Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অদ্ভুত পাঁচটি যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধযানের গল্প

যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রণকৌশলের পাশাপাশি যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধযানও সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এ লক্ষ্যে এসব নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলে নিয়মিত। আজ চলুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির এমনই পাঁচটি বিচিত্র যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধযান নিয়ে জানা যাক।

১. গে বোম

অস্ত্রের নাম দেখেই অনেকে হয়তো চোখ কুঁচকে ফেলেছেন, ভাবছেন, “এ আবার কেমন বোম?” তবে সত্যিকার অর্থেই এককালে এমন বোম বানানোর প্রস্তাব এসেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছে।

১৯৯৪ সালে টেক্সাসে অবস্থিত ব্রুকস এয়ার ফোর্স বেজের অস্ত্র গবেষণাগারের এক বিজ্ঞানী এমন অদ্ভুত প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এমন একটি ‘ভালোবাসা বোম’ বানানোর কথা, যার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুরা যুদ্ধ করার চাইতে বরং যুদ্ধক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে শুরু করবে। অর্থাৎ সমকামী আচরণ প্রকাশ করতে থাকবে। শত্রু যদি এভাবে ভালোবাসায় মত্ত হয়ে যায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত লাভ হবে যুক্তরাষ্ট্রেরই।

Source: youtube.com

প্রস্তাবটি শুনতে হাস্যকর লাগলেও এ প্রস্তাবনার জন্য দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য হবে আপনার। শত্রুকে সমকামী করে তোলার নোংরা মানসিকতার এ প্রজেক্টের জন্য দাবি করা হয়েছিলো সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউএস ডলার, মেয়াদকাল ছয় বছর। তবে শেষ পর্যন্ত আর এই প্রস্তাবনা আলোর মুখ দেখে নি, কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকেছিলো।

সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছে এমন বেশ কিছু উদ্ভট অস্ত্রের পরিকল্পনা জমা পড়েছিলো। এর মাঝে একটি ছিলো ‘Sting Me’ নামের রাসায়নিক বোম, যার প্রভাবে শত্রু সেনাদের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে বোলতা কিংবা দলে দলে ইঁদুর তেড়ে যাবে! আরেকটি এমন রাসায়নিক বোমের প্রস্তাব করা হয়েছিলো যার নাম ছিলো ‘Who? Me?’। এই বোমটি শত্রু সেনাদের পেট ফাঁপিয়ে দেবে বলে দাবি করা হয়েছিলো। ফলে বায়ু ত্যাগে শত্রু সেনাদের মাঝে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে ভেবেছিল এ বোমার প্রস্তাবকারী দলটি। কিন্তু এটাও তেমন কার্যকরী হবে না বিধায় শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেয়া হয়।

২. সৃষ্টিকর্তার কন্ঠ শোনানো অস্ত্র

এ অস্ত্রের ব্যাপারে গুজব শোনা যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই। বলা হয়ে থাকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এমন একটি অস্ত্র বানাতে কাজ করছে যা শত্রুপক্ষের উপর প্রয়োগ করলে তারা মনে করবে, সৃষ্টিকর্তা তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলছেন। তখন তাদের মানসিকতার পরিবর্তন পাল্টে দিবে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতিও। এ অস্ত্রটি দেখা ব্যাপারে, এমনকি এর মাধ্যমে কারো কণ্ঠ শুনতে পাবার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ই কিছু সেনার দাবির ব্যাপারে জানা গেছে। তবে দেশটির সেনাবাহিনী সেসব দাবিকে একেবারেই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

অস্ত্রের জোরে সৃষ্টিকর্তার কণ্ঠ শোনানো না গেলেও বন্দুকের সাহায্যে শব্দ শোনানোর অনুভূতি তৈরি করার মতো প্রযুক্তি কিন্তু ঠিকই আছে, যার অগ্রদূত অ্যালেন এইচ. ফ্রে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি মাইক্রোওয়েভ অডিটরি ইফেক্ট বা ফ্রে ইফেক্ট নামেই পরিচিত। শর্ট পালস হিসেবে যখন কারো মাথার মধ্য দিয়ে মাইক্রোওয়েভ পাঠানো হয়, তখন সেগুলো অ্যাকুইস্টিক প্রেশার হিসেবে থার্মোইলাস্টিক ওয়েভ তৈরি করে। এই ওয়েভগুলো পরবর্তীতে একজন ব্যক্তির অডিটরি রিসেপ্টরগুলোকে উত্তেজিত করে তোলে, যেমনটা সাধারণত কোনো শব্দ শোনার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। মানবদেহে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দু’দশক ধরে অর্থ ঢেলে গিয়েছে।

