Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

১৬৮৮ সালের বিপ্লব: ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বীজ বপন

১৬৮৮-৮৯ সময়কালে ইংল্যান্ডে সংঘটিত বিপ্লবটি ‘গ্লোরিয়াস রেভ্যুলুশন’ বা মহিমান্বিত বিপ্লব, ‘১৬৮৮র বিপ্লব’ বা ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’ নামে পরিচিত। এই বিপ্লবের ভেতর দিয়ে ক্যাথলিক রাজা দ্বিতীয় জেমস তার প্রোটেস্ট্যান্ট কন্যা মেরি এবং ডাচ জামাতা উইলিয়াম অফ অরেঞ্জের দ্বারা উৎখাত হয়েছিলেন। বিপ্লবের পেছনের উদ্দেশ্যগুলো ছিল জটিল, তাতে যেমন রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল, তেমনি ছিল ধর্মীয় বিবেচনাও। ইংল্যান্ড কীভাবে শাসিত হবে- এই ঘটনা সেটাকে চূড়ান্তভাবে বদলে দেয়, রাজতন্ত্রের ওপর সংসদকে অধিকতর ক্ষমতা প্রদান করে, এবং একটি রাজনৈতিক গণতন্ত্রের সূচনা যাতে হতে পারে তার বীজ বপন করে।

রাজা দ্বিতীয় জেমস

১৬৮৫ সালে ইংল্যান্ডের মসনদে বসেন রাজা দ্বিতীয় জেমস। ক্যাথলিক আর প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে সম্পর্কটা তখন ভালো যাচ্ছিল না। রাজতন্ত্র ও ব্রিটিশ সংসদের মধ্যেও আমলে নেয়ার মতো সংঘর্ষ দানা বাঁধছিল।

দ্বিতীয় জেমস; Image Source: Wikimedia Commons

জেমস, যিনি ক্যাথলিক ছিলেন, ক্যাথলিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন এবং সেনাবাহিনীতে ক্যাথলিক কর্মকর্তাদেরকে নিয়োগ দেন। ফ্রান্সের সাথেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো- এমন একটা সম্পর্ক যা ইংল্যান্ডের জনগণের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

১৬৮৭ সালে, রাজা দ্বিতীয় জেমস ক্ষমাবিষয়ক ঘোষণাপত্র ইস্যু করলেন, যা ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে যাওয়া দণ্ডবিধি স্থগিত করল এবং কিছু ভিন্নমতাবলম্বী প্রোটেস্ট্যান্টকে মেনে নিল। সেবছরই, রাজা সংসদ ভেঙে দিলেন, এবং একটি নতুন সংসদ তৈরি করার প্রয়াস পেলেন, যা তার প্রতি নিঃশর্তভাবে অনুগত থাকবে।

১৬৮৮ পর্যন্ত জেমসের কন্যা মেরি, একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, মসনদের প্রকৃত হকদার ছিলেন। জেমসের একটা পুত্র জন্মাল সেবছরই, জেমস ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড স্টুয়ার্ট, যাকে জেমস ক্যাথলিক হিসাবে প্রতিপালন করবেন বলে ঘোষণা দিলেন।

মেরি; Image Source: Wikimedia Commons

জেমসের পুত্রের জন্ম উত্তরাধিকারের ধারা বদলে দিল। অনেকেই আশঙ্কা করতে লাগলেন, ইংল্যান্ডে অচিরেই একটা ক্যাথলিক রাজবংশ প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। হুইগরা, যারা ছিল ক্যাথলিক উত্তরাধিকারের বিরোধিতা করা দলগুলোর ভেতরে প্রধান, বিশেষভাবে ক্ষিপ্ত হলো।

রাজার ক্যাথলিকবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করা, ফ্রান্সের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, সংসদের সাথে তার বিরোধ, এবং জেমসের পরে ইংল্যান্ডের মসনদে কে বসতে যাচ্ছে সেই প্রশ্নে অনিশ্চয়তা- এই সবকিছু একটি বিদ্রোহের এবং আখেরে দ্বিতীয় জেমসের পতনের আভাস দিচ্ছিলো।

উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ

১৬৮৮ সালে, রাজা জেমসের সাতজন সহযোগী ডাচ নেতা তৃতীয় উইলিয়াম যিনি উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ হিসাবে পরিচিত, তার কাছে একটা চিঠি পাঠালেন। সেখানে বলা হলো, তিনি যদি ইংল্যান্ড আক্রমণ করে বসেন, তাহলে তারা তার প্রতি অনুগত থাকবে। ইতোমধ্যেই উইলিয়াম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছিলেন, চিঠিটি এখানে কাজ করল নতুন একটি তাড়না হিসেবে। উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ আক্রমণের জন্য একটা সমীহ জাগানো নৌবহর প্রস্তুত করলেন এবং দেভনের টরবেতে পা রাখলেন ১৬৮৮ সালের ৫ নভেম্বরে (এই দিনটি আবার বিখ্যাত গাই ফকস ডে হিসাবে)।

উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ; Image Source: Wikimedia Commons

