Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কুখ্যাত পাঁচ ভাড়াটে খুনির কাহিনী

বেশিরভাগ চাকরির ক্ষেত্রে আপনি যত ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারবেন, যত বেশি মানুষের মন জয় করতে পারবেন, তত বেশি খ্যাতি অর্জন করবেন। কিন্তু ভাড়াটে খুনিদের বেলায় ঘটে তার ঠিক উল্টোটা। আপনি যদি খুব বিখ্যাত (পড়ুন কুখ্যাত) হিটম্যান হতে চান, তবে আপনাকে বেশি বেশি মানুষ খুন করে অন্যদের মন বিষিয়ে তুলতে হবে। কি দারুণ চাকরি!

শীর্ষ ভাড়াটে খুনিদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে তাদেরকে বিবেচনায় রাখা হয়, যারা ধরা পড়ে নিজেদের দীর্ঘ কর্মমুখর জীবনের গল্প পুলিশকে জানিয়ে গেছে। মাথায় রাখা প্রয়োজন, সেরা হিটম্যানরা কখনো ধরা পড়ে না, তাদের গল্প কখনো জানা যায় না। কাজেই এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের চেয়েও দুর্ধর্ষ ভাড়াটে খুনি হয়তো আমাদের চারপাশেই বিচরণ করছে! আপাতত নিজেদের পেশায় পাণ্ডিত্য দেখিয়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নেয়া ইতিহাস কুখ্যাত পাঁচ ভাড়াটে খুনিকে নিয়ে সাজানো হলো আমাদের আজকের আয়োজন।

১) রিচার্ড কুকলিন্সকি

কুকলিন্সকিকে বলা হয় আমেরিকার সবচেয়ে চতুর ভাড়াটে খুনি। খুন করার সময়টাকে আড়ালে রাখার জন্য ভিক্টিমকে আগে থেকে হিমায়িত করে ফেলত সে। বিশেষ এই পদ্ধতির জন্য সাধারণ মানুষের কাছে সে ‘আইসম্যান’ নামেই বেশি পরিচিত। মাত্র পাঁচটি খুনের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ত্রিশ বছরের পেশাদার জীবনে ১০০ থেকে ২৫০ খুন করেছে বলে আইসম্যান নিজেই দাবি করেছে। তার কথা অবিশ্বাস করার আসলে খুব বেশি কারণও নেই। কুখ্যাত গ্যাম্বিনো ক্রাইম পরিবারের সাথে ভাড়াটে খুনি হিসেবে জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছে কুকলিনস্কি। ত্রিশ বছরে যদি সে ২৫০ খুনও করে থাকে, তাহলে অঙ্কের হিসাবে দাঁড়ায় প্রতি ছয় সপ্তাহে একজনকে হত্যা করেছে আইসম্যান। ক্রাইম ফ্যামিলির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে খুনের এমন হিসাব খুব একটা অবান্তর বলে মনে হয় না।

রিচার্ড কুকলিন্সকি; Source: ytimg.com

আইসম্যানের হিমায়িত করার পদ্ধতি শুধু গ্রেফতার এড়ানোর উদ্দেশ্যেই ছিল না, বরং এই পদ্ধতিকে সে নিজের হাতিয়ারে পরিণত করে। বন্দুক, ছোরা, ব্যাট, চেরাই করা কাঠের টুকরো, আগুন, বরফ, সায়ানাইড- একেক সময় একেক ধরনের অস্ত্র রেখে পুলিশকে সে ঘোল খাইয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। কখনোবা ভিক্টিমকে রেখে গেছে বন্য জীবজন্তুর খাদ্য হিসেবে। চোখ বন্ধ করে হিটম্যানের কথা ভাবতে গেলে যেমন স্নাইপার বা ভাড়াটে খুনির চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে, আইসম্যান ঠিক তেমন তথাকথিত ভাড়াটে খুনি। তারচেয়েও ঢের বেশি ভয়ংকর এই হিটম্যান জীবনে খুব কমই খুন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেয়া কুকলিন্সকি ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করে। তার জীবনী নিয়ে ‘দ্য আইসম্যান টেপস’ নামে একটি ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে।

