Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য গ্রিম স্লিপার: কৃষ্ণাঙ্গ নারীঘাতক এক সিরিয়াল কিলার

লনি ফ্রাঙ্কলিন জুনিয়রকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিনি একজন সিরিয়াল কিলার। প্রতিবেশীরা তাকে বেশ শান্ত স্বভাবের ও বন্ধুবৎসল হিসেবেই জানতেন। কিন্তু তার এই শান্ত স্বভাবের আড়ালে ঢাকা ছিল এক হিংস্র রূপ। তিনি এক বা দুজন নন, একে একে হত্যা করেছেন ১০ জন কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে। তবে সম্ভবত সংখ্যাটা আরো বেশি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের পুলিশ বিভাগ ফ্রাঙ্কলিনের হাতে ১০ জন নারীকে হত্যার ঘটনা প্রমাণ করতে পারলেও, বাকি থেকে গেছে আরো অনেক রহস্য।

এছাড়া একজন নারীকে হত্যার চেষ্টা করেন লনি ফ্রাঙ্কলিন জুনিয়র, যিনি ‘গ্রিমার স্লিপার’ নামেই অধিক পরিচিত। ১৯৮৫ সালে ডেবরা জ্যাকসন তার প্রথম শিকার হন। জ্যাকসনকে ০.২৫ ক্যালিবারের পিস্তল দিয়ে বুকে পর পর তিনটি গুলি করে হত্যা করেন ফ্রাঙ্কলিন। এরপর আরো ন’জন নারীকে তিনি একইভাবে হত্যা করেন।

আদালতে বসে আছেন গ্রিম স্লিপার; Image Source: Los Angels Times

তবে তিনি মোট দুই ধাপে এই ১০ জন নারীকে হত্যা করেছেন। প্রথম ধাপে ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনি মোট ৭ জন নারীকে হত্যা করেন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ২০০২ সালের মার্চ থেকে ২০০৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে ১৫ বছরের এক কিশোরীসহ আরো দুই নারীকে হত্যা করেন। তার এই বিরতির কারণেই স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ফ্রাঙ্কলিনকে ‘গ্রিম স্লিপার’ নাম দেয়।

অবাক করা বিষয় হলো, তিনি যাদের হত্যা করেছেন তাদের সবাই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ, মাদকাসক্ত, পতিতা ও একটি নির্দিষ্ট এলাকার। এছাড়া তিনি প্রতিটা খুনের পর লাশের ছবি তুলে নিজের ঘরে টাঙিয়ে রাখতেন।

লনি ফ্রাঙ্কলিন তথা গ্রিম স্লিপারের বাড়িতে পাওয়া বিভিন্ন নারীর ছবি; Image Source: rollingstone.com

তবে রহস্যের বিষয় হচ্ছে, লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ এই ভয়ঙ্কর ব্যক্তিকে তার ঘটানো প্রথম হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পর আটক করতে সক্ষম হয়। এর আগে ফ্রাঙ্কলিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করেও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকের মতে, যেহেতু তার হাতে খুন হওয়া নারীরা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ, মাদকাসক্ত ও পতিতা, সেই কারণে এই হত্যাকাণ্ডগুলো খুব বেশি নজর কাড়েনি অথবা বর্ণবৈষম্যের কারণে গুরুত্ব পায়নি।

২০১০ সালে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলারকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। দীর্ঘ ৬ বছর পর তার বিচারকাজ শুরু হয় এবং প্রায় তিন মাসের বিচার শেষে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় লস অ্যাঞ্জেলসের আদালত।

সিরিয়াল কিলার থেকে ভিন্ন এক ব্যক্তি

২০১০ সালে ফ্রাঙ্কলিনকে পুলিশ যখন আটক করে, তখন তার প্রতিবেশীরা অপরাধী হিসেবে তাকে একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি ছিলেন বেশ ঠাণ্ডা মেজাজের এবং খুব মিশুক স্বভাবের এক ব্যক্তি। তিনি প্রায়ই বাড়ির সামনে গাড়ি ঠিক করতেন এবং রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানুষজনের সাথে বেশ হাস্যরসের সাথে কথা বলতে দেখা যেত তাকে। এমন একজন মানুষের পক্ষে সিরিয়াল কিলার হওয়া কি কখনো সম্ভব?

কিন্তু প্রত্যেক সিরিয়াল কিলারের জীবনই রহস্যে ঘেরা থাকে। তবে ফ্রাঙ্কলিনের সাথে অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের আরো একটি পার্থক্য ছিল। আজ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতজন সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে জানা গেছে, তাদের ৮০ ভাগই ২০-৩০ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ। কিন্তু ফাঙ্কলিন ছিলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং তিনি যখন প্রথম খুন করেন, তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর।

টার্গেট বাছাই করার ক্ষেত্রে তার ছিল বিশেষ নীতি

ফ্রাঙ্কলিন যাদের হত্যা করেছেন তাদের কেউ সমাজের বিত্তবান বা বিশেষ কোনো ব্যক্তি ছিলেন না। যেখানে অধিকাংশ সিরিয়াল কিলারের টার্গেট হিসেবে সবার উপরে থাকে শ্বেতাঙ্গ নারীরা, সেখানে গ্রিম স্লিপারের প্রধান টার্গেট ছিল কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা। যদিও তিনি নিজেও একজন কৃষ্ণাঙ্গ। এছাড়া ফ্রাঙ্কলিন যতগুলো হত্যা করেছেন, তার সবগুলোই ছিল লস অ্যাঞ্জেলসের সাউথ সেন্ট্রালের দিকে। এই অঞ্চলে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে কোকেনের ব্যবহার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।