রাজা জেমসও সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তিনি আক্রমণকারী সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য তার বাহিনীকে নিয়ে আসতে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। জেমসের অনেক নিজের লোক, যাদের ভেতর তার পরিবারের সদস্যরাও ছিল, তাকে ছেড়ে গিয়ে উইলিয়ামের পক্ষে যোগদান করল। মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে, এসময় থেকে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটা শুরু হলো।

জেমস সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি পশ্চাদপসরণ করে ২৩ নভেম্বর লন্ডনে ফিরে যাবেন। তিনি শীঘ্রই ঘোষণা দিলেন, একটি ‘স্বাধীন’ সংসদের ব্যাপারে তিনি রাজি আছেন, কিন্তু আসলে তিনি তার নিজের নিরাপত্তার খাতিরে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করছিলেন।

ডিসেম্বরে, রাজা একবার পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। সেই মাসেই পরে আরেকবার দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন তিনি। এবার সফল হলেন।

বিল অফ রাইটস

১৬৮৯ এর জানুয়ারিতে, সেই বিখ্যাত কনভেনশন সংসদ বসলো। উইলিয়ামের কাছ থেকে বেশ চাপের মুখে পড়ে সংসদ একটি যৌথ রাজতন্ত্রের ব্যাপারে সম্মত হলো, যেখানে উইলিয়াম রাজা ও মেরি রাণী হিসেবে থাকবেন। বিনিময়ে নতুন দুই শাসক সংসদের কাছ থেকে আসা বিধিনিষেধগুলো অতীতের যেকোনো রাজার চেয়ে বেশি পরিমাণে মেনে নিলেন, যা রাজ্যজুড়ে ক্ষমতার বিতরণে নজিরবিহীন পরিবর্তনের সূচনা ঘটালো।

নতুন রাজা-রানীর সামনে উত্থাপিত হচ্ছে বিল অফ রাইটস; Image Source: Wikimedia Commons

রাজা-রানী উভয়েই অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলেন, যা পরিচিতি হলো ‘বিল অফ রাইটস’ নামে। এই দলিল কয়েকটি সাংবিধানিক নীতিকে স্বীকৃতি দিল, যার মধ্যে রয়েছে নিয়মিত সংসদ বসানোর অধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার, এবং সংসদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার। আনুষঙ্গিকভাবে, এটি রাজতন্ত্রকে ক্যাথলিক হয়ে উঠতে নিষেধ করল।

অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, বিল অফ রাইটস ছিল সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পথে প্রথম পদক্ষেপ।

রক্তপাতহীন বিপ্লব

ইংল্যান্ডের এই ঘটনাকে কখনো কখনো ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে, যদিও এই বর্ণনাটি আসলে পুরোপুরি সঠিক নয়। ইংল্যান্ডে রক্তপাত আর সহিংসতা সামান্যই ঘটেছিল, কিন্তু আয়ারল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডে এই বিপ্লব ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায়।

ক্যাথলিক ইতিহাসবিদরা এই বিপ্লবকে সাধারণভাবে ‘১৬৮৮র বিপ্লব’ হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকেন। অন্যদিকে, হুইগ ইতিহাসবিদরা ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’ অভিধাটিকেই প্রাধান্য দেন। ‘গ্লোরিয়াস রেভ্যুলুশন’ পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেন জন হ্যাম্পডেন, ১৬৮৯ সালে।

বিপ্লবের উত্তরাধিকার

বহু ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, যে ঘটনাগুলো ব্রিটেনকে স্বৈরতন্ত্রী রাজতন্ত্র থেকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হওয়ার দিকে নিয়ে যায়, ১৬৮৮ সালের বিপ্লব ছিল তার অন্যতম। এই ঘটনার পরে, ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র আর কখনো স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার চর্চা করতে পারেনি।

ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র আর স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার চর্চা করতে পারে না; Image Source: Vice

বিল অফ রাইটস প্রথমবারের মতো শাসকের ক্ষমতাকে চিহ্নিত, লিখিত, ও সীমিত করেছিল। বিপ্লবের পরের বছরগুলোতে সংসদের কার্যক্রম ও প্রভাব নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলোতেই এই ঘটনা প্রভাব ফেলেছিল। রাজা জেমসকে উৎখাত করার পরে কলোনিস্টরা সাময়িকভাবে কঠোর, পরিশুদ্ধতা-বিরোধ আইন থেকে মুক্ত হয়েছিল

বিপ্লবের সংবাদ যখন আমেরিকানদের কানে গেল, দেখা দিল কয়েকটি গণঅভ্যুত্থান, যার ভেতরে রয়েছে বোস্টনের বিদ্রোহ, লিজলারের বিদ্রোহ, এবং মেরিল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট বিদ্রোহ। মহিমান্বিত বিপ্লবের পর থেকেই ব্রিটেনে সংসদের ক্ষমতা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে, আর ক্ষয়ে এসেছে রাজতন্ত্রের প্রভাব। এতে কোনো সন্দেহই নেই, এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটিই আজকের যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সরকারের আগমনের মঞ্চটি তৈরি করে দিয়েছিল।

Featured Image Source: Historic UK

Related Articles