৩০শে মার্চ, ১৯৭১। ভোরবেলার হালকা আলোয় ঘুমন্ত কুষ্টিয়া শহর পরিষ্কার হয়ে ওঠছে। মাত্র ৫ দিন আগেই এখানে এসে হাজির হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। কুষ্টিয়া জেলা স্কুল পাকিস্তানিদের প্রধান ঘাঁটি। ২৭তম বেলুচ রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি পজিশন নিয়েছে। নিশ্চিত তারা। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন পায়ে দলিয়ে ফেলতে পেরেছে। পিষে ফেলতে পেরেছে বাঙালিদের।
ঘাঁটির নিরাপত্তায় সারা রাত জেগে পাহারা দেয় পাক সৈন্যরা। ভোর হতে হতে তন্দ্রাভাব চলে আসে। সারা রাত ডিউটি করে ঝিমুনি ধরা ঘোরে শত্ররা ঘুমাতে যাবার কথা ভাবছিল। হঠাৎ করেই ঝিমুনি কেটে গেল। আকাশ কাঁপিয়ে হাজার খানেক কণ্ঠে গগনবিদারী স্লোগান হচ্ছে! ‘জয় বাংলা!’ মশকরা হচ্ছে তাদের সাথে? এসব ভাবতে ভাবতেই ঝাঁক ঝাঁক বুলেট ছুটে আসছে পাক বাহিনীর অবস্থানের দিকে। হাজার হাজার কণ্ঠের জয় বাংলা ধ্বনিতে রক্ত হিম হয়ে আসছে পাকসেনাদের। এই দুই শব্দে কী যে ভয় তাদের! মুক্তিবাহিনীরা আসলে কতজন? পেছনের গল্প শুনে আসা যাক।
বাংলাদেশকে পদানত করতে পাকিস্তানের করা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে ২৫শে মার্চ রাত থেকেই। সেদিন রাতেই যশোর সেনানিবাস থেকে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের একটা ব্যাটালিয়ন এসে হাজির হয় কুষ্টিয়ায়। যশোর থেকেই খুলনা অঞ্চলে সমন্বয় করা হতো।
২৭ বেলুচ রেজিমেন্ট ১৭৯৮ সালে ব্রিটিশরা প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭১ সাল নাগাদ এই ইউনিটের বয়স ছিল ১৭৩ বছর। অত্যন্ত দক্ষদের বাছাই করে এই ইউনিটে পাঠানো হতো। ১৭৩ বছরের অভিজ্ঞতায় ৩৫টির বেশি যুদ্ধে অংশ নেয়ার রেকর্ড ছিল বেলুচ রেজিমেন্টের। আর এসব কারণেই নিজেদের গর্ব করে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বাহিনী দাবি করত পাকিস্তান।
২৫ মার্চ ইতিপূর্বে থাকা কিছু সেনা এবং রাজাকারদের নিয়ে বেলুচ রেজিমেন্টের ডেল্টা কোম্পানি কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। ডিউটিরত পুলিশেরা আদিম যুগের অস্ত্র দিয়ে তেমন প্রতিরোধ না গড়তে পেরে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে নদী পার হয়ে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা ৪টি জায়গায় ঘাঁটি করে; পুলিশ লাইন, জেলা স্কুল, টেলিগ্রাফ অফিস, থানা ও আড়ুয়াপাড়া ওয়ারলেস অফিস।
পাকবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে মেজর শোয়েব। উপ-অধিনায়ক হিসেবে ছিল ক্যাপ্টেন শাকিল, ক্যাপ্টেন সামাদ ও লে. আতাউল্লাহ শাহ। ২৭ বেলুচ মূলত ছিল একটি ‘Special Support and Reconnaissance unit’. এদের কাজ যুদ্ধক্ষেত্রে সবার আগে পৌঁছানো, অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং মূল তথা বড় বাহিনী না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। পরে ফিরে আসা বা প্রয়োজনে মূল দলকে সহায়তা করা। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের দলে অস্ত্র থাকে প্রচুর। শত্রুর দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা গুলি চালিয়ে যাবার মতো গোলাবারুদ নিয়ে আসে এরকম দল।
যুদ্ধের প্রস্তুতি
এদিকে ২৫ মার্চ ইপিআর ৪নং উইংয়ের কমান্ডার ছিলেন বাঙালি মেজর আবু ওসমান চৌধুরী। তাকে সামরিক সলাপরামর্শের জন্য যশোর ‘মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ ডেকে পাঠান কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে। কর্তব্যের খাতিরে তাকে যেতে হয়েছিল। এজন্য তিনি সস্ত্রীক সেই রাতে কুষ্টিয়া অবস্থান করছিলেন।