Source: wired.com

তবে কথা হলো, শব্দ শোনার মতো অনুভূতি তৈরি করা, আর একেবারে কথা শোনানোর মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। কাউকে যদি মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনের মাধ্যমে বিশ্বাস করাতে হয় যে সে তার মস্তিষ্কে কারো কথা শুনতে পাচ্ছে, তাহলে তার মাথা দিয়ে যে পরিমাণ মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন পাঠাতে হবে, সেটা কথা শোনানোর আগে ব্যক্তির মস্তিষ্ককেই পুরো ভেজে ফেলবে!

৩. উড়ন্ত ট্যাঙ্ক

ট্যাঙ্ক এমনই এক সাঁজোয়া যান যেটাকে সবসময় আমরা ভূমির উপর দিয়েই চলতে দেখেছি। বিশালাকার এ যানটির চলাচল দূর থেকে দেখলেই বুকের ভেতর কেমন যেন একটা কম্পন তৈরি হয়। একবার ভাবুন তো, এই ট্যাঙ্কগুলোই যদি মাটিতে চলার পাশাপাশি আকাশেও পাখিদের সাথে উড়তে পারতো, তাহলে কেমন হতো? বেশ অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তাই না?

মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বযুদ্ধগুলোর সময় উড়ন্ত ট্যাঙ্ক নিয়েও গবেষণা চালিয়েছে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী। তবে যুদ্ধবিমানের মতো আকাশে থেকে নিচে কোনো হামলা চালানোর জন্য না, বরং কোথাও দরকার পড়লে দ্রুতগতিতে উড়ে গিয়ে সেখানকার যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যই এমন ট্যাঙ্কের জন্য গবেষণা চলছিলো। উড়ন্ত ট্যাঙ্কের জন্য বিভিন্ন ধরনের মডেলই জমা পড়েছিলো। এরই মাঝে একটি ছিলো বেয়ন্স ব্যাট (Baynes Bat)। এখন চলুন উদ্ভট এই ট্যাঙ্কটি নিয়েই জানা যাক।

বেয়ন্স ব্যাট; Source: Wikimedia Commons

বেয়ন্স ব্যাট নামের এ উড়ন্ত ট্যাঙ্কের নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ ডিজাইনার এল. ই. বেয়ন্স। অন্যান্য ট্যাঙ্কগুলোতে যেখানে ওড়ার জন্য ঝালাই করা পাখা লাগানো হয়েছিলো, সেখানে বেয়ন্স তার প্রস্তাবিত ট্যাঙ্কের ডিজাইনে প্রয়োজনে খুলে ফেলা যায় এমন পাখা লাগানোর কথা উল্লেখ করেছিলেন। ফলে তার ট্যাঙ্কটি সাময়িকভাবে গ্লাইডারের রুপ নিতো।

বেয়ন্স ব্যাটের নকশা; Source: archive.org

স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রথমে বেয়ন্স একটি প্রোটোটাইপ ট্যাঙ্ক বানান। এতে কোনো টেইল ছিলো না বিধায় বাদুড়ের মতো লাগছিলো। উদ্ভাবকের নামের সাথে মিলিয়ে তাই নাম দেয়া হয় ‘বেয়ন্স ব্যাট’। পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের শুরুর দিককার ফলাফলগুলো ছিলো বেশ আশা জাগানিয়া। ফলে অনেক সামরিক কর্মকর্তাই ভাবতে শুরু করেছিলেন- উড়ন্ত ট্যাঙ্কের যুগ এলো বলে!

একেবারে বামের মানুষটিই বেয়ন্স; Source: Wikimedia Commons

আশার বেলুনটা ফুটো হতে অবশ্য খুব বেশি সময় লাগে নি। এর কৃতিত্ব (বেয়ন্সের দৃষ্টিতে দোষ!) দেয়া যায় দক্ষ পাইলট ক্যাপ্টেন এরিক ব্রাউনকে। প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের ফলাফল দেখেই তার বেশ সন্দেহ হয়েছিলো। তার মনে হয়েছিলো সেখানে কোনো গোলমাল আছে। তাই তিনি নিজেই বেয়ন্সের ট্যাঙ্ক নিয়ে আকাশে উড়লেন। আকাশে ওঠার পর তো বেচারার আক্কেল গুড়ুম হবার দশা! ট্যাঙ্কটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। তারপরও সৌভাগ্যবশত কোনোমতে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে ট্যাঙ্কটি অবতরণ করাতে সক্ষম হন তিনি। নেমেই জানান দেন এমন ট্যাঙ্ক আকাশে ওড়ানো পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

