Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে গড়ে উঠলো আজকের হলিউড

কল্পনা করুন; ১৯০০ সালের শুরুর দিকে আপনি বাস করছেন বর্তমানের স্বপ্নের হলিউডে। সেই সময়ে বাস করা মাত্র শ’খানেক লোকের মাঝে একজন আপনি। পুরো হলিউড জুড়ে মোটে দুটি মাত্র মার্কেট। কিছু কিনতে হলে এই দুই মার্কেটের বাইরে দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগও নেই। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে একটি পোস্ট অফিস ও একটি হোটেল। তা-ও যেটি কি না সেই সময়ে নির্মাণাধীন। এই হলিউডে কি আপনি থাকতে চাইবেন? কিন্তু সত্যি কথা হলো, প্রায় একশ বছর আগে হলিউডের অবস্থা এরকম শোচনীয়ই ছিলো। সেখান থেকে মাত্র দুই দশকের মধ্যে গড়ে ওঠে আজকের আধুনিক হলিউড। আজ আমরা জানবো কীভাবে গড়ে উঠলো এই আধুনিক হলিউড; এই সম্পর্কে।

সেই সময়ে হলিউডের কাছাকাছি আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো লস অ্যাঞ্জেলসে। সাত মাইলের একটি রাস্তা এবং বিশালাকার কমলার বাগান এই দুটি স্থানকে আলাদা করে রেখেছিলো। কিন্তু মাত্র দুই দশকের মধ্যেই হলিউডও লস অ্যাঞ্জেলসের মতো হয়ে ওঠে আরাধ্য জায়গা এবং সিনেমা জগতের আঁতুড়ঘর।

হলিউডের প্রথম হোটেল; Image Source : Vintage news

হলিউডের এই আচমকা উন্নতি পেছনে দুটি ফ্যাক্টর কাজ করেছিলো। প্রথমত, চলচ্চিত্রশিল্পের কলাকুশলীদের পশ্চিমে তাবু গাড়ার ইচ্ছা, এবং দ্বিতীয়ত, অবকাঠামগত অবস্থা। প্রথম স্থাপত্যশৈলী হিসেবে হলিউডে তৈরি হয় নির্মাণাধীন সেই হোটেলটি। সম্পূর্ণ কাঠের প্রাসাদের মতো হোটেলটি চালু হয় ১৯০২ সাল থেকে। এর ঠিক দুই বছর পর যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিবর্তন ঘটে। ১৯০৪ সালে যোগাযোগের সুবিধার্থে তৈরি করা হয় প্রস্পেক্ট এভিনিউ, যেটি পরে পরিবর্তিত হলিউডে বুলভার্ড নামে পরিচিতি লাভ করে।

হলিউড বুলভার্ড; Image Source : Vintage news

ততদিনে সিনেমা তৈরির কলাকুশলীরা হলিউডের উপর আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। পূর্ব থেকে সরে এসে পশ্চিমের হলিউডে তাবু গাড়া শুরু করেন অনেকেই। এর প্রধান কারণ ছিলো তৎকালীন সময়ে অন্যান্য জায়গার তুলনায় হলিউডে কর ছিলো খুবই সামান্য। পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং বাসস্থানের জন্যও যথার্থ ছিলো জায়গাটি।

১৯১০ সালে ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ তার মুভি ‘ইন ওল্ড ক্যালিফোর্নিয়া’র সেট ঠিক করেন হলিউডে। এটিই হলিউডে বানানো সর্বপ্রথম সিনেমা। এর ৪ বছর পর সেসিল বি ডেমাইল তাঁর মুভি তৈরির যাত্রা শুরু করেন হলিউডেই; দ্য স্কোয়াও ম্যান মুভি দিয়ে। হলিউডে প্রবেশের আগে সিনেমা তৈরির প্রধান স্থান ছিলো নিউ জার্সি। কিন্তু সেই সময় থমাস এডিসন মোশন পিকচার থেকেই প্রযোজনা করা হতো সিংহভাগ ছবি। অনেকটা মনোপলি ব্যবসা ছিলো তাদের। এই প্রযোজনা সংস্থার কড়াকড়ি নিয়মে স্বস্তি পেতেন না পরিচালকেরা। তাই সিনেমা স্টুডিও ও চলচ্চিত্র নির্মাতারাও আস্তে আস্তে নিউ জার্সি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। পাড়ি জমান হলিউডে। ধীরে ধীরে হলিউড হয়ে ওঠে আধুনিক আমেরিকান সিনেমা তৈরির আঁতুড়ঘর।

নেস্টর স্টুডিও, হলিউডের প্রথম স্টুডিও; Image Source : Vintage news

হলিউড হয়ে ওঠে অভিনয় জগতে প্রবেশ করা আনকোরা অভিনেতা কিংবা হলিউডে অভিনয়ের স্বপ্নে বিভোর মানুষদের আরাধ্য জায়গা। ভাগ্যকে পুঁজি করে খ্যাতির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকেই তখন হলিউডকেই পাখির চোখ করেছেন। এর পাশাপাশি ছোট ছোট মুভি প্রযোজনা সংস্থাও মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠতে শুরু করে। প্রথম প্রথম অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলেও ধীরে ধীরে এই ছোট স্টুডিওগুলোও বিখ্যাত হয়ে যায়। হলিউডের প্রথম স্টুডিও ছিলো নেস্টর স্টুডিও। এটি তৈরি করা হয় ১৯১২ সালে। তবে সর্বপ্রথম মোশন পিকচার স্টুডিও পেতে হলিউডের অপেক্ষা করতে হয় ১৯১৯ সাল পর্যন্ত। চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড হর্সলি সর্বপ্রথম মোশন পিকচার স্টুডিও তৈরি করেন এডিনডেলে, যেটি হলিউডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। স্টুডিওটি তৈরি করতে সাহায্য করে সেলিগ পলিস্কোপ কোম্পানি। উল্লেখ্য, বিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনও ১৯১৭ সালে হলিউডে একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।

