Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মান্ডুল গাতের দুই মাথাওয়ালা বিস্ময়বালক

মান্ডুল গাতের এক ছোট্ট, সাদামাটা পরিবারের গল্প এটা। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তার প্রসব বেদনা উঠেছে। বাবা অপেক্ষা করছেন বাইরে। ভেতরে স্ত্রী আর দাইমা। হঠাৎ করেই দাইমার চিৎকার ভেসে এলো ঘর থেকে। দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন দাইমা। তার চোখভরা ভয়। অবাক হয়ে ভেতরে যেতেই বাবা দেখলেন সদ্য মা হওয়া তার স্ত্রী খাটে শুয়ে, আর সদ্যোজাত সন্তান পড়ে আছে পাশে আগুনের মধ্যে।

অনেক কষ্টে ছোট্ট শিশুকে আগুন থেকে বের করে আনা হলো। অবশ্য তার চোখ আর কান বাদে কিছুই পোড়েনি। সবকিছু স্থির হতেই আশ্চর্য ব্যাপারটা খেয়াল করলেন বাবা আর বাকি সবাই। কী সেই ঘটনা?

পরিবারের জন্য কিছুদিনের মধ্যেই ভালো পরিমাণের টাকা আয় করে দিল ছোট্ট শিশু না বুঝেই; Image Source: Cult of Weird

হাতের পাঁচ আঙুলের জায়গায় ছয় আঙুল, একসাথে জুড়ে থাকা দুজন মানুষ- এমন কত ঘটনাই তো আছে চারপাশে। কিন্তু মান্ডুল গাতের সেবার ঘটেছিল একেবারেই অন্যরকম এক ঘটনা। ১৭৮৩ সাল। ওপার বাংলার মান্ডুল গাত গ্রামে সেবার জন্ম নিলো অদ্ভুত এক শিশু। শরীর একটা হলেও যার মাথা দুটো!

দ্বিতীয় মাথা নিজের মতো করে বাইরের যেকোনো ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাতো; Image Source: Alexandra Smith

অদ্ভুত এই শিশুর দুটো মাথার একটা একদম আলাদাভাবে তার মাথার উপরে বসানো। বাবা-মা আগলে রাখলেও ভয় পেয়ে গেলো পুরো গ্রামবাসী। বাবা বুঝলেন, এখানে আর থাকা যাবে না তাদের। আর বড় শহরে যেতে পারলে দুটো পয়সা বাড়তি আয়ও হয়তো করা যাবে তার অদ্ভুত গড়নের ছেলেকে দিয়ে।

ব্যস! যেই ভাবা সেই কাজ। স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় পাড়ি জমালেন বাবা। ভুল ভাবেননি। আসলেও প্রচুর মানুষ দেখতে এলো তাদের সন্তানকে। পরিবারের জন্য কিছুদিনের মধ্যেই ভালো পরিমাণ টাকা আয় করে দিল ছোট্ট শিশু, না বুঝেই। তবে শো-র মাঝখানেও চলছিল লোকের উঁকিঝুঁকি। লোকের চোখ থেকে বাঁচাতে সন্তানকে ঘন্টার পর ঘন্টা চাদরের তলায় রাখতে শুরু করলেন বাবা-মা। ধীরে ধীরে নাম ছড়াতে লাগলো তাদের চারপাশে।

একসময় বড় বড় ঘর থেকে অনুরোধ আসতে লাগলো বাড়িতে এনে প্রাইভেট শো করানোর। সেই মতোই চললো কাজ। ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অবশ্য ইচ্ছা ছিলো অন্যরকম। তাদের ইচ্ছা ছিল খুব কাছ থেকে এই বাচ্চাকে দেখার।

এমনই এক ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতে শিশুটির উপরে চোখ পড়ে রয়াল সোসাইটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট স্যার জোসেফ ব্যাংকসের। পরবর্তীতে সার্জন এভারেন্ড হোমের কাছে শিশুটিকে তিনির রেফার করেন।

আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, দুটো মাথা এমনই বা নতুন কী! কিন্তু না, আছে। নতুনত্ব আছে। আর সেই থাকাটা শুধু অবাকই করছিল না মানুষকে, ভয়ও পাইয়ে দিচ্ছিল। ছবির মাথাটিই দেখুন। একটা গোটা শরীরের উপরে একটা মাথা গজিয়ে উঠেছে কেবল। অনেকটা যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জেকিল আর হাইডের মতো। তবে হ্যাঁ, দ্বিতীয় মাথার মধ্যে কিছু সমস্যা ছিল, যা প্রথম মাথায় ছিল না। দ্বিতীয় মাথার কানগুলো ছিল একটু অন্যরকম, ঠিক যেন পূর্ণ নয়। সেই মাথার জিভটা ছিল আকারে ছোট। একইসাথে নিচের চোয়ালও। অন্যদিক দিয়ে দুটো মাথার আকৃতিই ছিল একদম একরকম। মাথাগুলোর সংযোগস্থলও ঢাকা ছিল কালো চুলে।

ভিন্নতা অবশ্য শুধু গড়নেই নয়, ছিল দুটো মাথার আবেগ, অনুভূতি, প্রতিক্রিয়াতেও। একটা মাথা হাসছে, তার মানে কিন্তু এই না যে অন্য মাথারও হাসি পাচ্ছে। দুটো মাথার আবেগ কাজ করতো একদম আলাদাভাবে। এমনকি, বেশিরভাগ সময় দ্বিতীয় মাথাটা প্রথম মাথা ঘুমিয়ে গেলে জেগে থাকতো, এবং চারপাশে নিজের মতো করে দেখতো। দ্বিতীয় মাথা নিজের মতো করে বাইরের যেকোনো ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাতো। এমনকি শারীরিক অনুভূতিগুলোও পুরোপুরি কাজ করতো তার।

