৫২৯/৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কোনো এক সময়।
মধ্য এশিয়ার স্তেপ (Steppe) অঞ্চল।
নিজ তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন পারস্যের দিগ্বিজয়ী একিমিনিড (Achaemenid) সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, মহা পরাক্রমশালী, রাজাধিরাজ দ্বিতীয় সাইরাস। ইতিহাস তাকে নাম দিয়েছে সাইরাস দ্য গ্রেট। তার সামনে সারিবদ্ধ পারসিক সেনারা। দূর দিগন্তে দেখা যাচ্ছে তাদের শত্রু, স্তেপির যাযাবর গোত্র মেসাজেটিদের। ধুলোর ঝড় উড়িয়ে তীব্রবেগে তারা ধেয়ে আসছে বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া সাইরাসের বাহিনীর দিকে।
সাধারণ অবস্থায় সাইরাসের চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। সুপ্রশিক্ষিত এবং নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতির অহঙ্কারে গর্বিত পারসিকরা স্তেপের যাযাবর গোত্রগুলোকে অসভ্য বলেই মনে করে। তাদের না আছে বড় আকারে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা, না আছে ক্ষমতা। আরো বড় ব্যাপার হচ্ছে এই প্রতিপক্ষ গোত্রের নেতা এক রানী, টমিরিস। মহা প্রতাপশালী শাহেনশাহ সাইরাসের হাতে ধরাশায়ী হয়েছেন সারা বিশ্বের নামীদামী রাজা আর তাদের সেনাদল। সেখানে বর্বর যাযাবরদের প্রধান দুর্বল এক নারী কী করে সাইরাসের প্রতি হুমকি হতে পারেন? এ যেন হাতি-ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল!
কিন্তু কেন যেন সাইরাসের মন আজ অন্য কথা বলছে। তার ভ্রু-কুঞ্চন গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। মনের গহীনে তিনি শুনতে পাচ্ছেন সন্তানহারা এক মায়ের আর্তনাদ। টমিরিসের ক্রোধ কি মেসাজেটিদের ধ্বংস ডেকে আনবে, না তার আগুনে পুড়ে ছারখার হবেন সাইরাস?
ইতিহাস, না উপকথা?
সাইরাস আর টমিরিসের কাহিনীর একমাত্র উৎস, আমাদের লেখার সূত্র গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডটাস। নিজের ‘দ্য হিস্টোরি’স গ্রন্থের প্রথম খন্ডের একাংশে তিনি এই বর্ণনা টেনে এনেছেন। সাইরাসের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে হেরোডটাস কয়েকটি গল্পের কথা বলেছেন, যা সিরিজের শেষাংশে উঠে আসবে। এর মধ্যে তিনি টমিরিসের কাহিনীর উপরই জোর দিয়েছেন বেশি। তবে স্তেপের গোত্রগুলোর লিখিত কোনো ইতিহাস আলাদা করে পাওয়া যায়নি। এমনকি টমিরিস এবং তার সন্তান বাদে তাদের কোনো নামও আমাদের জানা নেই। যতটুকু ইতিহাস জানা গেছে তার সিংহভাগই হেরোডটাসের বর্ণনা আর সন্ধানপ্রাপ্ত পুরাকীর্তির উপর ভিত্তি করে।
তবে টমিরিস যে ঐতিহাসিক চরিত্র এই বিষয়ে মোটামুটিভাবে ইতিহাসবিদরা একমত। সাইরাসের সাথে তার সংঘর্ষ নিয়ে যদিও বিতর্ক আছে, তথাপি একে সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেয়া বা গ্রহণ করার মতো কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে নেই। ফলে ইতিহাসের অংশ হিসেবেই রয়ে গেছে এই ঘটনা। তবে মূল ঘটনার আগে দুটি বিষয় সামনে আনা প্রয়োজন। একটি স্তেপ, আরেকটি স্তেপের বাসিন্দা গোত্রগুলো, বিশেষত মেসাজেটি।
স্তেপ
স্তেপ শব্দের উৎপত্তি রাশিয়ান ভাষা থেকে। রাশিয়া আর সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলের এলাকাকে স্তেপ বলা থেকেই এই শব্দের সূত্রপাত ধরা হয়। বাংলায় এর অর্থ তৃণভূমি। স্তেপ বলতে বিস্তীর্ণ সমতল এমন এক অঞ্চল বোঝানো হয়, যেখানে পাহাড়-পর্বত বা গাছ গাছালি নেই। ঘাসে ঢাকা স্তেপ পশুচারণভূমি হিসেবেই উপযুক্ত। এর মধ্য দিয়ে কখনো কখনো বয়ে যায় নদী, যার ধারে দেখা মেলে কয়েকটি গাছের। তবে ঐ পর্যন্তই। বাকি স্তেপ যেন খোলা ময়দান।