ফলে বেয়ন্সের বাদুড় ঠিকমতো ডানা মেলবার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো মাটিতে।

৪. ব্যথা সৃষ্টিকারী রশ্মি

মিছিলে আসা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন উপায় বেছে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মাঝে রয়েছে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট, বুলেট ইত্যাদি। একবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ভাবলো এমন একটি নন-লিথাল ওয়েপন বানাতে হবে যেটা থেকে নির্গত মিলিমিটার ওয়েভ সমবেত হওয়া জনতার চামড়ার একেবারে উপরের স্তরকে উত্তপ্ত করে তুলবে। অত্যাধিক তাপমাত্রা সইতে না পেরে ব্যথার চোটে তখন তারা ছত্রভঙ্গ হওয়া শুরু করবে।

Active Denial System 2 এর সাহায্যেই এমনটি করা সম্ভব; Source: theweek.com

বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টারদের সেই ডিভাইসটি দেখানো হলো। তারা স্বেচ্ছায় এর জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজি হলেন। ৫০০ মিটার দূরে থেকে তাদের উপর সেই রশ্মি প্রয়োগ করা হলো। অত্যাধিক দূরত্ব এবং সেদিন হওয়া বৃষ্টির প্রভাবে যন্ত্রের কার্যকারিতা বেশ কমে গিয়েছিলো। ফলে রিপোর্টাররা ব্যথা তো পেলেনই না, উল্টো তারা এতে বেশ মজাই পেয়ে গেলেন! কেউ কেউ তো মজার চোটে বলে বসলেন, “আবার গুলি কর!” তবে সমস্যা বাধলো সামরিক বাহিনীতে পরীক্ষার সময়। একজন লোক এতটাই আহত হলো যে সাথে সাথে তাকে আকাশপথে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছিলো।

শেষ পর্যন্ত এই ডিভাইসগুলো আফগানিস্তানে ব্যবহারের জন্য নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেনা কর্মকর্তাদের নিজেদের মাঝেই এর ব্যবহার নিয়ে পরবর্তীতে জনগণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিলো। ফলে সেগুলো আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো।

৫. সান গান

আমাদের অনেকেই কৈশোরে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস নিয়ে আগ্রহবশত সৌররশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে দিয়াশলাই জ্বালিয়েছি। জ্বালানোর পর নিজেদের ভেতরে যে অন্যরকম এক আনন্দের অনুভূতি হয়েছিলো তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সৌররশ্মিকে এভাবে কেন্দ্রীভূত করে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনাও করা হয়েছিলো।

Source: io9.gizmodo.com

তখন পুরো বিশ্বে চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা। নিত্যনতুন কার্যকরী অস্ত্রের সন্ধানে রয়েছে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের সেনাবাহিনী। তখনই জার্মান রকেট বিজ্ঞানী হারম্যান ওবার্থ প্রস্তাব করলেন মহাকাশে বিশালাকৃতির আয়না পাঠানোর। সেই আয়না দিয়ে কোনো শহরে আলোকরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে বাড়িঘর, জনপদ জ্বালিয়ে দেয়ার পরিকল্পনাই ছিলো তার।

তবে শেষ পর্যন্ত ওবার্থের সেই ডিজাইনটি আর মহাশূন্যে যেতে পারে নি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিলো, ওবার্থের সেই অস্ত্রের সাহায্যে কোনো জায়গার তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বাড়লেও বাড়তে পারে। কিন্তু তা দিয়ে কোনো ক্ষত সৃষ্টি করা ভুলেও সম্ভব না।

ওবার্থের সেই প্রস্তাবনাটি আলোর মুখ না দেখলেও তিনি কিন্তু এরপরেও অনেকদিন ঠিকই কাজ করে যান। একসময় তিনি বলেছিলেন, পাঁচ হাজার বর্গ মিটারের আয়না দিয়ে হয়তো সেভাবে উত্তাপ সৃষ্টি করা সম্ভব না, কিন্তু দশ হাজার বর্গ মিটারের আয়না দিয়ে ভূ-পৃষ্ঠকে দুইশ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করা সম্ভব!

ফিচার ইমেজ- youtube.com

Related Articles