Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সার্জেন্ট স্টাবি: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পদক পাওয়া কুকুর

১৯১৭ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে একটি ছোট্ট কুকুরছানা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে প্রাইভেট রবার্ট জুনিয়র কনরয় সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তিনি একসময় এই ছোট্ট কুকুরছানাটিকে দেখতে পান। কুকুরছানাটি এমনিতেই ছিল আকারে ছোট, তার উপর তার লেজটি তুলনামূলকভাবে আরো ছোট। এটা দেখে কনরয় বাচ্চা কুকুরটির নাম দেন স্টাবি।

তারপর তিনি স্টাবিকে নিজের ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। যদিও ক্যাম্পে যেকোনো প্রকার পোষাপ্রাণী রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল তবুও স্টাবিকে দেখে এবং তার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে সবাই তাকে নিজেদের সাথে রাখার মত প্রকাশ করে। সেনাদের সাথে বসবাস শুরু করার পাশাপাশি চতুর স্টাবি নিজেও বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নেয়াও শুরু করেছিলো। প্রথমে নিজের পায়ের থাবা উঠিয়ে স্যালুট করা শিখেছিলো সে। বাগল কল এবং সেনাদের মার্চিং রুটিনের সাথেও সে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। স্টাবির দ্রুত সবকিছু শিখে নেয়া এবং যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার গুণ দেখে ক্যাম্পের সেনা সদস্যেরা নিশ্চিত ছিল যে, স্টাবিকে যুদ্ধ ময়দানে নিয়ে গেলেও সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। তাই কমান্ডিং অফিসারের নজর এড়িয়েই স্টাবি বেশ বহাল তবিয়তেই সেনাদের সাথে বসবাস করছিলো। পরে স্টাবি ১০২তম ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়ন এর একপ্রকার মাস্কটে পরিণত হয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে পোষাপ্রাণী আনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কনরয় প্রচলিত কিছু বিধিনিষেধ ভেঙ্গে স্টাবিকে লুকিয়ে জাহাজে তোলেন। জাহাজে উঠিয়ে তিনি স্টাবিকে একটি কয়লার পাত্রে লুকিয়ে রাখেন। জাহাজ যখন সাগরে প্রবেশ করে তখন তিনি স্টাবিকে বের করেন। উপস্থিত পরিচিত সেনারা স্টাবিকে দেখে বেশ খুশি হয়। অপরিচিতরা তৎক্ষণাৎ তাকে আপন করে নেয়। কিন্তু সেখানকার কমান্ডিং অফিসার স্টাবিকে আবিষ্কার করার পর মোটেও খুশি হতে পারেননি। চতুর স্টাবি হয়তো কমান্ডিং অফিসারের চেহারা ও ভাবভঙ্গী দেখে বিপদের আঁচ পেয়েছিল। তাই সে তখনই তার সামনের পা তুলে একটি স্যালুট দিয়ে দিলো! একটি কুকুরের কাছ থেকে এমন স্যালুট পেয়ে কমান্ডিং অফিসারটা যারপরনাই অবাক এবং অভিভূত হয়েছিলেন। ফলে তিনিও স্টাবিকে সঙ্গে রাখার অনুমিত দিয়ে দেন সাথেসাথেই।

সার্জেন্ট স্টাবি; Source: stubbysdogwash.com

১৯১৮ সালের ৫ মে, ১০২তম ব্যাটেলিয়ন ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়। সেনারা যুদ্ধে নেমে পড়ে এবং স্টাবি তাদের সাথে থেকে যুদ্ধের গোলাগুলির আওয়াজ এবং বিস্ফোরণের সাথে পরিচিত হতে থাকে এবং নিজেকে দ্রুত মানিয়েও নেয়। এরই মাঝে স্টাবি তার প্রথম আঘাতটা পায়। বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করার ফলে তাকে তার অন্যান্য দোপেয়ে সেনাসাথীদের সাথে হাসপাতলে ভর্তি হতে হয়। সে দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠে এবং বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণের ফলে সে এরপর থেকে যেকোনো সন্দেহমূলক গ্যাসের গন্ধে সংবেদনশীল হয়ে উঠে। তার এই গন্ধে সংবেদনশীলতাই পরবর্তীতে বেশ উপকারে আসে। কারণ কিছুদিন পরেই এক ভোরবেলায় যখন নিজেদের পরিখায় অধিকাংশ সেনারা ঘুমে, তখন জার্মানি বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে আক্রমণ করে। স্টাবি সন্দেহজনক গ্যাসের গন্ধটি দ্রুত বুঝতে পারে এবং উচ্চস্বরে ঘেউ ঘেউ শুরু করে। সে ঘুমন্ত সেনাদের জামা এবং জুতো কামড়ে ধরে টানাটানি শুরু করে। এতে অধিকাংশ সেনারাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে এবং তারা বিষাক্ত গ্যাসের ব্যাপারটি বুঝতে পারে ও সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়।

গ্যাস মাস্ক পরা অবস্থায়; Source: slate.com

স্টাবির নাকই যে শুধু সেনাদের কাজে এসেছে তা কিন্তু নয়। স্টাবি তার কান দিয়েও অনেক সাহায্য করেছে। স্টাবি শত্রুদের তৈরি পরিখা নিজে নিজেই পার হতে পারতো এবং আহত মিত্র সেনাদের খুঁজে বের করতে পারতো। তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যার কারণে সে আমেরিকান এবং জার্মান সেনাদের এবং তাদের ভাষা আলাদা করে চিনতে ও বুঝতে পারতো। যার ফলে স্টাবি ইংরেজি ভাষায় চিৎকার করা আহত সেনাদের খুঁজে বের করে সেখানে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতো যতক্ষণ না কোনো প্যারামেডিক আসতো। এমনকি স্টাবি আগত কামানের গোলার শব্দও যেকোনো মানুষের আগেই শুনতে পেতো। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে ঘ্যানঘ্যান করা শুরু করতো এবং আশেপাশের সেনারা সেই কামানের গোলার ব্যাপারে আগেই সতর্ক হয়ে যেতে পারতো।

