Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্রুম্যান ডকট্রিন: যে নীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশ টেনে ধরে যুক্তরাষ্ট্র

১৯৪৫ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, কৃষ্ণসাগরের পাড়ে ইয়াল্টায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের আবাসস্থল লিভাদিয়া প্রাসাদে বৈঠকে বসেছেন বিশ্বের তিন পরাশক্তির রাষ্ট্রপ্রধানগণ। টেবিলের একপাশে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফাঙ্কলিন রুজভেল্ট এবং অপরপাশে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপর্যস্ত ও প্রায় পরাজিত জার্মানিকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায় সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির শর্ত চাপিয়ে দিয়েও দমিয়ে রাখা যায়নি জার্মানিকে। তাদের ভাষ্যমতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী একমাত্র জার্মানি। কাজেই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে জার্মানিকে এবার এমন শিক্ষা দিতে হবে যেন ভবিষ্যতে আর তারা বিশ্বের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে না পারে।

পটসড্যাম কনফারেন্সে (বাম থেকে) উইনস্টন চার্চিল, হ্যারি ট্রুম্যান এবং জোসেফ স্ট্যালিন; image source: wikimedia commons 

এছাড়াও বৈঠকের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো বিজয়ী তিন পরাশক্তির নিজেদের মধ্যে কিছু দাবিদাওয়া মিটিয়ে নেওয়া। বৈঠকে উপস্থিত তিন রাষ্ট্রপ্রধানেরই কিছু দাবি ছিল। যেমন- রুজভেল্টের দাবি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন যেন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে জাপানে আক্রমণ করে। এছাড়া তিনি চাচ্ছিলেন জোসেফ স্ট্যালিন শান্তিরক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘে স্বাক্ষর করুক। অপরদিকে জার্মান সৈন্যদের হটিয়ে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ তখন সোভিয়েত বাহিনীর দখলে। উইনস্টন চার্চিল এই সোভিয়েত সৈন্যদের ভবিষ্যৎ ইউরোপের জন্য ক্রমাগত হুমকি হিসেবে দেখতেন। তিনি জানতেন, সোভিয়েত সৈন্যরা যদি ইউরোপ ত্যাগ না করে তাহলে এই বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে তার কিছুই করার থাকবে না। তাই তিনি চাচ্ছিলেন এ ব্যাপারে রুজভেল্ট যেন তাকে সাহায্য করেন। আর জোসেফ স্ট্যালিনের দাবি ছিল জার্মানিকে দ্বিখণ্ডিত করতে হবে যেন তারা আর কোনোদিন বিশ্বের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে না পারে। তাছাড়া যুদ্ধে তার দেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট জোসেফ স্ট্যালিনকে বিশ্বাস করতেন। সেদিনের বৈঠকের সব সিদ্ধান্তই প্রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে গেল। যেমন- সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জার্মানিকে ভেঙে দুই খণ্ড করা হবে, তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে ইত্যাদি। এর বিনিময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে জাতিসংঘে স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হন রুজভেল্ট।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে সোভিয়েত সৈন্যরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে; image source: warontherocks.com

সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও তখন একেবারে শেষের দিকে। কিন্তু বাধ সাধল রুজভেল্টের মৃত্যু। ১২ এপ্রিল, ১৯৪৫ সালে রুজভেল্টের মৃত্যুর মধ্যদি য়ে বিশ্ব ক্ষমতার মঞ্চে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় উঠে এলেন হ্যারি ট্রুম্যান। ৭ মে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করল জার্মানি। জাপানিরা তখনও যুদ্ধ করে যাচ্ছিল।

১৬ জুলাই বিশ্বে প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ১৭ জুলাই বার্লিনের বাইরে শুরু হয়ে গেল পটসড্যাম সম্মেলন। এই সম্মেলনে যোগ দেন ট্রুম্যান, চার্চিল ও স্ট্যালিন। কিন্তু এতদিনে আর আগের মতো নেই একে অপরের প্রতি বিশ্বাস কিংবা বিশ্বস্ততা। হ্যারি ট্রুম্যান জোসেফ স্ট্যালিনকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি এবং তার কর্মকর্তারা অপ্রতিরোধ্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করতে লাগলেন। একইভাবে তাদের ধারণা ছিল ইয়াল্টার চুক্তি সোভিয়েতরা মানবে না।

মার্কিন জনগণের মধ্যেও তখন ভাবাবেগের পরিবর্তন দেখা গেল। তারা মনে করতে থাক ইয়াল্টা বৈঠকে আসলেই সোভিয়েত ইউনিয়নকে বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সমালোচনা হতে থাকল এই বৈঠকের। একইসাথে সমালোচনা হলো প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের। এভাবে কেটে গেল প্রায় দুই বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রেশ তখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ক্রমেই বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে সোভিয়েতদের কমিউনিজম আন্দোলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সফলতার পর এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে উঠেছে তারা।