গাল টানলে তার মুখ বাঁকা হয়ে যেত, দুধ পান করাতে গেলেও নিজের মতো করে মায়ের দুধ খেত সে। একইসাথে প্রচুর পরিমাণে চোখের পানি ও লালা- দুটোই উৎপন্ন হতো দ্বিতীয় মাথাতে। তবে দ্বিতীয় মাথার চোখ প্রথম মাথার চেয়ে আলো কম সহ্য করতে পারত। অনেক প্রতিক্রিয়াও তুলনামূলকভাবে দেরিতে দিত সে।

একইসাথে প্রচুর পরিমাণে চোখের পানি ও লালা- দুটোই উৎপন্ন হতো দ্বিতীয় মাথাতে; ArtStation

আস্ত একটা বাড়তি মাথা নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ আর স্বাভাবিক ছিল ছেলেটা। তবে তার এই জীবনের গল্পটা স্থায়ী হয়েছিলো মাত্র ৪ বছর।

সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় ভারতের এই বিস্ময়বালকের। পরবর্তীতে প্রচুর মানুষ তার শরীর কিনে নিতে চাইলেও ধর্মীয় কারণে বাবা-মা সেটা হতে দেননি। টামলক শহরের বাইরে ভূলনোরিয়ান নদীর পাশে ছেলেকে কবর দেন বাবা-মা। যদিও সেখানে খুব বেশিদিন থাকতে দেওয়া হয়নি লাশকে। কিছুদিনের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবন বণিক মিস্টার ডেন্ট কবর থেকে লাশ চুরি করেন এবং মাথাটা আলাদা করে কোম্পানির ক্যাপ্টেন বুকানানকে প্রদান করেন। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেনের হাত ধরে লাশ চলে যায় ইংল্যান্ডে, ক্যাপ্টেনের বন্ধু এভেরার্ড হোমের কাছে। বর্তমানে ছেলেটির খুলি সংরক্ষিত আছে সার্জন অব লন্ডনের রয়াল কটেজের হান্টেরিয়ান মিউজিয়ামে।

জানা যায় যে, খুলি আলাদা করার সময় মিস্টার ডেন্ট দেখতে পান যে, দুটো মাথা একসাথে যুক্ত হলেও মস্তিষ্ক ছিল একেবারেই আলাদা। দুটি মাথাই নিজস্ব ডিউরা ম্যাটার দ্বারা আবৃত ছিল। একইসাথে ব্যবস্থা ছিল উপরের মাথায় পর্যাপ্ত পুষ্টি যাওয়ারও। বর্তমানে ভারতের সেই দুই মাথা বালকের সমস্যার নাম চিকিৎসকেরা দিয়েছেন ক্র্যানিওপ্যাগাস প্যারাসিটিকাস, যেখানে এমন প্যারাসাইট ঘরানার টুইন বাচ্চা জন্ম নিয়ে থাকে। যদিও এমনটা প্রতি ৫ মিলিয়ন সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে ২-৩ জনের বেলাতেই পাওয়া যায়। এই শারীরিক অবস্থা তৈরি হয় যখন ভ্রুণ যমজ সন্তানের জন্য তৈরি হলেও একটি শিশু তুলনামূলকভাবে কম উন্নত হয়। সেক্ষেত্রে সেটি বেশি উন্নত ও পরিপূর্ণ দেহের সাথে এক হয়ে পড়ে।

সাধারণত এসব ক্ষেত্রে শিশুরা জন্মের আগেই মৃত্যুবরণ করে। আর জন্ম নিলেও বেঁচে থাকে কয়েকদিন মাত্র। জন্মের পর পরই মৃত্যু হয় বেশিরভাগের বেলায়। অপারেশনের মাধ্যমে বাড়তি প্যারাসাইটকে বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি থেকে যায় অনেক বেশি।

২০০৪ সালে রেবেকা মার্টিনেজনামের আরেকজন শিশু ডোমিনিক রিপাবলিকে জন্ম নেয় একই অবস্থায়; Image Source: Amusing Planet

২০০৪ সালে রেবেকা মার্টিনেজ নামের আরেক শিশু ডোমিনিক রিপাবলিকে জন্ম নেয় একই অবস্থায়। সার্জারি করার সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে মৃত্যু হয় তার। ২০০৫ সালে মিশরে মানার মাগেদ একই সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয় এবং তার উপর ১৩ ঘন্টার অপারেশন চালান চিকিৎসকেরা। তবে ইনফেকশনের কবলে পড়ে মৃত্যু হয় তার, অপারেশনের ৮ সপ্তাহের মধ্যেই।

২০২১ সালে রোমানিয়াতেও এলিয়াস হাসপাতালে একইরকম দুটো মাথা নিয়ে জন্ম নেয় এক শিশু। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তার। তবে বাংলার এই বিস্ময়বালকের কথা কিন্তু একদম অন্যরকম। সে বাঁচতো। বাঁচার সমূহ সম্ভাবনা ছিল তার। শারীরিক কোনো সমস্যার মুখোমুখিই তাকে কখনো হতে হয়নি। সাপের কামড়ের দুর্ঘটনা না ঘটলে  তাই হয়তো সে বাঁচতো আর দশটা মানুষের মতো। তবে এটা পুরোটাই গবেষকদের মতামত। আপনার কী মনে হয়? যদি কোনো দুর্ঘটনা না ঘটতো, তাহলে কি বেঁচে যেত ওপার বাংলার দুই মাথাওয়ালা বিস্ময়বালক?

Language: Bangla
Topic: The two headed boy of Bengal
References: Hyperlinked inside

Related Articles