Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেপলক্যার চার্চ: খ্রিস্টানদের সর্বপ্রাচীন ও পবিত্রতম উপাসনালয়

পুরনো জেরুজালেম শহরের প্রাচীরের বাইরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত জায়গাটির নাম গলগাথা। নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, এখানেই যীশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। জায়গাটির অদূরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। পরবর্তীতে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ ও সমাধিস্থ করার স্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে প্রাচীন উপাসনালয় সেপলক্যার চার্চ।

সেপলক্যার চার্চের গম্বুজ; source: BibleWalks.com

পবিত্র এই চার্চের দখল তারপর নানা শক্তির কাছে হাতবদল হয়েছে। কেউ গড়েছে, কেউ ধ্বংস করেছে। আবার গড়া হয়েছে, সংস্কার করা হয়েছে। ভাঙা-গড়ার বিচিত্র পথ পরিক্রমায় আজও টিকে আছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বাধিক পবিত্র এই ধর্মীয় স্থাপনা। সেপলক্যার চার্চের ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব, স্থাপত্যকৌশল প্রভৃতি নিয়েই সাজানো হয়েছে এই লেখাটি।

প্রাচীন ইতিহাস

যীশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর (খ্রিস্টানদের বিশ্বাস মতে যীশুক্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন, মুসলিমদের বিশ্বাসমতে হযরত ঈসা (আ) এখনও জীবিত আছেন) জেরুজালেমের খ্রিস্টানরা তাঁর সমাধিক্ষেত্রে নানারকম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। ৬৬ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম রোমান অধিকৃত হওয়ার পর তাদের এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। রোমান সম্রাট হার্ডিয়ান গলগাথায় প্যাগান মন্দির স্থাপন করেন। এরপর দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন সম্রাট প্রথম কন্সট্যান্টাইন। তিনি ৩১২ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। শীঘ্রই তিনি তার নতুন ধর্মবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত পবিত্র স্থানগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং পবিত্রভূমিতে বেশ কিছু চার্চ স্থাপন করেন। চার্চগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেপলক্যার।

সেপলক্যার চার্চের প্রবেশপথ; source: Wikimedia Commons

সেপলক্যার চার্চের নির্মাণকাজ শুরু হয় ৩২৬ খ্রিস্টাব্দে। কন্সট্যান্টাইনের লোকজন ভাঙা পাথরের স্তুপে তলিয়ে যাওয়া যীশুখ্রিস্টের কবরটিকে আলাদা করে ফেলেন, যাতে কবর ঘিরে বিশালাকার চার্চ নির্মাণ করা যায়। তারা হার্ডিয়ানের মন্দিরও সরিয়ে ফেলেন। সমসাময়িক খ্রিস্টান ঐতিহাসিকদের মতে, এভাবে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ‘রক অব গলগাথা’ তথা গলগাথার পাথর। খননকাজ চলাকালে কন্সট্যান্টাইনের মা সেইন্ট হেলেনা যীশুর কবরে ট্রু ক্রস (যীশুর ক্রস) আবিস্কার করেন, যা নাকি একটি অসুস্থ লোকের শরীরে স্পর্শ করালে লোকটি অলৌকিকভাবে সুস্থ হয়ে যায়। কবরটি যে যীশুখ্রিস্টেরই, অন্য কারো নয়- সেই ঘটনাটি এই ধারণাকে পাকাপোক্ত করেছিল। তবে এটি একটি প্রাচীন কিংবদন্তী, যার কথা সেই সময়ের ঐতিহাসিক বা কন্সট্যান্টাইনের জীবনীকার ইউসেবিয়াস অব ক্যাসেরিয়া উল্লেখ করেননি। ইউসেবিয়াসের বিবৃতিমতে, ৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে চার্চটি প্রার্থনার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বিরাট খোলা চত্বরের দক্ষিণ কোনায় রাখা হয়েছিল রক অব গলগাথা; খ্রিস্টের কবরকে ঘিরে গড়া হয়েছিল বৃত্তাকার ইমারত।