নিজের কোট গায়ে স্টাবি; Source: ct.gov

এমনকি একবার স্টাবি এক জার্মান গুপ্তচরও ধরেছিল। একদিন স্টাবি একটি ঝোপের ভেতরে কিছু শব্দ শুনতে পায় এবং সেটা যাচাই করতে এগিয়ে যায়। সেই ঝোপে লুকিয়ে ছিল একজন জার্মান গুপ্তচর। গুপ্তচরটি আমেরিকান সেনাদের তৈরি পরিখাগুলো যাচাই করছিলো এবং চিত্র এঁকে নিচ্ছিলো। স্টাবি সেই ঝোপের ভেতরে এগিয়ে গেলে গুপ্তচরটি স্টাবিকে দেখতে পায় এবং জার্মান ভাষায় তাকে ডাক দেয়। স্টাবি সাথে সাথে বুঝতে পারে এটা শত্রুদের ভাষা। ফলে সে দ্রুত ছুটে যায় গুপ্তচরটির দিকে এবং আক্রমণ করে।

গুপ্তচরটি পড়িমরি করে দৌড় দেয়, কিন্তু স্টাবিও তাকে ধাওয়া করতে শুরু করে। স্টাবি তাকে দৌড়ে ধরে ফেলে এবং তার পা কামড়ে ধরে। গুপ্তচরটি মাটিতে পড়ে যায় এবং স্টাবি তার হাত কামড়াতে শুরু করে দেয়। আমেরিকান সৈন্যরা না আসা পর্যন্ত এভাবে স্টাবি তাকে সেই জায়গাতেই আটকে ধরে রাখে। একসময় সেনারা আসে এবং গুপ্তচরটি ধরা পড়ে। এই ঘটনার পর স্টাবির পদোন্নতি হয় এবং তাকে সার্জেন্ট উপাধি দেয়া হয়। স্টাবিই ছিল আমেরিকার প্রথম কুকুর যে সার্জেন্ট হিসেবে পদমর্যাদা পেয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, সে তার মালিক অর্থাৎ কনরয়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল পদমর্যাদায়।

যুদ্ধ থেকে স্টাবি যে বহালতবিয়তেই ফেরত এসেছে তা কিন্তু নয়। সেই বিষাক্ত গ্যাস ঘটনার পাশাপাশি সে একবার তার বুক এবং পায়ে শার্পনেলের আঘাতও পেয়েছিলো। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পুনরায় পরিপূর্ণ সুস্থ্ হয়ে উঠে সে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সে মাঝে মাঝে অন্যান্য আহত সেনাদের কাছেও যেতো এবং সেনারা তার সান্নিধ্য বেশ উপভোগও করতো।

সামরিক প্যারেড স্টাবি; Source: slate.com

সেই যুদ্ধে স্টাবি মোট ১৭ বার অংশগ্রহণ করেছিলো। যুদ্ধ শেষে তাকে আবারও লুকিয়ে জাহাজে করে ফেরত আনতে হয়েছিল। কারণ জাহাজে কুকুর নেয়ার অনুমতি ছিল না। আমেরিকায় পদার্পণের পর স্টাবি রীতিমত তারকায় পরিণত হয়। আর হবেই বা না কেন; সে বিশ্বস্ততার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং অনেক সেনার জীবন বাঁচিয়েছে, যার ফলে প্রচুর পদকও পেয়েছে সে। স্টাবি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের সাথে সাক্ষাৎ করেছে, দুইবার হোয়াইট হাউজ ভ্রমণ করেছে এবং কয়েকবার সামরিক প্যারেডে অংশও নিয়েছে।

তার কিছুদিন পর স্টাবি এবং কনরয় জর্জটাউনে বসবাস করা শুরু করে। কনরয় আইন পড়া শুরু করেন এবং স্টাবিকে জর্জটাউন ফুটবল দলের মাস্কট বানানো হয়। ফুটবল খেলার অর্ধসময়ের বিরতিতে স্টাবি মাঝে মাঝে মাঠে প্রবেশ করতো এবং মাঠে রাখা ফুটবলের সাথে খেলা করে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দিতো।

১৯২৬ সালে ৯/১০ বছর বয়সে স্টাবি মারা যায়। মৃত্যুর পর তার দেহ স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটে দান করা হয়। সেখানে তার অর্জিত পদকগুলোসহ তার দেহ সংরক্ষণ করে রাখা আছে।

অর্জিত পদকসহ স্টাবি; Source: ripleys.com

স্টাবি যে পদকগুলো পেয়েছিলো তা হলো,

  • তিনটি সার্ভিস স্ট্রাইপ
  • ইয়াংকি ডিভিশন YD প্যাচ
  • ফ্রেঞ্চ মেডেল
  • ফার্স্ট এনুয়াল আমেরিকান লিজিওন কনভেনশন মেডেল
  • নিউ হেভেন WW1 ভেটেরানস মেডেল
  • রিপাবলিক অব ফ্রান্স গ্রান্দে ওয়ার মেডেল
  • সেইন্ট মিহিয়েল ক্যাম্পেইন মেডেল
  • পার্পল হার্ট
  • চেতিয়াউ থিয়েরি ক্যাম্পেইন মেডেল

ফিচার ইমেজ: argunners.com

Related Articles