২) চার্লস হ্যারেলসন

চার্লস হ্যারেলসন; Source: ryancantrell.net

চেহারাটা কি একটু পরিচিত মনে হচ্ছে? কিংবা নামটা? চার্লস হ্যারেলসন, ন্যাচারাল বর্ন কিলার বা জন্মগত খুনি ছদ্মনামেই যে বেশি পরিচিত, হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা উডি হ্যারেলসনের বাবা। উডি নিজেও রূপালী পর্দায় দুর্ধর্ষ সব মারদাঙ্গা খুনে চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছিলেন। এনসাইক্লোপিডিয়া সেলসম্যান হিসেবে কর্মজীবনে ব্যর্থ হওয়ার পরে সিনিয়র হ্যারেলসন বেছে নেয় পেশাদার জুয়াড়ির জীবন। বাড়তি কিছু আয়ের আশায় ছোটখাট খুনের চুক্তিতেও সই করা শুরু করে ধীরে ধীরে। যে খুনের জন্য সে বিশেষভাবে স্পটলাইটে চলে আসে সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ কোর্টের বিচারক জন এইচ. উডের হত্যা মামলা। খুনের আসামি প্রমাণিত হওয়ার পরে হ্যারেলসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

৩) ইগরে দ্য অ্যাসাসিন

স্নায়ুযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোতে ‘কার্লোস দ্য জ্যাকাল’ কথাটি যেন অবশ্যই ব্যবহার্য একটি সংলাপে পরিণত হয়েছে। সমসাময়িক দর্শকদের জ্ঞাতার্থে জানানো প্রয়োজন, মার্ভেলের ‘উইন্টার সোলজার’ চরিত্রটি মোটেই কোনো কাল্পনিক ব্যক্তি নয়, নয় কোনো রূপকথার অংশ। উইন্টার সোলজার চরিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে নামহীন এক সোভিয়েত সুপার অ্যাসাসিন বা গুপ্তঘাতকের অবলম্বনে। ‘ইগরে দ্য অ্যাসাসিন’ নামেই পুলিশের খাতা থেকে সাধারণ জনগণ, সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে বহুল আলোচিত এই ভাড়াটে খুনি। তার সম্পর্কে এতো বেশি গুজব রটেছে যে কোনটা সত্যি আর কোনটা কানকথা তা এখন আর আলাদা করার উপায় নেই।

অজ্ঞাতনামা ইগরে দ্য অ্যাসাসিন; Source: ranker.com

জানা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রাক্তন এই এজেন্ট আন্তর্জাতিক ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ শুরু করার প্রায় কয়েক দশক পর্যন্ত পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই দোর্দণ্ড প্রতাপে নিজের কাজ চালিয়ে গেছে। ১৯৬০ সালের দিকে জন্ম নেয় ইগরে। ঘাড়ের কাছে ছোট্ট একটি আঁচিল ছিল তাকে শনাক্ত করার একমাত্র উপায়। প্রায় ৪০টি খুনের দায়ে অভিযুক্ত ইগরে ভাড়াটে খুনির ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নিয়েছে বেশ পাকাপোক্তভাবে।

২০০৬ সালে সোভিয়েতের এই গুপ্তঘাতকের শিকারে পরিণত হয় সাবেক এক সোভিয়েত পুলিশ অফিসার আলেকজেন্ডার লিতভিনেঙ্কো। লিতভিনেঙ্কো আদালতে বিচার চলাকালীন সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে কৌশলে ইংল্যান্ডে পালিয়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নকল কিছু চিহ্ন নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আবিষ্কার করেন তার মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, চায়ের সাথে মেশানো তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়ামের প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে লিতভিনেঙ্কো। আর এই চা তার ঘরে পৌঁছে দেয়া মধ্যবয়সী, পেশীবহুল লোকটির ঘাড়ের কাছে একটি আঁচিল ছিল বলে জানায় পাশের কেবিনের রোগীসহ দায়িত্বে থাকা নার্সরা। এভাবেই অভিনব সব উপায়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যায় লিতভিনেঙ্কো।