সময়ের আবর্তনে সেপলক্যার

৬১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্সিয়ানরা জেরুজালেম আক্রমণ করে। তখন আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় চার্চটি। তারা ট্রু ক্রসও ছিনিয়ে নেয়। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের জেরুজালেম জয়ের পর ট্রু ক্রস পুনরুদ্ধার করা হয় এবং সেপলক্যার পুনর্নির্মিত হয়। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর শাসনকালে জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে আসে। তখন উমর (রা.) জেরুজালেমে আসলে তাকে সেপলক্যারে নামাজ পড়ার আহ্বান জানানো হয়। তিনি সেপলক্যারে নামাজ পড়তে অস্বীকৃতি জানান এই ভেবে যে, যদি তিনি চার্চে নামাজ পরেন, তাহলে পরে মুসলমানরা জায়গাটিকে মসজিদ বানিয়ে ফেলতে পারে। বরং তিনি সেপলক্যারের অদূরে একটি স্থানে নামাজ পড়েছিলেন, যেখানে পরবর্তীতে উমর মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গোঁড়া ফাতিমীয় খলিফা হাকিম ইসলামের সহনশীলতার এই নীতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ফলে ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে খলিফা হাকিমের আক্রমণের শিকার হয় সেপলক্যার। তার বিধ্বংসী আক্রমণের ফলে সেপলক্যারের পশ্চিমাংশের দেয়াল সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তিনি যীশুর কবরও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলেন। সেপলক্যার পরিণত হয় এক ধ্বংসস্তুপে।। এরপর ১০৪৮ সালে সম্রাট কন্সট্যান্টাইন সেপলক্যার পুনর্নির্মাণ করার জন্য অর্থ সরবরাহ করেন। প্রথম ক্রুসেডে খ্রিস্টান সৈন্যরা জেরুজালেম অধিকার করার পর সেপলক্যারে সমবেত হয়, সমস্বরে গাওয়া হয় প্রার্থনা সংগীত। ক্রুসেডার সেনাপতি গডফ্রে অব বুইলন নিজেকে ‘সেপলক্যারের রক্ষাকর্তা’ ঘোষণা করেন। ক্রুসেডারদের অর্থায়নে সেপলক্যার সংস্কার করা হয়।

জেরুজালেম ক্রুসেডারদের অধীনে থাকাকালীন সেপলক্যারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয় গ্রীক অর্থোডক্স, আর্মেনিয়ান এপোস্টলিক আর রোমান ক্যাথলিকদের মাঝে। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্চের দায়দায়িত্বের কিছুটা অর্পণ করা হয় কপ্টিক অর্থোডক্স, ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স এবং সিরিয়ান অর্থোডক্সদের।

স্থাপত্যশৈলী

প্রাচীন জেরুজালেম শহরের খ্রিস্টানদের আবাসিক এলাকার আর দশটা সাধারণ ভবনের সাথে সেপলক্যারের বাইরের চেহারায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। নিতান্তই সাদামাটা গড়নের এই চার্চটিকে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কী মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে এর অভ্যন্তরে। মুরিস্তানের বাজারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে গির্জার সামনের চত্বর। এই যে সরু পথটুকু হেঁটে আসতে হয়, এ পথটিকে বলা হয় ‘ভায়া ডরেলোসা’। ল্যাটিন এই শব্দের অর্থ ‘বিষাদের পথ’। যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য এই পথ ধরেই নিয়ে আসা হয়েছিল।

চত্বর পেরিয়ে আরেকটু সামনে গেলে দক্ষিণ পাশে পাওয়া যাবে চার্চের দরজা। দুটি দরজার মধ্যে বামপাশের দরজাটি খোলা হয়, ডানপাশেরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চত্বর ঘিরে সেপলক্যার চার্চ ছাড়াও বেশ কিছু ছোট ছোট স্থাপনা রয়েছে; যেমন- চ্যাপেল অব ফ্রাঙ্ক, গ্রিক অর্থোডক্স মনেস্ট্রি প্রভৃতি। পাঠক, এখন চলুন জেনে আসি সেপলক্যারের প্রধান প্রধান স্থাপত্যকর্ম সম্পর্কে।

ক্যালভেরি (গলগাথা)