কিন্তু বিকালবেলা অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি পাকিস্তানিদের জাল ছিঁড়ে তিনি চলে যান চুয়াডাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গাতে তখনো পা ফেলতে পারেনি পাকিস্তানি সেনারা।
এলাকার গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে আলোচনায় বসা হলো। পাক বাহিনীকে সর্বাত্মক বাঁধা দিতে হবে। সবমিলে ৬০০ জন সৈনিক, ব্রিটিশ আমলের থ্রি নট থ্রি রাইফেল, কয়েকটা মেশিনগান, গ্রেনেড আর ৬টা মর্টার- অস্ত্র বলতে এগুলোই।
স্থানীয় পুলিশ এবং কয়েকজন ছাত্র দলে ভিড়ল। স্থানীয় ২ জন চিকিৎসক নিলেন মেডিক্যাল টিমের দায়িত্ব। অস্ত্র কম তাতে কি? দেশপ্রেমের তো অভাব নেই। যে যেভাবে পেরেছে এগিয়ে এসেছে। স্থানীয় টেলিফোন বিভাগ পোড়াদহ মাঠে একটা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে দিল। অন্যান্য যোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হলো। আশেপাশের এলাকা থেকে আরো কিছু সেনা এসে যোগ দিল। মেহেরপুর মহকুমার প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সিপাহী জনতার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব নেন।
মেজর আবু ওসমান এবার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে বসেন। অস্ত্রের জোরে তার দলটি তেমন কিছুই না। নিমেষেই উড়ে যেতে পারে। তাই পাক বাহিনীকে হারাতে হবে অন্য কৌশলে।
আক্রমণ শুরুর সাথে সাথেই যশোরে সাহায্য চাইতে পারে পাক বাহিনী। হাইওয়েতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সেনা সড়ক পাহারা দেবে। এ দিক থেকে নতুন করে যেন পাক সাহায্য আসতে না পারে সেটা নিশ্চিত করবে তারা।
কুষ্টিয়া থেকে মনযোগ সরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর আক্রমণ করতে পারে পাক বাহিনী। এধরণের আক্রমণকে ‘diversionary attack’ বলা হয়। বিশখালি, কালীগঞ্জ, কোঁটাচাঁদপুরে সবমিলে ৪ কোম্পানি সেনা প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত করা হয়। উদ্দেশ্য যশোর বা অন্য কোনো দিক থেকে আক্রমণ আসলে যেন কুষ্টিয়া আক্রমণ না থামে।
ক্যাপ্টেন আযম তার দল নিয়ে যাবে সার্কিট হাউজের কাছাকাছি। সেখান থেকে জিলা স্কুলের মূল ঘাঁটিতে হামলা হবে। সুবেদার মুজাফফরের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ লাইনে আক্রমণ করবে। সুবেদার নায়েক মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ওয়্যারলেস স্টেশনে হানা দেবে আরেকটি দল।
পুরো সময়টাতেই ‘Element of surprise’ এর দিকে জোর দেন মেজর। সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে চমকে দিতে হবে পাক বাহিনীকে। কিন্তু এদিক ওদিকে প্রতিরক্ষার জন্য সেনা রেখে ফ্রন্ট লাইনে সেনা সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় খুবই কম। অস্ত্রও নগণ্য। এই সমস্যার কথা ভেবে আগেই মেজর ওসমান দুর্দান্ত এক পরিকল্পনা করেছিলেন। অগ্রগামী ৩ দলের পেছনে থাকবে কয়েক শত সাধারণ জনতা। যাদের কাজ একটাই, জয় বাংলা ধ্বনি তুলে শত্রুকে বিভ্রান্ত করা। অপারশনের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ফার্স্ট লেগ’।
২৯শে মার্চ আক্রমণ করার কথা থাকলেও দুঃসংবাদ পাওয়া গেল। সুবেদার মুজাফফরের দল জায়গামতো পৌঁছাতে পারেনি। তার দলের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। আক্রমণ একদিন পিছিয়ে যায়।