সেসিল বি ডিমাইল; Image Source : Vintage news

কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও একটি সমস্যা ছিলো প্রকট। তা হলো পানির সমস্যা। পানির স্বল্পতার জন্য হলিউডের স্থানীয় লোকজন চেয়েছিলো হলিউড যাতে লস অ্যাঞ্জেলস অঙ্গরাজ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। এমনকি লস অ্যাঞ্জেলস একটা সময়ে ১,০০,০০০ লোককে জায়গা দিয়েছিলো এই সমস্যা লাঘবের জন্য।

১৯০৬ এর দিকে শহরের লোকজন পানির ব্যবস্থার জন্য পুরো হলিউড জুড়ে নালা খননের জন্য আবেদন করে। কাজটি শুরু হতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত আটকে যায়। ফারটাইলস ওয়েন ভ্যালি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ছিলো এই কাজটি করার। কিন্তু কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া সেই সময়ে এমনিতেই পানি সরবরাহ করার অনুমতি ছিলো না। ফারটাইলস ওয়েন ভ্যালি প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত ছিলো। তাই বিশেষ বিবেচনায় হলিউডের কৃষকদের জন্য পানির সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এই কাজটি আটকে দেন উইলিয়াম মুলহল্যান্ড।

উইলিয়াম মুলহল্যান্ড ছিলেন একজন ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার, যার কাজ ছিলো বৃহত্তর লস এঞ্জেলসে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা। এই নিয়ে কৃষকদের সাথে দ্বন্দ্ব লেগে যায় মুলহল্যান্ডের। শেষ পর্যন্ত এটি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আইনি লড়াই তোলা হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। কিন্তু শেষমেশ রায় দেওয়া হয় লস অ্যাঞ্জেলসের পক্ষে। তারপরে শুরু হয় খনন কাজ।

হলিউডের জায়গা বিক্রয় নিয়ে বিজ্ঞাপন; Image Source : Vintage news

পুরো প্রজেক্টটি ছিলো বিশালাকার। এই মাইলের পর মাইল বিশাল লম্বা খনন কাজের জন্য নিয়োজিত করা হয় অনেক শ্রমিককে। ১৯০৭ সাল থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর কাজ করার পর পুরো হলিউডে পানির সুব্যবস্থা চালু হয়। তবে মাঝে মুলহল্যান্ডের সাথে বার বার আইনি ঝামেলায় না জড়ালে কাজটি আরো আগেই হয়তো সম্পন্ন হতো। যদিও ১৯২৪ সালে ডিনামাইট ব্যবহার করে পানির লাইনটি নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলো অপর পক্ষ। ১৯২০ সালের মাঝামাঝিতেই সব সমস্যা মিটে গিয়ে হলিউড চলতে শুরু করে সগৌরবে।

চলচ্চিত্রের নোবেল খ্যাত অস্কার অনুষ্ঠানটিও সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় হলিউডে। সেই সময়ে হলিউড বুলভার্ডে নির্মিত হয় হলিউড রুজভেল্ট হোটেলটি। সেই হোটেলের ব্লসম রুমে ১৯২৯ সালের ১৬ মে বিজয়ীদের মাঝে প্রথমবারের মতো প্রদান করা হয় অস্কারের সোনালি মূর্তিটি।

নির্বাক মুভি যুগের পরপরই হলিউডে মুভি রেনেসাঁ শুরু হয়। বিশেষ করে ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। সেই সময় হলিউডের স্টুডিওগুলো মুভির শো-গুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। তৎকালীন সময় পাঁচটি বড় স্টুডিওর তত্ত্বাবধানেই ছিলো বেশিরভাগ থিয়েটারগুলো। সেই পাঁচটি স্টুডিও গুলো হচ্ছে প্যারামাউন্ট, আরকেও, টোয়েন্টি সেঞ্চুরি ফক্স, মেট্রো গোল্ডেন মেয়ার ও ওয়ার্নার ব্রাদার্স। কিন্তু ১৯৪৮ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট একটি নিয়ম জারি করে। সেই নিয়মানুযায়ী স্টুডিওগুলোর অধীনে কোনো থিয়েটার থাকবে না। এই ঘোষণার পরেই বলা যায় হলিউডের সোনালি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে।

তৎকালীন সময়ের হলিউড; Image Source : Vintage news

নামীদামী হোটেল কিংবা বার, বিশাল ব্যয়বহুল মুভি সেটে আজ পরিপূর্ণ হলিউড। ১৯২০ এর দশকের পরের ২০ বছর অবকাঠামোগতভাবে হলিউড এগিয়েছে তরতর করে, যা অন্যান্য এলাকার জন্য দৃষ্টান্তস্বরুপ। সেই বুলভার্ড অফ হলিউডের দুই পাশে এখন বড় বড় পাম গাছ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানায় প্রত্যেক আগন্তুককে; যাদের চোখে মুখে রয়েছে স্বপ্ন।

প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪০ মিলিয়ন আমেরিকান নাগরিক ছুটে যায় হলিউডের থিয়েটারগুলোতে। সেই জরাজীর্ণ হলিউড আজ স্বপ্নের আঁতুড়ঘর।

Feature Image : Cosmopolitan.com

Description : This article is about how the modern Hollywood established.

References : References are hyperlinked in the article.

Related Articles