রক অব ক্যালভেরি; source: christus rex

চার্চের অভ্যন্তরে প্রার্থনা বেদীর দক্ষিণ পাশের সিঁড়িপথ দিয়ে উপরে উঠলে পাওয়া যায় দ্য রক অব ক্যালভেরি বা গলগাথা। খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাস অনুসারে,এখানেই যীশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। এটি চার্চের সবচেয়ে জাঁকজমকভাবে সজ্জিত জায়গা। এটি ক্রসের বারো নাম্বার স্টেশন নামেও পরিচিত। এই অংশের প্রার্থনাবেদীটি গ্রীক অর্থোডক্সদের অধিকারে রয়েছে। পাশেই রয়েছে রোমান ক্যাথোলিকদের প্রার্থনাবেদী, যা ‘চ্যাপেল অব দ্য নেইলিং অব দ্য ক্রস’ বা ক্রুশের এগারো নাম্বার স্টেশন নামে পরিচিত। নিচের তলায় ক্যালভেরির ঠিক নিচেই রয়েছে ‘চ্যাপেল অব অ্যাডাম’। কারো কারো মতে,অ্যাডামের খুলিকে যেখানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, তার উপরের স্থানটিতে যীশুকে ক্রুশে ঝুলানো হয়েছিল।

স্টোন অব অ্যানোয়িন্টিং (স্টোন অব আঙ্কশন)

এই স্থানটিতে যীশুকে কবরস্থ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল; source: Wikimedia Commons

খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে, এই স্থানটিতে যীশুর মৃতদেহকে জোসেফ অব অ্যারিমেথিয়া সমাধিস্থ করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। পাথরটির পেছনের দেয়ালে মোজাইকের কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যীশুর দেহকে বিলেপনের দৃশ্য। ইহুদী রীতি অনুসারে মৃতদেহকে মশলা, মলম প্রভৃতির প্রলেপ দিয়ে কবরস্থ করা হয়।

এডিকল

যীশুখ্রিস্টের সমাধিসৌধ; source: cdn.images.express.com

সেপলক্যারের কেন্দ্রে, চার্চটির ধূসররঙা দুটি গম্বুজের বড়টির নিচে অবস্থিত রোটান্ডা বা বৃত্তাকার একটি ইমারত। বৃত্তাকার ইমারতটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি প্রার্থনাকক্ষ যার নাম এডিকল। এই স্থানটিতেই রয়েছে সেপলক্যার চার্চের সেপলক্যার নামের স্বার্থকতা। ‘সেপলক্যার’ অর্থ ‘সমাধি’। যীশুখ্রিস্টের পবিত্র সমাধিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এডিকল। এডিকলে রয়েছে দুটি কক্ষ। প্রথম কক্ষে রয়েছে ‘এঞ্জেল’স স্টোন’। ধারণা করা হয়, এটি হচ্ছে যীশুর কবরকে যে পাথর দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয় তার অংশবিশেষ। আর দ্বিতীয় কক্ষটিতে রয়েছে যীশুর ফাঁকা কবর। যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার পর শুক্রবার বিকেলে রীতি অনুযায়ী ভালো করে মশলা-মলম না লাগিয়েই তাড়াহুড়ো করে সমাহিত করা হয়। তাই পরের রবিবারের সকালে মেরি ম্যাগদালেন আরো কিছু মহিলাকে নিয়ে প্রয়োজনীয় মশলা-মলম নিয়ে যীশুর কবরের কাছে যান। তারা গিয়ে আবিষ্কার করেন, কবরটি ফাঁকা। কবরে যীশুর মৃতদেহ নেই। তখন দুজন ফেরেশতার আগমন ঘটে এবং তারা বলেন, যীশু পাপীদের পাপ নিজের কাঁধে নিয়ে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ও পরে পুনর্জন্ম লাভ করে স্বর্গে চলে গেছেন। এই ঘটনাকে যীশুর ‘পুনর্জন্ম’ (Resurrection) নামে অভিহিত করা হয়। ইস্টার সানডে উৎসবটি এই উপলক্ষেই পালন করা হয়ে থাকে।