আর কোকেনের কারণেই অনেকে খুন হন। সেই কারণে কেউ খুন হলে স্থানীয় পুলিশ সাধারণ ঘটনা হিসেবেই মনে করতো। লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশের কার্যকরী ভূমিকার অভাবে আশির দশকে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। যারা হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন তাদের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ তেমন কোনো তথ্যই প্রচার করেনি। করলে হয়তো লস সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হতে পারতেন।

আদালতে সবসময় এভাবেই দেখা গেছে ফ্রাঙ্কলিনকে; Image Source: rollingstone.com

ফ্রাঙ্কলিন খুব ঠাণ্ডা মাথায় এই সুযোগকে কাজে লাগান। তিনি লস অ্যাঞ্জেলসের সাউথ সেন্ট্রালে কোনো পতিতা অথবা মাদকাসক্ত কৃষ্ণাঙ্গ নারীর জন্য ওঁত পেতে থাকতেন। এরপর তিনি তার টার্গেটকে নিজের গাড়িতে রাইড দেওয়ার কথা বলে তুলে নিতেন। কিছু দূর যাওয়ার পরই তিনি সেসব নারীকে ধর্ষণ করার পর গুলি করে হত্যা করতেন এবং কোনো গলি, পার্ক অথবা ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে রাখতেন। এছাড়া তিনি যাদের হত্যা করেছেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন গরীব, যাদের অনেক সময় প্রতিবেশীর খোঁজও মেলেনি। তবে লস অ্যাঞ্জেলসের পুলিশ বিভাগ হত্যাকাণ্ডের পর কৃষ্ণাঙ্গদের সতর্ক করা কিংবা এই সমস্যা সমাধানে কোনো টাস্কফোর্স গঠন করা, এমন কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।

যে ভুলের কারণে ধরা পড়েন গ্রিম স্লিপার

ইনিয়েত্রা ওয়াশিংটনই একমাত্র নারী, যিনি ফ্রাঙ্কলিনের হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও বেঁচে যান এবং পরবর্তীতে তাকে ধরিয়ে দিতে বড় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৮ সালের ঘটনা, ওয়াশিংটন রাস্তার ধার দিয়ে রাতের বেলা হাঁটছিলেন। এমন সময় তার পাশে কমলা রঙের ফোর্ড পিন্টো গাড়ী থামিয়ে রাইড শেয়ার করার প্রস্তাব দেন ফ্রাঙ্কলিন। ওয়াশিংটন প্রথমে মানা করেন।

কিন্তু ফ্রাঙ্কলিনের জোরাজুরিতে গাড়িতে ওঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পরই লক্ষ্য করেন, তার বুক থেকে রক্ত ঝরছে এবং তিনি বুঝতে পারেন তাকে গুলি করা হয়েছে। এরপর ফ্রাঙ্কলিন তাকে ধর্ষণ করেন এবং তার ছবি তুলে গাড়ি থেকে ফেলে দেন। সৌভাগ্যক্রমে ওয়াশিংটন বেঁচে যান এবং তার বর্ণনা থেকেই পুলিশ কুখ্যাত গ্রিম স্লিপারকে সনাক্ত করে।

ফ্রাঙ্কলিনের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া ইনিয়েত্রা ওয়াশিংটন; Image Source: people.com

অবশেষে ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ বিভাগ কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের রহস্যময় কিছু খুনের কিনারা করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন। এরপর তারা একটি ০.২৫ ক্যালিবারের পিস্তল, ডিএনএ পরীক্ষা এবং ওয়াশিংটনের বর্ণনা থেকে গ্রিম স্লিপারকে আটক করেন। তবে ডিএনএ পরীক্ষা করা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক ছিল। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাসকর্মী সেজে ফ্রাঙ্কলিনকে অনুসরণ করেন এবং তার খাবারে প্লেট, কাপ ও পিৎজার টুকরা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে এসব পরীক্ষা করে ফ্রাঙ্কলিনের খুনের বিষয়ে নিশ্চিত হয় লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ।

গ্রিম স্লিপারের খুনের সঠিক সংখ্যা কত?

২০১০ সালে গ্রিম স্লিপারকে আটক করার সময় পুলিশ তার পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় তারা প্রায় ১,০০০ জন নারীর ছবি খুঁজে পায়। এদের মধ্যে অনেকেই নগ্ন, অনেকে অচেতন, কারো রক্তপাত হচ্ছে এবং কোনো নারীকে মৃত মনে হচ্ছিল। কিন্তু পুলিশের পক্ষে এতজন নারীর পরিচয় বের করা সম্ভব হয়নি। কিংবা সবাই গ্রিম স্লিপারের হাতে খুন হয়েছেন কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ফ্রাঙ্কলিন মাত্র ১০ জনকে হত্যা করেননি। বরং তিনি কমপক্ষে ২৫ জন নারীকে হত্যা করেছেন। এর বাইরেও অনেক কিছু অজানা থেকে গেছে, যা অন্য সব সিরিয়াল কিলারদের ক্ষেত্রেও থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন তার কৃতকর্মের জন্য সর্বোচ্চ সাজাই পেয়েছেন। ২০১৬ সালে তাকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হয়।

This Bangla article is about serial killer 'Grim Sleeper'. Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image Source: CNN

Related Articles