৪) আলেকজান্ডার সলোনিক

‘সাশা দ্য ম্যাকেডোনিয়ান’, ‘সুপারকিলার’, ‘এজেন্ট ৪৭’ আরও কত বিচিত্র নাম আছে তার! রাশিয়ান এই ভাড়াটে খুনিকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়। মল্লযুদ্ধে বিশেষ পারদর্শিতা এবং সহিংসতার প্রতি ঝোঁক থাকায় খুব দ্রুতই সেখানে নিজের জায়গা করে নেয় সলোনিক। রাশিয়ান পুলিশদের খুন করার অভিযোগও আছে তার নামে। পেশাদার ভাড়াটে খুনির খাতায় নাম লেখানোর আগেই কমপক্ষে ৩০ জনকে খুন করেছে সলোনিক- এ কথা প্রমাণিত। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে ব্যক্তিগত ‘হত্যার জন্য নিয়োগ সংস্থা’ খুলে বসে সে। সলোনিকের ট্রেডমার্ক, দুইটি পিস্তল একসাথে চালানোর উপর ভিত্তি করে ভিডিও গেম ‘হিটম্যান’এর এজেন্ট ৪৭ চরিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।

আলেকজান্ডার সলোনিক; Source: ggpht.com

অসংখ্যবার জেল থেকে পালিয়েছে সলোনিক। চৌদ্দ শিকের ভেতরে থেকে নাহলেও কয়েক ডজন কয়েদীর সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয় এই ভাড়াটে খুনি। সঙ্গী-সাথী অপরাধীদের বাজেভাবে পিটিয়ে বা খুন করে পৈশাচিক আনন্দ পেতো বলে জানায় সুপার কিলার সলোনিক। ১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া এই ভাড়াটে খুনি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালে গ্রীসের অ্যাথেন্সে মারা যায়। তার মৃত্যুর পরে রাশিয়ার গণমাধ্যম প্রথমবারের মতো তার ছবি প্রচার করে। গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় শহর থেকে প্রায় ১৫ মাইল দূরে।

৫) গিসেপ গ্রিকো

গিসেপ গ্রিকো; Source: wikimedia.org

তাকে শুধু হিটম্যান বা ভাড়াটে খুনি বললে কম বলা হয়। ইতিহাস এবং সাহিত্যে মাফিয়া সৈন্যদের যেভাবে চিত্রায়িত করা হয়, তার যেন ঠিক আদর্শরূপ গ্রিকো। ১৯৫২ সালে জন্ম নেয়া কুখ্যাত সিসিলিয়ান মাফিয়া পরিবারের উচ্চপদাসীন একজন সদস্য, গ্রিকো বংশের রত্ন গিসেপ গ্রিকো বা মাইকেল গ্রিকো অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়ে নোংরা সব কাজে। তার মাফিয়া পরিবারের পথের কাঁটা দূর করতে ঘোরতর শত্রুদের খুন করার কাজে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। সিসিলির সিয়াসুলি শহরের আশপাশেই অন্তত ৫৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে গ্রিকো। এই সংখ্যাটি অবশ্য শুধুমাত্র খুঁজে পাওয়া মৃতদেহের ভিত্তিতে জানা গেছে, বোঝাই যাচ্ছে প্রকৃত ভিক্টিমের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। টমি গান থেকে একে-৪৭ এ উত্তীর্ণ হওয়া এই ভাড়াটে খুনি তার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে গেছে গোটা সিসিলি জুড়ে। ১৯৮৫ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিজেরই দুই সঙ্গীর গুলিতে নিহত হয় ‘দ্য গুডফেলা’ খ্যাত গ্রিকো।

ফিচার ইমেজ- squarespace.com

Related Articles