সেপলক্যারে যীশুর সমাধি নিয়ে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ইউনিভার্সিটি অব এথেন্সের গবেষকদল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সাথে যৌথভাবে ২০১৬ সালে সেপলক্যারে খননকাজ চালায়। তারা মার্বেলের আবরণ সরিয়ে সেই পাথরের সন্ধান পেয়েছিলেন, যেটির উপর যীশুর মৃতদেহ রেখে সমাহিত করা হয়েছিল। যদিও এটি প্রকৃত অর্থেই যীশুর কবর কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে তারা যীশুর খালি কবরের গায়ে একটি ছোট জানালা কেটে রাখেন। এখন দর্শনার্থীরা জানালা দিয়ে ভিতরের পাথরটি দেখতে, এমনকি ছুঁতেও পারে। সব দলের খ্রিস্টানরাই যীশুর সমাধিতে প্রার্থনা করতে পারে।

হোলি ফায়ার অনুষ্ঠান; source: nytimes.com

বিশেষ কোনো উপলক্ষ, যেমন পবিত্র শনিবারে গ্রীক অর্থোডক্সদের প্রধান বিশপের উপস্থিতিতে ‘হোলি ফায়ার’ অনুষ্ঠান পালন করা হয় এখানে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন কপ্টিক ও আর্মেনিয়ানদের প্রধান বিশপও। এছাড়াও সেপলক্যারে খ্রিস্টানদের প্রতিটি দলের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা চ্যাপেল বা প্রার্থনাগৃহ।

সেপলক্যারের রক্ষণাবেক্ষণে মুসলিম পরিবার

সেপলক্যার খ্রিস্টানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনাস্থল, কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন দুটি মুসলিম পরিবার। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এমন রীতির কারণ কী। কারণটা জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসে। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে হযরত উমার (রা.) যখন বাইজেন্টাইন পরাজিত করে জেরুজালেম অধিকার করেন, তখন জেরুজালেমের আর্চবিশপ সাফ্রোনিয়াসকে এই নিশ্চয়তা দেন যে, খ্রিস্টানদের প্রার্থনাকেন্দ্র সংরক্ষিত হবে। এই উদ্দ্যেশ্যে তিনি মদীনা থেকে আগত প্যালেস্টাইনের নুসাইবাহ পরিবারকে চার্চের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সালাউদ্দীন আইয়ুবী ক্রুসেডারদের পরাজিত করে জেরুজালেম জয় করেন। তখন একাধিক খ্রিস্টান দলের মধ্যে বিরোধ এড়াতে তিনি সেপলক্যারের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব দেন মুসলিমদের। আইয়ুবীও এক্ষেত্রে বেছে নেন নুসাইবাহ পরিবারকে।

তারপর ষোড়শ শতাব্দীতে জেরুজালেম চলে যায় অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে। অটোমান সম্রাট সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেপলক্যারের ডানদিকের দরজা বন্ধ করে দেন এবং চাবির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেন দুটি মুসলিম পরিবারকে- নুসাইবাহ এবং জোদেহ। নুসাইবাহরা তো আগে থেকেই এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন, সুলতান সুলেমান জোদেহ পরিবারকেও সেই দায়িত্বের অংশীদার করে দেন। প্রতিদিন সকালে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে মুসলিম চাবিরক্ষী চাবি দিয়ে চার্চের দরজা খুলে দেন এবং সন্ধ্যায় দর্শনার্থী এবং প্রার্থনাকারীরা চলে গেলে চাবি নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। বর্তমানে আদিব জোদেহ, জোদেহ পরিবারের পক্ষ থেকে চাবিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। নুসাইবাহ পরিবারের পক্ষ থেকে এ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ওয়াজিহ নুসাইবাহ। এভাবেই নিরপেক্ষভাবে চার্চের চাবি রক্ষণাবেক্ষণের ফলে যেমন মুসলমানদের নিষ্ঠা ও আমানতদারীতার প্রকাশ ঘটে, তেমনি সম্প্রীতি বজায় থাকে সেপলক্যারের অংশীদার খ্রিস্টানদের ছয়টি দলের। আপনি যদি সেপলক্যার ভ্রমণে যান, মোমবাতি হাতে বিভিন্ন দলের অসংখ্য প্রার্থনাকারীকে দেখতে পাবেন। দেখতে একই মনে হলেও তাদের প্রার্থনার রীতি, শ্লোক সবই আলাদা। তারপরও বৃহৎ এই উপাসনালয়ে নানা দলের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সত্যিই বিস্ময়কর।

ফিচার ইমেজ- nationalgeographic.com

Related Articles