Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিশরীয় সভ্যতার অনন্য নিদর্শন গিজার গ্রেট পিরামিড

মিশর নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পিরামিডের ছবি। নীলনদের তীরে  সুপ্রাচীনকালে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতার অনেকগুলো অনন্য নিদর্শনের মধ্যে নিঃসন্দেহে পিরামিড সবচেয়ে বিস্ময়কর ও রহস্যময়। প্রায় ৫০০০ বছর ধরে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই পিরামিডকে ঘিরে। এমনকি আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও খুঁজে পাওয়া যায়নি পিরামিডের অনেক রহস্যের কূল কিনারা। তাই প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যের অন্যতম মিশরের পিরামিডের উপর সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি।

মরু প্রান্তরে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাক পিরামিড আজও মানবজাতির কাছে এক বিস্ময়ের নাম source: www.planetware.com
মরু প্রান্তরে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা পিরামিড আজও মানবজাতির কাছে এক বিস্ময়ের নাম; 
source: www.planetware.com

যে কারণে নির্মাণ করা হত পিরামিড

প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্ম বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল পরকালে বিশ্বাস। তারা বিশ্বাস করতেন মৃত্যু হল নশ্বর দেহ থেকে পরকালে আত্মার স্থানান্তর। সেখানেও একটি জগত রয়েছে। সেখানেও প্রয়োজন হবে ধন, দৌলত ও অন্যান্য জাগতিক বিষয়াদির। তাই রাজা ও রাণীদের মৃত্যুর পর মৃতদেহের সাথে সাথে দিয়ে দেওয়া হত সোনা, রূপা ও মূল্যবান রত্নাদি। তাঁদের দেহকে সংরক্ষণ করা হত মমি বানিয়ে এবং হত্যা করা হত তাঁদের দাস দাসীদের যাতে পরকালে সেবার অভাব না হয়। কিন্তু সমস্যা হল এই মমি ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী একটি নিরাপদ স্থানে না রাখলে চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। তাই পিরামড তৈরিরও আগে নির্মাণ করা হত ট্রপিজয়েড আকৃতির মাস্তাবা নামক সমাধি।

বেইত খালেফে অবস্থিত একটি মাস্তবা source: www.nemo.nu
বেইত খালেফে অবস্থিত একটি মাস্তবা; source: www.nemo.nu

কিন্তু প্রাচীনকালে রডের ব্যবহার ছিল না। সেকারণে এই মাস্তাবাগুলো বেশি উঁচু বানানো ছিল অসম্ভব। তাই কালক্রমে এই মাস্তাবাগুলোর পরিবর্তে স্টেপ পিরামিডের ডিজাইন গৃহীত হতে লাগল। এর পেছনের মূল কারণ পিরামিডের জ্যামিতিক গঠন। আমরা জানি কোন বিল্ডিং এর পুরো ওজন তার ভিত্তির উপর পড়ে। তাই উচ্চতা যত বেশি হবে ভিত্তি হতে হবে তত শক্ত। পিরামিডের ক্ষেত্রফল উচ্চতার সাথে সাথে হ্রাস পেতে থাকে। পিরামিডের ভিত্তির ক্ষেত্রফল উপরের স্তরগুলোর চেয়ে বেশি হওয়ায় এর উপর চাপও পড়ে কম এবং স্থাপনাটি শক্তিশালী হয়। তাই অনেক উঁচু সমাধি নির্মাণের একমাত্র রাস্তা ছিল পিরামিড শেপের ডিজাইন গ্রহণ করা।

প্রথম দিকের পিরামডগুলো ছিল অমসৃণ স্টেপ পিরামড যেগুলো মিশরের প্রথম তিনটি মহান রাজবংশের আমলে নির্মাণ হত। তবে চতুর্থ রাজবংশের সময় থেকে নির্মাণ করা শুরু হল প্রকৃত পিরামিড আকৃতির সমাধি। এছাড়া পিরামিডের উচ্চতা ক্রম হ্রাসমান হওয়ায় এর আরও একটি দার্শনিক তাৎপর্য ছিল। মনে করা হত পিরামিডগুলো যেন ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে পরজগতের পানে। পিরামিডের আর্কিটেক্টরা ছিলেন প্রাচীন মিশরীয় পুরোহিত যারা ইমহোটেপ নামে পরিচিত ছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় তাঁদের কাজ শুধু আধ্যাত্মিক জগতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিও ছিল পুরোহিত কেন্দ্রিক।

গিজার গ্রেট পিরামিড

মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত মৃত নগরী আল গিজা। এখানে দেখা পাওয়া যায় তিনটি বড় বড় পিরামিডের। এগুলো হল যথাক্রমে ফারাও খুফু, তাঁর ছেলে ফারাও খেফ্রে এবং খেফ্রের ছেলে মেনকাউরে এর পিরামিড। এঁরা সবাই ছিলেন মিশরের চতুর্থ রাজবংশের রাজা। তবে এই তিনটি তো বটেই মিশরের সবগুলো পিরামিডের মধ্যে ফারাও খুফুর পিরামিডটি হল সবচেয়ে উঁচু এবং আকারে সবচেয়ে বড়। একারণে ফারাও খুফুর পিরামিডটি গিজার গ্রেট পিরামিড নামেও বহুল পরিচিত। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ষড়বিংশ শতক থেকে, চতুদর্শ শতক পর্যন্ত প্রায় সুদীর্ঘ চার হাজার বছর এটিই ছিল মানব সৃষ্ট সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। তাই খুব সহজে অনুমেয় প্রযুক্তি ও প্রাচুর্যে প্রাচীনযুগে মিশরীয় সভ্যতা অন্য সভ্যতাগুলোর চেয়ে কত বেশি অগ্রসর ছিল।