হ্যারি ট্রুম্যান কংগ্রেসে দাড়িয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন; image source: wikimedia commons

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। সেদিন তিনি ঘোষণা করেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি অবলম্বন করে আসছে তা হলো বিচ্ছিন্নতার নীতি বা মনরো নীতি। এখন সময় এসেছে এই নীতি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার। অপ্রতিরোধ্য কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব রোধ করতে হলে এই নীতি থেকে আমাদের এখনই বেরিয়ে আসতে হবে।

সেদিন তিনি আরো বলেন,

আমি বিশ্বাস করি, সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের দ্বারা অথবা বাইরের চাপের দ্বারা যেসব রাষ্ট্র পরাধীন হতে চলেছে সেই রাষ্ট্রকে সমর্থন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অবশ্যই স্বাধীনতাকামী মুক্ত লোকদের তাদের নিজস্ব উপায়ে এবং তাদের নিজস্ব লক্ষ্যে কাজ করতে সহায়তা করতে হবে।

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সহায়তা প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে হওয়া উচিত যা অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব এবং সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

মনরো নীতির পরিবর্তে উদার সামরিক সক্রিয়তা এবং সোভিয়েত মদদে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট বিদ্রোহের লাগাম টেনে ধরতে হ্যারি ট্রুম্যান যে নীতির ঘোষণা দেন ঐতিহাসিকভাবে সেটাই ট্রুম্যান ডকট্রিন বা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৮ সালের ৪ জুলাই গ্রিস ও তুরস্কে কমিউনিস্ট বিদ্রোহকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে এ নীতি আরও বিকশিত হয়। ট্রুম্যান বলেন, যদি গ্রীস এবং তুরস্ককে সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে পুরো অঞ্চল মারাত্মক পরিণতি নিয়ে কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকে পড়বে।

পটসড্যাম সম্মেলনে (বাম থেকে) ক্লিমেন্ট এটলি, হ্যারি ট্রুম্যান এবং জোসেফ স্ট্যালিন; image source: history.com

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপের যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে গেঁড়ে বসে সোভিয়েত কমিউনিজম। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এরই মধ্যে তুরস্ক, গ্রীস এবং ঐ অঞ্চলের সোভিয়েত প্রভাবের মাধ্যমে কমিউনিজম আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডের ধারণা ছিল সেখান থেকে ব্রিটিশ সেনা সরিয়ে নেয়া হলে সেখানে কমিউনিস্টদের প্রভাব এবং প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে। ফলে সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় এবং বলকান অঞ্চল মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিস্টরা। ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হলো তখন হ্যারি ট্রুম্যান এ ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

গ্রীস এবং তুরস্ককে সাহায্য করার মাধ্যমেই ট্রুম্যান নীতির বাস্তব কার্যকারিতা শুরু হয়। সাধারণত সরাসরি আমেরিকান সেনাবাহিনী এতে জড়িত ছিল না, তবে কংগ্রেসে গ্রিস এবং তুরস্কের জন্য অর্থনীতিক এবং সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ করা হয়।

ট্রুম্যান নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে সহায়তার ঘোষণা দেয়, কারণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রুশ কমিউনিস্ট বিদ্রোহকে যুক্তরাষ্ট্র সমসাময়িক সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করত। পরে ট্রুম্যান নীতিই হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ভিত্তি। এই নীতির উপর ভিত্তি করেই ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট’ বা ‘ন্যাটো’। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নকে রুখতেই এই সামরিক জোট গঠন করা হয়। ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার মধ্য দিয়েই অবতারণা হয় স্নায়ুযুদ্ধের। এমনকি ঐতিহাসিকগণ কংগ্রেসে ট্রুম্যানের দেওয়া ভাষণের দিনকেই স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর তারিখ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

