Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড: জাতিসংঘ মহাসচিবের অমীমাংসিত মৃত্যুরহস্য

ড্যাগ হ্যামারশোল্ড ১৯০৫ সালের ২৯ জুলাই সুইডেনের ইউনশপিং (Jönköping) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সাবেক সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যালমার লিওনাল্ড হ্যামারশোল্ড এবং মা অ্যাগনিস হ্যামারশোল্ডের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ড্যাগ হ্যামারশোল্ড কর্মজীবনে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়, ব্যাংক অব সুইডেন, এবং পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘে সুইডেনের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৫১-৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি আবারও দেশটিকে জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব করেন।

ড্যাগ হ্যামারশোল্ড বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটিকে আরও গতিশীল করে তোলেন; চিত্রসূত্র: UN Photo

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হওয়া স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাবে ১৯৫০ সালের ২৫ জুন কোরীয় যুদ্ধ শুরু হয়, যা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে। এই যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তদানীন্তন সেভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিরাজমান বৈরি সম্পর্কের প্রক্ষাপটে ১৯৫২ সালের ১০ নভেম্বর জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ট্রিগভেলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব নির্বাচনে ড্যাগ হ্যামারশোল্ড নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১০টি রাষ্ট্রের সমর্থন অর্জন করেন, এবং এ সময় তৎকালীন জাতীয়তাবাদী সরকার কর্তৃক প্রতিনিধিত্ব করা চীন ভোট প্রদানে বিরত ছিল। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের পূর্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্যরাষ্ট্র ছিল ১১টি। ১৯৫৩ সালের ৭ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত গোপন ভোটাভুটিতে সংস্থাটির মহাসচিব পদে ড্যাগ হ্যামারশোল্ডের পক্ষে ৫৭টি রাষ্ট্র ভোট দেয়, একটি রাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেয়, এবং আরেকটি রাষ্ট্র ভোট প্রদানে বিরত থাকে। এরপর সেই বছরের ১০ এপ্রিল তিনি জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত তিনিই সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিবের পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। প্রথম মেয়াদে পাঁচ বছর সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৫৮ সালের ১০ এপ্রিল থেকে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে হ্যামারশোল্ড বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংস্থার সচিবালয়কে কার্যকর করার পদক্ষেপ প্রহণ করেন। তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটিকে আরও গতিশীল করে তোলেন। সেজন্য তিনি বিদ্যমান বিভিন্ন সংকট সমাধানে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেন। কোরীয় যুদ্ধের সময় চীনের হাতে বন্দি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের মুক্তি প্রদানের ব্যাপারে তিনি দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ব্যবস্থা করে সংকট নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেন।

১৯৫৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের পরিদর্শনে সংস্থাটির মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশোল্ড; চিত্রসূত্র: UN Photo

১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে ইসরায়েল, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য সুয়েজ খালের উপর পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য মিশরে আগ্রাসন শুরু করে। এতে সুয়েজ সংকটের সূচনা হয়। এই সংকট নিরসন, এবং মিশর থেকে ইসরায়েল, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সেনাদের প্রত্যাহারে জাতিসংঘ মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশোল্ড অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুয়েজ খাল অঞ্চল এবং সিনাই উপদ্বীপে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর এই সর্বপ্রথম মিশনটি ১৯৫৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৬৭ সালের জুন পর্যন্ত নিয়োজিত থাকে। ১৯৫৮ সালে লেবানন এবং জর্ডান সংকটের সূচনা হলে হ্যামারশোল্ডের তত্ত্বাবধানে লেবাননে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ দল পাঠানো হয়, এবং জর্ডানে জাতিসংঘের একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৯ সাল নাগাদ থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যকার কূটনৈতিক সংকট নিরসন, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেকটি রাষ্ট্রে লাওসে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সহিংসতা নিরসনে সেখানে হ্যামারশোল্ড তার প্রতিনিধি প্রেরণ করেন।

১৯৬১ সালের ১৭ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় শিশুদের সাথে করমর্দনরত ড্যাগ হ্যামারশোল্ড; চিত্রসূত্র: Bettmann Archive/Getty Images

এছাড়াও, ড্যাগ হ্যামারশোল্ড গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সংকট সমাধানে তৎপর হন। বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ১৯৬০ সালের ৩০ জুন দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কাটাঙ্গাতে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। তামা, ইউরেনিয়াম, টিন এবং অন্যান্য বিপুল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মোইসে সোম্বের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র আন্দোলনে দেশটির সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি বেলজিয়ামের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। এছাড়াও, এই অঞ্চলের বিভিন্ন খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছিল।

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সংকট সমাধানে হ্যামারশোল্ড দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বার সাথে কাজ করেন। দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা লুমুম্বার সাথে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সখ্য ছিল, এবং দেশটিতে চলমান ঘটনাপ্রবাহের উপর তৎকালীন বিশ্বে চলমান স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব ছিল। পরবর্তীতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লুমুম্বা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। তার হত্যাকাণ্ডের পর গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সংকট সমাধানে হ্যামারশোল্ড দেশটির আরেক প্রধানমন্ত্রী সিরিল অ্যাডৌলার সাথে আলোচনা চালিয়ে নেন। ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই সংকট নিরসনের লক্ষ্যে দেশটিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সাথে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কাটাঙ্গার সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং মার্সেনারি গ্রুপের সংঘাত ঘটে। এই মার্সেনারি গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধারা অর্থের বিনিময়ে দেশটির সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি বেলজিয়ামের স্বার্থে কাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে হ্যামারশোল্ড দেশটির সংকট নিরসন এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য বিবদমান দু’পক্ষের সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন। সেই লক্ষ্যে তিনি লিওপোল্ডভিল শহরে (বর্তমানে কিনশাসা) দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন।