গিজার গ্রেট পিরামিড source: travelingcanucks.com
গিজার গ্রেট পিরামিড; source: travelingcanucks.com

গিজার গ্রেট পিরামিডটি তৈরির সময়কাল ২৫৬০ থেকে ২৫৪০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ। প্রকৃত উচ্চতা ৪৮১ ফুট হলেও বর্তমান উচ্চতা ৪৫৫ ফুট। পিরামিডটির ভূমি বর্গাকৃতির এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয় দিকেই ৭৫৬ ফুট। পাথরের বড় বড় চাঁই দিয়ে বানানো এই স্থাপনাটি আসলে কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল সেটা আজও গবেষকদের কাছে এক বিস্ময়ের ব্যাপার। আরও অবাক করা বিষয়টি হল এর নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল ২৩ লক্ষ বড় বড় পাথরের চাঁইয়ের। একেকটি পাথরের চাঁইয়ের ভর ছিল গড়ে কমপক্ষে ২ টন থেকে ১৫ টন। এমনকি কিছু কিছু চাঁইয়ের ভর ৫০ টনেরও বেশি ছিল। চাঁইগুলোর বেশির ভাগই ছিল লাইম স্টোনের। গুণে মানে অনন্য এই লাইমস্টোনগুলো আনা হত তুরা অঞ্চল থেকে। নীল নদের পূর্ব তীর থেকে জলপথে নিয়ে আসা হত এগুলো।

কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল কালের পরিক্রমায় চুরি হয়ে গেছে অনেকগুলো লাইম স্টোনের চাঁই যার বেশির ভাগই পরবর্তী সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে কায়রো শহরের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানে। গিজার পিরামিডের ভেতরতে রয়েছে তিনটি কক্ষ। একটি বেইসমেন্টে। বাকি দুটি উপরে। উপরের কক্ষ দুটি ছিল যথাক্রমে রাণী ও রাজার সমাধি কক্ষ। এই কক্ষগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল গ্রানাইটের পাথর দিয়ে। প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূর থেকে নিয়া আসা হয়েছিল সেগুলো। পিরামিডের ভেতরে ঢোকার সরাসরি কোন পথ কোন পথ ছিলনা।

গিজার পিরমিডে পর্যটকদের ঢোকার পথ source: www.emaze.com
গিজার পিরমিডে পর্যটকদের ঢোকার পথ; source: www.emaze.com

তবে অনেকগুলো চোরাই পথ বানানো হয়েছে যুগে যুগে। এই পথগুলো দিকে ঢুকে গত পাঁচ সহস্রাব্দের বিভিন্ন সময় চুরি করে প্রায় শূন্য করে ফেলা হয়েছিল এক সময়ের ঐশ্বর্যমন্ডিত গিজার গ্রেট পিরামিড। তবে দর্শনার্থীদের জন্য এখন ভেতরে ঢোকার রাস্তা আছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা মিশরের পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিত্রায়িত পিরামিডটিও হল গিজার গ্রেট পিরামিড। তাই গিজার গ্রেট পিরামিডকে পিরামিডের সমার্থক বললেও ভুল হবেনা।

নির্মাণ কাল ও শ্রমিকসংখ্যা

গিজার গ্রেট পিরামিডটি নির্মাণ করতে ঠিক কতজন শ্রমিক লেগেছিল সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে জনসংখ্যা ও খাদ্য সরবরাহ পর্যালোচনা এবং ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রকে একত্রে করে মোটামুটি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান গেছে। ধারণা করা হয় প্রায় ৪০০০-৬০০০ পাথর খোদাইয়ে দক্ষ রাজমস্ত্রী একটানা প্রায়  বিশ বছর সময় ধরে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছিল। তবে নীলনদের দান প্রাচীন মিশর বছরে তিনমাস ডুবে থাকত পানির নিচে। অনুমান করা হয় এই সময়গুলোতে লক্ষাধিক কৃষকও তাদের সাথে যোগ দিত।

পিরামিড নির্মাণরত শ্রমিক source: geekstopten.com
পিরামিড নির্মাণরত শ্রমিক; source: geekstopten.com

এছাড়া দাস, যুদ্ধবন্দী ও অন্যান্য শ্রমিকরা তো ছিলই। শ্রমিক ও মিস্ত্রিদের খাবার বাবদ প্রতিদিন ২০০০০০ লক্ষ পিস রুটি ও ১০০০০০ পেয়াজের প্রয়োজন হত। পিরামিডের আসে পাশে ছিল শ্রমিকদের থাকার জায়গা। এই উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল কয়েকটি গ্রাম।

আজকের দিনে একটি পিরামিড তৈরি করতে তাহলে কত খরচ পড়ত?ভাবতেই অবাক লাগে গবেষকরা সেটিও হিসাব কষে দেখিয়েছেন। আজকের বাজার মূল্যে গিজার গ্রেট পিরামিডটি তৈরি করতে প্রায় ৫ বিলিওন ডলার ব্যয় করতে হত। কিন্তু মিশরের এই গ্রেট পিরামিডের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এতই বেশি যে নিছক কাগজের নোটে এর মূল্য হিসাব করা মূল্য নেহায়েত বোকামো।

 

 

This article is in Bengali Language. It is about The Great Pyramid of Giza which is a defining symbol of Egypt and the last of the ancient Seven Wonders of the World.

References:

1. http://traveltips.usatoday.com/able-enter-pyramids-egypt-106535.html

2. http://www.ancientnile.co.uk/pyramids.php

3. http://www.livescience.com/18589-cost-build-great-pyramid-today.html

4. http://www.nationalgeographic.com/pyramids/khufu.html

Featured Image: www.planetware.com

Related Articles