নানা দেশে নানা নামে স্তেপ পরিচিত। যেমন- উত্তর আমেরিকাতে প্রেইরি, দক্ষিণ আমেরিকাতে পাম্পাস, হাঙ্গেরিয়ানে পুসজ্টা, অস্ট্রেলিয়াতে ডাউন্স, দক্ষিণ আফ্রিকাতে হাই ভেল্ড ইত্যাদি।
মধ্য এশিয়ার স্তেপকে বলা হয় দ্য স্তেপ (The Steppe)। প্রায় ৫,০০০ মাইল দীর্ঘ এই তৃণভূমি পশ্চিমে হাঙ্গেরি থেকে আরম্ভ করে পূর্বদিকে ইউক্রেন আর মধ্য এশিয়া অতিক্রম করে ঠেকেছে চীনের মাঞ্চুরিয়া অবধি। অন্যান্য স্তেপ থেকে এর বৈশিষ্ট্য হলো এর মাঝে মাথা তুলেছে উরাল পর্বতমালা। উরালের একদিকে পড়েছে পশ্চিম স্তেপি, যা দানিয়ুব নদীর মুখ থেকে কৃষ্ণসাগরের উত্তর তীর ধরে ভল্গা পার হয়ে চলে গেছে আল্টাই পর্বতমালার সীমানা অবধি। পূর্ব থেকে পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৫০০ মাইল আর উত্তর দক্ষিণ বরাবর ৬০০ মাইল। আল্টাইয়ের পর থেকে শুরু হয়েছে পূর্ব স্তেপ, যা মঙ্গোলিয়া আর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ভেদ করে চলে গেছে। পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ১,৫০০ মাইল, আর উত্তর-দক্ষিণে ৪০০-৫০০ মাইল।
উরাল আর আল্টাই ছাড়া স্তেপ সম্পূর্ণই সমতল। এমনকি পর্বতের মধ্য দিয়েই অনেক পথ থাকায় সহজেই ঘোড়ার পিঠে করে চলাচল করা যেত পূর্ব আর পশ্চিম স্তেপের মধ্যে। এখানে ঘুরে বেড়াত যাযাবর অনেক গোত্র। তারা প্রধানত পশু চড়াত। গবাদি পশু ছিল তাদের অর্থের উৎস। এখানকারে লোকেরা চলাচল আর যুদ্ধের জন্য ঘোড়া ব্যবহার করত। তাদের সেনাদলে পদাতিক বলে কিছু ছিল না, সবাই অশ্বারোহী।
স্তেপের গোত্রগুলোর কথা বলতে গিয়ে হেরোডটাস অবধারিতভাবেই টেনে এনেছেন দুর্ধর্ষ স্কাইথিয়ানদের (Scythians) কথা। এদের অনেক নামেই ডাকা হয়; যেমন- সাকা, স্কাইথম, ইস্কুজাই ইত্যাদি। ইউরাশিয়ার এই জাতি প্রাথমিক কালের যাযাবর সাম্রাজ্যের পত্তন করে। পঞ্চম শতাব্দীর দিকে এরা ইউক্রেনের কাছে ইউরাশিয়ান স্তেপে চলে আসে। তাদের দ্বারাই ব্যবসার হাতেখড়ি হয় এখানকার যাযাবর মানুষের। সাতজন দোভাষীর সাহায্যে এই অঞ্চলে প্রচলিত সাত ভাষায় তার বাণিজ্য করতে থাকে।
দ্য স্তেপির একাংশ, যা মঙ্গোলিয়া থেকে কার্পেথিয়ান পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত, তার নামই ইউরেশিয়ান স্তেপি। হেরোডটাস দাবি করেন, এখানে বসতি করা স্কাইথিয়ানরা পূর্ববর্তী বাসিন্দা সিমেরিয়ানদের ককেশাস পার করে তাড়িয়ে দেয়। স্কাইথিয়ানরা ছিল সুদক্ষ ঘোড়সওয়ার। ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠ থেকে দুই হাতেই নির্ভুল তীর ছোঁড়ার অসামান্য ক্ষমতা ছিল তাদের। অনেক সময় ঘোড়ার পিঠে উল্টো বসেই তারা যুদ্ধ করত। তাদের পথ ধরে কালে কালে আবির্ভূত হয় নানা জাতি। দুর্ধর্ষ হূন, যারা রোমের ভিত কাঁপিয়ে তুলেছিল; ম্যাগিয়ার, যারা হাঙ্গেরিতে ঘর বাধে; বুল্গার, যারা প্রতিষ্ঠা করে বুলগেরিয়া; আর এককালের ভয় জাগানিয়া মঙ্গোল, সবাই স্কাইথিয়ানদের থেকে তাদের উৎপত্তি দাবি করত।
স্তেপের যাযাবর গোত্র