ট্রুম্যান নীতি কংগ্রেসে পাস করানোর জন্য ট্রুম্যানের রিপাবলিকানদের সমর্থনের প্রয়োজন ছিল। সেই সমর্থনও খুব সহজই পেয়ে যান তিনি। কংগ্রেসে প্রধান রিপাবলিকান মুখপাত্র সিনেটর আর্থার এইচ ভ্যান্ডেনবার্গ ট্রুম্যানকে জোরালো সমর্থন করেন এবং সিনেটর রবার্ট এ. টাফ্টের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্দেহকেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েন। পররাষ্ট্র সচিব জর্জ মার্শাল এবং উপ-সচিবের ডিন অ্যাকেসনের সাথে দেখা করে হ্যারি ট্রুম্যান অনুরোধ জানান, যেন এই নীতি সম্পর্কে ভেবে দেখা হয়। মজার ব্যাপার হলো, সেদিন উপ-সচিব অ্যাকেসন ‘ডোমিনো তত্ত্ব’ রচনা করেন। যেখানে তিনি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রকে ঝুঁড়িতে রাখা একটি পচা আপেলের সাথে তুলনা করেন, যা ঝুঁড়ির সবগুলো আপেলকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। অথবা, অনেকগুলো তাস যদি দাঁড় করিয়ে রাখা যায়, একটিকে টোকা দিয়ে ফেলে দিলে এক এক করে পাশের তাসগুলোও পড়ে যাবে।

ডোমিনো তত্ত্বের মাধ্যমে মূল যে বাণীটি প্রচার কার হচ্ছিল তা হলো, কোনো একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ডোমিনো তত্ত্বটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।

ঐতিহাসিক ডোমিনো তত্ত্ব; image source: wikimedia commons 

বাহ্যিকভাবে ট্রুম্যান নীতিকে উদার নীতি মনে হলেও এর সাথে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত ছিল। দরিদ্র ও দুর্বল দেশগুলোকে সাহায্যের পাশাপাশি এর কিছু গোপন উদ্দেশ্যও ছিল। যেমন- এই নীতির মাধ্যমে দুর্বল দেশগুলোতে মার্কিন অস্ত্র ও তাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে বাজার দখল করা, মার্কিন শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি লাভ করা, বিশ্বব্যাপী সোভিয়েত প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সোভিয়েত কমিউনিজমের বিপরীতে পাল্টা পুঁজিবাদী জোট গঠন করা ইত্যাদি।

এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক মন্দা দেখা দেয়। অস্ত্র উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হয়ে যায় কর্মী ছাঁটাই। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন ছিল যার মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক অগ্রগতি এবং সামরিক অগ্রগতি নিহিত হবে। ট্রুম্যান নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। একইসাথে এই নীতির মাধ্যমে ইউরোপের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে স্বল্পমূল্যে ঋণ প্রদান করে তাদের শিল্পপণ্যের মাধ্যমে বাজার দখল করারও উদ্দেশ্য ছিল।

হ্যারি ট্রুম্যান তার অপর একটি বক্তৃতায় বলেন-

সাম্যবাদের আদর্শ অতি সক্রিয় এবং সম্প্রসারণশীল। সারা বিশ্বের সমস্ত সাম্যবাদের ভাবধারা প্রভাবিত হয় মস্কো থেকে। বিশ্ব এখন পরস্পর বিরোধী দুটি আদর্শে বিভক্ত। একটি হলো মুক্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ব, আর অপরদিকে সাম্যবাদী বিশ্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তব্য হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতা রক্ষা করা। বিশ্বের যেকোনো অংশে মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সাম্যবাদী গোষ্ঠী দ্বারা আক্রান্ত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করবে।

ট্রুম্যান নীতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম সাহায্য করে গ্রীস এবং তুরস্ককে। গ্রীস এবং তুরস্কে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কমিউনিস্ট আন্দোলন প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে, যা মার্কিন কংগ্রেস থেকে অনুমোদিত হয়েছিল। কংগ্রেসের ট্রুম্যানের এই নীতি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান উভয়পক্ষই ছিল কট্টর কমিউনিস্টবিরোধী। সুতরাং সহজেই তিনি উভয়পক্ষের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হন। মতবিরোধ যে একেবারেই ছিল না তা না। তবে জনপ্রিয়তার আড়ালে সেসমস্ত মতবিরোধ ধোপে টেকেনি। সেসময়ে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন কলির’স এ নীতিকে প্রেসিডেন্টের ‘জনপ্রিয় জ্যাকপট’ হিসেবে উল্লেখ করে।

ট্রুম্যান নীতির মাধ্যমে ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে পশ্চিমা দেশগুলো একত্রিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে, ঐতিহাসিকভাবে যা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত। স্নায়ুযুদ্ধের অবতারণা হয় এই ট্রুম্যান নীতির মাধ্যমে। ট্রুম্যান মতবাদ একটি জাতিকে সাম্যবাদী প্রভাব থেকে বাঁচাতে মার্কিনী সাহায্যের রূপক হয়ে ওঠে।

This Bengali article discusses about the Truman Doctrine and its aftermath. References have been hyperlinked inside.

Featured Image: War On The Rocks

Related Articles