চূড়ান্ত যুদ্ধ
৩০শে মার্চ সকাল বেলা। সারা রাত পাহারা দিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন পাক গার্ডরা। হঠাৎ তাদের সবগুলো পজিশনে একসাথে হামলা শুরু। Element of surprise-এ মুক্তিবাহিনী আগেই এগিয়ে গেল যুদ্ধে। তারপর মেজর ওসমান তার মূল অস্ত্র ব্যাবহার করার নির্দেশ দিলেন। আকাশ কাঁপানো স্লোগান! জয় বাংলা! পাক সেনারা ধন্দে পড়ে যায় যে মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা আসলে কত? যে সময়টায় তারা কোনো আক্রমণই আশা করেনি সে সময় এমন আক্রমণে চমকে যায় তারা।
এলিমেন্ট অব সারপ্রাইজের পর এবার মেজর ওসমান Deception-এর মারপ্যাঁচে জিতে যান। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে ধোঁকা দিতে পারা সাফল্যের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায়। পাক সেনারা জেলা স্কুলের মূল ঘাঁটিতে এক হতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রচেষ্টা বিফলে যায়। বিভ্রান্ত সেনারা দ্রুতই মুক্তিবাহিনীর শিকারে পরিণত হয়। পুলিশ লাইনের পাশের একটা তিন তলা বাড়ির ছাদে মেশিনগান স্থাপন করেছিল মুক্তিবাহিনী। এই পজিশন গুড়িয়ে দিতে পাক বাহিনী একটা রিকয়েললেস রাইফেল স্থাপন করার চেষ্টা করে। সেটা চোখে পড়তেই কয়েকটি মর্টার নিক্ষেপ করে রিকয়েললেস রাইফেলকে অকেজো করে ফেলে মুক্তিবাহিনী।
পাকিস্তানি বাহিনী এক্সচেঞ্জ ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে মেশিনগান ফায়ার করতে থাকে। এ সময় দুঃসাহসী এক ঘটনা ঘটে যায়।
হঠাৎ ১৩-১৪ বছরের এক দুর্র্ধর্ষ তরুণ কোথা থেকে এসে যেন উদয় হয়। টেলিফোন এক্সচেঞ্জের পেছনের পাইপ বেয়ে ঐ বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী যে জানালার ফাঁক গলিয়ে মেশিনগানের গুলি চালাচ্ছিল, দুরন্ত সেই ছেলেটি অন্য একটি পাইপ বেয়ে সেই জানালার কাছে পৌঁছে যায়। তারপর ক্ষিপ্র হাতে নিজের গায়ের জামা খুলে পাক সেনাদের মেশিনগানের নলের উপরে ফেলে দিয়ে অতি দ্রুত দিয়াশলাই থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাটি এক নিমেষের। বারুদের সংস্পর্শে এসে সে আগুন মুহূর্তে সারা এক্সচেঞ্জ ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণভয়ে পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত এক্সচেঞ্জ ভবন ছেড়ে পালিয়ে যায় জেলা স্কুলের মূল ঘাঁটিতে।
বিকেলের আগেই জিলা স্কুল ছাড়া সব পজিশন মুক্তিবাহিনী দখল করে নেয়। পর দিন রাত পর্যন্ত থেমে থেমে যুদ্ধ চলে। কিন্তু ওই ঘাঁটির বেশি কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। প্রচুর অস্ত্রের জোরে মুক্তিবাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখছে পাক বাহিনী। মেজর শোয়েবও সেখানে। এরই মধ্যে যশোরে আবার সাহায্য চায় তারা। কিন্তু যশোরে থাকা পাকবাহিনী জানত যে কুষ্টিয়া আসার সব রাস্তায় মুক্তিবাহিনী পাহারা দিচ্ছে। তাই তারা ঝুঁকি নিতে সাহস করেনি। মুক্তিবাহিনীর ওপর বিমান হামলার অনুরোধ করতে থাকেন মেজর শোয়েব। মেজর শোয়েবকে জানানো হয় নতুন করে সাহায্য পাঠানো সম্ভব নয়। পাক বাহিনীর বার্তাটি ছিল ‘No reinforcement possible. Air strike called off due to poor visibility. Try to live on your own’ মুক্তিবাহিনীর ওয়্যারলেসেও এই বার্তা ইন্টারসেপ্ট হয়। উৎসাহ বেড়ে যায় সবার।
