমেট দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। 

উইলিয়ামের বাহিনী তিনটি ডিভিশনে বিভক্ত হয়ে একটু নিচের দিকে অবস্থান নেয়। এই তিনটি ডিভিশন ছিল ব্রেটন, নর্ম্যানস এবং ফ্রেঞ্চদের সমন্বয়ে। বাম দিকের ইউনিটটি ছিল ব্রেটনদের যেটির নেতৃত্বে ছিলেন অ্যালান দ্য রেড। মাঝখানের ইউনিটটি ছিল নর্ম্যানদের যেটির নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং উইলিয়াম। ডানের ইউনিটটি ছিল ফ্রেঞ্চদের। নর্ম্যান বাহিনীর সামনের লাইনগুলো তীরন্দাজদের নিয়ে গঠিত ছিল। তীরন্দাজদের সাথে কয়েকজন ক্রসবোম্যান এবং স্লিংগার ছিল। এর পেছনে বর্শা ও কুড়াল দিয়ে সজ্জিত পদাতিক সৈন্যদের একটি লাইন ছিল। একদম পেছনের দিকে অশ্বারোহী বাহিনীকে সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়। 

রণক্ষেত্রে উইলিয়ামের নর্ম্যান (নীল) ও হ্যারল্ডের অ্যাংলো-স্যাক্সন (লাল) বাহিনীর সৈন্যবিন্যাস; Image Courtesy: Osprey Publishing

উইলিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল প্রথমে তিরন্দাজদের মাধ্যমে আক্রমণ করে ইংলিশ বাহিনীকে দুর্বল করে দেওয়া। তারপর বর্শা ও কুড়ালবাহী পদাতিক বাহিনীর মাধ্যমে শক্তিশালী আক্রমণ করা এবং শেষে অশ্বারোহী বাহিনীর মাধ্যমে ইংলিশ বাহিনীকে তাড়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া। 

১৪ অক্টোবর সকাল ৯ টার দিকে উইলিয়ামের নির্দেশে নর্ম্যান তিরন্দাজ বাহিনী অ্যাংলো-স্যাক্সন বাহিনীর উপর তীর ছুড়তে শুরু করে। আক্রমণ প্রতিহত করতে ইংরেজ বাহিনী ঢালের প্রাচীর তৈরি করে। এই আক্রমণে ইংরেজ বাহিনী খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এরপর উইলিয়াম ইংরেজদের ঢাল প্রাচীর ভেদ করার জন্য বর্শাধারী পদাতিক বাহিনীকে পাঠান। পদাতিক বাহিনীর বর্শা ও কুড়াল ইংরেজ বাহিনীর ঢাল প্রাচীর খুলতে ব্যর্থ হয়। এরপর অশ্বারোহী বাহিনীও একইভাবে ব্যর্থ হয়। 

প্রথমে পশ্চাদপসরণ করে তারপর আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে ইংরেজ বাহিনীকে দুর্বল করে দেয় নর্ম্যানরা; Image Courtesy: BBC

এ পর্যায়ে এসে ডিউক উইলিয়ামকে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি গুজব উঠে। ফলে নর্ম্যান বাহিনী বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং পশ্চাদপসরণ শুরু করে। ইংরেজ বাহিনীর একটি দল পলায়নরত নর্ম্যান বাহিনীকে তাড়া করতে শুরু করে। এরইমধ্যে উইলিয়াম তার বাহিনীর মাঝখান দিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে থাকেন যে তিনি তখনো জীবিত। উইলিয়ামের এই ঘোষণা নর্ম্যানদের সাহস জোগায়, ফলে তারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। উইলিয়াম তখন তাড়া করতে আসা ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। নর্ম্যানদের প্রতিআক্রমণে ইংরেজ বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। হঠাৎ এমন পাল্টা আক্রমণে অ্যাংলো-স্যাক্সন বাহিনী বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ছিল নর্ম্যানদের একটি কৌশল। এই সাফল্যের পর নর্ম্যান বাহিনী এভাবে আরো কয়েকবার ভুয়া পশ্চাদপসরণ করে এবং পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে অ্যাংলো-স্যাক্সন বাহিনীকে দুর্বল করে দেয়। 

যুদ্ধে হ্যারল্ডের দুই ভাই সহ অনেক ইংরেজ কমান্ডার নিহত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হ্যারল্ডের চোখে একটি তীর এসে বিদ্ধ হয়। তীরটি তার চোখ অতিক্রম করে মস্তিষ্কে আঘাত করে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অ্যাংলো-স্যাক্সনদের নেতা, ইংল্যান্ডের রাজা এবং যুদ্ধের সেনাপতি হ্যারল্ড গডউইনসন নিহত হন। তার মৃত্যু পর নেতৃত্বশূন্য অ্যাংলো-স্যাক্সন বাহিনী ভেঙে পড়ে এবং নর্ম্যানরা চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে। 

হেস্টিংসের যুদ্ধে অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা হ্যারল্ড গডউইনসনের মৃত্যুর চিত্র। চোখে তীর বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি; Image Courtesy: Photos.com/Getty Images via Britannica

হেস্টিংসের যুদ্ধে উইলিয়ামের বিজয়ের পর তিনি লন্ডনের দিকে অগ্রসর হন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন। ১০৬৬ সালের ক্রিসমাসের দিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তিনি ইংল্যান্ডের প্রথম নর্ম্যান রাজা হিসেবে মুকুট গ্রহণ করেন। এরই সঙ্গে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অ্যাংলো-স্যাক্সন পর্বের সমাপ্তি ঘটে এবং নর্ম্যান পর্বের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ফরাসি ইংল্যান্ডের রাজদরবারের ভাষা হয়ে উঠে। অ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষার সঙ্গে ফরাসি ভাষা মিশে যায় এবং আধুনিক ইংরেজি ভাষার জন্ম হয়। এই যুদ্ধ ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

Related Articles