১৯৬১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এর সংকট সমাধানে লিওপোল্ডভিল শহরে জাতিসংঘ মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশোল্ড; চিত্রসূত্র: AFP/Getty Images

এরপর তিনি যুদ্ধবিরতি কার্যকরে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মোইসে সোম্বের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। ড্যাগ হ্যামারশোল্ড এবং আরও ১৫ জন আরোহী নিয়ে আলবার্টিনা নামে পরিচিত একটি চার্টার্ড ডগলাস ডিসি-৬ বিমান গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ১৯৬১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য উত্তর রোডেশিয়ার (বর্তমানে জাম্বিয়া) এনডোলা অঞ্চলের একটি জঙ্গলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সেই ঘটনাস্থল থেকে হ্যামারশোল্ড এবং আরও ১৪ জন আরোহীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অপর এক আহত আরোহী ছয় দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। এই বিমান বিধ্বস্তের কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পর তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ‘ফেডারেশন অব রোডেশিয়া এন্ড নায়াসাল্যান্ড’-এর পক্ষ থেকে দুটো আনুষ্ঠানিক তদন্ত করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে এই ঘটনাকে একটি ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে বিমানের পাইলটের ভুলের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু ১৯৬২ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে এই ঘটনার সাথে নাশকতা অথবা বাহ্যিক হামলার সম্পৃক্ততার বিষয়টি নাকচ করা হয়নি।

তৎকালীন ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য উত্তর রোডেশিয়ার এনডোলা অঞ্চলের একটি জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয় জাতিসংঘ মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশোল্ডকে বহনকারী চার্টার্ড ডগলাস ডিসি-৬ বিমান; চিত্রসূত্র: AP

এই ভয়াবহ ঘটনার দুই দিন পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান হ্যামারশোল্ডের মৃত্যুর কারণ হিসেবে গুপ্তহত্যার দিকে ইঙ্গিত করেন। এছাড়াও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিরিল অ্যাডৌলা মন্তব্য করেন, হ্যামারশোল্ড হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তার মৃত্যুর কিছুদিন পর বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত কাটাঙ্গা রাজ্যে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কনোর ক্রুজ ও’ব্রায়েন এবং জর্জ ইভান স্মিথ ১৯৯২ সালে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় এই ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি চিঠি পাঠান। সেখানে তারা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বহনকারী বিমানে মার্সেনারি গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধারা ভুলবশত গুলি চালিয়েছিল বলে দাবি করেন। ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডেসমন্ড টুটুর নেতৃত্বাধীন ‘ট্রুথ এন্ড রিকনসিলেশন কমিশন’ হ্যামারশোল্ডের মৃত্যুর ঘটনা সংশ্লিষ্ট আটটি চিঠি প্রকাশ করে, যেখানে এই ঘটনার সাথে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-ফাইভ, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এমন দাবি নাকচ করে দেয়।

জাতিসংঘ মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশোল্ডকে বহনকারী বিধ্বস্ত চার্টার্ড ডগলাস ডিসি-৬ বিমানের ধ্বংসাবশেষে চলছে অনুসন্ধান কার্যক্রম; চিত্রসূত্র: Central Press/Hulton Archive/Getty Images

১৯৬১ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ইয়োন এগ্গে সেই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ২০০৫ সালে নরওয়ের সর্বাধিক প্রচারিত আফটেনপোস্টেন পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি হ্যামারশোল্ডের কপালের দিকে খানিকটা বৃত্তাকার গর্ত লক্ষ্য করার দাবি জানান, যেটি বুলেটের আঘাতে তৈরি হতে পারে। পরবর্তীতে সুইডিশ ত্রাণ কর্মকর্তা জোরান ইয়র্কডাহল এই ঘটনা সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি দাবি করেন, কাটাঙ্গা রাজ্যের খনিজ সম্পদের উপর পশ্চিমা প্রভাব বজায় রাখার জন্য হ্যামারশোল্ডের বিমানটি ভূপাতিত করা হয়। ২০১১ সালে প্রকাশিত বই ‘Who Killed Hammarskjold? The UN, the Cold War and White Supremacy in Africa’ -এ ব্রিটিশ লেখিকা ড. সুসান উইলিয়ামস বেশ কিছু গোপন তথ্যচিত্র তুলে ধরে হ্যামারশোল্ডের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিভিন্ন বাহ্যিক প্রভাবের যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করেন।

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬১ সালে হ্যামারশোল্ড নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি তাকে ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন এই মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তানজানিয়ার তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহামেদ কান্দে ওসমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দলকে দায়িত্ব দেন। সেই বিশেষজ্ঞ দল এই ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ উদঘাটন করতে না পারলেও তারা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বাহ্যিক হামলা, অথবা হুমকির বিষয়টি তুলে ধরেন। ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মোহামেদ কান্দে ওসমানের নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ দলকে পুনরায় তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেন। এছাড়াও তিনি এই তদন্ত কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তবে, প্রায় ছয় দশক পেরিয়ে গেলেও ড্যাগ হ্যামারশোল্ডের মৃত্যুরহস্য এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

Related Articles