অস্ত্রের জোরে ঘাঁটির কাছাকাছি ভিড়তে না পারলেও চারদিক থেকে ঘেরাও করে রাখা হয় মেজর শোয়েবের বাহিনীকে। এবার কৌশলে পরিবর্তন আনেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মেজর ওসমান আশেপাশের সব খড় নিয়ে আসতে বলেন। সাধারণ মানুষ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খড় নিয়ে আসে। পাক ঘাঁটির আশেপাশে খড়গুলো ফেলে কেরোসিন ঢেলে রাখার নির্দেশ নেন মেজর। রাত ৮টায় খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ধোঁয়াতে ঢাকতে শুরু করে পাক ঘাঁটি।
গভীর রাত, ঘাঁটি থেকে ৪টি গাড়ি বের হয়ে আসে। গুলি করতে করতে মুক্তিবাহিনীর ঘেরাও ভেঙ্গে ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যায়। পিছু ধাওয়া করার প্রয়োজন মনে করে না কেউই।
কিছু দূরেই একটা ব্রিজ ভেঙ্গে রেখেছিল গেরিলারা। বাঁশের বেড়া বসিয়ে তার উপর রং করে পিচ ঢালা রাস্তার মতো বানিয়ে রাখা হয়েছিল। দুটো গাড়ি তীব্র গতিতে এসে ব্রিজের নিচে পড়ে যায়। লুকিয়ে থাকা একদল মুক্তিযোদ্ধা অ্যামবুশ করে। বেঁচে যাওয়া পাকসেনারা এদিক সেদিক পালিয়ে যায়। মেজর শোয়েব নিহত হয়।
সবমিলে পাক বাহিনীর একটা কোম্পানি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। নিহত হয় ১৫০-২৫০ শত্রু। ধরা পড়ে এক অফিসার এবং কয়েকজন সেনা। প্রচুর অস্ত্র দখলে আসে। মুক্তিবাহিনীর ৪ জন শহীদ হন। ৫টি রিকয়েললেস রাইফেল, ৫০টির বেশি মেশিনগান, ৯০টি রাইফেল, ২৪টি গাড়ি ও পিক আপ এবং প্রচুর গোলা বারুদ মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।
ধরা পড়ল লে. আতাউল্লাহ শাহ। বাংলাদেশের মাটিতে সেই প্রথম পাকিস্তানি Prisoner of War(PoW) বা যুদ্ধবন্দী। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন, ফরাসি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান সে দৃশ্য ধারণ করে সারা বিশ্বে প্রচার করে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভারতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
পর্যাপ্ত অস্ত্র না থাকলেও পরিকল্পনা এবং দেশপ্রেমের সমন্বয়ে যে লড়াই করা যায় এই যুদ্ধ তারই প্রমাণ। বাংলাদেশ সরকার গঠন হওয়ার পর মেজর আবু ওসমান ৮ নং সেক্টরের কম্যান্ডারের দায়িত্ব পান। কুষ্টিয়ার এই যুদ্ধ ছিল সামরিক শক্তি এবং জনতার মিলিত প্রতিরোধের এক অভাবনীয় উদাহারণ। মুক্তিবাহিনীর পেছনে যেভাবে লাঠি, দা ইত্যাদি নিয়ে মানুষ এগিয়ে এসেছিল তা বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে আরো একবার প্রমাণ করে দেয়।
আবু ওসমান স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন, ‘আমার মূলধন শুধু ইপিআর বাহিনী ও তাদের ৩০৩ রাইফেলই নয়, আমার চূড়ান্ত হাতিয়ার বাংলার স্বাধীনতাকামী আপামর জনসাধারণ, যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেই।’
অপারেশন ফার্স্ট লেগের পর কিছুদিন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা পাক হানাদারমুক্ত ছিল। এপ্রিলের শুরুর দিকে আবার এসব এলাকায় তীব্র স্থল ও বিমান হামলা চালায় পাক বাহিনী। চুয়াডাঙ্গা দখলে পাক বাহিনী ভয়াবহ নাপাম বোমা (রাসায়নিক আগুনে বোমা) পর্যন্ত ব্যবহার করেছিল। সেখানকার ইপিআর উইং এর হেডকোয়ার্টারে আগুন ধরে যায়। ফরাসী টেলিভিশন কর্পোরেশনের ফটোগ্রাফাররা গাছে উঠে বোমা নিক্ষেপের ভিডিও করেন। পরে ৫২টি টিভি চ্যানেলে সেই দৃশ্য প্রচার করা হয় এবং বিশ্ববাসী আঁতকে ওঠে। বাংলাদেশে নাপাম হামলার বিস্তারিত পড়ুন এই লিংকে।