জরথ্রুস্ত্রবাদের ধর্মগ্রন্থ আভেস্তা মধ্য এশিয়ার যাযাবরদের অভিহিত করেছে তুরা (Tura) নামে। বর্ধিষ্ণু পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিপক্ষ হিসেবেই তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। পারস্য যখন আসিরিয়ানদের হাতে তখন আবার এদের বলত সাকা, যা স্কাইথিয়ানদের আরেক নাম বলে অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন। যদিও যাযাবর বিভিন্ন গোত্রের রীতিনীতি আলাদা ছিল, তথাপি পারসিকদের চোখে তারা সবাই ছিল সাকা। এদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভিন্নতা আলাদাভাবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা পারসিকরা বোধ করেনি। যেহেতু এরা সবাই প্রাচীন ইরানিয়ান ভাষায় কথা বলত এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও ছিল কাছাকাছি, কাজেই সবাইকে পারসিকরা একই মনে করত। কোনো লিখিত ইতিহাস এই গোত্রগুলো রাখত না, ফলে এদের সম্পর্কে খুব অল্পই জানা যায়।
যাযাবর এই গোত্রগুলো প্রায়ই আরো উৎকৃষ্ট চারণভূমির খোঁজে তাদের স্থান পরিবর্তন করত। আজ যে গোত্র এক জায়গায়, কাল আরেক গোত্র সেখানে। ফলে অনেক সময় তৎকালীন ঐতিহাসিকেরাই এদের চিহ্নিত করতে হিমশিম খেতেন। উদাহরণস্বরূপ সাইরাসের সাথে এদের সংঘর্ষের কথাই ধরা যাক। হেরোডটাস বলেন, সাইরাস লড়েছিলেন মেসাজেটিদের সাথে, আরেক গ্রীক ভূতাত্ত্বিক স্ট্র্যাবোর মতে সাকাদের সাথে। কুইন্টাস কার্টিয়াসের দাবি এরা কেউ নয়, সাইরাসের সাথে লড়াই করেছিল এবি গোত্র। টেসিয়াসের মতে গোত্রের নাম ডার্বিসেস, আর বেরোসুসের ভাষ্যে দাহি।
মেসাজেটি
স্তেপের অন্যান্য গোত্রের মতো মেসাজেটিদের আবির্ভাবও ধোঁয়াশাপূর্ণ। এমনকি তাদের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল তা-ও জানা নেই। কিছু কিছু ঐতিহাসিকদের দাবি- পরবর্তীকালের হূন জাতির পূর্বসূরি ছিল মেসাজেটিরা, তবে এর সত্যাসত্য নিঃসন্দেহ নয়। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেসাজেটিদের আবাস ছিল মূলত কাস্পিয়ান সাগরের পূর্ব, আরাল সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং বর্তমান তুর্কমেনিস্তানের কুজিকুলাম মরুভূমির কিছু অংশে। অক্সাস আর জাক্সার্টেস নদী ছিল তাদের দুই দিকে। বলা হয়, আরাক্সেস নদী তাদের সাথে একিমিনিড সাম্রাজ্যের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত হিসেবে কাজ করত। তবে এই আরাক্সেস নদী কোনটি তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। একে অক্সাস, জাক্সার্টেস, এমনকি ভল্গা নদী বলেও দাবি করা হয়।
হেরোডেটাসই মেসাজেটিদের সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস। তার মতে, পোশাকআশাক আর আচার-আচরণে মেসাজেটিরা অনেকটাই স্কাইথিয়ানদের প্রতিরূপ। এমনিক স্কাইথিয়ানদের মতোই ঘোড়ার পিঠে বসে লড়াই করার দক্ষতা তাদের ঈর্ষাতিত। ঘোড়া ছাড়াও মেসাজেটিরা ভয়ঙ্কর যোদ্ধা। তীর, ধনুক আর বর্শার পাশাপাশি তাদের অন্যতম প্রিয় অস্ত্র কুঠার। লোহার অভাবে অস্ত্রপাতি বানাতে তারা ব্রাস নামে তামা আর জিঙ্কের একরকম সঙ্কর ব্যবহার করত। এছাড়া স্বর্ণের প্রাচুর্য থাকায় শিরস্ত্রাণ, বর্ম ইত্যাদিতে সোনার প্রলেপ লাগানো হত।
মেসাজেটি পুরুষেরা এক নারীকেই বিয়ে করত। তবে হেরোডটাসের কথায় মেসাজেটিদের স্ত্রীরা পুরো সমাজের অধীন বলে গণ্য হয়। ফলে স্বামীদের মধ্যে স্ত্রী বিনিময় ছিল সাধারণ প্রথা। তাদের আরেকটি প্রথা নাকি বয়স্ক মানুষকে হত্যা করে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা। তারা ঘোড়া আর গবাদি পশু চড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। মাঝে মাঝে হামলা করত রাস্তা ধরে যাওয়া বাণিজ্য দলের উপর।
স্ট্র্যাবোর মতে, আরাক্সেস নদী ও তার শাখা-প্রশাখা সম্বলিত এলাকাতেই মেসাজেটিরা প্রধানত বিচরণ করত। নদী থেকে তারা ধরত প্রচুর মাছ। আবার নদীর মাঝে মাথা তোলা ছোট্ট দ্বীপে ঠাই নিত তাদের কেউ কেউ। তাদের মধ্যে ছিল জেলে, পশুচারণকারী ইত্যাদি পেশার মানুষ। তবে কৃষিকাজ তাদের ধাতে সইত না। স্কাইথিয়ানদের মতোই মেসাজেটিরা প্রাচীন ইরানিয়ানে কথা বলত। তাদের দেবতা ছিল সূর্য। সূর্যদেবের উদ্দেশ্য ঘোড়া উৎসর্গ তাদের অন্যতম আচার।
সাইরাসের উত্তরসূরি প্রথম দারিয়ুস মেসাজেটিদের পদানত করেছিলেন। কিন্তু একিমিনিড সাম্রাজ্যের সরকারি নথিপত্রে আলাদা করে মেসাজেটিদের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে যেহেতু পার্সিয়ানরা স্তেপের সকলকেই সাকা বলে ডাকত, সুতরাং মনে করা হয় মেসাজেটিদের আলাদা করে দেখানোর কোনো প্রয়োজন বোধ তারা করেনি। দারিয়ুসের এক মূর্তিতে খোদাই করা আছে তার অধীনস্থ চব্বিশ জাতির নাম। এর ১২ নম্বরে ছিল জলাভূমি আর সমতলের সাকারা। মনে করা হয়, এই দিয়েই সমস্ত স্তেপ বোঝান হয়েছে।
৩২৯/৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দুর্বার মেসিডোনিয়ান সেনাদল নিয়ে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট গুঁড়িয়ে দেন একিমিনিড সাম্রাজ্য। এরপর মেসাজেটিরা অন্যান্য কিছু গোত্রের সাথে মিলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। আলেকজান্ডারের হাতে ঘোল খেয়ে আবার তারা সম্রাটের আধিপত্য স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এরপর তাদের কী হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। অনেকে মনে করেন, তৃণভূমির আরেক গোত্র দাহির সাথে তারা মিশে গিয়েছিল। রোমান আমলে তাদের স্কাইথিয়ানদের একটি গোত্র বলেই উল্লেখ করা হত, তবে উল্লেখযোগ্য নতুন কোনো তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি। পরবর্তীতে বাইজান্টাইন লেখকেরা হূন, তুর্ক, তাতার ইত্যাদি জাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে মেসাজেটিদের নাম নিয়েছেন।
স্তেপির গোত্রগুলোর পারস্পরিক অবস্থান
স্তেপিতে ছিল না কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্র। প্রতিটি গোত্র স্বাধীন, এবং এই স্বাধীনতাকে তারা যেকোনো মূল্যে বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পশুচারণভূমি নিয়ে সশস্ত্র ঝগড়া-বিবাদ ছিল সাধারণ ব্যাপার। অনেক সময় কোনো গোত্র অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠলে তাদের নেতৃত্বে স্তেপের যাযাবরেরা একটি কনফেডারেশন বা জোট তৈরি করত। কনফেডারেশনের বাইরে থাকা গোত্রগুলো ছিল জোটের টার্গেট, তাদের থেকে তারা তৃণভূমি ছিনিয়ে নিত।
এর বাইরে কনফেডারেশনের মাধ্যমে নানা গোত্রের নেতাদের মাঝে আলাপ-আলোচনা এবং অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের ভেতর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে শুরু করে। ফলে সৃষ্টি হয় অনেকটা হাইব্রিড ধরনের উচ্চবংশীয় পরিবার, যাদের ভেতর থেকে গোত্রপতি আর উপদেষ্টা নির্বাচিত হচ্ছিল। অনেক সময় দেখা যেত একই সময়ে কয়েকটি শক্তিশালী গোত্রের নেতৃত্বে কয়েকটি কনফেডারেশন গঠিত হয়েছে, যারা আবার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে একে অপরের সাথে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ত।